শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

 

পবিত্র কুরআনে ছয়টি অবাধ্য জাতির কথা উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহর আজাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল প্রধান ছয়টি জাতি।

১। মুসা (আঃ)-এর জাতি।

২। শোয়াইব (আঃ)-এর জাতি।

৩। হুদ (আঃ)-এর জাতি।

৪। লুত (আঃ)-এর জাতি।

৫। নুহ (আঃ)-এর জাতি।

৬। সালেহ (আঃ)-এর সম্প্রদায়।

রেফারেন্সঃ তাদের পূর্ববর্তী নূহ, আদ ও সামূদের সম্প্রদায়, ইবরাহীমের সম্প্রদায় এবং মাদইয়ান ও বিধ্বস্ত নগরের অধিবাসীদের সংবাদ কি তাদের কাছে আসেনি? তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ তাদের রাসূলগণ এসেছিলেন। অতএব, আল্লাহ এমন নন যে, তাদের উপর যুলম করেন, কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করছিল। (সূরা তাওবাহ ৯:৭০)

অতঃপর আল্লাহ তাআলা এসব কাফির মুনাফিকদেরকে পূর্ববর্তী অবাধ্য জাতিসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, তাদের কাছে নাবী-রাসূলগণ আমার নিদর্শনাবলী নিয়ে আগমন করেছিল কিন্তু তারা তাদের কথায় কর্ণপাত করেনি। ফলে তাদের জুলুমের কারণে তাদের ওপর মর্মান্তিক শাস্তি আপতিত হয়েছিল।

তাদের অন্যতম নূহ (আঃ)-এর জাতি ও কওমে আদ তথা হূদ (আঃ)-এর জাতি। আল্লাহ তাআলার গযবে ধ্বংসপ্রাপ্ত বিশ্বের প্রধান ছয়টি জাতির মধ্যে নূহ (আঃ)-এর পরে আদ ছিল দ্বিতীয় জাতি। এরা খুব দুর্ধর্ষ, শক্তিশালী, সুঠামদেহী ও বিরাট বপুসম্পন্ন ছিল। হূদ (আঃ) তাদেরকে শির্ক বর্জন করে সার্বিক জীবনে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।

আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে মূর্তিপূজা ত্যাগ করার এবং জুলুম ও অত্যাচার পরিহার করে ন্যায় সুবিচারের পথে চলার উদাত্ত আহ্বান জানান। হূদ (আঃ) একজন তাদের মতই মানুষ, কিন্তু তারা বাপ-দাদা ইত্যাদির দোহাই দিয়ে দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে। ফলে প্রবল ঝড়ঝঞ্ঝার শাস্তি দিয়ে তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। যা সাত রাত ও সাত দিন একাধারে প্রবাহমান ছিল। এতে তাদের লাশগুলো খেজুর গাছের কাণ্ডের মত মাটিতে পড়েছিল। এদের কথা বিস্তারিতভাবে সূরা আ‘রাফের ৬৫-৭২নং আয়াাতের আলোচনা করা হয়েছে।

কওমে সামূদ সালেহ (আঃ)-এর জাতি। আদ জাতির ধ্বংসের প্রায় ৫০০ বছর পরে সালেহ (আঃ) সামূদ জাতির প্রতি নাবী হিসেবে প্রেরিত হন। (তারীখুল আম্বিয়া ১/৪৯)

আদ জাতির ধ্বংসের পর সামূদ জাতি তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়। তারাও আদ জাতির মত শক্তিশালী ও বীরের জাতি ছিল। তারা প্রস্তর খোদাই ও স্থাপত্য বিদ্যায় খুবই পারশর্দী ছিল। ভীষণ ভূমিকম্প এবং ওপর থেকে বিকট ও ভয়াবহ এক গর্জন দিয়ে তাদেরকে ধ্বংস করা হয়। ফলে সবাই যার যার স্থানে একযোগে অধোমুখী হয়ে ভূতলশায়ী হল (সূরা আ‘রাফ ৭৮, হূদ ৬৭-৬৮)

এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হল এমনভাবে যেন তারা কোনদিন সেখানে বসবাস করেনি। এ সম্পর্কে সূরা আ‘রাফের ৭৩-৭৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় আলোচনা করা হয়েছে।

‘মাদইয়ান অধিবাসী’ উদ্দেশ্য হল শুআইব (আঃ)-এর জাতি। পবিত্র কুরআনের ১০টি সূরায় ৫৩টি আয়াতে তার সম্পর্কে আলোচনা উল্লেখ রয়েছে। লূত (আঃ)-এর অবাধ্য জাতি ধ্বংসের অনতিকাল পরেই তাকে নবুওয়াত দিয়ে মাদইয়ানবাসীর হিদায়াতের জন্য প্রেরণ করা হয়েছিল। মাদইয়ান হল লূত সাগরের নিকটবর্তী সিরিয়া ও হিজাযের সীমান্তবর্তী একটি জনপদের নাম। যা অদ্যাবধি পূর্ব জর্ডানের সামুদ্রিক বন্দর ‘মোআন’ এর অদূরে বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ তাআলার গযবে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রধান ছয়টি প্রাচীন জাতির মধ্যে ৫ম জাতি হল ‘আহলে মাদইয়ান’। তাদের অপরাধ ছিল তারা আল্লাহ তাআলার সাথে শির্ক করত, রাহাজানি করত, লোকদেরকে ওজনে কম দিত এবং নিজেরা মানুষের নিকট থেকে নেয়ার সময় বেশি নিত। তাদের এই সীমালংঘনের কারণে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে শাস্তি দিয়েছেন। এমনকি তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছেন। এদের সম্পর্কে সূরা আ‘রাফের ৮৫-৯৩ ও হূদের ৮৪-৯৫ নং আয়াতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

লূত (আঃ)-এর সম্প্রদায় যাদের জনপদের নাম ছিল সামূদ। এদেরকে প্রথমত আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত: তাদের জনপদকে উল্টো-পাল্টা করে দেয়া হয়েছিল। এ কারণে তাদেরকে আসহাবে মুতাফিকাত বলা হয়। সুতরাং এসব ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত, আল্লাহ তাআলা কেন তাদের বিবরণ আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন? তা এজন্যই যে, যাতে আমরা সতর্ক হই এবং তাদের মত আচরণ না করি।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