আসসালামুয়ালাইকুম, কোন কারনে গোসল ফরজ হলে সূরা , দোয়া , কালিমা , দরুদ শরীফ পাঠ করা যাবে ?


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

হ্যা আপনি সব ধরনের দোয়া পড়তে পারবেন তবে কুরআন শরীফ পড়তে পারবেন না মুখস্থও পড়তে পারবেন না,, তবে কুরআন শরীফ এর যেসব আয়াত দোয়ার জন্য মানুষ পড়ে সেসব আয়াত দোয়ার নিয়তে পড়া যাবে

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

কোন কারনে গোসল ফরজ হলে দোয়া , কালিমা , দরুদ শরীফ পাঠ করা যাবে। তবে কুরআন পাঠ করা যাবে কি যাবে না এ ব্যাপারে দুইটি মত পাওয়া যায়। তন্মধ্যে অধিক গ্রহণযোগ্য মত তুলে ধরলাম।

পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন হলো মহান আল্লাহর বাণী। যা সর্বোচ্চ পবিত্র ও মর্যাদাসম্পন্ন। তাই এ পবিত্রতা ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে কোরআন স্পর্শ করার জন্য ও তা পাঠ করার জন্য দৈহিক পবিত্রতার শর্তারোপ করা হয়েছে। যে মুসলমান কোরআন স্পর্শ করতে ও তা পাঠ করতে ইচ্ছুক তাকে অবশ্যই দৈহিকভাবে পবিত্র হতে হবে।

কোরআন পাঠ প্রসঙ্গে মহানবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ঋতুবতী নারী ও জুনুব ব্যক্তি (যার ওপর গোসল ফরজ) কোরআনের কিছুই পাঠ করবে না। (সুনানে তিরমিযী: ১৩১)।

এ অনুচ্ছেদে আলী (রা.) হতে বর্ণনাকৃত হাদীসও আছে। আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি ইসমাঈল ইবনু আইয়াশ একটি মাত্র সনদ সূত্রেই বর্ণনা করেছেন যে, নাপাক ব্যক্তি ও হায়িযগ্রস্তা নারী কুরআন তিলাওয়াত করবে না। এ সূত্র ব্যতীত অন্য কোন সূত্রে আমরা উপরোক্ত হাদীস জানতে পারিনি।

বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ সাহাবা ও তাবিঈ এটাই বলেছেন। তাদের পরবর্তীগণ যেমন, সুফইয়ান সাওরী, ইবনুল মুবারাক, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক বলেনঃ নাপাক ও হায়িয অবস্থায় কুরআনের কোন অংশ তিলাওয়াত করবে না; কিন্তু কোন আয়াতের অংশবিশেষ অথবা শব্দ ইত্যাদি পাঠ করতে পারবে। তারা নাপাক ব্যক্তি ও হায়িযগ্রস্তা নারীকে তাসবীহ-তাহলীল (সুবহানাল্লাহ, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ ইত্যাদি) পড়ার অনুমতি দিয়েছেন।

ইমাম তিরমিয়ী বলেনঃ আমি মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল (বুখারী)-কে বলতে শুনেছি, এ হাদীসের এক রাবী ইসমাঈল ইবনু আইয়াশ, হিজায ও ইরাকবাসীদের হতে অস্বীকৃত (মুনকার) হাদীসগুলো বর্ণনা করে থাকে। ইমাম বুখারী তাদের সূত্রে বর্ণিত তার এ ধরনের একক বর্ণনাগুলোকে যঈফ বলতে চান। তিনি আরো বলেছেন, সিরিয়াবাসীদের নিকট হতে বর্ণিত ইসমাঈল ইবনু আইয়াশের হাদীসগুলো শক্তিশালী।

আহমাদ ইবনু হাম্বাল বলেছেনঃ ইসমাঈল ইবনু আইয়াশ বাকিয়ার তুলনায় অনেক ভাল। কেননা বাকিয়া সিকাহ রাবীদের বরাতে মুনকার হাদীস বর্ণনা করেছেন।

আবূ ঈসা বলেনঃ আহমাদ ইবনু হাসান আমাকে এ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আমি আহমাদ ইবনু হাম্বালকে এ কথা বলতে শুনেছি।

