প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর... 

শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষাঙ্গন খুলে দিয়েছেন। 

আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন। ক্লাস টিচার এসে স্বাগত বক্তব্য শেষে হাজিরা ডাকা শুরু করেছেন।

শিক্ষক:- রোল এক...!

ছাত্র:- লাব্বাইক! 

— দুই! 

— লাব্বাইক! 

— তিন!

— নাই স্যার। 

— কেনো, রাবেয়া আসলো না কেনো?

— স্যার, রাবেয়া এখন শ্বশুর বাড়িতে আছে। স্বামীর ঘরে পড়াশোনা করছে, হা হা হা।

— ও, আচ্ছা। রোল চার...!

ছাত্র:- চার রোল কার স্যার? 

চশমাটা একটু ঠিক করে নিয়ে শিক্ষক বললেন:- ছাদেক কোথায়? 

কাঁদো কাঁদো গলায় এক ছাত্র বললো:- ছাদেক আমাদের মাঝে আর নেই! 

— নেই মানে! কবে মরলো?

— মরবে কেনো?

— তাহলে?

— সে ভেবেছে হয়ত এই জনমে আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে না, 

শুধু খোলার তারিখই দিয়ে যাবে। 

তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো সে আর থাকবে না। একদিন ভোরে উঠে দেখি সে আর আমাদের মাঝে নেই! সে গার্মেন্টসে ভর্তি হয়ে গেছে! 

— বলিস কী রে! কী সাঙ্ঘাতিক!  

আচ্ছা, তারপর পাঁচ...!

পিছনে বসা এক ছাত্র:- এটা আবার কার রোল?

— আশিক কোথায়?

— আমিই তো আশিক। আমার রোল পাঁচ! আমি এত ভালো ছাত্র ছিলাম! ওরে বাবা! 

যাইহোক, লাব্বাইক স্যার! 

— দেখো ছাত্রদের অবস্থা! 

স্যার কিছু বলতে যাবেন, হঠাৎ একটা ছোট বাচ্চার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসলো। 

স্যার অবাক হয়ে বললেন:- এই ছোট বাচ্চার কান্নার আওয়াজ আসলো কোত্থেকে? 

ছাত্রী তানিয়া উঠে দাঁড়ালো। 

তার কোলে একটি ফুটফুটে বাচ্চা। তানিয়া বললো:- আমার বাবু। 

ভাবলাম প্রথম ক্লাসটা ওকে নিয়ে এক সাথেই করি। স্যার, ওকেও না হয় এই ক্লাসে ভর্তি করিয়ে নেন। আমরা মা-সন্তান এক সাথেই ক্লাস করবো! 

সবাই একযোগে হেসে ওঠলো। শুধু স্যার হাসলেন না। 

পাশ থেকে আরেক ছাত্র দাঁড়িয়ে বললো:- স্যার, দেখেন তো হাজিরা খাতায় আমার নাম আছে কি না!

— তোর নাম কী?

— সাকিব।

স্যার অনেক্ষণ ধরে গবেষণা করেও হাজিরা খাতায় সাকিব নাম উদঘাটন করতে পারলেন না। বিরক্ত হয়ে বললেন:- সাকিব নাম তো এখানে পাওয়া যাচ্ছে না। হাজিরা খাতায় তোর কোন নাম লেখা ছিলো?

সাকিব:- তারমানে আমি এই ক্লাসে পড়ি না। হায় হায়! তাহলে আমি কোন ক্লাসে পড়ি? 

স্যার সবাইকে লক্ষ্য করে বললেন:- এই ক্লাসে ছাত্রের সংখ্যা অল্প কয়েকজন ছিলো; কিন্তু আজ এত বেশি বেশি লাগছে কেনো? 

দুজন ছাত্রী দাঁড়িয়ে লাজুক কণ্ঠে বললো:- স্যার! ঐতিহাসিক নতুন ক্লাসে স্মরণীয় হয়ে থাকার জন্য আমাদের হাসব্যান্ডও আমাদের সাথে এসেছেন। 

স্যার খুবই আশ্চর্যান্বিত হলেন। 

আরে বলে কী এরা!

দরজার সামনে হন্তদন্ত হয়ে এক ছাত্র এসে বললো:- স্যার, কয়েকবছর আগে আমাকে কি এই বিদ্যালয়ে দেখেছিলেন? 

অবাক হয়ে স্যার বললেন:- কেনো?

— না, ইয়ে, মানে...! আমি কোন বিদ্যালয়ে পড়ি সেটাই ভুলে গেছি। যদি আপনি দেখে থাকেন তাহলে বুঝবো আমি এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। 

স্যারের মাথায় যেন বিদ্যালয়ের ছাদ ভেঙে পরছে! তিনি এসব কী শুনছেন!

তখন আরেক শিক্ষক এসে বললো:- আরে বকর সাহেব! আপনি এখানে! আপনি তো পাশের বিদ্যালয়ের শিক্ষক, আপনি এখানে কী করছেন?

এটা শোনার পর স্যার অজ্ঞান হয়ে আছেন। এ সংবাদ শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পৌঁছায় শিক্ষকদের জীবনাশঙ্কায় আবার প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলেন।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে