,
মানুষ পার্থিব জগতের বাইরেও মৃত্যুর পরে এক নতুন জগৎ কল্পনা করে। যা স্বর্গ ও নরকের সমন্বয়ে গঠিত। ধর্মীয় চিন্তা থেকে মানুষ পাপ-পুণ্য, ন্যায়-অন্যায়ের হিসাব করে থাকে। আর এই অনুভূতি থেকেই স্বর্গ ও নরক লাভের কথা ভাবে। নরক একটি ভয়ংকর জায়গা যেখানে শাস্তি দেয়া হয়। আর স্বর্গ হচ্ছে অনাবিল সুখ-শান্তির জায়গা। মানুষ পৃথিবীতে কৃতকর্ম অনুসারে স্বর্গ ও নরকে জায়গা করে নিবে। যারা ভালো কাজ করবে তারা স্বর্গে বাস করবে। আর যারা খারাপ কাজ করবে তারা নরকে বাস করবে। মূলত এই স্বর্গ-নরক আর কিছুই নয়, এটা মানুষের কর্মফলের উপর নির্ভর করে। মানুষের প্রতিদিনকার কাজের মাঝেই স্বর্গ-নরক বিরাজমান। লোভ-লালসা, ঝগড়া-বিবাদ, হিংসা মানুষকে পশুতে পরিণত করে। ফলে সে ন্যায় অন্যায়ের সীমারেখা ভুলে যায়। নিজেকে নানা রকম খারাপ কাজে জড়িয়ে ফেলে। আর এসব কারণেই সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। পৃথিবীতে নেমে আসে এক নরক যন্ত্রণা। এ সকল যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে মানুষকে অন্যায় ছেড়ে ন্যায়ের পথে আসতে হবে। মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা, সৌহার্দ্য গড়ে তুলতে হবে। একে অন্যের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। অন্যের কল্যাণ সাধনের জন্য সর্বদা চেষ্টা করতে হবে। এমন কোনো কাজ করা যাবে না যাতে অন্যের ক্ষতি হয়। সকলে যদি সৎ ও ন্যায়ের পথ অবলম্বন করে, তাহলেই কেবল এ পৃথিবীতে স্বর্গীয় সুখ লাভ করা সম্ভব।
শিক্ষা: স্বর্গ ও নরক পৃথিবীর বাইরের কিছু নয়। মানুষের ভালো কাজ এবং আচরণের মাঝেই স্বর্গ থাকে এবং খারাপ কাজের মাঝে থাকে নরক।
কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর?
মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক মানুষেতে সুরাসুর
মূলভাব : স্বর্গ এবং নরক মানুষের মনের মধ্যেই বিদ্যমান। পৃথিবীর শুরু থেকে স্বর্গ-নরকের কল্পিত অস্তিত্ব নিয়ে আমাদের কৌতূহলের শেষ নেই। কিন্তু আমাদের এ চলমান জীবনেই আমরা স্বর্গ-নরকের অবস্থিতি অনুভব করি।
সম্প্রসারিত ভাব : অপার্থিক জগতে স্বর্গ ও নরক দুইই বিপরীতধর্মী স্থান। যুগ-যুগান্তরের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষ মনে করে-পৃথিবীর বহু ওপরে অনন্ত জ্যোতিপুঞ্জের মাঝে স্বর্গের অবস্থান আর এক ভয়ঙ্কর অন্ধকার স্থানে নরক বিরাজিত। এ জীবন সাঙ্গ হলেই কেবল সেসব দেখবার সৌভাগ্য অথবা দুর্ভাগ্য তার হবে। হয়ত এসবের জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হবে দীর্ঘ সময়, পাড়ি দিতে হবে যোজন যোজন পথ। সকল ধর্মেই স্বর্গকে এক অপূর্ব সুষমামণ্ডিত স্থানরূপে গণ্য করা হয়েছে। কেবলমাত্র পুণ্যাত্মাগণই এখানে প্রবেশের অধিকার পাবেন। আর যারা দুরাত্মা, যারা পাপাচারী তারা নিক্ষিপ্ত হবে নরকের ভয়ঙ্কর অগ্নিকুণ্ডলির মাঝে। মানুষের এ প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি কবি অনুরক্ত নন। কবি মনে করেন স্বর্গ এবং নরক পারলৌকিক কোনো বস্তু নয়। এ পৃথিবীতেই স্বর্গ এবং নরক বর্তমান। স্নেহ, প্রেম, পারস্পরিক সৌহার্দ এবং সম্প্রীতির বন্ধনে এ ধূলোমাখা মাটির পৃথিবী স্বর্গ হয়ে উঠতে পারে। আবার ক্রোধ, লোভ, মোহ ইত্যাদি রিপু দ্বারা তাড়িত হয়ে মানুষ এ পৃথিবীকে বানাতে পারে নরকের আঁধার। ভালো কাজ করলে মানুষের প্রশান্ত মনে এক অনাবিল শান্তি নেমে আসে। স্বর্গীয় হাসিতে তার মুখমণ্ডল তখন উদ্ভাসিত হয়। আর মন্দ কাজ করলে বিবেকের দ্বারা সে পদে পদে লাঞ্ছিত হয়।
এ জগতে মানুষ ভালো কাজের মাধ্যমে স্বর্গের সুধা এবং খারাপ কাজের মাধ্যমে নরকের যন্ত্রণা ভোগ করে থাকে। শান্তি আর করুণার ধারা যদি পৃথিবীতে নেমে আসে তাহলে দূরের স্বর্গ আর দূরে থাকে না।