আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা ঋতুবৈচিত্র্য সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন গরম ও শৈত্যের। আধুনিক বিজ্ঞান গরম বা শৈত্যের কারন হিসেবে দেখায় কাল্পনিক গোলক পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণের সময় সূর্যালোকের পথ,দূরত্ব ইত্যাদিতে পরিবর্তন আসাকে। অর্থাৎ (অপ)বিজ্ঞানীদের কাল্পনিক সৌরজগতের যেকোন কাল্পনিক গ্রহে উত্তাপ বা উষ্ণ আবহাওয়া এবং শৈত্য সম্পূর্নভাবে সূর্যের উপর নির্ভর করে। আমরা নাকি সূর্যের জন্যই গরম বা ঠান্ডা অনুভব করি। কিন্তু আল্লাহর রাসূল(সাঃ) এ ব্যপারে কি বলেছেন?  

 

حدثنا أبو اليمان، أخبرنا شعيب، عن الزهري، قال حدثني أبو سلمة بن عبد الرحمن، أنه سمع أبا هريرة ـ رضى الله عنه ـ يقول قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ اشتكت النار إلى ربها، فقالت رب أكل بعضي بعضا، فأذن لها بنفسين نفس في الشتاء ونفس في الصيف، فأشد ما تجدون في الحر، وأشد ما تجدون من الزمهرير ‏"‏‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘জাহান্নাম তার রবের নিকট অভিযোগ করে বলেছে, হে রব! আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলেছে। তখন তিনি তাকে দু’টি নিঃশ্বাস ফেলার অনুমতি প্রদান করেন। একটি নিঃশ্বাস শীতকালে আর একটি নিঃশ্বাস গ্রীষ্মকালে। কাজেই তোমরা গরমের তীব্রতা এবং শীতের তীব্রতা পেয়ে থাক।’

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩২৬০

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

وحدثني عمرو بن سواد، وحرملة بن يحيى، - واللفظ لحرملة - أخبرنا ابن وهب، أخبرني يونس، عن ابن شهاب، قال حدثني أبو سلمة بن عبد الرحمن، أنه سمع أبا هريرة، يقول قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ اشتكت النار إلى ربها فقالت يا رب أكل بعضي بعضا ‏.‏ فأذن لها بنفسين نفس في الشتاء ونفس في الصيف فهو أشد ما تجدون من الحر وأشد ما تجدون من الزمهرير ‏"‏ ‏.

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জাহান্নাম তার প্রভু আল্লাহর কাছে এ বলে ফরিয়াদ করল যে, তার এক অংশ আরেক অংশকে খেয়ে ফেলছে। সুতরাং আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামকে দু’বার শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুমতি দিলেন। একবার শীতকালে এবং আরেক বার গ্রীস্মকালে। তোমরা যে প্রচন্ড গরমের অনুভব করে থাকো তা এ কারণেই। (ই.ফা.১২৭৫, ই.সে.১২৮৮)

সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১২৮৮

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

وحدثني حرملة بن يحيى، حدثنا عبد الله بن وهب، أخبرنا حيوة، قال حدثني يزيد بن عبد الله بن أسامة بن الهاد، عن محمد بن إبراهيم، عن أبي سلمة، عن أبي هريرة، عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ‏ "‏ قالت النار رب أكل بعضي بعضا فأذن لي أتنفس ‏.‏ فأذن لها بنفسين نفس في الشتاء ونفس في الصيف فما وجدتم من برد أو زمهرير فمن نفس جهنم وما وجدتم من حر أو حرور فمن نفس جهنم ‏"‏ ‏.

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ  (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জাহান্নাম অভিযোগ করে আল্লাহর কাছে বলল, হে আমার প্রভু! আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলছে। সুতরাং আমাকে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের অনুমতি দিন। তাই আল্লাহ তা’আলা তাকে দুবার শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুমতি দান করলেন। একবার শীত মৌসুমে আরেকবার গ্রীষ্ম মৌসুমে। তোমরা শীতকালে যে ঠান্ডা অনুভব করে থাকো তা জাহান্নামের শ্বাস-প্রশ্বাসের কারণ। আবার যে গরমে বা প্রচন্ড উত্তাপ অনুভব করে থাকো তাও জাহান্নামের শ্বাস-প্রশ্বাসের কারণে। (ই.ফা.১২৭৭, ই.সে.১২৯০)

সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১২৯০

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

حدثنا أبو بكر بن أبي شيبة، حدثنا عبد الله بن إدريس، عن الأعمش، عن أبي صالح، عن أبي هريرة، قال قال رسول الله ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ اشتكت النار إلى ربها فقالت يا رب أكل بعضي بعضا ‏.‏ فجعل لها نفسين نفس في الشتاء ونفس في الصيف فشدة ما تجدون من البرد من زمهريرها وشدة ما تجدون من الحر من سمومها ‏"‏ ‏.‏

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) , থেকে বর্ণিতঃ:

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেছেনঃ জাহান্নাম তার প্রভুর নিকট অভিযোগ করে বললো, হে আমার রব! আমার একাংশ অপরাংশকে গ্রাস করেছে। তখন আল্লাহ তাকে দু’বার নিঃশ্বাস নেয়ার অনুমতি দিলেনঃ একটি শীতকালে অপরটি গ্রীষ্মকালে। তোমরা দুনিয়াতে যে ঠাণ্ডা অনুভব করো তা হলো জাহান্নামের হিম শীতলতা থেকে এবং যে গরম অনুভব করো তা হলো জাহান্নামের আগুনের উষ্ণতা থেকে।[৩৬৫১]

তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

ফুটনোটঃ

[৩৬৪৯] [সহীহুল বুখারী ৫৩৭, ৩২৬০, মুসলিম ৬১৫, তিরমিযী ১৫৭, ২৫৯২, নাসায়ী ৫০০, আবূ দাঊদ ৪০২, আহমাদ ৭০৯০, ৭২০৫, ৭৪২৪, ৭৫৫৮, ৭৬৬৫, ৭৭৭০, ২৭৪৪৩, ৮৩৭৮, ৮৬৮৩, ৮৮৬১, ৮৮৮১, ৮৯৩৯, ২৭৪৯৪, ৯৬৩৯, ১০১২৮, ১০১৬০, ১০২১৪, ১১১০৪, মুয়াত্তা' মালিক ২৮২৯, দারিমী ১২০৭, ২৮৪৫। সহীহাহ ১৪৫৭।]


 

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৪৩১৯

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

আধুনিক বিজ্ঞানের হাজারো কুফরি তত্ত্বের একটি বিবর্তনবাদ।  বিবর্তনবাদ মূলত একটি অকাল্ট

কন্সেপ্ট যেটাকে মেইনস্ট্রিম বিজ্ঞানেও সঞ্চালিত হয়েছে সাধারণ জনগণের আকিদাকে কুফরের অন্ধকার দ্বারা আচ্ছন্ন করার উদ্দেশ্যে। এই তত্ত্ব এমন বিশ্বাসব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করে যাতে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনকে অগ্রাহ্য করা হয়। অর্থাৎ কোন কিছুই বুদ্ধিপ্রদীপ্ত স্বত্ত্বা কর্তৃক সৃষ্টি নয় বরং সবই প্রাকৃতিক উন্নয়নমুখী বিবর্তন। সমস্ত প্রানী একক অর্গ্যানিজম থেকে এসেছে। মানুষ হয়েছে ছোট্ট ব্যাকটেরিয়া বা কীট বা এরকম প্রানী থেকে। এরপরে হাজার হাজার বছর পর ধীরে ধীরে মাছ জাতীয় প্রানী, মাছ থেকে সরীসৃপ জাতীয় প্রানী, এরপরে বানর, ধীরে ধীরে নিয়ানডার্থাল এরপরে লক্ষ লক্ষ বছর পর হোমোসেপিয়েন্স বা বর্তমান পূর্ণাঙ্গ মানুষ। বিবর্তনবাদ অনুযায়ী কোন প্রানী কালের পরিক্রমায় ক্রমশ উন্নততর হতে থাকে। সমস্ত কিছুই পরিবর্তনশীল। এরা এক ফর্ম থেকে অন্য ফর্মে মাইগ্রেট করে। ধরুন সাপ থেকে হাজার বছর পর অন্য কোন প্রজাতির প্রানীরও উদ্ভব হতে পারে। গরু থেকে নতুন কোন আকৃতির প্রানী, মানুষও তেমনি অন্যকোন প্রানীতে শিফট করতে পারে অথবা আকৃতি বা দৈহিক গঠন পরিবর্তন হয়ে ভিন্ন কিছুতে রুপান্তর হতে পারে। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা প্রতিটি প্রানীকে আলাদাভাবে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলেনঃ

سُبْحَانَ الَّذِي خَلَقَ الْأَزْوَاجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنبِتُ الْأَرْضُ وَمِنْ أَنفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُونَ

পবিত্র তিনি যিনি যমীন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদকে, তাদেরই মানুষকে এবং যা তারা জানে না, তার প্রত্যেককে জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন[৩৬:৩৬]

وَمِن كُلِّ شَيْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ

আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা হৃদয়ঙ্গম কর[আয যারিয়াতঃ৪৯]

وَخَلَقْنَاكُمْ أَزْوَاجًا

আমি তোমাদেরকে জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছি[৭৮:৮]

فَاطِرُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ جَعَلَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَمِنَ الْأَنْعَامِ أَزْوَاجًا يَذْرَؤُكُمْ فِيهِ لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ

তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের স্রষ্টা। তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং চতুস্পদ জন্তুদের মধ্য থেকে জোড়া সৃষ্টি করেছেন। এভাবে তিনি তোমাদের বংশ বিস্তার করেন। কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন[৪২:১১]

সুতরাং একক অর্গ্যানিজম থেকে ধীরে ধীরে হাজার প্রজাতি বা শ্রেনীর প্রানী সৃষ্টির তত্ত্ব সম্পূর্ন মিথ্যা এবং সুস্পষ্ট কুফর। যেহেতু আল্লাহ এক প্রজাতির প্রানী থেকে অন্য প্রজাতির প্রানীতে রূপান্তরের কোন পথ করেন নি, তাই নূহ(আঃ) এর সময়কার মহাপ্লাবনের সময় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা তাকে প্রত্যেক প্রজাতির প্রানীর একটি করে জোড়া নৌকায় তুলবার আদেশ দিয়েছেন।আল্লাহ বলেনঃ

فَأَوْحَيْنَا إِلَيْهِ أَنِ اصْنَعِ الْفُلْكَ بِأَعْيُنِنَا وَوَحْيِنَا فَإِذَا جَاء أَمْرُنَا وَفَارَ التَّنُّورُ فَاسْلُكْ فِيهَا مِن كُلٍّ زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ وَأَهْلَكَ إِلَّا مَن سَبَقَ عَلَيْهِ الْقَوْلُ مِنْهُمْ وَلَا تُخَاطِبْنِي فِي الَّذِينَ ظَلَمُوا إِنَّهُم مُّغْرَقُونَ

অতঃপর আমি তার কাছে আদেশ প্রেরণ করলাম যে, তুমি আমার দৃষ্টির সামনে এবং আমার নির্দেশে নৌকা তৈরী কর। এরপর যখন আমার আদেশ আসে এবং চুল্লী প্লাবিত হয়, তখন নৌকায় তুলে নাও, প্রত্যেক জীবের এক এক জোড়া এবং তোমার পরিবারবর্গকে, তাদের মধ্যে যাদের বিপক্ষে পূর্বে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তাদের ছাড়া। এবং তুমি জালেমদের সম্পর্কে আমাকে কিছু বলো না। নিশ্চয় তারা নিমজ্জত হবে।[২৩:২৭]

حَتَّى إِذَا جَاء أَمْرُنَا وَفَارَ التَّنُّورُ قُلْنَا احْمِلْ فِيهَا مِن كُلٍّ زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ وَأَهْلَكَ إِلاَّ مَن سَبَقَ عَلَيْهِ الْقَوْلُ وَمَنْ آمَنَ وَمَا آمَنَ مَعَهُ إِلاَّ قَلِيلٌ

অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছাল এবং ভুপৃষ্ঠ উচ্ছসিত হয়ে উঠল, আমি বললামঃ সর্বপ্রকার জোড়ার দুটি করে এবং যাদের উপরে পূর্বেই হুকুম হয়ে গেছে তাদের বাদি দিয়ে, আপনার পরিজনবর্গ ও সকল ঈমানদারগণকে নৌকায় তুলে নিন। বলাবাহুল্য অতি অল্পসংখ্যক লোকই তাঁর সাথে ঈমান এনেছিল।[১১:৪০]

