Call
আপনি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নন্দলাল কবিতাটি প্রতিযোগিতায় আবৃত্তি করতে পারেন।


নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ - 
স্বদেশের তরে, যে করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন। 
সকলে বলিল, 'আ- হা-হা কর কি, কর কি, নন্দলাল?' 
নন্দ বলিল, 'বসিয়া বসিয়া রহিব কি চিরকাল? 
আমি না করিলে কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ?' 
তখন সকলে বলিল- 'বাহবা বাহবা বাহবা বেশ।' 
নন্দর ভাই কলেরায় মরে, দেখিবে তারে কেবা! 
সকলে বলিল, 'যাও না নন্দ, করো না ভায়ের সেবা' 
নন্দ বলিল, ভায়ের জন্য জীবনটা যদি দিই- 
না হয় দিলাম, - কিন্তু অভাগা দেশের হইবে কি? 
বাঁচাটা আমার অতি দরকার, ভেবে দেখি চারিদিক' 
তখন সকলে বলিল- 'হাঁ হাঁ হাঁ, তা বটে, তা বটে, ঠিক।
নন্দ একদা হঠাৎ একটা কাগজ করিল বাহির, 
গালি দিয়া সবে গদ্যে, পদ্যে বিদ্যা করিল জাহির; 
পড়িল ধন্য দেশের জন্য নন্দ খাটিয়া খুন; 
লেখে যত তার দ্বিগুণ ঘুমায়, খায় তার দশ গুণ; 
খাইতে ধরিল লুচি ও ছোকা ও সন্দেশ থাল থাল, 
তখন সকলে বলিল- 'বাহবা বাহবা, বাহবা নন্দলাল।' 
নন্দ একদা কাগজেতে এক সাহেবকে দেয় গালি; 
সাহেব আসিয়া গলাটি তাহার টিপিয়া ধরিল খালি; 
নন্দ বলিল, 'আ-হা-হা! কর কি, কর কি! ছাড় না ছাই, 
কি হবে দেশের, গলাটিপুনিতে আমি যদি মারা যাই? 
বলো কি' বিঘৎ নাকে দিব খত যা বলো করিব তাহা।' 
তখন সকলে বলিল – 'বাহবা বাহবা বাহবা বাহা!' 
নন্দ বাড়ির হ'ত না বাহির, কোথা কি ঘটে কি জানি; 
চড়িত না গাড়ি, কি জানি কখন উল্টায় গাড়িখানি, 
নৌকা ফি- সন ডুবিছে ভীষণ, রেলে 'কলিসন' হয়; 
হাঁটতে সর্প, কুকুর আর গাড়ি-চাপা পড়া ভয়, 
তাই শুয়ে শুয়ে, কষ্টে বাঁচিয়ে রহিল নন্দলাল,
সকলে বলিল- 'ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক্ চিরকাল।'
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

