১।
স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।
২।
আমার প্রিয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সহ দেশের খ্যাতিমান কবিদের কবিতার পাশে আমার কবিতা বে-মানান হবে জেনেও তুলে ধরবার দুঃসাহস দেখাবার জন্য সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম। ভাল লাগলে আমার জন্য দো’য়া করবেন।
(১)
- মোঃ সানাউল্লাহ্
সবার প্রিয় শ্রেষ্ঠ নবী
মোহাম্মদ রাসুল(সাঃ),
মানব জাতির জন্য তিনি
অনন্ত ব্যাকুল ।
আল্লাহ্পাকের বন্ধু তিনি
তিনি যে অতুল,
বিশ্ব যদি হয় রে কানন
তিনিই শ্রেষ্ঠ ফুল ।
তাঁহার কাছে আসলো কোরআন
স্রষ্টা যে তার মূল,
দুই জাহানের বন্ধু তিনি
হয় না যেন ভুল ।
পাক কালামের ব্যাখ্যা তিনি
দিয়েছেন নির্ভুল,
হিসেব নিকেশ ভুল করলে
হারাবে দুই কুল ।
তোমরা সবুজ, তোমরা কচি,
তোমরা যে মুকুল,
সত্য পথে রইবে সদা
স্রষ্টাতে আকুল ।
(২)
- মোঃ সানাউল্লাহ্
পশুর বাজার বেজায় গরম
খোকার মনটা নয় ভালো,
গরু, ছাগল হয় না কেনা
বাবার মুখটা তাই কালো ।
সকাল হলে দলে দলে
সবাই যাবে ঈদগা মাঠ,
নতুন নতুন পাঞ্জাবী আর
কেউবা পড়ে রঙিন শার্ট ।
কোর্মা পোলাও ফিরনী খাবে
মনের সুখে ঘুরবে সব,
শত দুঃখের মাঝেও খুশি
বিলিয়ে দেবেন দয়াল রব ।
গরু ছাগল জবাই হবে
ঈদের জামাত শেষ হলে,
ইমাম সাহেব ছুরি হাতে
ঘুরবে পাড়ায় দল বলে ।
খোকা বলল, শোন বাবা
দূর হবে সব পেরেশানী,
আমার প্রিয় ছাগলটাকে
দেই যদি আজ কুরবানী ।
দুঃখের মাঝেও সবার মুখে
ফুটলো এবার হাসি,
আদর করে খোকার মা’য়ে
জড়িয়ে ধরলো আসি ।
সব বাড়িতে এমন খোকার
জন্ম হবে কবে !
ত্যাগের মহান আদর্শটা
শান্তি আনবে তবে ।
সোনার দেশে জন্ম আমার
- মোঃ সানাউল্লাহ্
সোনার দেশে জন্ম আমার
দেশকে ভালবাসি,
দেশের মানুষ হাসলে ফুটে
আমার মুখে হাসি।
ঝির ঝিরিয়ে বাতাস এলে
সোনার ফসল দোলে,
দেশটা আমার মায়ের মত
ঘুমাই আঁচল তলে।
শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে,
পাখির কলতানে,
স্বপ্নে ঘেরা দেশটা আমার
ছন্দ তোলে প্রাণে।
ফাগুন এলে কোকিল ডাকে
উঁচু গাছের ডালে,
শোভা বাড়ায় কদম ফুলে
আষাঢ় শ্রাবণ কালে।
হাজার নদীর মায়ার দেশে
জোছনা মাখা রাতে,
রূপকথারই গল্প গাথায়
সবুজ হৃদয় মাতে।
(৪)
- মোঃ সানাউল্লাহ্
আমরা নবীন আমরা সবুজ
আমরা দেশের ভবিষ্যৎ,
কঠিন হাতে হানব শাবল
পাহাড় কেটে গড়ব পথ।
নারী পুরুষ ছেলে মেয়ে
চলার পথে নেইরে ভেদ,
দেশের তরে দশের তরে
একই সাথে চষবো ক্ষেত।
মুক্তি যুদ্ধ দেখিনি আমরা
মুক্তি সেনার বংশধর,
সকলের তরে কাজ করে যাব
ভাববো না কে আপন পর।
আমার দেশের লক্ষ মানুষ
সর্বহারা ছিন্ন বেশ,
সবার মুখে আনবো হাসি
গড়বো সোনার বাংলাদেশ।
(৫)
- মোঃ সানাউল্লাহ্
ইমা, সীমা, পড়ছে বসে
ম্যাডাম রুনার কাছে,
বিদ্যালয়ের পড়া আগে
বাড়ির পড়া পাছে ।
পড়তে বসে কথা আসে
স্বাধীনতা নিয়ে,
মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল
আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ।