সুতরাং এই বিবর্তনবাদের শয়তানি মতবাদের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। আল্লাহ সর্বপ্রথম মানুষ তৈরি করে আদম আলাইহিসালামকে। তাকে সৃষ্টি করা হয় সরাসরি শুকনো ঠনঠনে মাটি দ্বারা। অতঃপর তার থেকে মা হাওয়াকে(আঃ) সৃষ্টি করেন। এরপর থেকে এ যুগল থেকে আল্লাহ মানব সন্তানকে সরাসরি সৃষ্টি করেন বীর্যের মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়া এখন পর্যন্ত অব্যাহত। এরপরেও মানুষ মিথ্যা বিষয়ে(যেমনঃবিবর্তনবাদ এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কুফরি তত্ত্ব) বিশ্বাস করে এবং আল্লাহর অনুগ্রহকে অস্বীকার করে।

আল্লাহ বলেনঃ

وَلَقَدْ خَلَقْنَا الإِنسَانَ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ

আমি মানবকে পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুস্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি[১৫:২৬]

قَالَ لَهُ صَاحِبُهُ وَهُوَ يُحَاوِرُهُ أَكَفَرْتَ بِالَّذِي خَلَقَكَ مِن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ سَوَّاكَ رَجُلًا

তার সঙ্গী তাকে কথা প্রসঙ্গে বললঃ তুমি তাঁকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর বীর্য থেকে, অতঃপর র্পূনাঙ্গ করেছেন তোমাকে মানবাকৃতিতে?[১৮:৩৭]

وَاللّهُ جَعَلَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَجَعَلَ لَكُم مِّنْ أَزْوَاجِكُم بَنِينَ وَحَفَدَةً وَرَزَقَكُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ أَفَبِالْبَاطِلِ يُؤْمِنُونَ وَبِنِعْمَتِ اللّهِ هُمْ يَكْفُرُونَ

আল্লাহ তোমাদের জন্যে তোমাদেরই শ্রেণী থেকে জোড়া পয়দা করেছেন এবং তোমাদের যুগল থেকে তোমাদেরকে পুত্র ও পৌত্রাদি দিয়েছেন এবং তোমাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন। অতএব তারা কি মিথ্যা বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করে?[১৬:৭২]

সুতরাং বিবর্তনবাদ অনুযায়ী বানর থেকে মানব সৃষ্টির কথা অবাস্তব কল্পনা ছাড়া কিছু না। বিবর্তনবাদ অনুযায়ী তো শুরুর দিকে মানুষ ভাষাহীন অসভ্য গুহাবাসী ছিল। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা আদি মানব মানবীকে সৃষ্টির শুরুতেই পোষাকের ব্যবস্থা করেছেন, যা শয়তান অনাবৃত করার রাস্তা করে দেয়। আল্লাহ বলেনঃ

يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْءَاتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَىَ ذَلِكَ خَيْرٌ ذَلِكَ مِنْ آيَاتِ اللّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ

হে বনী-আদম আমি তোমাদের জন্যে পোশাক অবর্তীণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবর্তীণ করেছি সাজ সজ্জার বস্ত্র এবং পরহেযগারীর পোশাক, এটি সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর কুদরতেরঅন্যতম নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।

  يَا بَنِي آدَمَ لاَ يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُم مِّنَ الْجَنَّةِ يَنزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْءَاتِهِمَا إِنَّهُ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيلُهُ مِنْ حَيْثُ لاَ تَرَوْنَهُمْ إِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِينَ أَوْلِيَاء لِلَّذِينَ لاَ يُؤْمِنُونَ

হে বনী-আদম শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে; যেমন সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবস্থায় যে, তাদের পোশাক তাদের থেকে খুলিয়ে দিয়েছি-যাতে তাদেরকে লজ্জাস্থান দেখিয়ে দেয়। সে এবং তার দলবল তোমাদেরকে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখ না। আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি, , যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না।[৭:২৬-২৭]

আল্লাহ স্বয়ং পিতা আদমকে(আঃ) ভাষা ও বিবিধ বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। তাকে এমনকি এমন সব জ্ঞানও আল্লাহ তাকে দিয়েছেন যা ফেরেশতাদের কাছেও অজানা। আল্লাহ বলেনঃ

