ইতি আর রাজ ছোট বেলা থেকেই একসাথে বড় হয়। ইতির  বাবা চাকুরি করে, আর রাজের বাবা ব্যবসা করে। দুই ফ্যামিলির মধ্যে সম্পর্কটা মন্দ নয়।

ইতি রাজ কে  মনে মনে ভালোবাসতো। কিন্তু কখনো বলতে পারে নি। তারা একত্রে এইচ এস সি পাস করে এবং   রাজের  সরকারী চাকরি হয়। বাসা থেকে ধুমধাম করে বিয়ে দিয়ে দেয়। ইতি বেচারি ঘরে বসে একা কাঁদে। কিছু করার থাকে না তার।
 

ইতির  অবস্থা দেখে তার মা তাকে জিজ্ঞেস করে সমস্যা কি। কান্নাবিজরিত গলায় ইতি জানায় তার লুকানো প্রেমের কথা। তার একপেশে ভালোবাসার কথা।
 

ইতির  পরিবারে দুঃখ নেমে আসে। ইতির  বাবা জানতে পেরে মেয়েকে জলদি বিয়ে দেয়ার বেবস্থা করতে চান। কিন্তু  ইতির এক কথা , তার মনের কোঠায় গভীরে সে রাজ কেই বসিয়েছে। এখন কোনও অবস্থাতেই তার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়। সে এমনকি এই বলে হুমকি দেয় যে বাড়াবাড়ি করলে সে আত্মহত্যা করবে। ইতির পরিবারের সবাই ভয় পেয়ে যায়। সাথে সাথে কষ্টও পায়। কিন্তু কিছু করার থাকে না। একমাত্র মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া।
 

বছর পাঁচেক পরের ঘটনা। ইতি এখন ঢাকাতে একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষিকা। গ্রামে ইধানিং যায় না সে। বাবা মার সাথে ফোনে কথা হয়। এক পুজার ছুটিতে ৭ দিনের জন্য গ্রামে গেলো সে। সে কি তখনো জ্যান্ত এইবারের গ্রামে ফেরা তার জীবনটা আমূল পাল্টে দিবে?
 

ইতি বাসায় ফিরে দেখে বাসার সবার মাঝেই একটা কষ্ট উপলব্ধি করতে পারে। ইতি মাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? ইতির মা প্রথমে তাকে কিছুই বলে  না। মেয়ের চাপাচাপিতে তিনি সব খুলে বলেন।
 

রাজ গ্রামে এসেছে। তার একটা ফুটফুটে বাবু হয়েছে। বাবুটার বয়স মাত্র ১ বছর। বাবুটাকে জন্ম দিতে গিয়ে তার মা মারা যায়। রাজ গ্রামে এসে ইতির বাবা মায়ের  সাথে দেখা করতে আসে। ছেলেটার মনে এক অদ্ভুত ক্ষোভ দেখতে পান তারা। এক চাপা কষ্ট।
 

ইতি ঘটনা শুনে থ হয়ে যায়। জীবনটা কোনও সিনেমা নয় যে সে রাজের বাচ্চাকে বড় করবে। তাকে নিজের মেয়ের মতো করে পালবে। কিন্তু ইতির খুব ইচ্ছে করে। আরও একবার ইতি নিজের কাছে হেরে যায়। মুখ ফুটে বলতে পারে না তার গোপন ইচ্ছের কথা।
 

পুজার ছুটি শেষ। আজ বিকেলে ইতি ঢাকায় ফিরে যাবে। ব্যাগ গুছুচ্ছে এসময় ইতির  মা দৌড়ে এসে খবর দিলেন রাজ এসেছে।
 

ইতি চমকে যায়। সে চাচ্ছিল যেনও রাজের  সাথে তার দেখা না হয়। কি লাভ কষ্টের বুঝা বাড়িয়ে?
 

মায়ের কথায় অবশেষে দেখা করতে হয় রাজের সাথে। দুজনেই চুপচাপ। হটাত রাজ  বলে উঠে, “ঢাকায় থাকো শুনলাম? আমিও ঢাকায় থাকি। মিরপুর ১০ । তুমি?”
 

“গোলসান। আমরা ২জন ফ্রেন্ড একত্রে থাকি। ও আমার সাথে একই স্কুলে পড়ায়। আমাদের পাশের গ্রামেরই মেয়ে।”
 

আরও কিছু কথা বলে তারা একে অপরকে বিদায় জানায়। “ভালো থেকো” বলে ঘুরে নিজের রুমের দিকে হাঁটতে থাকে ইতি। অজানা কষ্টে বুকটা ধুমরে মুচড়ে যাচ্ছে। নিজের মনের উপর অসম্ভব জোর খাটিয়ে ফিরে চলে সে রুমের পথে।
 
ঘাড় ঘুরিয়ে শেষবারের মতো ফিরে তাকায় সে। দেখল রাজ দাঁড়িয়ে আছে তার কুলে একটা ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে। রাজের চোখটা ভেজা। দূর থেকেও দেখা যাচ্ছে অশ্রুকণাগুলো। কেন যেনও বাচ্চাটাকে দেখার পর নিজেকে আটকে রাখতে পারে না ইতি।

রাজ এবং ইতির বিয়ে হয় তাদের উভয় পরিবারের অনুমতি নিয়ে। ঢাকার মিরপুর ১০ এখন আছি আমরা। আমিই সেই মেয়ে। আর আমার বাবা মা আমার নাম কি রেখেছেন জানেন? “মিম”। বাবা-মার কাছ থেকে পুরো ঘটনাটি শুনি আমি তাদের ১০ম বিবাহবার্ষিকীতে
। এরপরেই লিখে ফেলি। আর আজ জানিয়ে দিলাম পৃথিবীকে।

এত সুন্দর বাবা মা পেয়ে আমি গর্বিত, দোয়া করি Happy Thakok Tara 




শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে