Jobedali

Call

নারী হয়ে জন্ম নেবার কারণে জীবনে একবার হলেও নিজেকে অভিশাপ দেননি, এমন নারী হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে খুব কম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই নারীরা এখনো পর্যন্ত নিষ্পেষিত জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন। নারীদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব নিয়েই বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে প্রচলিত ছিল ভয়াবহ সব কুসংস্কার যা এখনো বজায় আছে বহাল তবিয়তে। দেখুন কালের সাথে সাথে কী করে বদলেছে এসব কুসংস্কার ও ভুল ধারণা। বদলে গেলেও মানুষের মধ্য থেকে পিরিয়ড নিয়ে ভয় ও ঘৃণা দূর হয়নি মোটেই। আপনার আশেপাশে এমনকি আপনার পরিবারের পুরুষ এমনকি নারীদের মাঝেও রয়েছে এমনই সব কুসংস্কার।

প্রতিটি নারীর জন্য পিরিয়ড বা মাসিক খুবই সাধারণ একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। প্রতি মাসে সঠিক সময়ে মাসিক শুরু হওয়ার মাধ্যমে নারীর শারীরিক সুস্থতাও নিশ্চিত হয়। এই মাসিকের সময় নারীদের কিছু কাজ করা থেকে, কিছু খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত্‍ নিজেদের সুস্বাস্থ্যের জন্যে। অনেকেই যে ব্যপারগুলো সম্পর্কে একেবারেই জানেন না। পরিবারের দিদিমার কাছ থেকে জেনে আসা কথার সাথে বর্তমান সময়ের বিজ্ঞানী এবং ডাক্তারদের তথ্যের মাঝে অনেক অমিল পাওয়া যায়।

ভুলবশত অথবা অজ্ঞতার ফলে না জেনে মাসিকের সময়ে অনেকেই এমন কিছু করে ফেলেন যা কিনা এড়িয়ে যাওয়া উচিত্‍। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় মাসিকের সময় কোন কাজগুলো এড়িয়ে যাওয়া দরকার। নিজের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য প্রতিটি নারীর জেনে রাখা উচিত্‍ মাসিকের সময়ে যে কাজগুলো করা থেকে বিরত থাকা উচিত্‍-

১) শেভ করা অথবা ওয়াক্স করা থেকে বিরত থাকা

হেলথ.কম জানায় মাসিকের সময়ে শরীরে 'ইস্ট্রোজেন' এর মাত্রা অনেক বেশী পরিমাণে কমে যায়। ইস্ট্রোজেন এর মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে শরীরে ব্যাথার অনুভূতি অনেক বেশী তীব্রভাবে বোঝা যায়। পক্ষান্তরে বলা যেতে পারে, শরীর অনেক বেশী অনুভূতিশীলপূর্ণ হয়ে ওঠে। যার ফলে মাসিকের সময়ে ত্বক শেভ করা অথবা ওয়াক্স করার থেকে বিরত থাকা উচিত্‍। শেভ করার সময় অসাবধানতায় কেটে গেলে কষ্ট অনেক বেশী হবে। এছাড়াও ওয়াক্সিং এর সময়ে অনেক বেশী কষ্ট হয়, যার মাত্রা মাসিকের সময় বেড়ে যাবে আরও অনেকখানি। সে কারণেই মাসিকের সময়ে শেভ অথবা ওয়াক্স করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

২) অনেক বেশী আবেগপূর্ণ সিনেমা দেখা থেকে বিরত থাকতে হবে

এটা নিশ্চয় সকল নারী নিজ থেকেই বুঝতে পারেন যে, মাসিক চলাকালীন সময়ে মুড খুব বেশী মাত্রায় অস্থিতিশীল অবস্তায় থাকে। যার মূল কারণ, মাসিকের ফলে শরীরে হরমোনের তারতম্য দেখা দেওয়া। হরমোনের এর তারতম্য দেখা দেওয়ার ফলে শরীর এর অসামঞ্জস্যতা দেখা দেওয়ার সাথে সাথে মনও অনেক বেশী বিক্ষিপ্ত এবং আবেগভারাক্রান্ত হয়ে থাকে।

এমতাবস্থায় খুব বেশী আবেগপূর্ণ সিনেমা মনের উপর বাড়তি চাপের সৃষ্টি করে দেয়। আবেগপূর্ণ সিনেমা দেখার পরিবর্তে মাসিকের সময়ে হালকা ধাঁচের সিনেমা দেখলে মন ভালো থাকবে।

৩) চুপচাপ অকর্মণ্যভাবে বসে থাকা থেকে বিরত থাকতে হবে

এতদিন ধরে আমরা জেনে এসেছে যে মাসিকের সময় খুব বেশী কাজ করতে হয় না। অথবা প্রাত্যহিক ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকতে হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ের গবেষণা জানাচ্ছে একেবারেই ভিন্ন কথা। ওম্যান'স হেলথ এর মতে, মাসিকের সময়ে শারীরিক কার্যক্রম বাড়িয়ে দেওয়া উচিত্‍। শারীরিক কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে পেটব্যথা, মানসিক দুশ্চিন্তা অথবা মনের বিক্ষিপ্ত ভাব কমে যায় অনেকখানি।

৪) দুগ্ধজাত খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে

যদিও মাসিকের সময়ে শরীরে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন রয়েছে, তবু এই সময়ে দুধ এবং দুগ্ধজাতীয় খাদ্য যেমন: পনীর কিংবা দই খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত্‍। কারণ এই সকল খাদ্যে রয়েছে একটি এসিড। যে এসিডের নাম 'অ্যারাকিডোনিক এসিড।' এই এসিড পেটের নীচের অংশে তথা তলপেটে অতিরিক্ত ব্যথা সৃষ্টি করার জন্য দায়ী।

