শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

উপকারঃ প্রকৃতপক্ষে ক্ষুদঋণের খুব একটা উপকার বা সুবিধা আছে বলে আমার মনে হয় না। আমাদের সমাজে একটা কথা প্রচলিত আছে যে- ব্যাংক আপনাকে ঠিক তখনই ঋণ দেবে যখন আপনি প্রমান করতে পারবেন এই ঋণটা আসলে আপনার প্রয়োজন নেই। একটা ছোট উপকার আছে সেটা হলো গরীব সহায়-সম্বলহীন মানুষ যখন খুবই অর্থের প্রয়োজন বোধ করেন তখন ঋণ হিসেবে সাময়িকভাবে কিছু টাকা পান, যা পরবর্তীতে সুদে-আসলে কয়েক গুণ ফেরত দিতে হয়। অপকারিতাঃ ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি শোধ করতে বাংলাদেশের গরিব মানুষ নিজের অঙ্গ বিক্রি করছে বলে বিবিসির এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। Print Friendly and PDF 29 24 3868 সোমবার বিবিসির অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋণের টাকা পরিশোধ করতে বাংলাদেশের অনেক গরিব মানুষ নিজেদের অঙ্গ বিক্রি করছে। ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো মাত্রাতিরিক্ত সুদ নেয় বলেও ওই প্রতিবেদনে বলা হয়। “দারিদ্র্য দূর করার একটি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে অগণিত মানুষ ক্ষুদ্রঋণ দাতাদের ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছে। এরপর তারা এমন একটি অবস্থায় পড়ছে যেখানে তারা ঋণের অর্থ শোধ করতে অপারগ,” বলা হয়েছে সোফি কাজিনের প্রতিবেদনে। “ঋণ শোধের সর্বশেষ অবলম্বন হিসেবে অনেকে নিজের অঙ্গ বিক্রি করেছেন এবং বেরিয়ে এসেছেন দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে।” প্রতিবেদনে এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেয়া হয় যে, “এই ঋণ দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকৃত অর্থে গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের মাধ্যমে সেই সব মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে, যাদের বিদ্যমান ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার সামর্থ্য নেই। এগুলো গড়ে উঠেছে নারী উদ্যোক্তা তৈরি ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে।” ঋণের অর্থ সংগ্রহের পদ্ধতি এবং ঋণগ্রহীতারা একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছেন কি না, সে বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর যথাযথ যাচাই-বাছাই না করার বিষয়টিও উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে। “ফলে, এটা একটি দুষ্ট চক্র তৈরি করে যেখানে একটি ঋণের কিস্তি শোধ করতে ঋণ গ্রহীতারা অন্য এনজিও থেকে ঋণ করে। পরে অনেকে আর ঋণ শোধ দিতে পারে না। তখন কিস্তি দেয়ার জন্য অঙ্গ বিক্রির মতো চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেয় অনেকে,” বলা হয় কাজিনের প্রতিবেদনে। এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে, যার বেশিরভাগই জয়পুরহাটের কালাই গ্রামের। বাংলাদেশিদের অঙ্গ বিক্রির ওপর গবেষণাকারী মনির মনিরুজ্জামানের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, অঙ্গ বিক্রি করা অনেকে তাকে বলেছেন- ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি শোধের চাপে পড়ে তারা এটা করেছেন। একজন মনিরকে বলেছেন, এনজিও কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে তিনি গ্রাম ছেড়েছেন। “এনজিওর সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপ এতো অসহনীয় ছিল যে, তিনি কিডনি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন,” বলেন মিসিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশের দুই প্রধান ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ও গ্রামীণ ব্যাংক অবশ্য ঋণ গ্রহীতাদের চাপ দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ব্র্যাকের মোহাম্মাদ আরিফুল হক বিবিসিকে বলেন, “ঋণ গ্রহীতাদের ঋণের অর্থ ফেরত দেয়া বড় কোনো ব্যাপার নয়।” দীর্ঘদিন ধরে নোবেলজয়ী ইউনূসের ‘কর্তৃত্বে’ থাকা গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, “বেশিরভাগ গ্রহীতারই তাদের অ্যাকাউন্টে ঋণের অর্থের অন্তত ৭৫ ভাগ সঞ্চয় আছে।” তবে তাদের সুদের হার মাত্রাতিরিক্ত, তা ব্যাংকের সুদের হারের চেয়ে অনেক বেশি। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক ঋণের ওপর ২৭ শতাংশ, আর গ্রামীণ ব্যাংক ২০ শতাংশ সুদ নিয়ে থাকে। সাম্প্রতিক গবেষণার বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এ খাতে ঋণ শোধের পদ্ধতি এবং বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আয় করার তেমন সুযোগ না থাকাটাই মূলত সমস্যার সৃষ্টি করছে। ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে সামষ্টিক ঋণ কমে আসে বলে বিশ্ব ব্যাংক দাবি করলেও এবং এর মাধ্যমে ১০ লাখ বাংলাদেশি দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে বলে একটি গবেষণায় দেখানো হলেও আরেকটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৬-০৭ সালে মাত্র ৭ শতাংশ ঋণ গ্রহীতা দারিদ্র্য সীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