১।

স্বাধীনতা তুমি -শামসুর রাহমান

স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।

২।

কাণ্ডারী হুশিয়ার!
- কাজী নজরুল ইসলাম---সর্বহারা
দুর্গম গিরি কান্তার-মরু দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুশিয়ার!
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভূলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?
কে আছ জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত।
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার!!
তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান!
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান!
ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদের পথে, নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার!!
অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানেনা সন্তরণ,
কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তিপণ!
“হিন্দু না ওরা মুসলিম?” ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কান্ডারী! বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র!
গিরি-সংকট, ভীরু যাত্রীরা, গুরু গরজায় বাজ,
পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ
কান্ডারী! তুমি ভূলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ?
‘করে হানাহানি, তবু চল টানি’, নিয়াছ যে মহাভার!
কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,
বাঙ্গালীর খুনে লাল হ’ল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!
ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর
উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পুনর্বার।
ফাঁসির মঞ্চে যারা গেয়ে গেল জীবনের জয়গান,
আসি’ অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন বলিদান?
আজি পরীক্ষা জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রান?
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুঁশিয়ার!
কৃষ্ণনগর; ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৩
৩.
এক আল্লাহ জিন্দাবাদ
- কাজী নজরুল ইসলাম---সংকলিত (কাজী নজরুল ইসলাম)
উহারা প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ; 
আমরা বলিব সাম্য শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ। 
উহারা চাহুক সংকীর্ণতা, পায়রার খোপ, ডোবার ক্লেদ, 
আমরা চাহিব উদার আকাশ, নিত্য আলোক, প্রেম অভেদ। 
উহারা চাহুক দাসের জীবন, আমরা শহীদি দরজা চাই; 
নিত্য মৃত্যু-ভীত ওরা, মোরা মৃত্যু কোথায় খুঁজে বেড়াই! 
ওরা মরিবেনা, যুদ্ব বাধিঁলে ওরা লুকাইবে কচুবনে, 
দন্তনখরহীন ওরা তবু কোলাহল করে অঙ্গনে। 
ওরা নির্জীব; জিব নাড়ে তবু শুধূ স্বার্থ ও লোভবশে, 
ওরা জিন, প্রেত, যজ্ঞ, উহারা লালসার পাঁকে মুখ ঘষে। 
মোরা বাংলার নব যৌবন,মৃত্যুর সাথে সন্তরী, 
উহাদের ভাবি মাছি পিপীলিকা, মারি না ক তাই দয়া করি। 
মানুষের অনাগত কল্যাণে উহারা চির অবিশ্বাসী, 
অবিশ্বাসীরাই শয়তানী-চেলা ভ্রান্ত-দ্রষ্টা ভুল-ভাষী। 
ওরা বলে, হবে নাস্তিক সব মানুষ, করিবে হানাহানি। 
মোরা বলি, হবে আস্তিক, হবে আল্লাহ মানুষে জানাজানি। 
উহারা চাহুক অশান্তি; মোরা চাহিব ক্ষমাও প্রেম তাহার, 
ভূতেরা চাহুক গোর ও শ্মশান, আমরা চাহিব গুলবাহার! 
আজি পশ্চিম পৃথিবীতে তাঁর ভীষণ শাস্তি হেরি মানব 
ফিরিবে ভোগের পথ ভয়ে, চাহিবে শান্তি কাম্য সব। 
হুতুম প্যাচারা কহিছে কোটরে, হইবেনা আর সূর্যোদয়, 
কাকে আর তাকে ঠোকরাইবেনা, হোক তার নখ চষ্ণু ক্ষয়। 
বিশ্বাসী কভু বলেনা এ কথা, তারা আলো চায়, চাহে জ্যোতি; 
তারা চাহে না ক এই উৎপীড়ন এই অশান্তি দূর্গতি। 
তারা বলে, যদি প্রার্থনা মোরা করি তাঁর কাছে এক সাথে, 
নিত্য ঈদের আনন্দ তিনি দিবেন ধুলির দুনিয়াতে। 
সাত আসমান হতে তারা সাত-রঙা রামধনু আনিতে চায়, 
আল্লা নিত্য মহাদানী প্রভূ, যে যাহা চায়, সে তাহা পায়। 
যারা অশান্তি দুর্গতি চাহে, তারা তাই পাবে, দেখো রে ভাই, 
উহারা চলুক উহাদের পথে, আমাদের পথে আমরা যাই। 
ওরা চাহে রাক্ষসের রাজ্য, মেরা আল্লার রাজ্য চাই, 
দ্বন্দ্ব-বিহীন আনন্দ-লীলা এই পৃথিবীতে হবে সদাই। 
মোদের অভাব রবে না কিছুই, নিত্যপূর্ণ প্রভূ মোদের, 
শকুন শিবার মত কাড়াকাড়ি করে শবে লয়ে-- শখ ওদের! 
আল্লা রক্ষা করুন মোদেরে, ও পথে যেন না যাই কভূ, 
নিত্য পরম-সুন্দর এক আল্লাহ্ আমাদের প্রভূ। 
পৃথিবীতে যত মন্দ আছে তা ভালো হোক, ভালো হোক ভালো, 
এই বিদ্বেষ-আঁধার দুনিয়া তাঁর প্রেমে আলো হোক, আলো। 
সব মালিন্য দূর হয়ে যাক সব মানুষের মন হতে, 
তাঁহার আলোক প্রতিভাত হোক এই ঘরে ঘরে পথে পথে। 
দাঙ্গা বাঁধায়ে লুট করে যারা, তার লোভী, তারা গুন্ডাদল 
তারা দেখিবেনা আল্লাহর পথ চিরনির্ভয় সুনির্মল। 
ওরা নিশিদিন মন্দ চায়, ওরা নিশিদিন দ্বন্দ চায়, 
ভূতেরা শ্রীহীন ছন্দ চায়, গলিত শবের গন্ধ চায়! 
তাড়াবে এদের দেশ হতে মেরে আল্লার অনাগত সেনা, 
এরাই বৈশ্য, ফসল শৈস্য লুটে খায়, এরা চির চেনা। 
ওরা মাকড়সা, ওদের ঘরের ঘেরোয়াতে কভু যেয়ো না কেউ, 
পর ঘরে থাকে জাল পেতে, ওরা দেখেনি প্রাণের সাগর ঢেউ। 
বিশ্বাস করো এক আল্লাতে প্রতি নিঃশ্বাসে দিনে রাতে, 
হবে দুলদুল - আসওয়ার পাবে আল্লার তলোয়ার হাতে। 
আলস্য আর জড়তায় যারা ঘুমাইতে চাহে রাত্রিদিন, 
তাহারা চাহে না চাঁদ ও সূর্য্য, তারা জড় জীব গ্লানি-মলিন। 
নিত্য সজীব যৌবন যার, এস এস সেই নৌ-জোয়ান 
সর্ব-ক্লৈব্য করিয়াছে দূর তোমাদেরই চির আত্বদান! 
ওরা কাদা ছুড়ে বাঁধা দেবে ভাবে - ওদের অস্ত্র নিন্দাবাদ, 
মোরা ফুল ছড়ে মারিব ওদের, বলিব - "এক আল্লাহ জিন্দাবাদ"।
৪।

