শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

জ্বালানি সাশ্রয়ী গণ রান্নার চুলা চুলাটি একসঙ্গে বহু মানুষের জন্য রান্নার (গণরান্না) উপযােগী। আবার একটি পরিবারের জন্যও ব্যবহার করা যায়। ঢালাই লােহা দিয়ে তৈরি এই চুলা পরিবেশবান্ধবও। প্রাকৃতিক গ্যাসে এটি প্রচলিত চুলার চেয়ে ৫০ শতাংশের বেশি কার্যক্ষম । 

দেশে বিভিন্ন হােটেল-রেস্তোরা, শিল্পকারখানা, ছাত্রাবাস, কমিউনিটি সেন্টারের মতাে বড় পরিসরে রান্নার জন্য স্টার বার্নার নামের গণচুলার প্রচলন রয়েছে। নতুন চুলাটি সেই স্টার বার্নারের পরিবর্তিত ও উন্নত রূপ। এই চুলায় স্টার বার্নারের তুলনায় কম জ্বালানি বা গ্যাস পুড়িয়েই রান্না করা যায়। এটি তৈরি করেছেন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনােলজির (এমআইএসটি) পুরকৌশল বিভাগের প্রাক্তন দুই ছাত্র মেজর মির্জা মাে. লুফুল হাবিব ও মেজর শেখ রহমত এলাহী। 

বর্তমানে মেজর হাবিব কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে এবং মেজর রহমত এলাহী সেনা সদরে পূর্ত পরিদপ্তরে কর্মরত। বাংলাদেশ সরকারের পেটেন্টও পেয়েছে। গণচুলাটি। এ ছাড়া তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ নতুন এই চুলার জ্বালানি সাশ্রয়ীর বিষয়ে স্বীকৃতিও দিয়েছে। তারা চুলাটির প্রাকৃতিক গ্যাস ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলপিজি) জন্য জ্বালানির বিভিন্ন অনুপ্রবেশ কোণ (থ্রোয়িং অ্যাঙ্গেল) ও ভিন্ন ভিন্ন লােডিং উচ্চতার (গ্যাসের শিখা থেকে পাত্রের দূরত্ব) বিপরীতে তাপায়নের সময় ও জ্বালানি খরচের বিষয়টি পরীক্ষা করে। এতে দেখা গেছে, নতুন চুলায় প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করলে তা প্রচলিত স্টার বার্নারের তুলনায় ৫০ দশমিক ৬৩ শতাংশ অধিক জ্বালানিসাশ্রয়ী এবং এলপিজি ব্যবহার করলে ৩৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ অধিক জ্বালানিসাশ্রয়ী।

 তিতাস গ্যাসের এনার্জি আফিশিয়েন্ট টিমের প্রধান। প্রকৌশলী মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, চুলাটিতে। সর্বোত্তম অনুপ্রবেশ কোণ ৩০ ডিগ্রি এবং ৯-১২ সেন্টিমিটার লােডিং উচ্চতায় সর্বোচ্চ তাপীয় দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব। এ চুলাটি প্রচলিত চুলার স্থলে প্রতিস্থাপন করা হলে একই পরিমাণ গ্যাস দিয়ে বর্তমানের তুলনায় আরও ৫০ শতাংশ বেশি লােকের রান্না করা সম্ভব। বড় পরিসরে রান্নার জন্য স্টার বার্নার নামের গণচুলার প্রচলন রয়েছে।

 নতুন চুলাটি সেই স্টার বার্নারের পরিবর্তিত ও উন্নত রূপ প্রায় আড়াই বছরের গবেষণায় মেজর হাবিব ও মেজর এলাহী নতুন গণচুলাটি তৈরি করেছেন। তারা বলছেন, রাজধানীর ধােলাইখালে প্রথমে মাটি, তারপর কাঠ, অ্যালুমিনিয়াম, সর্বশেষ ঢালাই লােহা দিয়ে চুলাটি তৈরি করা হয়। 

