Usaid

Call


ﻭَﻗَﺪْ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﻌَﻠَﺎﺀُ ﻣِﻦْ ﺳَﺎﺩَﺍﺕِ ﺍﻟﺼَّﺤﺎﺑﺔ ﺍﻟْﻌُﻠَﻤَﺎﺀِ ﺍﻟﻌﺒَّﺎﺩ ﻣُﺠَﺎﺑِﻲ ﺍﻟﺪَّﻋﻮﺓ، ﺍﺗَّﻔﻖ ﻟَﻪُ ﻓِﻲ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﻐَﺰْﻭَﺓِ ﺃﻧَّﻪ ﻧَﺰَﻝَ ﻣَﻨْﺰِﻟًﺎ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺴْﺘَﻘِﺮَّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺣَﺘَّﻰ ﻧَﻔَﺮَﺕِ ﺍﻟْﺈِﺑِﻞُ ﺑِﻤَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﺯَﺍﺩِ ﺍﻟْﺠَﻴْﺶِ ﻭَﺧِﻴَﺎﻣِﻬِﻢْ ﻭﺷﺮﺍﺑﻬﻢ، ﻭﺑﻘﻮﺍ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﺭﺽ ﻟﻴﺲ ﻣﻌﻬﻢ ﺷﺊ ﺳِﻮَﻯ ﺛِﻴَﺎﺑِﻬِﻢْ – ﻭَﺫَﻟِﻚَ ﻟَﻴْﻠًﺎ – ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﻘْﺪِﺭُﻭﺍ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻌِﻴﺮٍ ﻭَﺍﺣِﺪٍ، ﻓَﺮَﻛِﺐَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻬﻢِّ ﻭﺍﻟﻐﻢِّ ﻣﺎﻻ ﻳُﺤَﺪُّ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﻮَﺻَﻒُ، ﻭَﺟَﻌَﻞَ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﻳُﻮﺻِﻲ ﺇِﻟَﻰ ﺑَﻌْﺾٍ، ﻓَﻨَﺎﺩَﻯ ﻣُﻨَﺎﺩِﻱ ﺍﻟْﻌَﻠَﺎﺀِ ﻓَﺎﺟْﺘَﻤَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ ﺇِﻟَﻴْﻪِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺃﻳُّﻬﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ ﺃَﻟَﺴْﺘُﻢُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦ؟َ ﺃَﻟَﺴْﺘُﻢْ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ؟
ﺃَﻟَﺴْﺘُﻢْ ﺃَﻧْﺼَﺎﺭَ ﺍﻟﻠَّﻪِ؟ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﺑَﻠَﻰ، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﺄَﺑْﺸِﺮُﻭﺍ ﻓَﻮَﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﺎ ﻳَﺨْﺬِﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﻣِﺜْﻞِ ﺣَﺎﻟِﻜُﻢْ، ﻭَﻧُﻮﺩِﻱَ ﺑِﺼَﻠَﺎﺓِ ﺍﻟﺼُّﺒﺢ ﺣِﻴﻦَ ﻃَﻠَﻊَ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮُ ﻓﺼﻠَّﻰ ﺑﺎﻟﻨَّﺎﺱ، ﻓﻠﻤَّﺎ ﻗَﻀَﻰ ﺍﻟﺼَّﻼﺓ ﺟَﺜَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﻛْﺒَﺘَﻴْﻪِ ﻭَﺟَﺜَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ، ﻭَﻧَﺼِﺐَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻋﺎﺀ ﻭَﺭَﻓَﻊَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻭَﻓَﻌَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ ﻣِﺜْﻠَﻪُ ﺣَﺘَّﻰ ﻃَﻠَﻌَﺖِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ، ﻭَﺟَﻌَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻳَﻨْﻈُﺮُﻭﻥَ ﺇِﻟَﻰ ﺳَﺮَﺍﺏِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲِ ﻳَﻠْﻤَﻊُ ﻣَﺮَّﺓً ﺑَﻌْﺪَ ﺃُﺧْﺮَﻯ ﻭَﻫُﻮَ ﻳَﺠْﺘَﻬِﺪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻋَﺎﺀِ
※ আলবিদায়া ওয়াননিহায়া গ্রন্থে আল্লামা ইবনে কাসীর রহঃ সনদসহ বর্ণনা করেন,আলা বিন হাযরামী রাযিঃ মুস্তাজাবুদ দাওয়া সাহাবী ছিলেন। একদা বাহরাইনের জিহাদ থেকে ফেরার পথে এক স্থানে যাত্রাবিরতি করলে খাবার দাবার ও তাবুর রসদসহ উটগুলো পালিয়ে যায়। তখন গভীর রাত। সবাই পেরেশান। ফজরের সময় হয়ে গেলে আযান হল। সবাই নামায আদায় করলেন। নামায শেষে আলা বিন হাযরামী রাযিঃ সহ সবাই হাত তুলে সূর্য উদিত হওয়ার সূর্যের কিরণ গায়ে লাগা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় দোয়া করতে থাকেন। (আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ৬/৩২৮)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

নামায শেষে রাসূল সা. কর্তৃক সম্মিলিত দুআর প্রমাণ: অনাবৃষ্টি দেখা দিলে এবং প্রয়োজন সত্ত্বেও যথারীতি বৃষ্টি না হলে শরীয়তে ‘ইস্তিসকা’র (অর্থাৎ আল্লাহর কাছে রহমতের বৃষ্টি কামনা করার) নির্দেশ এসেছে। ‘ইস্তিসকা’র বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। একটি পদ্ধতি  এই যে, সবাই সম্মিলিতভাবে দুআ করবে। যেমন সহীহ বুখারীতে আনাস রা.-এর বর্ণনা এসেছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টির জন্য উভয় হাত উঠিয়ে দোয়া করেছেন এবং তাঁর সঙ্গে উপস্থিত সকলে হাত উঠিয়ে দোয়া করেছেন।-সহীহ বুখারী জুমা ও দুই ঈদের খুৎবায় খতীব দুআ করেন এবং শ্রোতাগণ মনে মনে আমীন বলেন। সম্মিলিত দুআর এই পদ্ধতিও সব জায়গায় প্রচলিত রয়েছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত ‘ইস্তিগফার’ এর মাধ্যমে খুৎবা সমাপ্ত করতেন। -মারাসীলে আবু দাউদ; যাদুল মাআদ ১/১৭৯ ইমাম বুখারী রহঃ স্বীয় কিতাব আততারীখুল কাবীরে এনেছেন- হযরত মুগিরা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ নামায শেষে দুআ করতেন। -আততারীখুল কাবীর, হাদীস নং-১৭৭২, ৬/৮০ হযরত মুহাম্মদ বিন আবী ইয়াহইয়া বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের রাঃ কে দেখলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে নামাযের ভিতরে হাত তুলে দুআ করছেন। যখন লোকটি নামায শেষ করল। তখন তিনি তাকে বললেন, নিশ্চয় রাসূল সাঃ নামায শেষ করার আগে হাত তুলে দুআ করতেন না। -আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৩২৪ ধন্যবাদ

