শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
১২ রবিউল আউয়াল,  ঈদে মিলাদুন নবী(সাঃ) এটি হচ্ছে আমাদের প্রিয় নবী হাবিবুল্লাহ হুজুরে পাক (সাঃ) উনার মহান আগমণের দিন। এই দিন একটি পবিত্র দিন কাজেই তাজিম তাক্করিম সহ এই দিন পালন করা আমাদের জন্য ফরজ। আপনি বাসায় কিংবা অন্য কোথাও মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন করতে পারেন অথবা যোগদান করতে পারেন। দলিল সমূহঃ এখানে বিস্তারিত পাবেন কয়েকশ দলিল ও ভ্রান্ত আক্কিদাদের দাদভাঙা জবাব সহ
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

আজকের বিশ্বে মুসলিম উম্মার অন্যতম উৎসবের দিন হচ্ছে ‘‘ঈদে মীলাদুন্নবী’’। সারা বিশ্বের বহু মুসলিম অত্যন্ত জাঁকজমক, ভক্তি ও মর্যাদার সাথে আরবী বৎসরের ৩য় মাস রবিউল আউআল মাসের ১২ তারিখে এই ‘‘ঈদে মীলাদুন্নবী’’ বা নবীর জন্মের ঈদ পালন করেন। মানুষ শুধু উৎসবের পেছনে দৌঁড়ায়। ব্যস্ত ও একঘেঁয়ে জীবনের খোলস ছেড়ে একটু বেরিয়ে আসতে চায় সে। একটু শান্তি আর সুখ লাভের জন্য ছটফট করতে থাকে সবসময়। তাই কোনো নাম-কা-ওয়াস্তে উসিলা পেলেই নেচে ওঠে তার মন। ছুটে যায় সে দিকে। মেতে ওঠে উৎসবে। আমাদের অবস্থা তো এখন এমন যে, কোনো উৎসব পালন করতে তার ইতিহাসও ঘেটে দেখি না আমরা। মিডিয়া বলে ভালোবাসা দিবস, ভালোবাসতে শুরুকরি আমরা। মিডিয়া বলে এপ্রিল ফুল, ফুল বানাতে ব্যস্ত হয়ে যাই আমরা। মিডিয়া প্রচার করে ঈদে মিলাদুন্নবি, ঈদ পালন করতে শুরু করি আমরা। এলাকার ছেলেরা পটকা ফোটানো শুরুকরে। কোরমা-পোলাও আর শিন্নি-সেমাই রান্না হয় ঘরে ঘরে। আশ্চর্য! আমরা কি মানুষ নই! মানুষ তো ভাবে, চিন্তা করে। তা সম্ভব না হলে কাউকে সে জিজ্ঞাসা করে। জানার স্পৃহা থাকে তার। কেউ বলল আর তা মেনে নিল -মানুষ তো এমন নয়। তাহলে তো চিন্তাশক্তি সমৃদ্ধ মেধা/ব্রেইন তাকে দেয়া হত না। স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তা দিতেন না। মানুষের স্বভাব চিন্তা করা। ভাবা। চিন্তাশীলদের স্মরণাপন্ন হওয়া। এগুলো কি আমরা করি? অধিকাংশ মুসলিমই এই ‘‘ঈদের’’ উৎপত্তি ও বিকাশের ইতিহাসের সাথে পরিচিত নন। যে সকল ব্যক্তিত্ব এই উৎসব মুসলিম উম্মার মধ্যে প্রচলন করেছিলেন তাঁদের পরিচয়ও আমাদের অধিকাংশের অজানা রয়েছে।

 ঈদে মীলাদুন্নবী পরিচিতি : ‘‘মীলাদ’’ শব্দের অর্থ ও ব্যাখ্যা :মীলাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ: জন্মসময়। এই অর্থে ‘‘মাওলিদ’’ শব্দটিও ব্যবহৃত হয় [ড: ইবরাহীম আনীস ও সঙ্গীগণ, আল-মুজাম আল ওয়াসীত (বৈরুত, দারুল ফিকর) ২/১০৫৬।]।

 আল্লামা ইবনে মানযূর তাঁর সুপ্রসিদ্ধ আরবী অভিধান ‘‘লিসানুল আরবে’’ লিখছেন: “ ﻣﻴﻼﺩ ﺍﻟﺮﺟﻞ : ﺍﺳﻢ ﺍﻟﻮﻗﺖ ﺍﻟﺬﻱ ﻭﻟﺪ ﻓﻴﻪ ” অর্থাৎ: ‘‘লোকটির মীলাদ: যে সময়ে সে জন্মগ্রহণ করেছে সে সময়ের নাম”[ইবনে মনজুর, লিসানুল আরব (বৈরুত, দারু সাদের) ৩/৪৬৮]।