লিচু চোর
- কাজী নজরুল ইসলাম---ঝিঙে ফুল
বাবুদের তাল-পুকুরে
হাবুদের ডাল-কুকুরে
সে কি বাস করলে তাড়া,
বলি থাম একটু দাড়া।
পুকুরের ঐ কাছে না
লিচুর এক গাছ আছে না
হোথা না আস্তে গিয়ে
য়্যাব্বড় কাস্তে নিয়ে
গাছে গো যেই চড়েছি
ছোট এক ডাল ধরেছি,
ও বাবা মড়াত করে
পড়েছি সরাত জোরে।
পড়বি পড় মালীর ঘাড়েই,
সে ছিল গাছের আড়েই।
ব্যাটা ভাই বড় নচ্ছার,
ধুমাধুম গোটা দুচ্চার
দিলে খুব কিল ও ঘুষি
একদম জোরসে ঠুসি।
আমিও বাগিয়ে থাপড়
দে হাওয়া চাপিয়ে কাপড়
লাফিয়ে ডিঙনু দেয়াল,
দেখি এক ভিটরে শেয়াল! …
সেকি ভাই যায় রে ভুলা-
মালীর ঐ পিটুনিগুলা!
কি বলিস ফের হপ্তা!
তৌবা-নাক খপ্তা…!
৫।

পল্লী-বর্ষা
- জসীম উদ্‌দীন---ধান ক্ষেত
আজিকের রোদ ঘুমায়ে পড়িয়া ঘোলাট-মেঘের আড়ে,
কেয়া-বন পথে স্বপন বুনিছে ছল ছল জল-ধারে।
কাহার ঝিয়ারী কদম্ব-শাখে নিঝ্ঝুম নিরালায়,
ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দেখিছে অস্ফুট কলিকায়!
বাদলের জলে নাহিয়া সে মেয়ে হেসে কুটি কুটি হয়,
সে হাসি তাহার অধর নিঙাড়ি লুটাইছে বনময়।
কাননের পথে লহর খেলিছে অবিরাম জল-ধারা
তারি স্রোতে আজি শুকনো পাতারা ছুটিয়াছে ঘরছাড়া!
হিজলের বন ফুলের আখরে লিখিয়া রঙিন চিঠি,
নিরালা বাদলে ভাসায়ে দিয়েছে না জানি সে কোন দিঠি!
চিঠির উপরে চিঠি ভেসে যায় জনহীন বন বাটে,
না জানি তাহারা ভিড়িবে যাইয়া কার কেয়া-বন ঘাটে!
কোন্ সে বিরল বুনো ঝাউ শাখে বুনিয়া গোলাপী শাড়ী, -
হয়ত আজিও চেয়ে আছে পথে কানন-কুমার তারি!
দিকে দিগেনে- যতদূর চাহি, পাংশু মেঘের জাল
পায়ে জড়াইয়া পথে দাঁড়ায়েছে আজিকার মহাকাল।
গাঁয়ের চাষীরা মিলিয়াছে আসি মোড়লের দলিজায়, -
গল্পের গানে কি জাগাইতে চাহে আজিকার দিনটায়!
কেউ বসে বসে বাখারী চাঁচিছে, কেউ পাকাইছে রসি,
কেউবা নতুন দোয়াড়ীর গায়ে চাঁকা বাঁধে কসি কসি।
কেউ তুলিতেছে বাঁশের লাঠিতে সুন্দর করে ফুল
কেউবা গড়িছে সারিন্দা এক কাঠ কেটে নির্ভুল।
মাঝখানে বসে গাঁয়ের বৃদ্ধ, করুণ ভাটীর সুরে,
আমীর সাধুর কাহিনী কহিছে সারাটি দলিজা জুড়ে।
লাঠির উপরে, ফুলের উপরে আঁকা হইতেছে ফুল,
কঠিন কাঠ সে সারিন্দা হয়ে বাজিতেছে নির্ভুল।
তারি সাথে সাথে গল্প চলেছে- আমীর সাধুর নাও,
বহুদেশ ঘুরে আজিকে আবার ফিরিয়াছে নিজ গাঁও।
ডাব্বা হুঁকাও চলিয়াছে ছুটি এর হতে ওর হাতে,
নানান রকম রসি বুনানও হইতেছে তার সাথে।
বাহিরে নাচিছে ঝর ঝর জল, গুরু গুরু মেঘ ডাকে,
এ সবের মাঝে রূপ-কথা যেন আর রূপকথা আঁকে!
যেন ও বৃদ্ধ, গাঁয়ের চাষীরা, আর ওই রূপ-কথা,
বাদলের সাথে মিশিয়া গড়িছে আরেক কল্প-লতা।
বউদের আজ কোনো কাজ নাই, বেড়ায় বাঁধিয়া রসি,
সমুদ্রকলি শিকা বুনাইয়া নীরবে দেখিছে বসি।
কেউবা রঙিন কাঁথায় মেলিয়া বুকের স্বপনখানি,
তারে ভাষা দেয় দীঘল সূতার মায়াবী নকসা টানি।
বৈদেশী কোন্ বন্ধুর লাগি মন তার কেঁদে ফেরে,
মিঠে-সুরি-গান কাঁপিয়ে রঙিন ঠোঁটের বাঁধন ছেঁড়ে।
আজিকে বাহিরে শুধু ক্রন্দন ছল ছল জলধারে,
বেণু-বনে বায়ু নাড়ে এলোকেশ, মন যেন চায় কারে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

