ভর এবং ওজন বা ভার এর মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। কিন্তু আমরা প্রায়শই ভারকে ভর এবং ভরকে ওজন বা ভার এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলি এবং বর্ণনা দিই। এই ধরা যাক একজন মানুষের ভর ৬০ কিলোগ্রাম কিন্তু আমরা অনায়াসেই জিজ্ঞাসা করে ফেলি আপনার ওজন কত। কিন্তু ওজন ৬০ কিলোগ্রামের সঙ্গে পৃথিবীর অভিকর্ষ ত্বরন গুন করলে তবেই পাওয়া যায়। তো চলুন জানা যাক ভর এবং ভারের পার্থক্যঃ
১। বস্তুর ভর বলতে ওই বস্তুটির মধ্যে কতটা জড়পদার্থ আছে তা বোঝায়, আর ওজন হলো একটি বল, যে বল দ্বারা পৃথিবী বস্তুটিকে নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে।
২। সিজিএস পদ্ধতিতে ভরের একক হল গ্রাম এবং এফপিএস পদ্ধতিতে পাউন্ড কিন্তু ওজন বা ভারের একক যথাক্রমে ডাইন এবং পাউন্ডাল।
৩। কোন বস্তুর ভর সব জায়গায় একই থাকে ভরের পরিবর্তন হয় না। বস্তুর ভার কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন হয়।
৪। ভরের পরিমাণ আছে কিন্তু কোন অভিমুখ নেই এটি একটি স্কেলার রাশি। কিন্তু ভার বা ওজন এর পরিমাণ এবং অভিমুখ দুইই আছে এটি একটি ভেক্টর রাশি।
৫। ভর হলো বস্তুর নিজস্ব মৌলিক ধর্ম। এই ধর্মের জন্য কোন বস্তুর ভর সর্বত্র অপরিবর্তিত থাকে। বস্তুর গতি স্থিতি উষ্ণতা প্রভৃতি কোনকিছুই বস্তুর ভর বদলাতে পারে না। বস্তুর ভর সর্বদা একই থাকে। তাই ভর হলো বস্তুর অপরিহার্য স্বকীয় ধর্ম। ভার বা ওজন এর মান পরিবর্তনশীল কারণ বিভিন্ন স্থানে একই বস্তুর ভার বিভিন্ন হয়। পৃথিবীর কেন্দ্রে বস্তুর ভার শূন্য হয়ে যায়। কোন কারণে পৃথিবীর অভিকর্ষ বল লোপ পেলে বস্তুর ভরের কোন পরিবর্তন হবে না কিন্তু বস্তুর ওজন শূন্য হয়ে যাবে অর্থাৎ বস্তুটি ভারহীন হবে। তাই বস্তুর ভার বস্তুটির নিজস্ব কোন স্বকীয় বা মৌলিক ধর্ম নয়।
৬। বস্তুর ভর মাপা হয় সাধারণ তুলা যন্ত্রের সাহায্যে কিন্তু বস্তুর ভার মাপা হয় স্প্রিং তুলা যন্ত্রের সাহায্যে।
৭। এস আই পদ্ধতিতে ভরের একক কিলোগ্রাম কিন্তু যেহেতু বলের একক নিউটন এবং ওজন নির্ভর করে অভিকর্ষজ বল এর উপরে তাই এর এককও নিউটন।
৮। ভরকে ইংরেজি অক্ষর m দ্বারা প্রকাশ করা হয় কিন্তু ওজনকে mg দিয়ে প্রকাশ করা হয় (এখানে g পৃথিবীপৃষ্ঠে অভিকর্ষজ ত্বরণ)।