শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
manik

Call

লেখক: জাহিদুল ইসলাম সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যে। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ এবং সাহাবাগণের উপর। সাধারণ ভাবে সকল মানুষ এবং বিশেষ ভাবে যুবক ও অবিবাহিতরা সবচেয়ে বড় যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, তাহলো অপরিচিতা মহিলার প্রতি দৃষ্টি প্রদান করা। তারা এই বিপদের সম্মুখীন সকল জায়গাতেই হচ্ছে। হাটে-বাজারে, হাসপাতালে, বিমানবন্দরে, এমন কি পবিত্র জায়গা গুলোতেও এ বিপদ থেকে মুক্ত নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: : مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنْ النِّسَاءِ “আমার পরে পুরুষের জন্যে মহিলাদের চেয়ে অধিক ক্ষতিকারক কোন ফিতনা রেখে যাই নি।” (বুখারী মুসলিম) তিনি আরও বলেছেন: إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ وَإِنَّ اللَّهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إِسْرَائِيلَ كَانَتْ فِي النِّساء “নিশ্চয়ই এই দুনিয়া হচ্ছে সবুজ-শ্যামল, সুমিষ্ট। আল্লাহ তা’আলা ইহাতে তোমাদেরকে খলীফা (প্রতিনিধি) নিযুক্ত করেছেন এই জন্যই যে, তিনি দেখতে চান তোমরা কি আমল কর। অতএব তোমরা দুনিয়ার ফিতনা হতে বাঁচ এবং মহিলাদের ফিতনা থেকেও বেঁচে থাক। কেননা বনী ইসরাইলের মধ্যে সর্ব প্রথম যে ফিতনা (বিপদ) দেখা দিয়েছিল তা ছিল মহিলার ফিতনা।” (মুসলিম) নিম্নে দৃষ্টি সংযত রাখার কতিপয় উপায় পেশ করা হল যা উক্ত বিপদজনক ফিতনা থেকে রক্ষা করতে সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ: ১) দৃষ্টি অবনত রাখা: হারাম বা নিষিদ্ধ জিনিষের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ না করার ব্যাপারে রয়েছে বহু আয়াত ও হাদীস : যেমন, আল্লাহ তা’আলা বলেন: قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ “মু’মিনদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জা স্থানের হেফাজত করে, এটা তাদের জন্যে পবিত্রতম; তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ অবিহিত।” (সূরা নূর: ৩০)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ عَلَى ابْنِ آدَمَ حَظَّهُ مِنْ الزِّنَا أَدْرَكَ ذَلِكَ لَا مَحَالَةَ فَزِنَا الْعَيْنَيْنِ النَّظَرُ وَزِنَا اللِّسَانِ النُّطْقُ وَالنَّفْسُ تَمَنَّى وَتَشْتَهِي وَالْفَرْجُ يُصَدِّقُ ذَلِكَ أَوْ يُكَذِّبُه “নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা আদম সন্তানের উপর জেনার একটা অংশ অবধারিত করে দিয়েছেন। নিশ্চিতভাবে তা সে পাবে। সুতরাং চোখের জিনা হল দৃষ্টি দেয়া। জিহ্বার জিনা হল কথা বলা। আর অন্তর কামনা করে। লজ্জা স্থান তা সত্যে পরিণত করে, অথবা মিথ্যায় পরিণত করে।” অর্থাৎ লজ্জা স্থানের দ্বারা কেউ অশ্লীলতায় লিপ্ত হয় আবার কেউ তা থেকে বিরত থাকে। (বুখারী মুসলিম)। সাহাবী জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রা:) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মহিলার প্রতি হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে যাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন: “তুমি তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখ।” (মুসলিম ও আবু দাউদ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলী (রা:) কে লক্ষ্য করে বলেছেন: يَا عَلِيُّ لَا تُتْبِعْ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ فَإِنَّ لَكَ الْأُولَى وَلَيْسَتْ لَكَ الْآخِرَة “হে আলী তুমি অপরিচিতা মহিলার প্রতি বার বার দৃষ্টি ফেলিও না। কেননা তোমার জন্যে প্রথমবার বৈধ হলেও দ্বিতীয় বার বৈধ নয়।” (তিরমিযী) হাদীসে উল্লেখিত প্রথমবার দৃষ্টি বৈধ হওয়ার উদ্দেশ্য হল, অনিচ্ছাকৃত বা হঠাৎ যেই দৃষ্টি পড়ে যায়; ইচ্ছাকৃত দেখা নয়। ২) আল্লাহ তা’আলার কাছে প্রার্থনা করা এবং তাঁর সম্মুখে নিজেকে উপস্থিত রাখা: এই কঠিন ফিতনা থেকে নিজেকে বাঁচানো ও হেফাজতে রাখার ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলার কাছে বার বার প্রার্থনা করা। মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদীসে কুদসীতে এসেছে: يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلَّا مَنْ هَدَيْتُهُ فَاسْتَهْدُونِي أَهْدِكُمْ “হে আমার বান্দাগণ! তোমরা সকলেই পথভ্রষ্ট, কিন্তু আমি যাকে হেদায়েত দেই সে নয়। সুতরাং আমার কাছে হেদায়েত চাও আমি তোমাদেরকে হেদায়েত দিব।” (মুসলিম) আল্লাহ তা’আলা বলেন: ”এবং যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে, তখন তাদেরকে বলে দাও: নিশ্চয়ই আমি সন্নিকট বর্তী। কোন আহ্বানকারী যখনই আমাকে আহবান করে তখনই আমি তার আহবানে সাড়া দিয়ে থাকি। সুতরাং তারাও যেন আমার আহবানে সাড়া দেয় এবং আমাকে বিশ্বাস করে, তাহলেই তারা সঠিক পথে চলতে পারবে।” (সূরা বাকারাঃ ১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দুয়াতে বলতেন: للَّهُمَّ اقْسِمْ لَنَا مِنْ خَشْيَتِكَ مَا يَحُولُ بَيْنَنَا وَبَيْنَ مَعَاصِيكَ “হে আল্লাহ আমাদের অন্তঃকরণে আপনার ভয় দান করুন, যা আমাদের এবং আপনার নিষিদ্ধ পাপকাজের মাঝে প্রতিবন্ধক হবে।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুয়াতে আরও বলতেন: للَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِي وَمِنْ شَرِّ بَصَرِي وَمِنْ شَرِّ لِسَانِي وَمِنْ شَرِّ قَلْبِي উচ্চারণ: (আল্লাহম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন শাররি সাময়ী, ওয়া মিন র্শারি বাছারী, ওয়া মিন র্শারি লিসানী, ওয়া মিন র্শারি ক্বলবী।) “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আমার কর্ণ, আমার চক্ষু, আমার জিহ্বা এবং আমার অন্তরের অনিষ্ট থেকে পরিত্রাণ চাই।” (আবু দাউদ)। আল্লামা আলবানী (র:) অত্র হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন।) ৩) সকল অবস্থায় আমাদেরকে পর নারীর প্রতি দৃষ্টি দেয়ার ব্যাপারে সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার চেষ্টা করতে হবে: কেননা সর্বাবস্থায়, সর্ব ক্ষেত্রে ও সকল সময় হারামে পতিত হওয়া থেকে দৃষ্টি সংযত রাখা আবশ্যক। সুতরাং বাতিল দ্বারা দলীল সাব্যস্ত করার অধিকার তোমার নেই এবং এই বলেও তুমি নিজেকে পাক বলে দাবী করিও না যে, বর্তমানে চলমান কুপ্রথা আমাকে এই ভয়াবহ বিপদের প্রতি আহবান করছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন: وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْراً أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَه فَقَدْ ضَلَّ ضَلالاً مُبِينا “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে ফায়সালা করলে কোন মু’মিন পুরুষ কিংবা মু’মিন নারীর নিজেদের কোন ব্যাপারে অন্য কোন সিদ্ধান্তের ইখতিয়ার থাকবে না। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সে তো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।”(সূরা আহযাব ৩৬) ৪) আল্লাহ তা’আলা আমাদের সম্পর্কে অবগত আছেন এবং তাঁর জ্ঞান দ্বারা আমরা পরিপূর্ণভাবে পরিবেষ্টিত। তাই তাঁর থেকে লজ্জা করা আবশ্যক: আল্লাহ তা’আলা বলেন: وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْأِنْسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهِ نَفْسُهُ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ “আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবা স্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী।”(সূরা ক্বাফঃ ১৬) আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন: يَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُور “চোখের চুরি এবং অন্তরের গোপন বিষয় তিনি জানেন।” (সূরা মু’মিন ১৯) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন: “আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি আল্লাহ তা’আলা থেকে লজ্জা করার জন্যে, যেমন ভাবে তুমি তোমার সম্প্রদায়ের একজন ভাল লোক থেকে লজ্জাবোধ কর।” (অত্র হাদীসটি হাসান বিন সুফইয়ান বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম আহমাদ (র:) কিতাবুয যুহুদের মধ্যে উল্লেখ করেছেন ও আল্লামা নাছির উদ্দিন আলবানী (র:) ইহাকে সহীহ বলেছেন।) অতত্রব আল্লাহ তা’আলা থেকে লজ্জা করুন। আপনি আপনার দৃষ্টিকে অধিক হালকা মনে করে লাগামহীন ভাবে ছেড়ে দিবেন না। ৫) আপনার কান, চোখ এবং দেহের চামড়া আপনার আপনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে: এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন: حَتَّى إِذَا مَا جَاءُوهَا شَهِدَ عَلَيْهِمْ سَمْعُهُمْ وَأَبْصَارُهُمْ وَجُلُودُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ “তারা যখন জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে, তখন তাদের কান, চক্ষু, ও ত্বক তাদের কর্ম সম্পর্কে সাক্ষী দিবে।”(সূরা ফুসসিলাত (হা মীম সাজদাহ ২০) ৬) স্মরণ করুন ঐ সমস্ত ফেরেশতাদেরকে যারা আপনার প্রতিটি আমলকে সংরক্ষণ করে রাখছে: আল্লাহ তা’আলা বলেন: : مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيد “সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।” (সূরা ক্বাফ ১৮) আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন: وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِينَ ,كِرَاماً كَاتِبِينَ , يَعْلَمُونَ مَا تَفْعَلُونَ “নিশ্চয়ই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে। সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। তারা জানে যা তোমরা কর।” (সূরা ইনফিত্বারঃ ১০-১২)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