وَعَلَّمَ آدَمَ الأَسْمَاء كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى الْمَلاَئِكَةِ فَقَالَ أَنبِئُونِي بِأَسْمَاء هَـؤُلاء إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ

আর আল্লাহ তা’আলা শিখালেন আদমকে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীর নাম। তারপর সে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীকে ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। অতঃপর বললেন, আমাকে তোমরা এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্য হয়ে থাক।

  قَالُواْ سُبْحَانَكَ لاَ عِلْمَ لَنَا إِلاَّ مَا عَلَّمْتَنَا إِنَّكَ أَنتَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ

তারা বলল, তুমি পবিত্র! আমরা কোন কিছুই জানি না, তবে তুমি যা আমাদিগকে শিখিয়েছ (সেগুলো ব্যতীত) নিশ্চয় তুমিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা।

  قَالَ يَا آدَمُ أَنبِئْهُم بِأَسْمَآئِهِمْ فَلَمَّا أَنبَأَهُمْ بِأَسْمَآئِهِمْ قَالَ أَلَمْ أَقُل لَّكُمْ إِنِّي أَعْلَمُ غَيْبَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَأَعْلَمُ مَا تُبْدُونَ وَمَا كُنتُمْ تَكْتُمُونَ

তিনি বললেন, হে আদম, ফেরেশতাদেরকে বলে দাও এসবের নাম। তারপর যখন তিনি বলে দিলেন সে সবের নাম, তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আমি আসমান ও যমীনের যাবতীয় গোপন বিষয় সম্পর্কে খুব ভাল করেই অবগত রয়েছি? এবং সেসব বিষয়ও জানি যা তোমরা প্রকাশ কর, আর যা তোমরা গোপন কর![২:৩১-৩৩]

সুতরাং এটা প্রমাণ করে বিবর্তনবাদ অনুযায়ী শুরুর দিকে পোষাক ও ভাষাহীন অসভ্য প্রানীতুল্য মানবজাতির গুহায় বসবাস এবং আগুন জ্বালানোর শিক্ষার মাধ্যমে সভ্যতার বিকাশের গল্প; যা আজ শিক্ষাব্যবস্থায় প্রচলিত আছে তা সম্পূর্ন মিথ্যা এবং ইসলামের আকিদার সাথে সাংঘর্ষিক।

আল্লাহ প্রথম মানবকেই পরিপূর্ণ শিক্ষায় শিক্ষিত এবং সভ্যতার পরিপূর্ণ জ্ঞান দানের পরেই দুনিয়ায় প্রেরণ করেন। আল্লাহ সর্বপ্রথম মানব হযরত আদম(আঃ) কে উত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করেন। তার উচ্চতা ছিল ৬০ হাত।

حدثني عبد الله بن محمد، حدثنا عبد الرزاق، عن معمر، عن همام، عن أبي هريرة رضي الله عنه32] ، فزادوه: ورحمة الله، فكل من يدخل الجنة على صورة آدم، فلم يزل الخلق ينقص حتى الآن "

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

নবী‎ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা’আলা আদম (‘আঃ)-কে সৃষ্টি করলেন। তাঁর দেহের দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) তাঁকে (আদমকে) বললেন, যাও। ঐ ফেরেশতা দলের প্রতি সালাম কর এবং তাঁরা তোমার সালামের জওয়াব কিভাবে দেয় তা মনোযোগ দিয়ে শোন। কারণ সেটাই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের রীতি। অতঃপর আদম (‘আঃ) (ফেরেশতাদের) বললেন, “আস্‌সালামু ‘আলাইকুম”। ফেরেশতামন্ডলী তার উত্তরে “আস্‌সালামু ‘আলাইকা ওয়া রহ্‌মাতুল্লাহ” বললেন। ফেরেশতারা সালামের জওয়াবে “ওয়া রহ্‌মাতুল্লাহ” শব্দটি বাড়িয়ে বললেন। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন তারা আদম (‘আঃ)–এর আকৃতি বিশিষ্ট হবেন। তবে আদম সন্তানের দেহের দৈর্ঘ্য সর্বদা কমতে কমতে বর্তমান পরিমাপে এসেছে।


 

(৬২২৭, মুসলিম ৫১/১১ হাঃ ২৮৪১, আহমাদ ৮১৭৭) (আ.প্র. ৩০৮০, ই.ফা. ৩০৮৮)