আমার প্রিয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সহ দেশের খ্যাতিমান কবিদের কবিতার পাশে আমার কবিতা বে-মানান হবে জেনেও তুলে ধরবার দুঃসাহস দেখাবার জন্য সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম। ভাল লাগলে আমার জন্য দো’য়া করবেন।

 

    (১)

হে প্রিয় অনুজ

- মোঃ সানাউল্লাহ্  

সবার প্রিয় শ্রেষ্ঠ নবী
মোহাম্মদ রাসুল(সাঃ),
মানব জাতির জন্য তিনি
অনন্ত ব্যাকুল ।

আল্লাহ্পাকের বন্ধু তিনি
তিনি যে অতুল,
বিশ্ব যদি হয় রে কানন
তিনিই শ্রেষ্ঠ ফুল ।

তাঁহার কাছে আসলো কোরআন
স্রষ্টা যে তার মূল,
দুই জাহানের বন্ধু তিনি
হয় না যেন ভুল ।

পাক কালামের ব্যাখ্যা তিনি
দিয়েছেন নির্ভুল,
হিসেব নিকেশ ভুল করলে
হারাবে দুই কুল ।

তোমরা সবুজ, তোমরা কচি,
তোমরা যে মুকুল,
সত্য পথে রইবে সদা
স্রষ্টাতে আকুল ।

   (২)

কুরবানী

- মোঃ সানাউল্লাহ্

পশুর বাজার বেজায় গরম
খোকার মনটা নয় ভালো,
গরু, ছাগল হয় না কেনা
বাবার মুখটা তাই কালো ।

সকাল হলে দলে দলে
সবাই যাবে ঈদগা মাঠ,
নতুন নতুন পাঞ্জাবী আর
কেউবা পড়ে রঙিন শার্ট ।

কোর্মা পোলাও ফিরনী খাবে
মনের সুখে ঘুরবে সব,
শত দুঃখের মাঝেও খুশি
বিলিয়ে দেবেন দয়াল রব ।

গরু ছাগল জবাই হবে
ঈদের জামাত শেষ হলে,
ইমাম সাহেব ছুরি হাতে
ঘুরবে পাড়ায় দল বলে ।

খোকা বলল, শোন বাবা
দূর হবে সব পেরেশানী,
আমার প্রিয় ছাগলটাকে
দেই যদি আজ কুরবানী ।

দুঃখের মাঝেও সবার মুখে
ফুটলো এবার হাসি,
আদর করে খোকার মায়ে
জড়িয়ে ধরলো আসি ।

সব বাড়িতে এমন খোকার
জন্ম হবে কবে !
ত্যাগের মহান আদর্শটা
শান্তি আনবে তবে ।

 

সোনার দেশে জন্ম আমার

- মোঃ সানাউল্লাহ্

সোনার দেশে জন্ম আমার
দেশকে ভালবাসি,
দেশের মানুষ হাসলে ফুটে
আমার মুখে হাসি।

ঝির ঝিরিয়ে বাতাস এলে
সোনার ফসল দোলে,
দেশটা আমার মায়ের মত
ঘুমাই আঁচল তলে।

শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে,
পাখির কলতানে,
স্বপ্নে ঘেরা দেশটা আমার
ছন্দ তোলে প্রাণে।

ফাগুন এলে কোকিল ডাকে
উঁচু গাছের ডালে,
শোভা বাড়ায় কদম ফুলে
আষাঢ় শ্রাবণ কালে।

হাজার নদীর মায়ার দেশে
জোছনা মাখা রাতে,
রূপকথারই গল্প গাথায়
সবুজ হৃদয় মাতে।

     (৪)

