বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রোজা রাখা হলে তাকে নফল রোজা বলে। নফল মানে অতিরিক্ত, ফরজ বা ওয়াজিব নয়। মূলত এই নফল রোজা দুই প্রকার। প্রথম প্রকার হলো নির্ধারিত বা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কর্তৃক পালনকৃত, এই প্রকার রোজা সুন্নত। দ্বিতীয় প্রকার হলো অনির্ধারিত, এগুলো মুস্তাহাব। এই উভয় প্রকার রোজাকে সাধারণভাবে নফল রোজা বলা হয়ে থাকে। নফল রোজার ফজিলত রোজার ফজিলত সম্পর্কে, আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক বস্তুর জাকাত আছে, শরীরের জাকাত রোজা। (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আরও বলেন, রোজা ঢালস্বরূপ এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার সুদৃঢ় দুর্গ। (নাসায়ি)। হজরত ইবনে খুজাইমা ও হাকিম আবু ইমাম বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! আপনি আমাদের কিছু আমল করার উপদেশ দান করুন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, রোজা অবলম্বন করো, এর সমকক্ষ কোনো আমল নেই। তারা পুনরায় বললেন, আমাদের কোনো আমল বলে দিন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, রোজা অবলম্বন করো, এর সমতুল্য কোনো আমল নেই। তারা পুনরায় একই প্রার্থনা করলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) পুনরায় একই আদেশ করলেন। (সুনানুন নাসায়ি)। বৃহস্পতিবারের নফল রোজা পালন প্রসঙ্গে, আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার 'আল্লাহ তাআলার দরবারে' আমল পেশ করা হয়। সুতরাং আমার আমলসমূহ যেন রোযা পালনরত অবস্থায় পেশ করা হোক এটাই আমার পছন্দনীয়। (সূনান আত তিরমিজী, হাদিস নম্বরঃ ৭৪৭ তাখরাজুল মিশকাতঃ ২০৫৬ হাদিসের মানঃ সহিহ)। কেউ যদি শুধু শুক্রবার রোজা রাখার ক্ষেত্রে খাস করে নেয় তাহলে মাকরূহে তানজিহী। ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম মালেকের মত মুতাবেক কেউ যদি শুধু শুক্রবার কিংবা শুধু শনিবার রোজা রাখে তাতে সমস্যা নেই এটা জায়েয। কিন্ত এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে জুমআর দিনকেই যেন খাস না করা হয়। তবে কেউ যদি জুমআর আগে ও পরের দিন একসাথে ২টি মিলিয়ে রোজা রাখে কিংবা কারো অভ্যাসগত, বিশেষ নিয়ত বা মান্নতের রোজা, কিংবা ইয়াওমে আরাফাহ ইয়াওমুল বীয বা কাজার রোজা জুমআর দিনেই পড়ে যায় তাহলে সে রোজা রাখতে পারবে এ ব্যাপারে কারো কোন মতভেদ নেই। (ইলাউস সুনানঃ ৯/১০১; হাশিয়ায়ে ত্বহতাবী আলা মারাকিল ফালাহঃ ৩১৫; ফাতহুল মুলহিমঃ ৩/১৫৪; ফসতহুল বারীঃ ৪/২৭৫) সহীহ হাদিস ভিত্তিক দলিলঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল কসাঃ) ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কেউ জুমআর আগে অথবা পরে একদিন মিলানো ব্যতিত শুধু জুমআর দিন রোজা রেখো না। (সহীহ বুখারী হাদীসঃ ১৮৮৪)
এটা নফল রোজা।তবে শুধু শুক্রবার নির্ধারন করে রোজা রাখা রাসূল (সা) নিষেধ করেছেন।যদি সে মনে করে শুক্রবারে বেশি ফজিলত।তাই নফল রোজা যে কোন দিন রাখতে পারবেন,এর জন্য নিদৃষ্ট দিন ধার্য করা শরিয়ত সম্মত হবে না।
মুহাম্মাদ ইব্নু ‘আব্বাদ (রহঃ) বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন, আমি জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি জুমু’আর দিনে (নফল) সওম পালন করতে নিষেধ করেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবূ ‘আসিম (রহঃ) ব্যতীত অন্যেরা অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, পৃথকভাবে জুমু’আর দিনে সওম পালন (-কে নিষেধ করেছেন)। সহিহ বুখারী-১৯৮৪
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের কেউ যেন শুধু জুমু’আর দিনে সওম পালন না করে কিন্তু তার পূর্বে একদিন অথবা পরের দিন (যদি পালন করে তবে জুমু’আর দিনে সওম পালন করা যায়)। সহিহ বুখারী-১৯৮৫