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত মুনাজাত সুন্নাহ বিরোধী কাজ আমাদের সমাজে যতগুলো বিদ’আত প্রচলিত আছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফরজ সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাত। অধিকাংশ মসজিদে ফরজ সালাতের সালাম ফিরানোর পর দুই হাত তুলে ইমাম মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা হয়। অথচ এই প্রথার শারঈ কোন ভিত্তি নেই। এই সম্মিলিত মুনাজাতের দলীল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে পাওয়া যায় না। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত শেষে দুয়া কবুল হওয়ার কথা বহু সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণিত। তাহলে এ নিয়ে বিতর্ক কেন? আসলে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর দুয়া নিয়ে বিতর্ক নয়, বিতর্ক হল এর পদ্ধতি নিয়ে। যে পদ্ধতিতে সম্মিলিতভাবে নিয়মিত দুয়া করা হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা তাঁর সাহাবায়ে কেরাম এভাবে দুয়া করেছিলেন কিনা সেটিই দেখার বিষয়। তাই প্রথমে আমরা এ বিষয়ে আলেমদের মতামত দেখবো। এরপর দলিল সম্পর্কিত পর্যালোচনা করা হবে ইনশা আল্লাহ। আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভী রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ বর্তমান সমাজে প্রচলিত প্রথা যে, ইমাম সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দুয়া করেন এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলেন, এ প্রথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে ছিল না। [ফাতওয়া আব্দুল হাই কিতাবের ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০০] মুফতি মুহাম্মাদ শফী বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেঈনে ইযাম হতে এবং শরীয়তের চার মাযহাবের ইমামগণ হতেও সালাতের পরে এ ধরনের মুনাজাতের প্রমাণ পাওয়া যায় না। সারকথা হল, এ প্রথা পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রদর্শিত পন্থা ও সাহাবায়ে কেরামের আদর্শের পরিপন্থী। [আহকামে দুআ, পৃষ্ঠা ১৩] মুফতি ফয়যুল্লাহ হাটহাজারী বলেনঃ ফরজ সালাতের পর দুয়ার চারটি নিয়ম আছে। ১) মাঝে মাঝে একা একা হাত উঠানো ব্যতীত হাদীসে উল্লিখিত মাসনুন দুয়া সমূহ পড়া। নিঃসন্দেহে তা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। ২) মাঝে মাঝে একা একা হাত উঠিয়ে দুয়া করা। এটি কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। তবে কিছু যঈফ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। ৩) ইমাম ও মুক্তাদীগণ সম্মিলিতভাবে দুয়া করা। এটি না কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, না কোন যঈফ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। ৪) ফরজ সালাতের পর সর্বদা দলবদ্ধভাবে হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করার কোন প্রমাণ শরীয়তে নেই। না সাহাবী ও তাবেঈদের আমল দ্বারা প্রমাণিত, না হাদীস সমূহ দ্বারা, সহীহ হোক অথবা যঈফ হোক অথবা জাল হোক। আর না ফিক্বাহ এর কিতাবের কোন পাতায় লিখা আছে। এ দুয়া অবশ্যই বিদ’আত। [আহকামে দুআ, পৃষ্ঠা ২১] মাওলানা মওদুদী রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ এতে সন্দেহ নেই যে, বর্তমানে জামাআতে সালাত আদায় করার পর ইমাম ও মুক্তাদী মিলে যে নিয়মে দুয়া করেন, এ নিয়ম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যামানায় প্রচলিত ছিল না। এ কারণে বহু সংখ্যক আলেম এ নিয়মকে বিদ’আত বলে আখ্যায়িত করেছেন। [আহসানুল ফাতাওয়া, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৬৯৮] ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহিমাহুল্লাহকে ফরজ সালাতের পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে দুয়া করা জায়েজ কিনা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ সালাতের পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে দুয়া করা বিদ’আত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে এরূপ দুয়া ছিল না। বরং তাঁর দুয়া ছিল সালাতের মধ্যে। কারণ সালাতের মধ্যে মুসল্লি স্বীয় প্রতিপালকের সাথে নীরবে কথা বলে আর নীরবে কথা বলার সময় দুয়া করা যথাযথ। [মাজমু’আ ফাতাওয়া, ২২তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১৯] আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ ইমাম পশ্চিমমুখী হয়ে অথবা মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে মুক্তাদীগণকে নিয়ে মুনাজাত করা কখনও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তরীকা নয়। এ সম্পর্কে একটিও সহীহ অথবা হাসান হাদীস নেই। [ইবনুল কাইয়্যিম, যাদুল মাআদ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৪৯] শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত ও নফল সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দুয়া করা স্পষ্ট বিদ’আত। কারণ এরূপ দুয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে এবং তাঁর সাহাবীদের যুগে ছিল না। যে ব্যক্তি ফরজ সালাতের পর অথবা নফল সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দুয়া করে সে যেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের বিরোধিতা করে। [হাইয়াতু কিবারিল উলামা, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৪৪]

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা কখনোই বিদআত নয়। বরং এর শরয়ী বৈধতা অসংখ্য জায়গায় বিদ্যমান।

ফরজ নামাযের পর মুনাজাতের বিষয় বুঝতে হলে তিনটি পয়েন্ট ভাল করে বুঝতে হবে। যথা- 

 ১ ফরজ নামাযের পর মুনাজাত প্রমাণিত কি না? 
২ সম্মিলিত মুনাজাত প্রমাণিত কি না? 
 ৩ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাতের হুকুম কী? ১ম বিষয় ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করা একাধিক সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন- 
 ক) وَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، إِذَا صَلَّيْتَ فَقُلْ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ فِعْلَ الخَيْرَاتِ، وَتَرْكَ الْمُنْكَرَاتِ، وَحُبَّ الْمَسَاكِينِ، হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, হে মুহাম্মদ! যখন তুমি নামায পড়ে ফেলবে, তখন এ দুআ করবে- হে আল্লাহ!আপনার নিকট ভাল কাজের তৌফিক চাই এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সাহায্য চাচ্ছি এবং আপনার দরবারের মিসকীন তথা আল্লাহ ওয়ালাদের মুহাব্বত কামনা করছি। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৩২৩৩} খ) ইমাম বুখারী রহঃ স্বীয় কিতাব আততারীখুল কাবীরে এনেছেন- عَنْ كاتب المغيرة رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُو في دبر صلاته হযরত মুগিরা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ নামায শেষে দুআ করতেন। {আততারীখুল কাবীর, হাদীস নং-১৭৭২, ৬/৮০} গ) عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: كَانَ مَقَامِي بَيْنَ كَتِفَيْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَكَانَ إِذَا سَلَّمَ قَالَ: «اللَّهُمَّ اجْعَلْ خَيْرَ عُمُرِي آخِرَهُ، اللَّهُمَّ اجْعَلْ خَوَاتِيمَ عَمَلِي رِضْوَانَكَ، اللَّهُمَّ اجْعَلْ خَيْرَ أَيَّامِى يَوْمَ أَلْقَاكَ» হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ছিলাম রাসূল সাঃ এর কাঁধের পাশে। তখন রাসূল সাঃ সালাম ফিরিয়ে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার শেষ জীবনকে সবচে’ সুন্দর কর। হে আল্লাহ! তুমি আমার শেষ আমলকে তোমার সন্তুষ্টি অনুপাতে কর। হে আল্লাহ! তুমি তোমার সাথে আমার সাক্ষাতের দিনকে সর্বোত্তম দিন কর। {আলমুজামুল আওসাত লিততাবারানী, হাদীস নং-৯৪১১} ঘ) হযরত সাদ রাঃ বলেন, وَيَقُولُ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَتَعَوَّذُ بِهِنَّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ أَنْ أُرَدَّ إِلَى أَرْذَلِ الْعُمُرِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا، وَعَذَابِ الْقَبْرِ» রাসূল সাঃ প্রতি নামাযের পর এই শব্দে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতেন, “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কৃপণতা থেকে পানাহ চাই। এবং অভাব থেকে পানাহ চাই এবং অশীতিপর বৃদ্ধাবস্থা থেকে পানাহ চাই এবং দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের আজাব থেকে পানাহ চাই। {সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৫৪৭৯} ঙ) مُحَمَّدُ بْنُ أَبِي يَحْيَى، قَالَ: رَأَيْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ الزُّبَيْرِ وَرَأَى رَجُلًا رَافِعًا يَدَيْهِ بِدَعَوَاتٍ قَبْلَ أَنْ يَفْرُغَ مِنْ صَلَاتِهِ، فَلَمَّا فَرَغَ مِنْهَا، قَالَ: «إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَكُنْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ صَلَاتِهِ হযরত মুহাম্মদ বিন আবী ইয়াহইয়া বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের রাঃ কে দেখলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে নামাযের ভিতরে হাত তুলে দুআ করছেন। যখন লোকটি নামায শেষ করল। তখন তিনি তাকে বললেন, নিশ্চয় রাসূল সাঃ নামায শেষ করার আগে হাত তুলে দুআ করতেন না। {আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৩২৪} এছাড়া আরো অসংখ্য হাদীস রয়েছে যা প্রমাণ করে রাসূল সাঃ ফরজ নামাযের পর হাত তুলে দুআ করতেন। ২য় বিষয় পূর্বের আলোচনা দ্বারা পরিস্কার হয়ে গেল যে, রাসূল সাঃ ফরজ নামায শেষে হাত তুলে দুআ করতেন। এখন প্রশ্ন হল, রাসূল সাঃ ও সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে সম্মিলিতভাবে দুআ করা প্রমাণিত কি না? নিচে কয়েকটি হাদীস দেয়া হল। যা পরিস্কারভাবে সম্মিলিত দুআ করা ও সম্মিলিত দুআর প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। 
 ১ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، قَالَ: أَتَى رَجُلٌ أَعْرَابِيٌّ مِنْ أَهْلِ البَدْوِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَلَكَتِ المَاشِيَةُ، هَلَكَ العِيَالُ هَلَكَ النَّاسُ، «فَرَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَيْهِ، يَدْعُو، وَرَفَعَ النَّاسُ أَيْدِيَهُمْ مَعَهُ يَدْعُونَ» হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা একজন গ্রাম্য সাহাবী রাসূল সাঃ এর কাছে আসলেন জুমআর দিন। এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জিনিস পত্র, পরিবার, মানুষ সবই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। একথা শুনে রাসূল সাঃ তার উভয় হাত উত্তলোন করলেন দুআর উদ্দেশ্যে। উপস্থিত সবাই রাসূল সাঃ এর সাথে দুআর জন্য হাত উত্তোলন করলেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১০২৯} এ হাদীসে পরিস্কারভাবে রাসূল সাঃ থেকে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত প্রমানিত। লক্ষ্য করুন। রাসূল সাঃ দুআ করেছেন, আর উপস্থিত সাহাবীগণ আমীন আমীন বলে সম্মিলিত মুনাজাতে অংশ নিয়েছেন। 
 ২ عَنْ حَبِيبِ بْنِ مَسْلَمَةَ الْفِهْرِيِّ – وَكَانَ مُسْتَجَابًا -: أَنَّهُ أُمِّرَ عَلَى جَيْشٍ فَدَرِبَ الدُّرُوبِ، فَلَمَّا لَقِيَ الْعَدُوَّ قَالَ لِلنَّاسِ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – يَقُولُ: ” «لَا يَجْتَمِعُ مَلَأٌ فَيَدْعُو بَعْضُهُمْ وَيُؤَمِّنُ سَائِرُهُمْ، إِلَّا أَجَابَهُمُ اللَّهُ» “. ثُمَّ إِنَّهُ حَمِدَ اللَّهَ، وَأَثْنَى عَلَيْهِ، وَقَالَ: اللَّهُمَّ احْقِنْ دِمَاءَنَا، وَاجْعَلْ أُجُورَنَا أُجُورَ الشُّهَدَاءِ، رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ وَقَالَ: الْهَنْبَاطُ بِالرُّومِيَّةِ: صَاحِبُ الْجَيْشِ. وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ غَيْرَ ابْنِ لَهِيعَةَ، وَهُوَ حَسَنُ الْحَدِيثِ. হযরত হাবীব বিন মাসলামা আলফিহরী রাঃ। যিনি মুস্তাজাবুদ দাওয়া ছিলেন। তাকে একবার একটি বাহিনী প্রধান নিযুক্ত করা হয়। যুদ্ধের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের পর তিনি যখন শত্রুর সম্মুখিন হলেন। তখন লোকদের বললেন, আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন “যখনি কোন দল একত্র হয়, তারপর তাদের কথক দুআ করে, আর অপরদল আমীন বলে তখন আল্লাহ তাআলা তা কবুল করে নেন”। এ হাদীস বলার তিনি [হাবীব বিন মাসলামা রাঃ] হামদ ও সানা পড়লেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাদের প্রাণ রক্ষা কর। আর আমাদের শহীদের সওয়াব দান কর। {মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪৭, মুস্তাতাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-৫৪৭৮, আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৩৫৩৬} আল্লামা হায়ছামী রহঃ বলেন, উক্ত হাদীসের সূত্রের প্রতিটি রাবী সহীহের রাবী। ইবনে লাহিয়াহ ছাড়া। কিন্তু সেও হাসান পর্যায়ের রাবী। {মাযমাউয যাওয়ায়েদ-১৭৩৪৭} 
 ৩ আরো একটি হাদীস উদ্ধৃত করছি। যা আলবিদায়া ওয়াননিহায়া গ্রন্থে আল্লামা ইবনে কাসীর রহঃ সনদসহ বর্ণনা করেছেন। যার সারমর্ম হল,আলা বিন হাযরামী রাঃ। মুস্তাজাবুদ দাওয়া সাহাবী ছিলেন। একদা বাহরাইনের জিহাদ থেকে ফেরার পথে এক স্থানে যাত্রাবিরতি করলে খাবার দাবার ও তাবুর রসদসহ উটগুলো পালিয়ে যায়। তখন গভীর রাত। সবাই পেরেশান। ফজরের সময় হয়ে গেলে আজান হল। সবাই নামায আদায় করলেন। নামায শেষে আলা বিন হাযরামী রাঃ সহ সবাই হাত তুলে সূর্য উদিত হওয়ার সূর্যের কিরণ গায়ে লাগা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় দুআ করতে থাকেন। {আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৬/৩২৮-৩২৯} উক্ত ঘটনাটির পূর্ণ বিবরণের আরবী পাঠ وَقَدْ كَانَ الْعَلَاءُ مِنْ سَادَاتِ الصَّحابة الْعُلَمَاءِ العبَّاد مُجَابِي الدَّعوة، اتَّفق لَهُ فِي هَذِهِ الْغَزْوَةِ أنَّه نَزَلَ مَنْزِلًا فَلَمْ يَسْتَقِرَّ النَّاس عَلَى الْأَرْضِ حَتَّى نَفَرَتِ الْإِبِلُ بِمَا عَلَيْهَا مِنْ زَادِ الْجَيْشِ وَخِيَامِهِمْ وشرابهم، وبقوا على الأرض ليس معهم شئ سِوَى ثِيَابِهِمْ – وَذَلِكَ لَيْلًا – وَلَمْ يَقْدِرُوا مِنْهَا عَلَى بَعِيرٍ وَاحِدٍ، فَرَكِبَ النَّاس مِنَ الهمِّ والغمِّ مالا يُحَدُّ وَلَا يُوَصَفُ، وَجَعَلَ بَعْضُهُمْ يُوصِي إِلَى بَعْضٍ، فَنَادَى مُنَادِي الْعَلَاءِ فَاجْتَمَعَ النَّاس إِلَيْهِ، فَقَالَ: أيُّها النَّاس أَلَسْتُمُ الْمُسْلِمِينَ؟ أَلَسْتُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ؟ أَلَسْتُمْ أَنْصَارَ اللَّهِ؟ قَالُوا: بَلَى، قَالَ: فَأَبْشِرُوا فَوَاللَّهِ لَا يَخْذِلُ اللَّهُ مَنْ كَانَ فِي مِثْلِ حَالِكُمْ، وَنُودِيَ بِصَلَاةِ الصُّبح حِينَ طَلَعَ الْفَجْرُ فصلَّى بالنَّاس، فلمَّا قَضَى الصَّلاة جَثَا عَلَى رُكْبَتَيْهِ وَجَثَا النَّاس، وَنَصِبَ فِي الدُّعاء وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَفَعَلَ النَّاس مِثْلَهُ حَتَّى طَلَعَتِ الشَّمْسُ، وَجَعَلَ النَّاسُ يَنْظُرُونَ إِلَى سَرَابِ الشَّمْسِ يَلْمَعُ مَرَّةً بَعْدَ أُخْرَى وَهُوَ يَجْتَهِدُ فِي الدُّعَاءِ ৪ عَنْ سَلْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا رَفَعَ قَوْمٌ أَكُفَّهُمْ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ يَسْأَلُونَهُ شَيْئًا، إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَضَعَ فِي أَيْدِيهِمُ الَّذِي سَأَلُوا হযরত সালমান রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যখন কোন জামাআত তাদের প্রয়োজন পূর্ণ করার আশায় আল্লাহর দরবারে হাত উঠায়, তখন আল্লাহর উপর হক হল প্রার্থিত বিষয় উক্ত জামাতকে প্রদান করা। {আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৬১৪২, আততারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং-১৪৪, মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪১, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৩১৪৫} আল্লামা হায়ছামী রহঃ বলেন, এ হাদীসের সনদের সকল রাবীগণ সহীহের রাবী।{ মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪১} এরকম আরো অসংখ্য বর্ণনা প্রমাণ করে সম্মলিত মুনাজাত এটি দুআ কবুলের আলামত। সেই সাথে উত্তম আমল। যা কিছুতেই বিদআত হতে পারে না। যে সম্মলিত মুনাজাত রাসূল সাঃ নিজে করেছেন সাহাবীদের নিয়ে, সাহাবায়ে কেরাম সাথিবর্গকে নিয়ে যে সম্মলিত মুনাজাত করেছেন, তা কী করে বিদআত হতে পারে? সুতরাং বুঝা গেল যে, সম্মিলিত মুনাজাত করাও রাসূল সাঃ এবং সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে প্রমাণিত। সেই সাথে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করতে রাসূল সাঃ পরিস্কার ভাষায় উৎসাহ প্রদান করেছেন। ৩য় বিষয় আসলে পূর্বের দু’টি বিষয় পরিস্কার হবার পর আপনি নিজেই এর সমাধান বের করে নিতে পারেন। নামাযের পর দুআ রাসূল সাঃ নিজে করেছেন। আর সম্মিলিত দুআ কবুল হয় মর্মে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন। তিনি নিজেও সম্মিলিতভাবে দুআ করেছেন। সুতরাং ফরজ নামাযের পর দুআ করলে সেটি বিদআত হবে কিভাবে?
তবে এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। যথা-

