রিজিকের ব্যবস্থা যদি আল্লাহ করেন এত মানুষ না খেয়ে থাকেন কেন?

পৃথিবীতে চলমান সকল প্রাণীর জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর । তিনি তাদের অবস্থানস্থল ও সংরক্ষণস্থল জানেন । সব কিছুই এক স্পষ্ট কিতাবে লিখিত আছে। (সূরা হুদ ১১:৬)।

এই আয়াতের প্রেক্ষিতে অনেকেই দাবি করতে চান যেহেতু আল্লাহ সকলের রিজিকের দায়িত্ব নিয়েছেন সেহেতু আল্লাহ আসমান থেকে খাবার পাঠাবেন, আমরা পরিশ্রম করব না বরং বসে বসে খাব।

আল্লাহ সকল প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব নিয়েছেন কথা সত্য কিন্তু এরমানে এই না যে মানুষ কোন কাজ করবে না, মানুষ হাত পা বেধে বসে থাকবে আর আল্লাহ উপর থেকে খাবার পাঠাবেন ব্যাপারটা এরকম নয়।

মহান আল্লাহ তাআলাই রিজিকদাতা এ কথা ধার্মিক মানুষ মাত্রই বিশ্বাস করে। আল্লাহ প্রদত্ত রিজিক মানুষ লাভ করে বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে। এই রিজিক তিনি দান করেন নিজ অনুগ্রহে।

ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি অতি দয়ালু। তিনি যাকে ইচ্ছা রিজিক দান করেন। তিনি প্রবল পরাক্রমশালী। (সুরা : শুরা, আয়াত : ১৯)।

মানুষকে বাঁচতে হলে খেতে হয়। আর খাওয়ার জন্য উপার্জন করতে হয়। তাই আল্লাহ তাআলা বলেন, অতঃপর যখন নামাজ সমাপ্ত হয়ে যায়, তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অর্থাৎ রিজিক তালাশ কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হও। (সূরা : জুমআ, আয়াত :১০)।

রিজিক কমবেশি হওয়ার কারণঃ এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, যদি আল্লাহ তার সব বান্দাকে প্রচুর রিজিক দিতেন, তাহলে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত। কিন্তু তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছা, সেই পরিমাণ (রিজিক) অবতীর্ণ করেন। (সুরা : শুরা, আয়াত : ২৭)।

অন্য আয়াতে এসেছে, তারা কি তোমার পালনকর্তার অনুগ্রহ বণ্টন করে? আমিই তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করি পার্থিব জীবনে এবং তাদের একজনের মর্যাদা অন্যজনের ওপর উন্নীত করেছি, যাতে তারা একে অন্যকে সেবকরূপে গ্রহণ করতে পারে। (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৩২)।

আল্লাহ তাআলা নিজ বান্দাদের পরীক্ষা করার জন্য রিজিক বৃদ্ধি বা হ্রাস করেন। রিজিক বৃদ্ধি আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রমাণ নয়, অনুরূপ রিজিকের সংকীর্ণতাও তার অসন্তুষ্টির কারণ নয়।

অধিকাংশ মানুষ এ বিষয় জানে না। দুনিয়ার সচ্ছলতা কারো শুভ লক্ষণের দলিল নয়। কেননা আখিরাতের সাফল্য নির্ভর করে নেক আমলের ওপর। দুনিয়ায় আল্লাহ কখনো অবাধ্যকে দেন সচ্ছলতা, অনুগতকে দেন সংকীর্ণতা। আবার কখনো এর বিপরীত করেন। কখনো উভয়কে সচ্ছলতা দেন, কখনো দেন সংকীর্ণতা। কখনো অবাধ্য বা অনুগত ব্যক্তিকে এক সময় দেন সচ্ছলতা, অন্য সময় দেন অসচ্ছলতা। এসব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন আল্লাহ তাআলা নিজ প্রজ্ঞা ও হিকমতের ভিত্তিতে।

রিজিকের এই হ্রাস-বৃদ্ধি পরীক্ষাস্বরূপ। আল্লাহ বলেন, আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব, কখনো ভয়ভীতি, কখনো অনাহার দিয়ে, কখনো তোমাদের জানমাল ও ফসলাদির ক্ষতির মাধ্যমে। 'এমন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করতে হবে' তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দান করো। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৫)।