আমরা নবীন

- মোঃ সানাউল্লাহ্  

আমরা নবীন      আমরা সবুজ
   আমরা দেশের ভবিষ্যৎ,
কঠিন হাতে        হানব শাবল
   পাহাড় কেটে গড়ব পথ।

নারী পুরুষ         ছেলে মেয়ে
   চলার পথে নেইরে ভেদ,
দেশের তরে       দশের তরে
  একই সাথে চষবো ক্ষেত।

মুক্তি যুদ্ধ          দেখিনি আমরা
     মুক্তি সেনার বংশধর,
সকলের তরে    কাজ করে যাব
  ভাববো না কে আপন পর।

আমার দেশের    লক্ষ মানুষ
      সর্বহারা ছিন্ন বেশ,
সবার মুখে       আনবো হাসি
গড়বো সোনার বাংলাদেশ।

   (৫)

স্বাধীনতার ইতিহাস জেনে নাও

- মোঃ সানাউল্লাহ্

ইমা, সীমা, পড়ছে বসে
ম্যাডাম রুনার কাছে,
বিদ্যালয়ের পড়া আগে
বাড়ির পড়া পাছে ।

পড়তে বসে কথা আসে
স্বাধীনতা নিয়ে,
মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল
আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ।

ম্যাডাম রুনা বলতে থাকে
যুদ্ধের ইতিহাস,
লক্ষ শহীদ রক্ত দিয়ে
পূরলো অভিলাষ

এখন তোমরা শিশু যারা
তারাই জাতির প্রাণ,
গড়তে হবে সোনার বাংলা
রাখতে হবে মান ।

দেশের তরে জীবন দিয়ে
রুখে দিও রাক্ষস,
স্বাধীনতার জন্যে কিন্তু
নেই কোন আপোষ ।

    (৬)

জীবন হবে ধন্য

- মোঃ সানাউল্লাহ্

আযান পড়লো মাগরিবের
জ্বালাও ঘরে বাতি,
মন দিয়ে সব পড়তে বসো
জাগবে না ঢের রাতি ।

পুবের রবি উঠার আগে
জাগতে হবে ফের,
ফজরদিয়ে করলে শুরু
তবেই হবে শের ।

মেধার বিকাশ তবেই হবে
যদি কর চেষ্টা,
কর্ম দেখে ভয় পেও না
থাকতে হবে নিষ্ঠা ।

মানুষ যদি ভাল বলে
আল্লাহ্ হবেন খুশি,
বিপদ এলে ধৈর্য্য ধরো
কেটে যাবে নিশি ।

আদর্শহীন জীবন কারও
হয় না কভু ধন্য,
সত্য পথে চললে হবে
শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য ।

   (৭)

একুশ মানে নতুন সূর্যোদয়

- মোঃ সানাউল্লাহ্

পাকিস্তানের কারাগারে
বাংলা ছিল বন্দী,
বাংলা মায়ের দামাল ছেলে
করল না কেউ সন্ধি ।

রাষ্ট্র ভাষার স্বীকৃতিটা
জুটলো না তার ভাগ্যে,
বীর বাঙ্গালী ভাঙলো আইন
নামলো মহাযজ্ঞে ।

জালিম শাসক ছুঁড়লো গুলি
মিছিলকারীর বুক জুড়ে,
লেখা হলো নতুন কথা
ইতিহাসের পাত ভরে ।

রফিক, সালাম, জব্বার, বরকত
শহীদ হলেন রাজপথে,
মুক্ত হলো বাংলা ভাষা
নতুন সূর্যোদয়ের সাথে ।

     (৮)

ক্রিকেটে বাংলাদেশ

- মোঃ সানাউল্লাহ্  

ক্রিকেট নিয়ে মাতাল হলো
বিশ্বে সর্বজন,
বাংলাদেশও এগিয়ে যাবে
মুস্তাফিজের পণ ।

তামিম তামিম ধ্বনি উঠে
সব গ্যালারী জুড়ে,
মুসফিকেরও ব্যাটটি হাসে
দর্শকেরই সুরে ।

সাকিব যখন ছক্কা মারে
জিতবে মনে হয়,
মাশরাফিও চেষ্টা করে
ছিনিয়ে নিতে জয় ।

বিজয় হাসে জয়ের হাসি
আরাফাতের সাথে,
তাসকিন আর আল-আমিনও
ছন্দ তোলে মাঠে ।  

ইমরুল, নাসির, সৌম্য মিলে
মারেন ছক্কা চার,
রিযাদ নেমে নিশ্চিত করে
প্রতিপক্ষের হার ।

    (৯)

উঠাও শঙ্কিত শির

- মোঃ সানাউল্লাহ্  

(বিশ্ব ষড়যন্ত্রকারীদের অত্যাচারে শাহাদত বরণকারীদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করলাম।)

ওহে বিশ্বের বৃদ্ধ কিশোর যুব সমাজ-
সময় এসেছে আজ;
মিলিত কন্ঠে তোলো আওয়াজ,
বিশ্ব ব্যাপীয়া চালু হতে হবে
শুধুই আল্লাহ্র রাজ।

চোখ মেলে দেখ তোমার চারপাশ;
সমাজতন্ত্রের ক্ষত-বিক্ষত লাশ!
কান পেতে শোন ঐ গণতন্ত্রের আর্তনাদ,
নব্য ফেরাউনের দল জিঘাংসায় উন্মাদ!

দিকে দিকে অশান্তির আগুন!
আড় চোখে চেয়ে আছে মাতব্বর শকুন;
হুমকি, অবরোধ, ট্রিগারে মৃত্যুবাণ,
থর্ থর্ কাঁপে ঈমানহীন মুসলমান!
ধিক্ ধিক্ তব ইবাদতের ভান!

ওরে ভীতু কাপুরুষ, কিসের উরশ?
থাকবে কি এই দেহে চিরদিন প্রাণ?
তবে উঠ জেগে, মৃত্যু ভয় ভেঙ্গে;
সত্যের পথে হও আগুয়ান।
কৌশূলীদের দল, মুসলমান সেজে,
ছড়িয়ে রয়েছে পথে-প্রান্তরে, সাবধান!
হে মুজাহীদ, হে নওজোয়ান!

বিশ্বব্যাপী জুলুম-শোষণ, অন্যায়ের প্লাবন,
সুরম্য অট্রালিকার বিলাস আসনে বসি-
নেতৃত্ব দেয় মানবের বেশে স্বয়ং শয়তান!
গুঁড়িয়ে দাও, উড়িয়ে দাও- ভেঙ্গে কর খান খান,
চূর্ণ কর নমরুদের দম্ভ, শয়তানের শাসন;
হে মুজাহীদ, হে নওজোয়ান!

শোন ঐ ইসলামী বিপ্লবের আহবান;
আলীমুল গায়িব, বিশ্বস্রষ্টাও তাই চান।
অথচ লজ্জায় মরি, মসজিদে নামায পড়ি-
ঘুষ, দূর্নীতি নিত্য দিনের কাজ!
জিহাদের বাণী শুনে কানাকানি
মস্তকে পড়ে বাজ!

হঠাও মোল্লা, মৌলবাদী! বজ্র কন্ঠে হুঙ্কার ছাড়ি-
মিছিলে মিছিলে একাকার হয় দেশ,
যখন তখন চলে অভিযান কাটিবার তরে দাড়ি!
কে বলে মন্দ-মাদকানন্দ, আমরাতো আছি বেশ!

খোদার বিধান, কোরে অপমান
জাহেলী রাজকে বলিছে মহান!
সংসদে বসে ইয়াজীদ হানে হোসেনের বুকে বাণ!
হায়রে না-ফরমান! শহীদ মরে না; চির জীবন্ত,
যায় না ওদের প্রাণ।
ওদের এক ফোঁটা খুন, জ্বালায় আগুন-
বিশ্বে ছড়ায় বিপ্লবী সুঘ্রাণ!

হায়রে মুসলমান! হায়রে হায় ঈমান!
আল্লাহর জমিনে তবে চলবে কার শাসন?
গোলামের প্রতি গোলামের শোষণ-
স্রষ্টা কি তাই চান?
স্রষ্টা কি তবে করেননি খরিদ
তাঁর মোমিনের প্রাণ?
বিণিময়ে তিনি করেননি কি প্রতিশ্রুতি দান?
অনন্ত জীবন-যৌবনসহ করবেন প্রদান!

তাই যদি হয়, কেন তবে ভয়!
হুঙ্কার ছাড়ি হযরত আলীর!
এসো মনে করি আব্বাস আমি,
আমিই ওমর, খালিদও আমিই।
প্রতিজ্ঞা করি- করবো মুক্ত এই জমিন;
অসত্য করবো দূর, এসো হে মোমিন।
অশ্রু নয-শক্তি চাই, সাহস চাই;
হে মহা মহিম, শুধুই তোমার মদদ চাই।

মানুষের গড়া তন্ত্র-মন্ত্র-
নিত্য নতুন গড়িছে যন্ত্র,
জননীর জাতকে করেছে পতিতা এ কেমন মতবাদ!
মাসুম জনতার কন্ঠে ঢালিয়া দিয়াছে সুরার স্বাদ!
জুয়ারী বেচিছে স্ত্রীর সম্মান,
সইতে হবে কি তবু নারী জাতির অপমান?