 


ফরজ নামাযের পর দুআকে জরুরী মনে করা।


দুআকে নামাযের অংশ মনে করা।


এ ছাড়া নামায পূর্ণ হয় না আকিদা রাখা।

 

এ তিনটির কোন একটি পাওয়া গেলে উক্ত দুআ বিদআত হবে। কারণ এর কোন প্রমাণ নেই।

কিন্তু যদি উপরোক্ত কোন কারণ পাওয়া না যায়। বরং যেহেতু রাসূল সাঃ ফরজ নামাযের পর দুআ করেছেন, সেই সাথে সম্মিলিতভাবে দুআ করতে উৎসাহ প্রদান করেছেন, সেই সওয়াব পাবার আশায় যদি ইমাম সাহেব সম্মিলিতভাবে দুআ করেন, তাহলে উক্ত সম্মিলিত দুআকে বিদআত বলার কোন সুযোগ নেই। যদি কেউ বলে তাহলে সে হাদীসে নববী সম্পর্কে অজ্ঞ ছাড়া আর কিছু নয়।
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

জ্বি না ভাই। এমন কোন সহিহ হাদিস নেই। ঈদের সালাতের পরে, জানাযার পরে, প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে প্রচলিত মোনাজাত সম্পুর্ন বিদায়াত । জাযাকাল্লাহ খাইরা।      

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

না সম্মিলিত মোনাজাত করার কোনো নিময় সহীহ হাদিস ও কোরআনে পাওয়া যায় না। যেটা কোরআন ও সহীহ হাদিসে নেই সেটা ইসলামে নেই। যদি নিয়ম বানিয়ে ফেলা হয় তাহলে সেটা বেদআত।

সম্মিলিত মুনাজাতের এই প্রথাকে চালু রাখার উদ্দেশ্যে কিছু কিছু আলেম যে সকল বর্ণনা পেশ করে থাকেন, তার মধ্যকার দুটি বর্ণনা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল। মূলত এর স্বপক্ষে কোন সহীহ অথবা জঈফ বর্ণনাও খুঁজে পাওয়া যায় না।

১) আসওয়াদ আল আমেরী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ফজরের সালাত আদায় করলাম। তিনি সালাম ফিরিয়ে ঘুরে বসলেন এবং তাঁর দু হাত উঠালেন ও দুয়া করলেন। [ফাতাওয়া নাযীরিয়া, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৫৬৫]

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। সনদগত ত্রুটি হলঃ বলা হয়ে থাকে আসওয়াদ আল আমেরী। অথচ মূল নাম হল জাবির ইবনু ইয়াযীদ ইবনুল আসওয়াদ আস সাওয়াঈ। [তাহযীবুত তাহযীব, দ্বিতীয় খণ্ড, ৪২ নং পৃষ্ঠা, রাবী ৯৩০] উপনাম হিসাবে আল আমেরী উল্লেখ করা হয়। সেটিও ভুল। মূলতঃ এই লক্বব হবে তার পূর্বের রাবীর নামের সাথে। অর্থাৎ ইয়ালা ইবনু আত্বা আল আমেরী। [তাহযীবুত তাহযীব, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ৩৫১, রাবী ৮১৬৬]

 দ্বিতীয়তঃ সবচেয়ে মারাত্মক যে বিভ্রান্তি তা হল মূল হাদীসের সাথে অন্য কারো কথা যোগ করা। উক্ত হাদীসের শেষের অংশঃ “অতঃপর তিনি দু হাত তুললেন এবং দুয়া করলেন” এটি মূল কিতাবে নেই। হাদীসটি মিয়া নাযীর হুসাইন মুহাদ্দিস দেহলভী তাঁর ফাতাওয়া নাযীরিয়াতে উল্লেখ করেছেন এভাবেই। অতঃপর আবদুর রহমান মুবারকপুরীও তাঁর গ্রন্থ তুহফাতুল আহওয়াযীতে হুবহু ঐভাবে উল্লেখ করেছেন এবং তাঁরা উভয়েই মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবার বরাত দিয়েছেন। কিন্তু মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাতে শেষের ঐ অংশটুকু নেই। [হাফেয আব্দুল্লাহ ইবনু আবী শাইবা, আল মুসান্নাফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৩৭]

শায়খ আলবানী রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ এতে মিথ্যা ও ত্রুটি উভয়টিই সংযুক্ত হয়েছে। [সিলসিলা যঈফা, ১২তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৫৩] অতঃপর তিনি বলেনঃ মিথ্যা হওয়ার কারণ হল উক্ত বাড়তি অংশ। আর মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবাতে এই অতিরিক্ত অংশের অস্তিত্ব নেই। অন্য কারো নিকটেও নেই যারা এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। এটি মূলত প্রবৃত্তির তাড়নায় কেউ সংযোগ করেছে। এর থেকে আমরা আল্লাহর কাছে পরিত্রাণ চাচ্ছি। [সিলসিলা যঈফা, ১২তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৫৩]