পাশাপাশ এমআইএসটির পুরকৌশল বিভাগের পরীক্ষাগারে চলে চুলাটির কার্যকারিতা যাচাই এবং স্টার বার্নারের সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণ । বর্তমানে গণরান্নার চুলা ব্যবহারের জন্য গ্রাহকদের বাণিজ্যিক গ্যাস-সংযােগ নিতে হয়। তিতাস গ্যাসের হিসাবে বৃহত্তর ঢাকা ও ময়মনসিংহে তিতাসের বিতরণ এলাকায় বৈধ বাণিজ্যিক গ্যাস-সংযােগের বর্তমান। সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার ৯১৭। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ গণচুলা। গত অর্থবছরে এমন চুলায় ব্যবহৃত গ্যাসের পরিমাণ ছিল ১৩ কোটি ২ লাখ ২১ হাজার ঘনফুট। 

এএ ক্ষেত্রে নতুন চুলাটি ব্যবহার করলে প্রতি ইউনিট ১১ টাকা ৩৬ পয়সা হিসাবে বছরে ১৪ কোটি ৭৯ লাখ ৩১ হাজার টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। তাপীয় দক্ষতার বিচারেও পরিবর্তিত গণচুলাটি সাধারণ চুলার চেয়ে বেশি কার্যকর। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাকৃতিক গ্যাসে স্টার বার্নারের তাপীয় দক্ষতা ২৬ শতাংশ। আর গণচুলার দক্ষতা ৩৬ শতাংশ।

 এলপি গ্যাসের ক্ষেত্রে চুলাটির তাপীয় দক্ষতা ৩২ শতাংশ, স্টার বার্নারের ২৪ শতাংশ। তার মানে, পরিবর্তিত গণচুলায় তাপের অপচয় কম হয়। পরিবর্তিত চুলাটি একটিমাত্র পরিবারের জন্য ব্যবহার করার পাশাপাশি গণরান্নার কাজেও ব্যবহার করা যায়। কত মানুষের জন্য রান্না করা যাবে, তা নির্ভর করে চুলার বৃত্তাকার কাঠামাের (রিং) সংখ্যার ওপর। যেমন চার রিংয়ের চুলায় কমপক্ষে ১০০ জনের রান্না করা যেতে পারে।

 এভাবে ৩০ থেকে ১০০ জনের রান্নার জন্য তিন রিংয়ের চুলা, আর ঘরােয়া রান্নায় সর্বোচ্চ ২০ জনের জন্য দুই রিংয়ের চুলার নকশা তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি রিংয়ে স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা (নব) বা রেগুলেটর রয়েছে। তাই রান্নার আগে-পরে গ্যাসের অপচয় কমে। পরিবর্তিত চুলাটি শিল্পক্ষেত্রে বয়লারেও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সে জন্য আরও গবেষণার প্রয়ােজন।

 গণরান্নার নতুন চুলা তৈরির গবেষণা তত্ত্বাবধান। করেছেন ড. নাদিম রেজা খন্দকার। তিনি এই চুলার বিশেষত্ব সম্পর্কে বলেন, স্টার বার্নারে একটি মাত্র নিয়ন্ত্রণ সুইচ থাকে। তাই এটি কেবল গ্যাসের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। পরিবর্তিত চুলায় প্রতিটি রিংয়ের জন্য আলাদা রেগুলেটর যুক্ত করা হয়েছে। এতে অন্য রিংয়ের প্রবাহে বিঘ্ন না ঘটিয়েই গ্যাস সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

 এভাবে চুলা জ্বালানাের আগে ও বন্ধ করার পরে বিপুল পরিমাণ গ্যাস বাঁচানাে সম্ভব। নতুন গণচুলাটির বিশেষত্ব সম্পর্কে কথা হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্প ও উৎপাদন কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ফেরদৌস সারােয়ারের সঙ্গে। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের জ্বালানিবান্ধব গ্যাসের চুলার গুরুত্ব অনেক। সরকারের জ্বালানি নীতি অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে উন্নত চুলা উদ্ভাবনকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়েছে। অবকাঠামােগত উন্নয়নের পূর্বশর্ত টেকসই জ্বালানি প্রযুক্তি। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বল্পমূল্যে তৈরি নতুন চুলাটিকে গবেষণার মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উপযােগী করে তুলতে পারলে তা সামগ্রিকভাবে আরও ফলপ্রসূ হবে ।

https://www.thepoultrysite.com/articles/for-a-more-enriching-environment-tyson-foods-animal-welfare-team-lets-chickens-do-the-choosing

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