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৩২৬

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

حدثنا عبد الله بن محمد قال: حدثنا عبد الرزاق قال: أخبرنا معمر، عن همام، عن أبي هريرة، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: " خلق الله آدم صلى الله عليه وسلم على صورته، وطوله ستون ذراعا، ثم قال: اذهب، فسلم على أولئك - نفر من الملائكة جلوس - فاستمع ما يحيونك به فإنها تحيتك وتحية ذريتك، فقال: السلام عليكم، فقالوا: السلام عليك ورحمة الله، فزادوه: ورحمة الله، فكل من يدخل الجنة على صورته، فلم يزل ينقص الخلق حتى الآن "

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

নবী (সাঃ) বলেনঃ আল্লাহ তাআলা আদম (আবু দাউদ)-কে সৃষ্টি করলেন। তাঁর উচ্চতা ছিল ষাট হাত। আল্লাহ তাআলা তাঁকে বলেন, যাও, উপবিষ্ট ঐ ফেরেশতার দলকে সালাম দাও এবং তারা তোমার সালামের কি জবাব দেয় তা মনোযোগ সহকারে শোনো। কেননা এটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তানদের সালাম (সম্ভাষণ)। আদম (আঃ) গিয়ে বলেন, আসসালামু আলাইকুম (আপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক)। ফেরেশতাগণ জবাব দিলেন, আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ (আপনার উপরও শান্তি ও আল্লাহর রহমাত বর্ষিত হোক)। ফেরেশতাগণ “ওয়া রহমাতুল্লাহি” বাড়িয়ে বলেন। যে ব্যক্তি বেহেশতে যাবে সেই হবে আদম (আবু দাউদ)-এর আকৃতি বিশিষ্ট। তখন থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত মানুষের দেহাবয়ব (উচ্চতাবারানী) ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে আসছে।

(বুখারী, মুসলিম)

আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ৯৮৭

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

عن أبي هريرة ( عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «خلق الله آدم على صورته طوله ستون ذراعا، فلما خلقه قال: اذهب فسلم على أولئك النفر من الملائكة جلوس، فاستمع ما يحيونك؛ فإنها تحيتك وتحية ذريتك, فقال: السلام عليكم, فقالوا: السلام عليك ورحمة الله، فزادوه ورحمة الله، فكل من يدخل الجنة على صورة آدم فلم يزل الخلق ينقص بعد حتى الآن» .

( خ, م ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তার আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, তার দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত, তিনি তাকে সৃষ্টি করে বলেনঃ যাও সেখানে বসে থাকা ফেরেশতাদের দলকে সালাম কর, খেয়াল করে শোন তারা তোমাকে কি অভিবাদন জানায়, কারণ তা-ই হচ্ছে তোমার ও তোমার সন্তানের অভিবাদন। তিনি বললেনঃ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ তারা বললঃ السَّلَامُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ তারা অতিরিক্ত বলল। সুতরাং যে কেউ জান্নাতে যাবে সে আদমের আকৃতিতে যাবে, আর তারপর থেকে মানুষ ছোট হওয়া আরম্ভ করছে, এখন পর্যন্ত তা হচ্ছে”। 

[বুখারি ও মুসলিম] হাদীসটি সহিহ।

সহিহ হাদিসে কুদসি, হাদিস নং ১২৬

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

সুতরাং হাদিস থেকে স্পষ্ট হলো যে, আল্লাহ মানুষকে শুরুতে (পরিপূর্ন)বৃহৎ আকৃতিতে সৃষ্টি করেন। এই ক্রমধারা দীর্ঘকাল পর্যন্ত থাকবার পর থেকে মানুষ ক্রমাগত ছোট হতে হতে এখন মানুষের উচ্চতা ৫/৬ ফুটে পৌছেছে। শুধু তাই নয় সুবিশাল দেহের আদীম সেই মানুষ জ্ঞান বুদ্ধিতেও আজকের তুলনায় উন্নত ছিল(সে আলোচনা সামনে আসছে)। সুতরাং সবকিছু ক্রমশ অধঃপতনের দিকে এসেছে। এটা বিবর্তনবাদের ঠিক উলটো। বিবর্তনবাদ অনুযায়ী সবকিছু ক্রমশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে উন্নয়নমুখী।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে