স্বপ্নে রাসূল সাঃ এর যিয়ারত হলে এর ব্যাখ্যা হলো- সেখানে কোন অপ্রিয় কথা বা অপ্রীতিকর দৃশ্য না দেখলে তা সু সংবাদের আলামত৷ তার দ্বারা নেক আমল সাধিত হওয়ার লক্ষণ৷ পক্ষান্তরে স্বপ্নে অপ্রীতিকর কিছু দেখলে বুঝতে হবে, স্বপ্নদ্রষ্টার জীবনে দুঃখ-কষ্ট অভাব ও সংকট দেখা দিবে৷ —মুহাম্মদ ইবনে সীরীনের স্বপ্নের ব্যাখ্যা, পৃঃ ১১
রাসূলে করীম হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নে দেখা অত্যন্ত সৌভাগ্যের ব্যাপার। যিনি স্বপ্নে দেখলেন, তিনি সত্যিই হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখলেন। কারন এ ব্যাপারে একটি হাদিস আছে: হযতর আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নযোগে দেখল, সে যেন আমাকে বাস্তবেই দেখল। কারণ শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না। - সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৬৫৯২, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৬০৫৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-৬০৫২, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৫০২৫, সুনানে দারেমী, হাদিস নং-২১৩৯, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-৩৯০৫, সুনানে তিরমিজী, হাদিস নং-২২৭৬।
নবী করীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস স্পষ্ট এবং পরিস্কার। কিন্তু কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফলশ্রুতি ও পরিণামের ভিত্তিতে এটা বিজ্ঞজনদের মতবিরোধের একটি ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সম্পর্কে আনযর শাহ মাসউদী রচিত নকশে দাওয়াম কিতাব থেকে ‘স্বপ্নে রাসূল্লাহ (সাঃ) –এর দর্শন’ অংশ থেকে একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরা হলোঃ
“যদি কোন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নে দেখে এবং তার দেখা ঐ আকৃতি সাদৃশ্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রকৃত আকৃতি অবয়বের অনুরূপ না হয়,তাহলে কি এই স্বপ্ন সঠিক বলে বিবেচিত হবে? কিংবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বপ্নে, দ্রষ্টাকে আপন শরীয়তের বরখেলাপ কোন আদেশ দেন, তাহলে সেই আদেশের উপর আমল করা কি বৈধ হবে? এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক উল্লেখিত হাদিস সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনার নতুন নতুন দরজা খুলে দিয়েছে। এ কারণে কোন কোন আলেমের অভিমত এই যে, স্বপ্ন তখনই সত্য বলে বিবেচিত হবে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর প্রকৃত অবয়বে দেখা যাবে। এমন কি তাঁকে যদি শিশু অবস্থায় দেখা যায়, তাহলে তাঁর অবয়ব শিশু কালেরই হতে হবে। আর যদি তাঁকে যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব অথবা বার্ধক্যের অবয়বে দেখা যায়, তাহলে সে অবয়বের সাথে তাঁর সংশ্লিষ্ট বয়সকালীন আচার-আচরণ, স্বভাব-চরিত্র ও চেহারা- ছবির মিল থাকতে হবে, যেমনটি বর্ণিত হয়েছে বিভিন্ন হাদিস ও রেওয়ায়েতে। যদি এর মধ্যে সামান্য পরিমানও পার্থক্য থাকে তাহলে সে স্বপ্ন নির্ভরযোগ্য বিবেচিত হবে না।
রাসুল সাঃ'কে স্বপ্ন দেখার ব্যাখ্যার ব্যাপারে একটি বিষয় জেনে রাখা ভাল, কোন ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) যে হালাতে (অবস্থায়) দেখতে পায়, তার আমলের হালাতও তেমনি হয়ে থাকে। ভাল অবস্থায় দেখলে আমল ভাল হবার দলীল বহন করে। আর খারাপ অবস্থায় দেখলে সেটি খারাপ আমল হবার দলীল বহন করে। তবে দেখাটি মিথ্যা নয়, ধোঁকা নয়। কারণ শয়তান তাঁর আকৃতি ধারণ করতে পারে না।
উল্লেখ্য-বাহ্যিক দৃষ্টিতে দ্বীনদার নয় এমন কোন ব্যক্তি যদি নবী করীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নে দেখেছেন বলে শুনা যায়, তাহলে তা অবজ্ঞা করা বা অবিশ্বাস করা ঠিক নয়। কারণ কে ভাল আর কে খারাপ - সেটা আমরা আমাদের স্বল্প বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে পারি না। মহান আল্লাহর বিচার ভিন্ন। একজন মানুষের কোন দিক আল্লাহ পছন্দ করবেন, কোন কাজের দ্বারা তিনি আল্লাহর প্রিয় বান্দাতে পরিণত হবেন, সেটা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। কোন গুনাহগার ব্যক্তি যদি গুনাহজনিত কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়, ভবিষ্যতে অণুরূপ কর্ম করা থেকে বিরত থাকার দৃঢ় সংকল্প করে এবং গুনাহ যদি কারো হক নষ্টজনিত হয় এবং তা আদায় করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চায় আল্লাহপাক তাকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ বড় দয়াবান এবং ক্ষমাশীল। আল্লাহ ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে ভালবাসেন। সুতরাং কে ক্ষমাপ্রাপ্ত এবং কে আল্লাহ তাআলার নিকট পছন্দনীয় তা একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন।
এমনি একটি ঘটনা শুনুন যিনি ছিলেন হিন্দু পণ্ডিত কিন্তু রাসুল সা.কে স্বপ্নে দেখার পর ইসলাম গ্রহণ করে ফেলেন।
ড. ইসলামুল হক ছিলেন একজন আচর্য হিন্দু পণ্ডিত। নবীজি তাকে স্বপ্নে দেখা দেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ইসলাম কবুল করেন।লেখক বলেন- ঢাকায় যথন তিনি এলেন তার বক্তৃতা শুনতে যাই, বেশ কয়েক বছর আগে। দীন সম্পর্কে তার অভিজ্ঞান আধুনিক ও মন ছুঁয়ে যাওয়া। নবীজির স্পর্শে তিনি ধন্য, তা তার প্রতিটি বাক্যের মধ্যে পরিস্ফুট। তিনি কিছু দিন আগে ইন্তেকাল করেছেন।
দুনিয়ায় কে ভালো কে মন্দ সেটা বিচার মুশকিল। কে জান্নাতে যাবেন আর কে জাহান্নামে সেটাও আল্লাহর হাতে। তাই মানুষের উপরটা দেখেই সব সময় মন্তব্য করা অনুচিত।
নবীজিকে স্বপ্নে দেখার অনেক আমল রয়েছে। আছে বেশ কিছু বইও। কিন্তু এসব আমল করলেই যে তিনি নবীজিকে স্বপ্নে দেখবেন এর কোনো নির্ভরতা নেই। আবার অনেকে সারাজীবন আল্লাহ রাসুলের নাম নিয়েছেন, বন্দেগী করেছেন তাকেও রাসুল সা. দেখা দিতে নাও পারেন।
প্রকৃত সত্য সেটাই, উপমাহীন এ দর্শনের জন্য পরিচ্ছন্ন মনন, আত্মবিশ্বাসী মানসিকতা ও গ্রহণযোগ্য আমলই জরুরি।