একটু চিন্তা করুন এক তলা থেকে দুই তলায় কি এক লাফে ওঠা সম্ভব? না সম্ভব না। উঠতে হলে সিড়ির একটি একটি করে ধাপ অতিক্রম করতে হবে। আপনি যদি একসাথে সিড়ির ২ টি ধাপ অতিক্রম করেন তাহলে একটু কষ্টকর হবে না? বিষয়টা এরকমই। এক শ্রেণিকে অতিক্রম করে অন্য শ্রেণিতে যাওয়াটা কষ্টকর। যদিও কিছুটা পড়া আছে বা পারে তবুও চাপ নেওয়াটা উচিত না। স্বাভাবিক ভাবেই যাওয়াটা ঠিক হবে। সপ্তম শ্রেণিতে হয়তো কোনো বিষয়ে এমন একটি টপিক থাকবে যেটার ব্যাখ্যা ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ে আছে। তাই জ্ঞান ভান্ডারকে পূর্ণাঙ্গ করতে সকল বিষয়েই ধারণা নিতে হয় পরে যাতে আফসোস না হয়। পরবর্তিতে এই অপরিপূর্ণতা পুশিয়ে নিতে অনেক মূল্য দিতে লাগতে পারে। রাতারাতি কেউ ধনী হয়না। রাতারাতি ডাক্তার হতে পারলে ক্লাস ওয়ান থেকে কেউ পড়ালেখা করতো না।মোটা মোটা বই পড়লেই ডাক্তার হওয়া যায় না।সবকিছুরই একটা সিস্টেম আছে।প্রতিটি লেভেলই গুরুত্বপূর্ণ।ইউজুয়েলি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হতে কোনো সমস্যা হবে না কিন্তু জ্ঞানের ঘাটতি থেকে যেতে পারে।শিক্ষার প্রতিটি স্তরকেই অবহেলা না করে গুরুত্বের সাথে অতিক্রম করা উচিত।এতে চাপ কম থাকবে, পড়ালেখায় স্বাচ্ছন্দবোধ করবে এবং পড়া অতি দ্রুত আয়ত্ত্বে আসবে।
এরকম চিন্তা-ভাবনা করা সম্পূর্ণ নিরর্থক। প্রয়োজন রয়েছে বলেই পঞ্চমের পর ষষ্ঠ এবং তারপরে সপ্তম শ্রেণিকে রাখা হয়েছে। বয়স, অভিজ্ঞতা সব অনুসারে এই শ্রেণিগুলোর বই, পাঠ্যবিষয় ইত্যাদি করা হয়েছে। আপনার কাছে মনে হতে পারে যে আপনার ভাই সব পারে, কিন্তু সপ্তম শ্রেণির সাথে কম্পিট করতে গেলে সত্যতা বুঝতে পারবেন। বয়স এবং অভিজ্ঞতা একটা বিষয় আছে। ষষ্ঠ শ্রেণির বইগুলি এক বছর ধরে পড়ে শুধু তার বিষয়গুলো মাথায় ঢোকানো বা পারা শিখতে হয় না, ষষ্ঠ শ্রেণির পুরো একটা ক্লাসে নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন নৈতিকতা আরো অনেক কিছু শেখা হয়। এক ক্লাস বাদ দিয়ে ওঠার অর্থ এসব কিছু হতে বঞ্চিত করা। ষষ্ঠ শ্রেণির সব পারা বলতে শুধু সব অঙ্ক পারা, গ্রামার জানা বা বিজ্ঞানের বিষয় জানা নয়। ষষ্ঠ শ্রেণি হতে সপ্তম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার অর্থ ধর্ম বই হতে নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ, শারীরিক শিক্ষা বই হতে স্বাস্থ্য শিক্ষা গ্রহণ, বাংলা বই হতে সাহিত্য শিক্ষা গ্রহণ এবং এচাবে প্রতিটি বই হতেই কিছু অভিজ্ঞতা লাভ। সবচেয়ে বড় কথা মাধ্যমিক শিক্ষার প্রথম ধাপটি ষষ্ঠ শ্রেণি যেখানে সাধারণত শিক্ষার্থীরা পরবর্তী ধাপগুলো সম্পর্কে ধারণা পায়। প্রতিটি ক্লাসে, পাঠে তারা মাধ্যমিকের জীবন কেমন হবে তা জানতে পারে। সপ্তম শ্রেণিতে যারা ওঠে তাদের জন্য এটা অনেক এগিয়ে যাওয়ার কারণে সেভাবে সে স্পষ্ট ধারণা পাবে না, এর ফলে পরবর্তীতে বড় ধরণের ক্ষতি হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। এরকম যদি আপনি করেন তাহলে আপনার ভাই এখন হয়তো ঠিকঠাকভাবে চলে যাবে কিন্তু চূড়ান্ত পরীক্ষা যখন তার হবে তখন এর খেসারত দিতে হবে। চূড়ান্ত পরীক্ষা বলতে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা নয় বরং জীবনের প্রতিটি ধাপে থাকা বাস্তব পরীক্ষা। আমি পুরো উত্তরে এক ক্লাস গ্যাপ দিয়ে ওঠার কুফল বলার চেষ্টা করেছি। এরপরও যদি আপনি ব্যাপারটা না বুঝেন আমার কিছু করার নেই। তবে শেষের বাক্য এটিই যে, এরকম করাকে গুণগত মানের শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশাল এক বাঁধা বলে মনে করি। আপনার ভাইয়ের শিক্ষাগত গুণ সঠিকভাবে গড়ে তুলতে চাইলে অনুগ্রহ করে এরকম কিছু করবেন না।