হায়রে জাহান্নামের কীট!
তোদের জুলুমে দেয়ালে ঠেকেছে
বিশ্ব মানবতার পিঠ!
রুখো দাজ্জাল মানবরূপী,
ইসলাম জ্বেলেছে সত্যের কুপি।
এসো হে বিপ্লবী বীর,
উঠাও শঙ্কিত শির;
ঝান্ডা উড়াও ইসলামের।
জগৎ ব্যাপীয়া জয়ধ্বনি উচ্চারিত হোক
একমাত্র আল্লাহ্ নামের!




বিঃ দ্রঃ-(স্রষ্টা কি তবে করেননি খরিদ
তাঁর মোমিনের প্রাণ?
বিণিময়ে তিনি করেননি কি প্রতিশ্রুতি দান?
অনন্ত জীবন-যৌবনসহ করবেন প্রদান!)

*আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের
থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে,
তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত।
(সূরা তাওবাঃ ১১১ এর অংশ বিশেষ)


বিঃ দ্রঃ ২০/০১/২০১৭ উপলক্ষে রচিত। দিবসটি বিশেষ তাৎপর্য বহণ করে বলেই ।

     (১০)

হে আমার স্বাধীনতা

- মোঃ সানাউল্লাহ্  

হে আমার স্বাধীনতা!
কিইবা দেবার ছিল তোমাকে আমার!
ছিল দুরন্ত কৈশর, উদ্দীপ্ত তারুণ্য
অথবা প্রেমের আগুনে পোড়া ফাগুনের যৌবন,
আর একটা জীবন ছিল গভীর ভালবাসার!
আমি ধন্য, আমি অনন্য
দিয়েছি সে প্রাণ তোমারই জন্য।
হে আমার স্বাধীনতা!
তখনও আসোনি তুমি বাঙালীর আঙিনায়,
বিমর্ষ বর্ণমালা তখন মুমূর্ষ ছিল -
সে ছিল বন্দী,
বিপন্ন ছিল অবজ্ঞা, অবহেলা আর উপেক্ষায়!
অথচ তারও স্বপ্ন ছিল -
ছিল মুক্তির আকুতি আর
বিশ্ব জয়ের চুড়ান্ত আশাবাদ!
তার প্রত্যাশার পরিধি ছিল বিস্তৃত সীমানায়!
তবে মৃত্যু করেনি তারে গ্রাস।
আমাদেরই অগ্রজ,
ওরা প্রেমিক ছিল বর্ণমালার;
বুকের রক্ত দিয়ে ভালবেসে অকাতরে
ফাগুনে লিখে গেল অমর প্রেমের কথা
এই বাংলার আঙিনায়!
স্মৃতির মিনারে চেয়ে দেখ ওই
রক্তাক্ষরে লেখা আছে সেথা,
'একুশ আমার গৌরবের, একুশ আমার অহংকার!'
হে আমার স্বাধীনতা!
হে আমার প্রেম, অনুজের ভালবাসা,
তোমার ঐশ্বর্যে সুখী হবো বলে
তোমার ভালবাসার প্রেমী হবো বলে
তোমার ছায়া ঘেরা প্রশান্ত বুকে
নিরাপদে নির্ভাবনায় ঘুমিয়ে রইবো বলে;
আমি তো জেগেছিলাম প্রত্যুসে সূর্যোদয়ের আগে,
আমি তো লিখেছিলাম নতুন কাব্য হৃদয়ের টানে!
তুমি তখনও নিমজ্জিত ছিলে কুয়াশার অন্ধকারে
অতলান্ত সাগরের গভীর তলদেশে!
তুমি হাঁপিয়ে উঠেছিলে জগদ্দল পাথরের ভারে
তুমি অঝোরে কেঁদেছিলে রক্ত বন্যা দেখে,
তুমি আহত পাখির মত নুইয়েছিলে শির!
ঝড়ের তান্ডবে তুমি খুইয়েছিলে নীড়!
হে আমার স্বাধীনতা!
তখনও আমার পাঁজরে লাগেনি গুলি!
আমি হেঁটেছিলাম দুর্গম পথে নির্ভয়ে
তখনও ছিলাম আমি পাল ছেঁড়া নায়ে!
আমি এক হাতে ধরেছিলাম গুলি ভরা বন্দুক
অন্য হাতে ধরেছিলাম ভাঙ্গা হাল শক্ত করে!
আমি কী করিনি তোমাকে আনবো বলে?
আমি খড়ের গাদাতে নির্ঘুম কাটিয়েছি রাত
ইটের উপাধানে ঘুমিয়েছি মাথা রেখে
আবার সুযোগ পেলেই করেছি প্রত্যাঘাত
জীবনটা বাজি রেখে!
হে আমার স্বাধীনতা!
তোমাকে আনবো বলেই তো
মাথা উঁচু করে পড়েছিলাম মৃত্যু সাজ!
শুধু শহীদের তালিকায নয়
হৃদয়ে দিও গো ঠাঁই, এইটুকু চাই আজ।

      (১১)

পরাজিত কবিতার বিভৎস লাশ

- মোঃ সানাউল্লাহ্  

বেলা শেষে কেউ এসে চুপি চুপি বলে গেল,
স্মৃতির জানালাটা খুলে রেখে দাও,
তুমি তো একা বড় গোধূলি বেলায় !
ভাবনার অলিন্দে বসে শীতের বিকেল,
উদাস দৃষ্টিটা পিছনে ফিরে ফিরে চায় !

তখন আমি বিন্দু থেকে বৃত্ত গড়ছি
জননীর দেহের ভেতর,
একদিন নির্লজ্জের মত অবনী তলায়
আব্রুহীন উদ্বাস্তু হবার যন্ত্রণায়
চীৎকার দিয়ে দুঃখটা জানিয়ে দিলাম !

অপয়া ধরণীতে ক্ষণে ক্ষণে রজনীতে,
দিবসে সূর্য এসে দেহকে বাড়ায়,
দিনে দিনে মাসে মাসে বছর গড়িয়ে শেষে
মনটা হৃদয়ে এসে জেঁকে বসে হায় !

বোধহীন শৈশবের সীমানা মাড়িয়ে
দুরন্ত কৈশর কে ছুঁয়ে দিলাম,
বসুধা বড় হলো চোখের তারায়
কৈশরের গন্ডি থেকে সহসা সেদিন
তারুণ্য ধরে নিয়ে যায়,
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলে মরণ খেলায়
স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিলাম !
সেই তো ছিল আমার প্রথম বিজয় !

সোনালী সবুজ লালে রণবীর সেজে সেজে,
নতুন একটা ইতিহাস গড়ে
জননীকে স্বাধীন স্বদেশ খানী উপহার দিলাম !

তবু আমি দুখী, দুঃখটা কারে বলি
অজস্র স্বপ্নগুলো একে একে ঝরে গেল
অভিশপ্ত প্রজন্ম নয় বিনয়াবনত !
মুখোশের আড়ালে হাসে দানব শত শত !
লোভের আগুনে ভোগের ফাগুনে
সব করে ভস্ম ওরা অর্জিত সাফল্য সকল,
আল্পনা এঁকে এঁকে ঢেঁকে দিতে চায়
কদর্য চেহারার আরণ্য স্বভাব,
অঙ্কুরে বিণাশীতে চায়, সত্যকে করে ভয়,
কলমের ডগায় তোলে কবিতার ছন্দ !
বৈশাখী ঝড়ে এলো মেলো চুলে
সর্বগ্রাসী চৈতালী হয়ে আসে মোহিনীর বেশে !

মাদকানন্দে বিভোর হিংস্র পশুর মত
তছনছ করে দিয়ে সব কিছু করে জয়
অথচ মূল্যবোধে অবিরাম চলে ক্ষয় !
শান্তি-শক্তিতে অসম যুদ্ধ চলে,
ধরণী-তরণী খানী দুই কূলে টানাটানি
মরিবার ফুরসৎ নাই !

নিরবে নিভৃতে ইথারে কামিনী ডাকে
চরাচরে নিয়মের পরিসীমা নাই,
জ্ঞানী-গুনী দলে দলে বিভক্ত মিছিলে ভাসে,
সমৃদ্ধ সমীরণে ভেসে যায় সুখের আশায় !
নগরে অরণ্য ছেয়ে যায় !

কালজয়ী বিহণে নিঃসঙ্গ জনতা কাঁদে
ত্যাগের মাধুর্য কারো হয় না আপন,
স্ববশ হয়েও করে আজও কারাবাস,
যেন ওরা অচ্ছুৎ, পিচাশের দাস !
অসুস্থ রীতি এসে হানা দেয় হেসে হেসে
বন্ধ কর সব খিড়কীর খোলা পথ,
ছলনা মোহিনী বেশে, যবনিকা রেখেছে ঘিরে
আমার সোনালী মায়ের সুখের আবাস !

তার চেয়ে সেই ভাল
শূন্যতে ফিরে যাবার ইচ্ছে প্রকাশ,
রজনী পিছনে ফেলে ফিরে যেতে চাই নীড়ে,
ভয়ানক পৃথিবীটা মানুষের মনের আশা
করিয়াছে গ্রাস !
আমার তো আর কিছু নেই !
বিবর্ণ উঠোন জুড়ে চেয়ে দেখ পড়ে আছে
স্বপ্ন জড়ানো সেই পরাজিত কবিতার
বিভৎস লাশ !

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