 স্বভাবত:ই মুসলিমগণ ‘‘মীলাদ’’ বা ‘‘মীলাদুন্নবী’’ বলতে শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্মের সময়ের আলোচনা করা বা জন্ম কথা বলা বোঝান না। বরং তাঁরা ‘‘মীলাদুন্নবী’’ বলতে রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) জন্মের সময় বা জন্মদিনকে বিশেষ পদ্ধতিতে উদযাপন করাকেই বোঝান। 

মীলাদ’’ বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন : আমরা যে কোন ইসলামী আলোচনা কুরআনুল কারীম ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসের আলোকে শুরুকরি।কুরআনুল কারীমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ‘‘মীলাদ’’ অর্থাৎ তাঁর জন্ম, জন্ম সময় বা জন্ম উদযাপন বা পালন সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি।এজন্য আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন সম্পর্কে আলোচনায় মূলত: হাদীস শরীফ ও পরবর্তী যুগের মুসলিম ঐতিহাসিক ও আলেমগণের মতামতের উপর নির্ভর করব। হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন : জন্মবার : আবু কাতাদা আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সোমবার দিন রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি বলেন: ‘‘এই দিনে (সোমবারে) আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনেই আমি নবুয়ত পেয়েছি”[সহীহ মুসলিম (মিশর, কাইরো, দারু এহইয়াইল কুতুবিল আরাবিয়্যাহ, তারিখবিহীন) ২/৮১]। ইবনে আববাস বলেন: ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবারে জন্মগ্রহণ করেন, সোমবারে নবুয়ত লাভ করেন, সোমবারে ইন্তেকাল করেন, সোমবারে মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনার পথে রওয়ান করেন, সোমবারে মদীনা পৌছান এবং সোমবারেই তিনি হাজারে আসওয়াদ উত্তোলন করেন”[আহমাদ ইবনে হাম্বাল, আল-মুসনাদ (মিসর, দারুল মা’আরিফ, ১৯৫০) ৪/১৭২-১৭৩, নং ২৫০৬ (সম্পাদক আহমদ শাকির সনদ আলোচনা করে বলেছেন: হাদীসটির সনদ সহীহ)]।

