অতি প্রাচীন বোঝাতে আমরা সাধারণত মান্ধাতার আমল কথাটি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু মান্ধাতার আমল কথাটি কীভাবে এলো? এর পেছনে রয়েছে একটি পৌরাণিক কাহিনি। মান্ধাতা ছিলেন সূর্য বংশের এক রাজা।

রামচন্দ্রও পরে একই বংশে জন্মেছিলেন। সেই হিসাবে বলা যায় মান্ধাতা রামচন্দ্রের পূর্বপুরুষ ছিলেন। মান্ধাতার বাবা ছিলেন সূর্য বংশের রাজা যুবনাশ্ব। তাঁর কোনো পুত্রসন্তান ছিল না। পুত্রসন্তান লাভের আশায় তিনি জঙ্গলে ঋষির আশ্রমে গিয়ে তপস্যা শুরু করেন। যুবনাশ্বের তপস্যায় মুগ্ধ হয়ে ঋষিরা তাঁর জন্য যজ্ঞ করতে রাজি হলেন।

যজ্ঞ শেষ হওয়ায় পর ঋষিরা এক কলসি মন্ত্রপূত জল রেখে দিলেন যা খেলে যুবনাশ্বের রানির পুত্রসন্তান হবে। কিন্তু একথা যুবনাশ্ব জানতেন না। রাতে পিপাসা পেলে তিনি কলসির জল খেয়ে ফেলেন। সকালে উঠে ঋষিরা কলসিতে অল্প জল পেয়ে যুবনাশ্বকে জিজ্ঞাসা করলেন। যুবনাশ্ব উত্তর দিলেন যে জল তিনিই পান করেছেন।

ঋষিরা বললেন জল যেহেতু যুবনাশ্ব পান করেছে সেহেতু পুত্রসন্তান যুবনাশ্বের গর্ভেই হবে। এর প্রায় ১০০ বছর পর যুবনাশ্বের পেটের বাম দিক বিদীর্ণ করে মান্ধাতা ভূমিষ্ঠ হন। কিন্তু কোনো নারীর গর্ভে জন্ম না হওয়ায় মান্ধাতা কার দুধ খেয়ে বড়ো হবেন তা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। সেই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এলেন দেবরাজ ইন্দ্র।

ইন্দ্র তাঁর হাতের আঙুল মান্ধাতার মুখের ভেতরে দিয়ে বললেন “মাম ধাস্যতি” যার অর্থ আমাকে পান করো। সেখান থেকে তাঁর নাম হয় মামধাতা বা মান্ধাতা। কথিত আছে যে ইন্দ্রের সেই আঙুলটি ছিল অমৃতক্ষরা। অমৃতগুণে মান্ধাতা খুব অল্প সময়েই বড়ো হয়ে যান। অল্পদিনেই মান্ধাতা পড়াশোনা ও অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন।

বাবা যুবনাশ্বের মৃত্যুর পর মান্ধাতা রাজা হন। যুদ্ধে তিনি পুরো পৃথিবী জয় করেন। এরপর তিনি ভাবলেন পুরো পৃথিবীই তিনি জয় করে ফেলেছেন তাহলে স্বর্গ জয় করা কেন বাদ রাখবেন। তারপর তিনি স্বর্গ জয়ের লক্ষ্যে বের হলেন। কিন্তু দেবরাজ ইন্দ্র জানালেন তিনি (মান্ধাতা) এখনও পুরো পৃথিবী জয় করতে পারেননি কারণ লবণাসুর এখনও মান্ধাতার অধীনতা মেনে নেয়নি।

মান্ধাতা চললেন লবণাসুরকে বধ করতে। মান্ধাতা লবণাসুরের সাথে এ যুদ্ধেই নিহত হয়েছিলেন। মান্ধাতা রাজত্ব করতেন পুরাণে বর্ণিত চার যুগের প্রথম যুগে অর্থাৎ সত্যযুগে। বছরের হিসাবে সত্যযুগ প্রায় ৩৫ লক্ষ বছর আগের সময়।

তবে প্রচলিত অর্থে মান্ধাতার আমল বলতে কোনো নির্দিষ্ট সময় বিবেচনা করা হয় না, সাধারণত অনেক প্রাচীন বোঝাতে মান্ধাতার আমল কথাটি ব্যবহৃত হয়।

প্রেক্ষিত-পরিপ্রেক্ষিত



শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে