শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

একটি ফরাসি Navisphere"। একধরনের ভূ-গোলক যা সমুদ্রগামী জাহাজে ব্যবহৃত হত। ইংরেজী পোল স্টার (pole star)পৃথিবীর উত্তর মেরুর অক্ষ বরাবর দৃশ্যমান তারা। ধ্রুব তারা নামে পরিচিত। এই তারাটি পৃথিবীর অক্ষের উপর ঘৃর্ণনের সাথে প্রায় সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে আবর্তিত হয়। প্রাচীনকালে দিক নির্ণয় যন্ত্র আবিষ্কার পূর্বে সমুদ্রে জাহাজ চালাবার সময় নাবিকরা এই তারার অবস্থান দেখে দিক নির্ণয় করতো। সপ্তর্ষী মন্ডল এর প্রথম দুটি তারা পুলহ এবং ক্রতু কে সরল রেখায় বাড়ালে সেটা এ তারাটিকে নির্দেশ করে। এটি লঘু সপ্তর্ষী মন্ডলে দেখা যায়। রাত বাড়ার সাথে সাথে আকাশের দৃশ্যমান সকল তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে। শুধুমাত্র ধ্রুব তারাই মোটামোটি একই স্থানে অবস্থান(দৃশ্যমান) থাকে। এটি আকাশের একমাত্র তারা,যেটিকে এ অঞ্ঝলে হতে বছরের যে কোন সময়ই ঠিক এ জায়গায় দেখা যেত।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Arman

Call

এই ধ্রুবতারা নামে আমরা যেটিকে চিনি, বিদেশিরা তাকে বলে পোলারিস নর্থ স্টার (POLARIS NORTH STAR)। পৃথিবীর যেমন সাউথ পোল, নর্থ পোল আছে, আমাদের রাতের আকাশটাও তেমনই এই তারাটিকে পোল বা মেরু হিসাবে মেনে নিয়ে, অবিরত ঘুরছে। ধ্রুবতারাকে কেন্দ্র করে যেন ঘুরছে আকাশ (stellarium view) প্রাচীন কাল থেকে মানুষের অনন্ত আগ্রহ তাদের মাথার উপরের আকাশকে নিয়ে। ওই আকাশের তারাদেরকে মনে রাখার জন্য তাই তারা সমস্ত আকাশের চোখে পড়ার মত তারাদের নিয়ে কল্পনা করলেন নানা কাহিনী, নানা উপাখ্যান। আর এই উপাখ্যানের এক একটা দৃশ্যে জীবন্ত হয়ে উঠল এক একটা অঞ্চলের তারারাজি। এভাবে আকাশ ভাগ হল ৮৮ টা অঞ্চলে, এর মধ্যে নতুন কয়েকটা বাদে বেশিরভাগই চিহ্নিত হয়েছে বহু আগে থেকে। সেইসব বহু আগে চিহ্নিত তারামণ্ডলের একটা হল ursa minor, বাঙলায় একে ডাকা হয় শিশুমার বা লঘুসপ্তর্ষিমণ্ডল হিসাবে। আর এই মণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটিই হল আমাদের ধ্রুবতারা। এবার একটু ধ্রুবতারার নিজের পরিচয়ের দিকে আসি। ধ্রুবতারাকে রাতের আকাশের একটা মোটামুটি স্পষ্ট তারা বলা চলে। উত্তর গোলার্ধে উত্তর আকাশে একটু ভালোভাবে তাকালেই এটিকে চোখে পড়ার কথা। অবশ্য বাংলাদেশ বিষুব রেখার বেশ নিকটবর্তী হওয়ার জন্য এটিকে প্রায় দিগন্তের কাছাকাছি দেখা যায়। ফলে শহুরে আলোক পরিবেশে দেখাটা একটু কষ্ট হয়। ধ্রুবতারার আপাত ঔজ্জ্বল্য ১.৯ এর মত। অর্থাৎ পূর্ণিমার চাঁদের ঔজ্জ্বল্যের ৫৫ লাখ ভাগের এক ভাগের মত। কিন্তু এর সত্যিকার উজ্জ্বলতা কিন্তু অনেক বেশি। প্রকৃত উজ্জ্বলতা -৩.৬৬ এর মত। সূর্যের উজ্জ্বলতারও ২৪০০ গুনের মত [এসব তথ্য দেখে লেখককে বিশেষ জ্ঞানী ভাবলে আপনি বোকা হবেন। আসলে কোনটা কোনটার থেকে কত উজ্জ্বল এটা বের করা খুব একটা সহজ কাজ। শুধু তাদের আপাত বা প্রকৃত উজ্জ্বলতার পার্থক্যকে ২.৫১২ এর ঘাতে বসিয়ে ক্যালকুলেটরে চাপ দেন, যা ফল আসবে সেটাকেই একটু ভাব নিয়ে বলবেন অমুক তারা (যেটার আপাত বা প্রকৃত উজ্জলতা বেশি ছিল) থেকে অমুক তারা তত গুণ উজ্জ্বল] তবে এটার উজ্জ্বলতা দেখে তারাটিকে যতটা ভয়ঙ্কর উত্তপ্ত মনে হয়, আসলে এটা ততটা উত্তপ্ত না, পৃষ্ঠে ৭২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মত । এর এতো বেশি ঔজ্জ্বল্যের কারণ হল এর বিশাল ভর। তারাটির ভর ৬ সোলার মাস, অর্থাৎ ৬ টা গোটা সূর্যের ভরের সমান ! তারাটি আমাদের থেকে ৪৩১ আলোকবর্ষ দূরে। আবারও ধ্রুবতারার পরিচয়ে ফিরে আসি। এটি একটি শেফালী বিষম তারা (cepheid variable). বিষম তারা হল সেইসব তারা যেগুলোর উজ্জ্বলতা নিয়মিত পরিবর্তিত হয়। বিভিন্ন ধরণের বিষম তারাদের মধ্যে আবার শেফালী বিষম তারার উজ্জ্বলতা বেশ তাড়াতাড়ি পরিবর্তিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা ধ্রুবতারাটিকে একটি মাত্র তারা হিসাবে দেখলেও আসলে এটি একটি তিন তারার সিস্টেম, কিন্তু মূল ধ্রুবতারার বিশালত্বের জন্য অন্য দুটি চোখে পড়ে না। তিন তারার পোলারিস সিস্টেম (ছবিঃ উইকিপিডিয়া) একটু ইতিহাসে আসি। কবে থেকে মানুষ এটিকে ধ্রুবতারা হিসাবে চিনছে তা বের করাটা বেশ কঠিন হলেও জানা যায় গ্রীক জ্যোতির্বিদ পিথাস খ্রিষ্টপুর্ব ৩২০ অব্দের দিকে এটিকে ধ্রুবতারা হিসাবে নথিভুক্ত করেন। যাহোক, সেসব প্রত্নতাত্বিকদের ব্যাপার। শেষ করার আগে আগে আরেকটা কথা না বললে অন্যায় হবে। সেটা হল পৃথিবীর আজকের অবস্থানে আসার পেছনে এর একটা মৌলিক ভূমিকা রয়েছে। যুগে যুগে এটিই মানুষকে জানিয়ে এসেছে সে কত ডিগ্রি উত্তর বিষুব রেখায় অবস্থান করছে। মনে হয়, এটা না থাকলে আরও হাজার বছর লাগত পৃথিবীর আজকের অবস্থায় আসতে। বাংলায় অনুবাদকৃত তথ্য --- উইকিপিডিয়া

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