 জন্ম বৎসর: কায়স ইবনে মাখরামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুজনেই ‘‘হাতীর বছরে’’ জন্মগ্রহণ করেছি। উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু কুবাস ইবন আশইয়ামকে প্রশ্ন করেন: আপনি বড় না রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বড়? তিনি উত্তরে বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার থেকে বড়, আর আমি তাঁর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘‘হাতীর বছরে’’ জন্মগ্রহণ করেন”[তিরমিযী, আল-জামিয়, প্রাগুক্ত ৫/৫৫০, নং ৩৬১৯। ইমাম তিরমিযী বলেছেন: হাদীসটি হাসান গরীব।]। হাতীর বছর অর্থাৎ যে বৎসর আবরাহা হাতী নিয়ে কাবা ঘর ধ্বংসের জন্য মক্কা আক্রমণ করেছিল। ঐতিহাসিকদের মতে এ বছর ৫৭০ বা ৫৭১ খ্রীষ্টাব্দ ছিল [আকরাম যিয়া আর-উমারী, আস-সীরাতুন নাবাবীয়্যাহ আস-সহীহা]। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন : আলেমগণ ও ঐতিহাসিকদের মতামত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম তারিখ সম্পর্কে যেহেতু হাদীসে রাসূলের হাদীসে কোন বর্ণনা আসে নি এবং সাহাবীগণের মাঝেও এ বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট মত প্রচলিত ছিল না, তাই মুসলিম ঐতিহাসিকগণ এ বিষয়ে বিভিন্ন মত পোষণ করেছেন।কারো মতে, তাঁর জন্ম তারিখ অজ্ঞাত, তা জানা যায় নি, এবং তা জানা সম্ভব নয়। তিনি সোমবারে জন্মগ্রহণ করেছেন এটুকুই শুধু জানা যায়, জন্ম মাস বা তারিখ জানা যায় না। এ বিষয়ে কোন আলোচনা তারা অবান্তর মনে করেন। মানুষ কর্তৃক উদ্ভাবিত তিরস্কারযোগ্য নব উদ্ভাবনের মধ্যে একটি হচ্ছে রবিউল আউয়াল মাসে নবীজীর(সঃ) জন্মোৎসব বা মিলাদুন্নবী উদযাপন। লোকে বিভিন্নভাবে এই উপলক্ষকে উদযাপন করে থাকে: কেউ কেউ এ উপলক্ষে জমায়েত হয়ে নবীজীর জন্মের ঘটনা আলোচনা করে এবং বক্তৃতা ও কাসীদা পড়ে থাকে। কেউ বা মিষ্টি-খাবার প্রভৃতি তৈরী করে বিতরণ করে। কেউ কেউ মসজিদে তা উদযাপন করে, কেউ বা উদযাপন করে বাড়িতে। আর কেউ কেউ এ সবকিছুকে ছাড়িয়ে গিয়ে এধরনের মজলিসে হারাম ও দূষণীয় কাজের সমাবেশ ঘটায়: যেমন নারী ও পুরুষের মেলামেশা, নাচ ও গান-বাজনা, এবং বিভিন্ন শিরকী কাজ যেমন নবীজীর সাহায্য চাওয়া, তাঁকে ডাকা এবং শত্রুর বিরুদ্ধে তাঁর সাহায্য চাওয়া ইত্যাদি। এই উদযাপনের প্রকৃতি যেমনই হোক না কেন আর পালনকারীদের নিয়ত যাই হোক না কেন, এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে এই অনুষ্ঠান একধরনের বিদাত, মুসলিমদের দ্বীনকে নষ্ট করার জন্য ফাতিমীয় শিয়ারা এই হারাম বিদাতের প্রচলন ঘটায় প্রথম তিনটি শ্রেষ্ঠ প্রজন্মের সময়কাল অতিবাহিত হওয়ার পর। এদের পরে সর্ব প্রথম এই মিলাদুন্নবী উদযাপন করে হিজরী ষষ্ঠ শতকের শেষে এবং সপ্তম শতকের প্রারম্ভে ইরবিলের সম্রাট আল-মুযাফফার আবু সাঈদ কাওকাবূরি – যেমনটি বর্ণনা করেছেন ইবনে খালকান এবং অন্যান্য ঐতিহাসিকগণ। আবু শামা বলেন: মসুলে সর্বপ্রথম এটা চালু করেন শেখ উমার ইবনে মুহাম্মাদ আল মালা, যিনি ছিলেন একজন সুপরিচিত ধার্মিক ব্যক্তি। পরবর্তীতে ইরবিলের সম্রাট এবং অন্যান্যরা তার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে। আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে আল হাফিয ইবনে কাসীর আবু সাঈদ কাওকাবূরি সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বলেন: “তিনি রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদ উদযাপন করতেন এবং এ উপলক্ষে বিশাল উৎসবের আয়জন করতেন…” ওয়াফিয়াত আল আ’য়ান গ্রন্থে ইবনে খালকান বলেন: “সফর মাসের পয়লা তারিখ থেকেই তারা গম্বুজগুলোকে বিভিন্ন রকমের জমকালো সজ্জায় সজ্জিত করত, প্রতি গম্বুজেই গায়ক, পুতুল নাচিয়ে এবং বাদকদের একটি করে দল থাকত, এবং কোন গম্বুজই এ থেকে বাদ যেত না।লোকেরা এসময় কাজকর্ম বাদ দিয়ে ঘুরেফিরে এই উৎসব দেখত। এমনিভাবে মিলাদের ঠিক দুইদিন আগে তারা অনেক উট, গরুও ভেড়া নিয়ে আসত, যা বর্ণনাতীত, তারা ঢোল, সঙ্গীত এবং বাদ্যসহকারে এগুলোকে চত্বরে নিয়ে আসত…মিলাদের রাত্রিতে কবিদের নাশীদ পাঠ চলত রাজপ্রাসাদে।” এই হচ্ছে মিলাদুন্নবী উদযাপনের উৎস। সামপ্রতিক কালে এই বিদাতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে অনর্থক রং-তামাশা, অত্যধিক সাজসজ্জা এবং অর্থ ও সময়ের অপচয়, যে সম্পর্কে আল্লাহ পাক কোন হুকুমই নাযিল করেননি। মিলাদুন্নবী উদযাপন সংক্রান্ত শরীয়াতের বিধান: কুরআন এবং সুন্নাহতে খুব স্পষ্টভাবে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নির্দেশাবলী অনুসরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং ধর্মীয় ব্যাপারে নতুন কিছু সূচনা করাকে স্পষ্টত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন: “বলুন [হে নবী]: যদি তোমরা সত্যিই আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।” (সূরা আলে ইমরান, ৩:৩১) “তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল হয়েছে, তোমরা তার [কুরআন ও সুন্নাহ] অনুসরণ কর, আর তাঁকে [আল্লাহ] ছাড়া আর কোন আউলিয়ার [সেই সব সত্তা যারা আল্লাহর সাথে শরীক করার নির্দেশ দেয়] অনুসরণ করো না…” (সূরা আল আরাফ, ৭:৩) “আর এটিই আমার সরল-সঠিক পথ, অতএব তোমরা এ পথেই চল এবং অন্যান্য পথে পরিচালিত হয়োনা, কেননা সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।…” (সূরা আল আনআম, ৬:১৫৩) এবং নবীজী(সঃ) বলেছেন : “সবচেয়ে সত্য ভাষণ হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, এবং সর্বশ্রেষ্ঠ দিকনির্দেশনা হচ্ছে মুহাম্মাদের দিকনির্দেশনা, আর সবচেয়ে খারাপ বিষয় হচ্ছে (দ্বীনের ব্যাপারে) নব উদ্ভাবিত বিষয়।” এবং তিনি(সঃ) বলেছেন: “যে কেউই আমাদের এই দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে যা এর কোন অংশ নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)