 এখন প্রশ্ন হল, এই অতিরিক্ত অংশটুকু তাঁরা কিভাবে স্ব স্ব গ্রন্থে উল্লেখ করলেন? বলা যায়, তারা মূল কিতাব না দেখেই উল্লেখ করেছেন। বিশেষ করে আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী রহিমাহুল্লাহ যে মূল গ্রন্থ না দেখেই উল্লেখ করেছেন, তা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। তিনি উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে বলেনঃ এভাবেই কিছু উলামায়ে কেরাম হাদীসটি সনদ ছাড়াই উল্লেখ করেছেন এবং মুসান্নাফ ইবনে শাইবার দিকে সম্বোধিত করেছেন। আমি এর সনদ সম্পর্কে অবগত নই। [তুহফাতুল আহওয়াযী শরহে তিরমিযী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৭১, ২৯৯ নং হাদীসের শেষ আলোচনা দ্রষ্টব্য]

 অনুরূপ মিয়া নাযীর হুসাইন দেহলভীও যে মূল কিতাব না দেখেই উদ্ধৃত করেছেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ ফাতাওয়া নাযীরিয়াতে এ সংক্রান্ত চারটি প্রশ্নোত্তর উল্লেখ করা হয়েছে। চারটিতেই উক্ত হাদীস একইভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। [ফাতাওয়া নাযীরিয়া, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৫৬০-৫৭০] অতএব এটি জানার পরও যদি এই বর্ণনাকে মুনাজাতের দলীল হিসাবে পেশ করা হয় তাহলে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নামে মিথ্যারোপ করা হবে।

 ২) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন বান্দা যখন প্রত্যেক সালাতের পর স্বীয় দু হাত প্রসারিত করে বলে, হে আমার আল্লাহ। ইবরাহীম ইসহাক্ব ইয়াকুবের আল্লাহ। এবং জিবরীল মীকাঈল ও ইসরাফীলের আল্লাহ। আমি আপনার নিকট কামনা করছি যে, আপনি আমার দুয়া কবুল করুন, কারণ আমি বিপদগ্রস্ত। আমাকে আমার দ্বীনের উপর অটল রাখুন, কারণ আমি দূর্দশা কবলিত। আমার প্রতি রহম করুন, আমি পাপী। আমার দরিদ্র্যতা দূর করুন, নিশ্চয়ই আমি ধৈর্যধারণকারী। তখন তার দু হাত নিরাশ করে ফিরিয়ে না দেওয়া আল্লাহর জন্য বিশেষ কর্তব্য হয়ে যায়। [হাফেজ আবু বকর ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলা, হাদিস নং ১৩৫, পৃষ্ঠা ৪৯; মু’জামু ইবনুল আরাবী, ১১৭৩]

 তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনাটি মুহাম্মাদ তাহের পাট্টানী তার জাল হাদীসের গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। [তাযকিরাতুল মাওযুআত, পৃষ্ঠা ৫৮] কারণ এটি বিভিন্ন দোষে দুষ্ট। এর সনদে দুই জন রাবীর নাম ভুল রয়েছে। আবদুল আযীয ইবনু আব্দুর রহমান আল ক্বারশী। অথচ রিজাল শাস্ত্রে এ নামের কোন ব্যক্তিকে পাওয়া যায় না। মূল নাম হবে আব্দুল আযীয ইবনু আব্দুর রহমান আল বালেসী। [আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ আয যাহাবী, মীযানুল ইতিদাল ফী নাক্বদির রিজাল, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৩১, রাবী নং ৫১১২]

 তাছাড়া আবু ইয়াকূব ইসহাক্ব ইবনু খালিদ ইবনু ইয়াযীদ আল বালেসী নামক রাবীও দূর্বল। [মীযানুল ইতিদাল, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৯০] আব্দুল আযীয নামক বর্ণনাকারীও ত্রুটিপূর্ণ। [আহমাদ ইবনু আলী ইবনু হাজার আল আসক্বালানী, তাহযীবুত তাহযীব, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৩০, রাবী নং ১৭৯৫] খুসাইফ নামক ব্যক্তিও নানা অভিযোগে অভিযুক্ত। [তাহযীবুত তাহযীব, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৩০]


ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