শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু সহ তার পরিবার অন্যান্য সদস্য এবং আত্নীয় সহ ৪৫ জন নিহত হন। পুরো ঘটনাটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর রোডের ৬৭৭ নম্বর বাড়িতে সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । তখন বাড়িতে গার্ড পরিবর্তনের সময় । বাড়িতে ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান , তাঁর স্ত্রী বেগম মুজিব , পুত্র শেখ কামাল , শেখ জামাল , শেখ রাসেল , পুত্রবধুরা এবং ভাই শেখ নাসের । ডিউটিতে আছেন বঙ্গবন্ধুর ব্যাক্তিগত সহকারী এ এফ এম মহিতুল ইসলাম , ১ টার দিকে তিনি ঘুমিয়ে পড়…েন । হঠাৎ করে একটা ফোন আসল । ঘুমের মধ্যে ফোন ধরলেন তিনি । ফোনের অপর পাশে ছিলেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । তখন ঘড়িতে পাঁচটা বাজতে যাচ্ছে । বঙ্গবন্ধু মহিতুল ইসলাম কে বললেন পুলিশ কন্ট্রোল রুম এর সাথে যোগাযোগ করতে । এইমাত্র তিনি খবর পেয়েছেন তাঁর ভগ্নিপতি আব্দুর রব শেরনিয়াবাতের বাড়িতে আক্রমন করা হয়েছে । মহিতুল পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ডায়াল করেন কিন্তু কিছুতেই সংযোগ পান না । তারপর তিনি গনভবন এক্সচেঞ্জ এর সাথে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেন । অপর পাশে কেউ একজন ফোন ধরে , কিন্তু কোন কথা বলে না । বঙ্গবন্ধু অস্থির হয়ে মহিতুল ইসলাম কে জিজ্ঞেস করেন যে কেন তিনি পুলিশ এর সাথে যোগাযোগ করেন নি , মহিতুল ইসলাম তাঁকে জানান দুঃসংবাদ টি – তিনি কোথাও যোগাযোগ করতে পারছেন না । বিরক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু রিসিভার টি মহিতুল ইসলাম এর কাছ থেকে নিয়ে নেন । “প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান বলছি ” – তিনি উচ্চারন করেন , আর সাথে সাথে মহিতুল ইসলাম এর অফিস এর কাচ ভেঙ্গে যায় গুলিতে । বঙ্গবন্ধু তখন ও বুঝতে পারেন নি যে তাঁকে হত্যা করার মিশন শুরু হয়ে গেছে । তিনি এও বুঝতে পারেন নি যে আকাশের হালকা আলো যেই ভোর এ রূপ নিচ্ছে সেই ভোর তিনি দেখতে পারবেন না । – সেই ভোর , যে ভোর ছিল সবচেয়ে অন্ধকার রাতের চেয়েও অন্ধকার । হাবিলদার মোহাম্মাদ কুদ্দুস সিকদার তখন সাত জন গার্ড কে সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসস্থানের পতাকা স্ট্যান্ডে জাতীয় পতাকা লাগাচ্ছিলেন । তখনই তিনি গুলির শব্দ শুনতে পান । গার্ড রা দ্রুত বাউন্ডারি ওয়াল এর পিছনে অবস্থান নিয়ে নেন।তাঁদের সামনে দিয়েই কাল এবং খাকি ইউনিফর্ম এর আর্মির লোকেরা ঢুকে পড়ে বাড়িতে। “হ্যান্ডস আপ ” – গার্ডদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে তারা। সেই সাথে হয় দুঃস্বপ্নের সূচনা। বঙ্গবন্ধুর কাজের ছেলে আবদুল বঙ্গবন্ধুর পাঞ্জাবি আর চশমা এনে বঙ্গবন্ধুর হাতে দেয় । সেগুলো পরে নিয়ে বঙ্গবন্ধু সেন্ট্রিদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে ওঠেন -“চারপাশে ফায়ারিং হচ্ছে। তোমরা কি করছ ?” সাথে সাথে তিনি উঠে ওপরে যান তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছে । জাতির পিতা খনও জানতেন না এটাই তাঁর পরিবারের সাথে তাঁর শেষ দেখা। আরেকজন হাউজহেল্পার রমা বঙ্গবন্ধুর বেডরুমের বাইরে বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিল । তখন ভোর পাঁচটা। হঠাৎ করে বেগম মুজিব ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললেন -” আব্দুর রব শেরনিয়াবাতের বাড়ি আক্রমণের শিকার। ” রমা ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে গেল । অস্থিরভাবে দৌড়ে সামনের গেট এর কাছে গিয়ে দেখে অস্ত্র নিয়ে আর্মির লোকেরা ৬৭৭ নম্বর বাড়ির দিকে আগাচ্ছে । রমা পুনরায় দৌড়ে বাড়িতে প্রবেশ করে এবং শেখ কামাল – সুলতানার ঘরে যায় । শেখ কামাল কে উঠিয়ে কোনোরকমে তাকে খবর দেয় তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার । কামাল দ্রুত নিচতলায় নেমে আসেন । সুলতানা কে রমা পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে নিয়ে যায় । শেখ জামাল এবং তাঁর স্ত্রী কেও উঠিয়ে খবর টা জানায় রমা । সবাই বেগম মুজিবের ঘরে চলে আসেন তাঁরা । চারিকে বুলেটের আওয়াজ। নিচতলায় কারও আর্তনাদ শুনতে পান শেখ জামাল । তখনও জানতেন না এ আর্তনাদ ছিল তাঁর বড় ভাই শেখ কামালের।ততক্ষণে আর বেঁচে নেই বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ কামাল। শেখ কামালকে নিচে নেমে আসতে দেখেন মহিতুল । তিনি বারান্দায় দাঁড়িয়ে চিৎার করে ওঠেন , “আর্মি এবং পুলিশের সদস্যরা , আমার সাথে আসুন ।”তিনি চাইছিলেন হামলাকারীদের অবস্থান বুঝতে । এর কিছুক্ষণ পরেই খুনীরা সামনে চলে আসে – কালো এবং খাকি ইউনিফর্ম এ তিন – চার জন । ওয়েস্ট লেভেল এ স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। তারা শেখ কামালের ঠিক সামনে গিয়ে থামে । পিছনে স্তব্ধ হয়ে যান মহিতুল এবং নুরুল ইসলাম। মহিতুল চিনতে পারেন মেজর বজলুল হুদা কে।আর্মিরা প্রথমে শেখ কামাল এর পায়ে গুলি করে । শেখ কামাল মহিতুল ইসলাম এর পাশে সরে আসেন । মহিতুল চিৎকার করে ওঠেন – ” ওকে গুলি করো না , ও শেখ কামাল , বঙ্গবন্ধুর ছেলে। ” আর্মির সদস্যদের কতগুলো বুলেট এসে শেখ কামালের বুক ঝাঁঝরা করে দেয় । পুলিশকে মহিতুল এবং নুরুল ইসলাম এর দিকে নজর রাখতে বলে ভারী পদক্ষেপে খুনীরা ফার্স্ট ফ্লোর এর দিকে এগিয়ে যায়। কিছুসময় পর বঙ্গবন্ধুর সুউচ্চ ভরাট কন্ঠস্বর শুনতে পান মহিতুল ইসলাম। এরপর গুলির শব্দ । কি হচ্ছে কিছুই কল্পনা করতে পারছিলেন না মহিতুল ইসলাম। শুধু প্রার্থনা করছিলেন যাতে বঙ্গবন্ধুর কিছু না হয় । কিন্তু ভয়াবহ ঘটনা টিকে নিজের চোখের সামনে ঘটতে দেখেন হাবিলদার কুদ্দুস। আর্মিদের কথামত একতলায় তাদের কে অনুসরন করেন কুদ্দুস। হুদা এবং নূর সিঁড়িতে পা দেয়ার সাথে সাথে বিপরীত দিক থেকে মেজর মহিউদ্দিন আর তার সৈন্যরা চলে আসে। তাদের সাথে ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ।হাবিলদার কুদ্দুস ছিলেন হুদা এবং নূর এর ঠিক পিছনে । নূর ইংরেজিতে কিছু বললে মহিউদ্দিন আর তার সৈন্যরা সরে যায় । বঙ্গবন্ধু প্রশ্ন করেন , “তোমরা কি চাও ?” কেউ উত্তর দেয়না । হুদা আর নূর এর অস্ত্র থেকে একঝাঁক বুলেট ছুটে যায় বঙ্গবন্ধুর দিকে ।নীরবে সিঁড়িতে লুটিয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। চারপাশে এবং সিঁড়িতে গড়িয়ে পড়তে থাকে রক্ত , জাতির পিতার রক্ত । তখনও তাঁর প্রিয় পাইপটি তাঁর হাতে ধরা। মহিউদ্দিন , নূর , হুদা এবং অন্যরা বাড়ির দক্ষিণ দিকে এগিয়ে যায়। বুলেটের ধাক্কায় বঙ্গবন্ধুকে লুটিয়ে পরতে দেখে রমা । কাঁপতে কাঁপতে বেগম মুজিবের রুমের বাথরুমে ঢুকে যায় সে । সুলতানা কামাল , শেখ জামাল , রোজি , শেখ রাসেল , শেখ নাসের সবাই সেখানে ছিলেন। শেখ নসের এর হাত থেকে রক্ত পড়ছিল।রমা বেগম মুজিবকে জানায় -বঙ্গবন্ধু আর নেই। এর কিছুক্ষণ পরেই খুনীরা ফিরে আসে এবং দরজা ধাক্কাতে শুরু করে । দরজায় গুলি করে । তখন বেগম মুজিব বললেন , “মরতে যদি হয় সবাই একসাথে মরব। “বলে তিনি দরজা খুলে দিলেন। আর্মির লোকেরা শেখ নাসের , শেখ রাসেল , বেগম মুজিব এং রমাকে সিঁড়ির দিকে নিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখে কেঁদে ওঠেন বেগম মুজব । বলেন – “আমি আর সামনে যাব না , আমাকে এখানেই মারো।” খুনীরা বেগম মুজিবকে তাঁর ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যায় । চোখের সামনে আরেকটি বীভৎস দৃশ্য দেখেন হবিলদার কুদ্দুস।মেজর আজিজ পাশা এবং রিসালাহদার মুসলেহউদ্দিন স্টেনগন থেকে ফায়ারিং শুরু করে ।এক মূহুর্তের মধ্যে স্মৃতি য়ে যান বেগম মুজিব , শেখ জামাল , সুলতানা , রোজী। শেখ রাসেল , শেখ নাসের এবং রমা কে নিচে নিয়ে গিয়ে মহিতুল এর সাথে এক লাইনে দাড়াঁ করায় খুনীরা । শেখ নাসের বলেন , “আমি রাজনীতির সাথে জড়িত নই। জীবিকার জন্য ব্যবসা করি।” একজন আর্মি অফিসার শেখ নাসেরকে বলে , আমরা তোমাকে কিছু করব না। এই বলে শেখ নাসেরকে মহিতুলের অফিস সংলগ্ন বাথরুমে নিয়ে গুলি চালায়। মৃতুর আগমূহুর্তে শেখ নাসের আর্তনাদ করছিলেন ‘পানি , পানি’ বলে । আর একজন আর্মি অফিসার গিয়ে পুনরায় গুলি চালায় শেখ নাসের এর উপর। শেষ হয়ে যায় আরেকটি জীবন। খুনীরা এরপর ওপরে ওঠে এবং শেখ রাসেল কে নিয়ে নিচে নামে। বঙ্গবন্ধুর ১০ বছরের শিশুপুত্র একবার রমার কাছে , একবার মহিতুল এর কাছে আশ্রয় খুঁজতে থাকে। শিশুটি প্রশ্ন করে , “ভাইয়া , ওরা কি আমাকেও মারবে ?” মহিতুল উত্তর দেন , “না , তোমাকে মারবে না।” এরপর কি হতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না মহিতুল ইসলামের। আর্মির একজন এসে মহিতুল এর কাছ থেকে রাসেল কে সরিয়ে নেয়।রাসেল তাঁর মা এর কাছে যেতে চায়। ক্রন্দনরত রাসেলকে এক হাবিলার নিয়ে যায় বেগম মুজিবের লাশের কাছে । তারপর আরো কিছু গুলি। নিথর হয়ে যায় শেখ রাসেল এর নিষ্পাপ ছোট্ট দেহটিও। কিছুক্ষণ পর খুনী ফারুক দেখা করে খুনী বজলুল হুদার সাথে। “তারা সবাই শেষ।” – খুনী ফারুককে জানায় খুনী হুদা।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