 মিলাদুন্নবী উদযাপন হারাম এবং বেশ কয়েকটি কারণে পরিত্যাজ্য: 

প্রথম কারণ: এটি রাসূলুল্লাহ(সঃ) কিংবা তাঁর খলীফাদের সুন্নাত ছিল না। ফলে এটি একটি নিষিদ্ধ নব উদ্ভাবন, কেননা নবীজী(সঃ) বলেছেন: “আমি তোমাদেরকে আমার এবং আমার পরবর্তী সঠিক পথপ্রাপ্ত খলীফাদের অনুসরণের ব্যাপারে তাগিদ দিচ্ছি; তোমরা একে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাক। [দ্বীনের মধ্যে] নব উদ্ভাবিত বিষয় সম্পর্কে সাবধান হও, কেননা প্রতিটি নবোদ্ভাবিত বিষয়ই বিদাত, এবং প্রতিটি বিদাতই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা।” (আহমাদ, তিরমিযী) মিলাদুন্নবী একটি বিদাত যা মুসলিমদের দ্বীনকে নষ্ট করার জন্য ফাতিমীয় শিয়ারা চালু করেছিল প্রথম তিনটি শ্রেষ্ঠ প্রজন্মের সময়কাল অতিবাহিত হওয়ার পর। কেউ যদি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে এমন কিছু করে যা রাসূল(সঃ) করেননি কিংবা করতে বলেননি এবং তার উত্তরসূরী খলীফারাও করেন নি, তাহলে তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে সে দাবী করছে যে রাসূল(সঃ) মানুষের কাছে পরিপূর্ণভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি ব্যাখ্যা করেননি [নাউযুবিল্লাহ], ফলে সে আল্লাহর এই আয়াতকে অস্বীকার করে: “আজ আমি, তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য পূর্ণ করে দিলাম।” (সূরা আল মায়িদাহ, ৫:৩) কারণ সে দ্বীনের মধ্যে বাড়তি কিছু সংযোজন করছে এবং দাবী করছে যে তা দ্বীনের অংশ অথচ রাসূল(সঃ) তা [আল্লাহর পক্ষ থেকে] নিয়ে আসেননি।

 দ্বিতীয় কারণ: মিলাদুন্নবী উদযাপনের দ্বারা খ্রীস্টানদের অনুসরণ করা হয়, কেননা তারা মসীহের(আঃ) জন্মদিন পালন করে। আর তাদের অনুসরণ করা চূড়ান্ত হারাম কাজ। হাদীসে আমাদেরকে কাফিরদের অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং তাদের থেকে ভিন্ন হতে আদেশ করা হয়েছে। নবীজী(সঃ) বলেছেন: “যে কেউই কোন জাতির অনুসরণ করে, সে তাদেরই একজন হিসেবে পরিগণিত।”(আহমদ, আবু দাঊদ) এবং তিনি বলেন: “মুশরিকদের থেকে ভিন্ন হও।”(মুসলিম) - বিশেষত এই নির্দেশ সেসব বিষয়ের ক্ষেত্রে যা তাদের ধর্মীয় নিদর্শন এবং আচার অনুষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত। 

তৃতীয় কারণ: বিদাত এবং খ্রীস্টানদের অনুসরণ করার মত হারাম কাজ হওয়া ছাড়াও মিলাদুন্নবী উদযাপন অতিরঞ্জন এবং নবীজীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ির পথ উন্মোচন করে, যা কিনা আল্লাহকে ডাকার পরিবর্তে নবীজীকে ডাকা এবং তাঁর সাহায্য চাওয়া পর্যন্ত রূপ নিতে পারে, যেমনটি বিদাতী এবং মিলাদ পালনকারীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় ঘটে থাকে, যখন তারা আল্লাহর পরিবর্তে রাসূলকে(সঃ) ডাকে, তাঁর সহযোগিতা চায় এবং “কাসীদায়ে বুরদা” জাতীয় শিরকপূর্ণ প্রশংসাসূচক কাসীদা আউড়ে থাকে। নবীজী(সঃ) তাঁর প্রশংসার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে বলেছেন: “আমাকে এমনভাবে প্রশংসা করো না যেমনটি খ্রীস্টানরা মরিয়মের পুত্রকে করে থাকে। কেননা আমি তাঁর বান্দাহ মাত্র। সুতরাং [আমার সম্পর্কে] বল: আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল।” (বুখারী) অর্থাৎ খ্রীস্টানরা যেমন মসীহের(আঃ) প্রশংসার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর পরিবর্তে তার ইবাদত করা শুরুকরে দিয়েছে, তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে তেমনটি করো না। আল্লাহ তাদেরকে এ ব্যাপারে নিষেধ করে আয়াত নাযিল করেছেন: “হে আহলে কিতাব! তোমরা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া অন্য কথা বলো না। মরিয়মের পুত্র মসীহ ঈসা তো আল্লাহর রাসূল ও মরিয়মের নিকট প্রেরিত তাঁর বাণী ছাড়া আর কিছুই নন, এবং আল্লাহর সৃষ্টি করা এক রূহ।…” (সূরা আন নিসা, ৪:১৭১) আমাদের নবীজী(সঃ) তাঁর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে আমাদেরকে নিষেধ করেছেন, পাছে না আমাদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটে, যা তাদের ক্ষেত্রে ঘটেছে, তাই তিনি(সঃ) বলেছেন: “অতিরঞ্জনের ব্যাপারে সাবধান! কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা অতিরঞ্জনের কারণেই ধ্বংস হয়েছিল।” (নাসাঈ, আলবানী কর্তৃক সহীহ হিসেবে স্বীকৃত) 

চতুর্থ কারণ : মিলাদুন্নবীর এই বিদাত উদযাপন অন্যান্য বিদাতের দ্বারকে উন্মুক্ত করে এবং সুন্নাত থেকে বিমুখ করে দেয়। তাই বিদাতপন্থীদেরকে দেখা যায় বিদাতের ক্ষেত্রে খুব উৎসাহী আর সুন্নাত পালনের ক্ষেত্রে ঢিলেঢালা; তারা একে ঘৃণা করে এবং সুন্নাতের অনুসারীদেরকে শত্রুজ্ঞান করে, শেষ পর্যন্ত তাদের গোটা ধর্মই পরিণত হয় বাৎসরিক বিদাতী অনুষ্ঠানাদি এবং মিলাদের সমষ্টিতে। এভাবে তারা বিভিন্ন মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে এবং সাহায্যের জন্য আল্লাহর পরিবর্তে এইসব তথাকথিত বুজুর্গ ব্যক্তিদের ডাকে, তারা ধারণা করে যে এইসব ব্যক্তি উপকার কিংবা ক্ষতি বয়ে আনতে সক্ষম, এমনিভাবে তারা আল্লাহর দ্বীন থেকে সরে গিয়ে জাহেলিয়াতের যুগের লোকেদের ধর্মে প্রত্যাবর্তন করে, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন: “এবং তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কিছুর উপাসনা করে যা তাদের কোন ক্ষতিও করতে পারে না এবং কোন উপকারও করতে পারে না। তারা বলে: এরা আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী।” (সূরা ইউনুস, ১০:১৮) “…আর যারা আল্লাহকে ছেড়ে অপরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করেছে, তারা বলে: আমরা তো এদের উপাসনা করি কেবল এজন্য যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছে দেয়…” (সূরা আয যুমার, ৩৯:৩)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