তবে বিধানগতভাবে ইসমাইল ইবনে আইয়্যাশ তার স্মৃতিশক্তির বিষয়ে হাদিস বেত্তাদের কিছুটা আপত্তি থাকলেও, অনেক বিজ্ঞ মুহাদ্দিস তাকে গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তার বিষয়ে কতিপয় আপত্তিকারকের আপত্তি মেনে নিলেও তার বর্ণিত এ হাদিসের বক্তব্য ও বিধান অবশ্যই গ্রহণযোগ্য।

কেননা, এ বক্তব্যের সমর্থনে সহিহ হাদিস আছে। হজরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুনুব না হলে (গোসল ফরজ না হলে) যে কোনো অবস্থায় আমাদের কোরআন শোনাতেন। (সূনান তিরমিযী (ইফাঃ), হাদিস নম্বরঃ ১৪৬, ইবনু মাজাহ ৫৯৪, ইরওয়া ১৯২, ৪৮৫)।

এ হাদিসের গ্রহযোগ্যতা সম্পর্কে মন্তব্য করতে যেয়ে ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রহঃ) বলেন আলী (রা.) বর্ণিত এই হাদিসটি হাসান ও সহীহ।

সাহাবী ও তাবিঈগণের একাধিক আলিম এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেন অজু ছাড়াও কুরআন তিলাওয়াত করা যায়।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুনুব অবস্থায় (গোসল ফরজ অবস্থায়) কোরআন তেলাওয়াত করতে আমাদেরকে নিষেধ করেছেন। ইমাম দারা কুতনি এ হাদিস উল্লেখ করার পর মন্তব্য করেছেন- এর বর্ণনাধারা গ্রহণযোগ্য।

ইমাম তিরমিজি তার সুনানে ১৩১ ও ১৪৬ নম্বর হাদিসের পরে মন্তব্য করেছেন অধিকাংশ জ্ঞানী সাহাবা ও তাবিঈন অপবিত্র অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াতকে নিষিদ্ধ মনে করতেন।

সুফিয়ান সাওরি, ইবনুল মোবারক, শাফিঈ ও আহমাদসহ পরবর্তী সময়ের ইসলামি স্কলাররাও মনে করতে ঋতুবতী নারী ও জুনুব ব্যক্তির জন্য কোরআন তেলাওয়াত করা জায়েয নেই।

এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন মাজহাবের মত উল্লেখ করতে যেয়ে জগদ্বিখ্যাত গ্রন্থ আলফিকহু আলা মাজাহিবিল আরবাআতে উল্লেখ করা হয়েছে, হানাফি ফেকাহবিদদের মতে, যার ওপর গোসল ফরজ তার জন্য কোরআন পাঠ করা হারাম। তা পরিমাণে সামান্যই হোক অথবা বেশি। তবে দুই অবস্থায় কোরআনের আয়াত পাঠ করা যায়। কোনো বিশেষ কাজ শুরুর আগে বিসমিল্লাহ পূর্ণ পাঠ করতে পারবে। যদিও তা কোরআনেরই আয়াত।

দোয়া করার জন্য অথবা কারও প্রশংসা করার জন্যে কোরআনের ছোট কোনো বাক্যাংশ পাঠ করা যাবে।

শাফিঈ ফেকাহবিদদের মতে, যার ওপর গোসল ফরজ তার জন্য কোরআন তেলাওয়াতের ইচ্ছায় কোরআনের একটি শব্দও পাঠ করা হারাম।

হাম্বলি ফেকাহবিদদের মতে, যার ওপর গোসল ফরজ তার জন্য অতি ছোট আয়াত অথবা বড় আয়াতের অনুরূপ ছোট অংশ পাঠ করা জায়েয। এর চেয়ে বেশি হলে তা জায়েয হবে না। তবে কোরআনের যে সব আয়াত জিকিরের আয়াত হিসেবে প্রসিদ্ধ ও স্বীকৃত সেগুলো- সংশ্লিষ্ট কাজের সময় পাঠ করা যাবে।

সার কথা হলো: নারীর মাসিক ঋতুস্রাব হলে, সন্তান প্রসব পরবর্তী স্রাব হলে এবং নর-নারী যৌনমিলন করলে অথবা বীর্যপাত হলে পবিত্রতা লাভের পূর্বে কোরআন স্পর্শ করা যাবে না ও পাঠ করা যাবে না। তবে যে কোনো জিকির করা যাবে, তাসবিহ পাঠ করা যাবে এবং দোয়া-ইস্তেগফার করা যাবে।

(উত্তর আংশিক কপি করা হয়েছে)।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