ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র বিশ্ব-বিদ্যালয় কলেজের “সমাজবিজ্ঞান” বিভাগের শেষবর্ষের ছাত্র অনল কুমার দাস (২৩)। তিনি ফেদু নামেই বেশি পরিচিত। তার আরও একটা পরিচিতি হলো তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি টিউশনির অর্থ জমিয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন একতলা বাড়ি নির্মাণ করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ফেদু ফরিদপুরের


 







আলফাডাঙ্গা উপজেলার পবনবেগ মালোপাড়ার বাসিন্দা। তার বাবার নাম অনল কুমার দাস (৬৭)। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার পাঁচ ছেলেমেয়েদের মধ্যে সবার ছোট ফেদু। সে যখন তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়ন;রত তখন থেকে শিশু শিক্ষার্থীদের পড়ানো শুরু করে। সেই থেকে টিউশনি ওর পেশা থেকে নেশায় পরিণত হয়েছে।’


 







বর্তমানে মহামারি করোনা-ভাইরাস’জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষা*প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ছেলেমেয়েরা বই থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। এই অবস্থায়ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ধাপে ধাপে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন ফেদু।


ফেদুর বাবা অমর কুমার বলেন, ‘যে সময় তার লেখাপড়ার খরচ আমার বহন করার কথা সে সময় নিজেই পড়ার খরচ চালানোর পাশাপাশি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্থ জমিয়ে একতলা বাড়িটি প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছে। আমি তাকে একটি টাকাও দেইনি। উল্টা সে তার উপার্জনের টাকা আমাকে দিয়েছে।’


 







উপজেলার পাড়াগ্রামের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ ওরফে মুন্নু মোল্যা (৭৫) বলেন, ‘ফেদু আমার দুই ছেলেমেয়েকে পড়ায়। কখনও কিছু টাকা দেই, আবার কখনও দেই না। তবে সে কখনও টাকা-পয়সা চায় না।’


ফেদুর মা শোভারানী দাস (৬২) একজন গৃহিণী ও হোমিও চিকিৎসক। তার দুই ভাই ও দুই বোন রয়েছে। বড়ভাই আশিস কুমার দাস (৩৫) একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একই বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স পাস করে একটি গার্মেন্টসে কর্মরত। মেজভাই তাপস কুমার দাস (৩৩) একই বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক বিভাগ থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে তিনিও একটি গার্মেন্টসে কর্মরত।


 







বড়বোন লাবনী দাসও একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। অপর বোন বনানী দাস (৩০) একজন গৃহিণী। এ প্রসঙ্গে অনল কুমার দাস ফেদু জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘আমি ফরিদপুরে লেখাপড়া করাকালীন তিন বছর আর আমার নিজের এলাকায় সাত বছর মোট ১০ বছর ধরে টিউশনি করে আসছি। এরমধ্যে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। টিউশনি করে টাকা উপার্জন করলেও কাউকে টাকার জন্য কখনও জোর করি না। ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা খুশি হয়ে যা দেন তার থেকে একটি টাকাও আমি খরচ না করে তিলে তিলে ১০ বছর ধরে জমিয়ে একাজটি আমি করেছি।’


 







তিনি আরও জানান, করোনার এই দুঃসময়ে তার মাসিক আয় কিছুটা কমে গেছে। এখন টিউশনি করে মাসে ১৭-১৮ হাজার টাকা আয় হয়। করোনার আগে ২০-২২ হাজার টাকা আয় হতো। তবে কারও কাছ থেকে টাকা নিতে তিনি জোর করেন না, অভিভাবকরা যা দেন তা-ই নেন।


প্রসঙ্গত, অনল কুমার ফেদুর বাবা এক সময় উপজেলার হেলেঞ্চা উচ্চ-বিদ্যালয়ের কেরানি ছিলেন। পরে তিনি উচ্চশিক্ষা লাভ করে ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান।


 





শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে