শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

ভূমিকম্প:-

কারণ:

সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে। 

1.ভূপৃষ্ঠজনিত সম্পাদনা আমাদের ভূ -পৃষ্ঠ অনেকগুলো প্লেট-এর সমন্বয়ে গঠিত। এই প্লেটগুলো একটি আরেকটির থেকে আলাদা থাকে ফল্ট বা ফাটল দ্বারা। এই প্লেটগুলোর নিচেই থাকে ভূ-অভ্যন্তরের সকল গলিত পদার্থ। কোনও প্রাকৃতিক কারণে এই গলিত পদার্থগুলোর স্থানচ্যুতি ঘটলে প্লেটগুলোরও কিছুটা স্থানচ্যুতি ঘটে। এ কারণে একটি প্লেটের কোনও অংশ অপর প্লেটের তলায় ঢুকে যায়, যার ফলে ভূমিতে কম্পন সৃষ্টি হয়। আর এই কম্পনই ভূমিকম্প রূপে আমাদের নিকট আবির্ভূত হয়। 


2.আগ্নেয়গিরিজনিত সম্পাদনা কখনো কখনো আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ও গলিত লাভা উৎক্ষিপ্ত হবার কারণে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হতে পারে।


3. শিলাচ্যুতিজনিত সম্পাদনা কখনো কখনো পাহাড় কিংবা উচু স্থান থেকে বৃহৎ পরিসরে শিলাচ্যুতিজনিত কারণে ভূমিকম্প হতে পারে। 


4.ভূপাত সম্পাদনা কোনো কারণে পাহাড়-পর্বত হতে বৃহৎ শিলাখণ্ড ভূত্বকের ওপর ধসে পড়ে ভূমিকম্প হয়। সাধারণত ভাঁজ পর্বতের নিকট অধিক ভূমিকম্প হয়। 


5.তাপ বিকিরণ সম্পাদনা ভূত্বক তাপ বিকিরণ করে সংকুচিত হয়ে পড়লে ফাটল ও ভাঁজের সৃষ্টি হয়ে ভূমিকম্প হয়। 


6.ভূগর্ভস্থ বাষ্প সম্পাদনা নানা কারণে ভূগর্ভে বাষ্পের সৃষ্টি হয়। এই বাষ্প ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলে তা ভূত্বকের নিম্নভাগ ধাক্কা দেয়; ফলে প্রচণ্ড ভূকম্পন অনুভূত হয়। এবং ভূমিকম্প হয়। 


7.হিমবাহের প্রভাবে সম্পাদনা কখনো কখনো প্রকাণ্ড হিমবাহ পর্বতগাত্র হতে হঠাৎ নিচে পতিত হয়। এতে ভূকম্প কেঁপে ওঠে এবং ভূমিকম্প হয়।


ফলাফল :  ভূমিকম্পের ফলে অসংখ্য চ্যুতি ও ফাটলের সৃষ্টি হয়। ভূমিকম্পের ফলে কখনো সমুদ্রতলের অনেক স্থান উপরে ভেসে উঠে। আবার কখনো স্থল্ভাগের অনেক স্থান সমুদ্রতলে ডুবে যায়। অনেক সময় নদীর গতিপথ পরিবর্তিত বা বন্ধ হয়ে যায়। ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে পর্বতগাত্র হতে বৃহৎ বরফখণ্ড হঠাৎ নিচে পতিত হয় এবং পর্বতের পাদদেশে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। ভূমিকম্পের ধাক্কায় সমুদ্রের পানি তীর থেকে নিচে নেমে যায় এবং পরক্ষণেই ভীষণ গর্জন সহকারে ১৫-২০ মিটার উঁচু হয়ে ঢেউয়ের আকারে উপকূলে এসে আছড়ে পড়ে। এ ধরণের জলোচ্ছ্বাসকে সুনামি বলে। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভুকম্পনের ফলে সৃষ্ট সুনামির আঘাতে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভারত প্রভৃতি দেশে ব্যাপক জান মালের ক্ষতি হয়। ভূমিকম্পের ফলে কখনো উচ্চভূমি সমুদ্রের পানিতে নিমজ্জিত হয়।


আগ্নেয়গিরি অগ্ন্যুতপাত:-

কারণ:

১.  সর্বত্র সমান শক্ত ও পুরু নয়। কোনো কোনো স্থানে ফাটল বা দুর্বল শিলা থাকে। এসব স্থানে সহজেই সুড়ঙ্গের সৃষ্টি হয়ে অগ্ন্যুৎপাত ঘটতে পারে। এ ফাটল বা সুড়ঙ্গ দিয়ে ভূ-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত গলিত ম্যাগমা, ভস্ম, বাষ্প, ধাতু, ধূম ইত্যাদি প্রবলবেগে বের হয়ে অগ্ন্যুৎপাতের সৃষ্টি হয়। 


২.  ভূগর্ভে ক্রমবর্ধমান সঞ্চিত বাষ্পরাশি সর্বদা বাইরে আসতে চায়। ফলে ভূত্বকের তলদেশে প্রবল ঊর্ধ্বচাপ পড়ে। ফলে উপরিস্থিত ভূত্বক নিম্নস্থ কঠিন শিলার ওপর যে চাপ দেয়, তা বহুগুণে কমে যায়। এ দুই উপায়ে কঠিন শিলার ওপর চাপ হ্রাস পাওয়ায় কঠিন শিলা তরল অবস্থায় পরিণত হয়।

 

৩. কখনো ভূত্বকের ফাটল দিয়ে নদী-নালা, খাল-বিল এমনকি সমুদ্রের পানি ভূগর্ভে প্রবেশ করে সেখানে প্রচণ্ড উত্তাপে ওই পানি বাষ্পীভূত ও আয়তনে বৃদ্ধি পেয়ে ভূত্বক ফাটিয়ে দেয়। তখন ওই ফাটলের ভেতর দিয়ে পানি, বাষ্প, তপ্ত শিলা প্রভৃতি নির্গত হয়ে অগ্ন্যুৎপাত ঘটায়। 


৪. নানা কারণে ভূগর্ভের চাপ বৃদ্ধি পায়। যেমন, ভূত্বকের চাপ হ্রাস পেলে, রাসায়নিক উপায়ে গ্যাস উৎপন্ন হলে এবং তেজস্ক্রিয় পদার্থ দ্বারা তাপ বৃদ্ধি পেলে অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলো তরল হয়ে যায় এবং সেগুলোর আয়তন বৃদ্ধি পায়। ভূগর্ভস্থ পদার্থগুলোর আয়তন বৃদ্ধির ফলে ভূগর্ভে প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি হয়। এর ফলে ভূত্বক ফেটে গিয়ে অগ্ন্যুৎপাত হয়।


 ৫. ভূগর্ভে নানা প্রকার রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে তাপ বৃদ্ধি পায় এবং গ্যাসের সৃষ্টি হয়। এতে ভূ-অভ্যন্তরের পদার্থগুলো উত্তপ্ত হয়ে চাপের সৃষ্টি করে এবং অগ্ন্যুৎপাত ঘটে। 


৬. অভ্যন্তরীণ রেডিয়াম, থোরিয়াম, ইউরেনিয়াম প্রভৃতি তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রভাবে ভূ-অভ্যন্তরে প্রচুর তাপের সৃষ্টি হয়। এতে ভূ-অভ্যন্তরের পদার্থগুলো গলে আয়তনে বৃদ্ধি পায় এবং ভূত্বক ফেটে অগ্ন্যুৎপাতের সূচনা করে। 


৭. অনেক সময় ভূ-আন্দোলনের ফলেও অগ্ন্যুৎপাতের সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে ভূ-আন্দোলনের পার্শ্বচাপে ভূত্বকের দুর্বল অংশ ভেদ করে এ উত্তপ্ত তরল লাভা ওপরে উত্থিত হয়। 


৮. ভূপৃষ্ঠ সর্বদা তাপ বিকিরণ করে শীতল ও সংকুচিত হচ্ছে। এতে ভূত্বকে ভাঁজের সৃষ্টি হয়, চাপ হ্রাস পায় এবং ভূত্বক ফেটে অগ্ন্যুৎপাতের সূচনা করে। 


ফলাফল: 

  অনেক সময় আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত লাভা সঞ্চিত হয়ে মালভূমির সৃষ্টি হয়। কারণ এতে নির্গত পদার্থ এত বেশি হয় যে চারদিকে বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত স্থান উঁচু হয়ে যায়। আবার নিচু ভূমিতেও লাভা সঞ্চিত হয়ে মালভূমির সৃষ্টি হয়। সমুদ্রের তলদেশেও বহু আগ্নেয়গিরি আছে। এগুলোর লাভা সঞ্চিত হয়ে দ্বীপের সৃষ্টি হয়। প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ এভাবে সৃষ্টি হয়েছে। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম আগ্নেয় দ্বীপ। আগ্নেয়গিরির ফলে ভূপৃষ্ঠের কোনো অংশ ধসে গভীর গহ্বরের সৃষ্টি হয়। ১৮৮৩ সালে সুমাত্রা ও জাভা দ্বীপের মধ্যবর্তী একটি দ্বীপে ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত। এক দিনের মধ্যে দ্বীপটির প্রায় অর্ধেক অংশ উৎক্ষিপ্ত হয়ে বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং বাকি অংশে এক বিরাট গহব্বর দেখা যায়।  মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে বৃষ্টির পানি জমে হ্রদের সৃষ্টি করে। আলাস্কার মাউন্ট আতাকামা, অ্যারিজোনা ও নেভাদার আগ্নেয় হ্রদ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে অনেক সময় ভূগর্ভ থেকে নির্গত লাভা, শিলাদ্রব্য প্রভৃতি দীর্ঘকাল ধরে একই স্থানে সঞ্চিত হয়ে পর্বতের সৃষ্টি করে। এ জাতীয় পর্বতকে আগ্নেয় পর্বত বলে। ইতালির ভিসুভিয়াস এ জাতীয় আগ্নেয়গিরি। অনেক ক্ষেত্রে আগ্নেয়গিরির লাভা সঞ্চিত হয়ে নিম্ন সমভূমির সৃষ্টি করে। উত্তর আমেরিকার গ্রেক নদীর লাভা সমভূমি এ জাতীয়।  আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত লাভা প্রভৃতি প্রবলবেগে ঊর্ধ্বে উঠে চারদিকে বহু দূর গিয়ে পড়ে এবং পার্শ্ববর্তী গ্রাম, শহর, শস্যক্ষেত্র প্রভৃতি ধ্বংস হয়। ১৯৭৯ সালে ইতালির ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে হারকিউলেনিয়াম ও পম্পেই নামক দুটি নগর উত্তপ্ত লাভা ও ভস্মরাশির মধ্যে প্রোথিত হয়ে গিয়েছিল। এমনকি ক্রাকাতোয়া অগ্ন্যুৎপাত ও লাভার ফলে ৩৫০টি গ্রামসহ প্রায় হাজার লোকের জীবনহানি ঘটে। ১৯৮৬ সালে মেক্সিকোর আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ও লাভার ফলে কয়েক হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে কেবল মানুষের অপকারই হয় না; বরং অনেক ক্ষেত্রে উপকারও হয়। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট ভূমির উর্বরতাও বৃদ্ধি পায়। যেমন- দাক্ষিণাত্যের লাভা গঠিত কৃষ্ণমৃত্তিকা কার্পাস চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। অনেক সময় অগ্ন্যুৎপাতের ফলে পৃথিবীর বহু নিচের খনিজ পদার্থও ভূপৃষ্ঠে নিক্ষিপ্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাংশে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের জন্যই অধিক পরিমাণে খনিজ দ্রব্য পাওয়া যায়। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে উর্বর পলল ভূমিও সৃষ্টি হতে পারে। অগভীর সমুদ্রে বা হ্রদে লাভা ও ভস্ম সঞ্চিত হয়ে এরূপ ভূভাগ সৃষ্টি হয়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