৫)স্যানিটারি ন্যাপকিন অনেক লম্বা সময় ধরে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা

অনেকেই অলসতার জন্য অথবা অজ্ঞতার জন্য একই স্যানিটারি ন্যাপকিন সারাদিন ধরে ব্যবহার করেন। যেটা একজন নারীর স্বাস্থ্যের জন্য খুব বেশি ক্ষতিকর। সকল স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেটে লেখা থাকে ৮ ঘণ্টা পরপর বদলানোর জন্য। তবে নিজের সুস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে ৪-৫ ঘণ্টা পরপর স্যানিটারি ন্যাপকিন বদলানো জরুরি। না হলে খুব দ্রুত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামণ ঘটে থাকে এবং বাজে দূর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।

৬)অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে যেতে হবে

মাসিকের সময় এমন ধরণের খাবার এড়িয়ে যাওয়া উচিত্‍ যে খাবারে অনেক বেশী পরিমাণে লবণ রয়েছে। যেমন: ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিপস, চানাচুর ইত্যাদি। লবণে থাকা সোডিয়াম মাসিকের সময়ে রক্তপ্রবাহ এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, পেটে ব্যথা, পানি আসার মতো সমস্যাগুলোও বেড়ে যায় অনেকখানি।

৭)অনেক বেশী ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে

অনেকের মাঝেই একটি ভুল ধারণা রয়েছে। যেহেতু মাসিকের সময়ে শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে যায় সেহেতু এই সময়ে অনেক বেশী ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত্‍। একই সাথে এই সময়ে বেশী ক্যালরিযুক্ত খাবার খেলে সেটা ওজন বাড়াবে না। অথচ এই দুইটি ধারণা একেবারেই ভুল। সঠিক ব্যাপার হলো, মাসিকের সময়ে সাধারণ খাবার এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত্‍ প্রতিটি নারীর। বেশী ক্যালরিযুক্ত খাবার খেলে সেটি শরীরে চর্বি হিসেবে জমে থাকবে। যা পরে ব্যায়ামের মাধ্যমে কমাতে হবে। রক্তপ্রবাহের ফলে ওজন বাড়বে না, এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।

৮)উপুড় হয়ে শোয়া

অনেকেরই পেটে ভীষণ ব্যথা থাকে বলে পেটে চাপ দিয়ে শুয়ে থাকেন। উপুড় হয়ে শুয়ে থাকলে তা পেটে এমনভাবে চাপ ফেলে যে সেটা মোটেও ভালো নয়। এছাড়া এ সময় উপুড় হয়ে শুলে হার্ট রেটে তারতম্য হয়, রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয় এবং অক্সিজেন ঠিকমতো সরবরাহ হয় না বলে মাথা ঝিমঝিম বা ব্যথা করে।

৯)ভারী জিনিস তোলা

নারীদের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গ থাকে তাদের পেটে। যেমন জরায়ু বা ডিম্বাশয়। তাই খুব বেশি ভারী জিনিস টেনে তোলা নারীদের জন্য ভালো নয়। আর পিরিয়ডের সময় তো একেবারেই নয়।

১০)ভারী ব্যায়াম

পিরিয়ডের সময় ভারী কোনো ব্যায়াম করা একেবারেই উচিত নয়। পিরিয়ডের সময় করার জন্য বিশেষ কিছু ব্যায়াম রয়েছে, সেগুলো করতে পারেন। যোগব্যায়ামের কিছু আসন পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে খুবই কাজে দেয়।

১১)প্রস্রাব আটকে রাখা

এই বদঅভ্যাসটা অনেকরই আছে। প্রস্রাব পেলে তা আটকে রাখা কখনোই উচিত নয়। এটি কিডনির ওপরে ভয়াবহ রকমের চাপ ফেলে। বারবার প্যাড পাল্টানোর ভয়ে অনেকেই পিরিয়ডের সময় প্রস্রাব চেপে রাখেন। এটি খুবই অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস। এ সময়ে এইকাজ তলপেটের ওপর চাপ ফেলে এবং ব্যথা দীর্ঘসময় ধরে থাকে।

১২)জোরে চিত্‍কার করা

পিরিয়ডের সময় রাগ, বিরক্তি, জেদ তুলনামূলক ভাবে বেড়ে যায়। রেগে গিয়ে জোরে চিত্‍কার চেঁচামেচি করবেন না। এর ফল হবে ভয়ানক। এটি সরাসরি তলপেটে চাপ ফেলে। কাউকে ডাকতে গিয়েও জোরে চিত্‍কার করবেন না। চিত্‍কার করতে শরীরের যেসব পেশীর ওপর জোর দিতে হয় তার মধ্যে পেটের পেশীও আছে।

১৩) জল কম খাওয়া

ঘন ঘন প্রস্রাব লাগবে ভেবে অনেকেই এ সময় জল কম খান। অথচ পিরিয়ডের সময়েই বেশি করে জল খাওয়া উচিত। প্রচুর পরিমাণে জল পান শরীরকে দুর্বল হবার হাত থেকে বাঁচায়। এছাড়া রক্তের তরল্যের ভারসাম্য বজায় রাখার রাখার জন্যেও এ সময় প্রচুর পরিমাণে জল ও তরল খাবার খাওয়া উচিত।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