ম্যাডাম রুনা বলতে থাকে
যুদ্ধের ইতিহাস,
লক্ষ শহীদ রক্ত দিয়ে
পূরলো অভিলাষ ।
এখন তোমরা শিশু যারা
তারাই জাতির প্রাণ,
গড়তে হবে সোনার বাংলা
রাখতে হবে মান ।
দেশের তরে জীবন দিয়ে
রুখে দিও রাক্ষস,
স্বাধীনতার জন্যে কিন্তু
নেই কোন আপোষ ।
(৬)
- মোঃ সানাউল্লাহ্
আযান পড়লো মাগরিবের
জ্বালাও ঘরে বাতি,
মন দিয়ে সব পড়তে বসো
জাগবে না ঢের রাতি ।
পুবের রবি উঠার আগে
জাগতে হবে ফের,
‘ফজর’ দিয়ে করলে শুরু
তবেই হবে শের ।
মেধার বিকাশ তবেই হবে
যদি কর চেষ্টা,
কর্ম দেখে ভয় পেও না
থাকতে হবে নিষ্ঠা ।
মানুষ যদি ভাল বলে
আল্লাহ্ হবেন খুশি,
বিপদ এলে ধৈর্য্য ধরো
কেটে যাবে নিশি ।
আদর্শহীন জীবন কারও
হয় না কভু ধন্য,
সত্য পথে চললে হবে
শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য ।
(৭)
- মোঃ সানাউল্লাহ্
পাকিস্তানের কারাগারে
বাংলা ছিল বন্দী,
বাংলা মায়ের দামাল ছেলে
করল না কেউ সন্ধি ।
রাষ্ট্র ভাষার স্বীকৃতিটা
জুটলো না তার ভাগ্যে,
বীর বাঙ্গালী ভাঙলো আইন
নামলো মহাযজ্ঞে ।
জালিম শাসক ছুঁড়লো গুলি
মিছিলকারীর বুক জুড়ে,
লেখা হলো নতুন কথা
ইতিহাসের পাত ভরে ।
রফিক, সালাম, জব্বার, বরকত
শহীদ হলেন রাজপথে,
মুক্ত হলো বাংলা ভাষা
নতুন সূর্যোদয়ের সাথে ।
- মোঃ সানাউল্লাহ্
ক্রিকেট নিয়ে মাতাল হলো
বিশ্বে সর্বজন,
বাংলাদেশও এগিয়ে যাবে
মুস্তাফিজের পণ ।
তামিম তামিম ধ্বনি উঠে
সব গ্যালারী জুড়ে,
মুসফিকেরও ব্যাটটি হাসে
দর্শকেরই সুরে ।
সাকিব যখন ছক্কা মারে
জিতবে মনে হয়,
মাশরাফিও চেষ্টা করে
ছিনিয়ে নিতে জয় ।
বিজয় হাসে জয়ের হাসি
আরাফাতের সাথে,
তাসকিন আর আল-আমিনও
ছন্দ তোলে মাঠে ।
ইমরুল, নাসির, সৌম্য মিলে
মারেন ছক্কা চার,
রিযাদ নেমে নিশ্চিত করে
প্রতিপক্ষের হার ।
(৯)
- মোঃ সানাউল্লাহ্
(বিশ্ব ষড়যন্ত্রকারীদের অত্যাচারে শাহাদত বরণকারীদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করলাম।)
ওহে বিশ্বের বৃদ্ধ কিশোর যুব সমাজ-
সময় এসেছে আজ;
মিলিত কন্ঠে তোলো আওয়াজ,
বিশ্ব ব্যাপীয়া চালু হতে হবে
শুধুই আল্লাহ্’র রাজ।
চোখ মেলে দেখ তোমার চারপাশ;
সমাজতন্ত্রের ক্ষত-বিক্ষত লাশ!
কান পেতে শোন ঐ গণতন্ত্রের আর্তনাদ,
নব্য ফেরাউনের দল জিঘাংসায় উন্মাদ!
দিকে দিকে অশান্তির আগুন!
আড় চোখে চেয়ে আছে মাতব্বর শকুন;
হুমকি, অবরোধ, ট্রিগারে মৃত্যুবাণ,
থর্ থর্ কাঁপে ঈমানহীন মুসলমান!
ধিক্ ধিক্ তব ইবাদতের ভান!
ওরে ভীতু কাপুরুষ, কিসের উরশ?
থাকবে কি এই দেহে চিরদিন প্রাণ?
তবে উঠ জেগে, মৃত্যু ভয় ভেঙ্গে;
সত্যের পথে হও আগুয়ান।
কৌশূলীদের দল, মুসলমান সেজে,
ছড়িয়ে রয়েছে পথে-প্রান্তরে, সাবধান!
হে মুজাহীদ, হে নওজোয়ান!
বিশ্বব্যাপী জুলুম-শোষণ, অন্যায়ের প্লাবন,
সুরম্য অট্রালিকার বিলাস আসনে বসি-
নেতৃত্ব দেয় মানবের বেশে স্বয়ং শয়তান!
গুঁড়িয়ে দাও, উড়িয়ে দাও- ভেঙ্গে কর খান খান,
চূর্ণ কর নমরুদের দম্ভ, শয়তানের শাসন;
হে মুজাহীদ, হে নওজোয়ান!
শোন ঐ ইসলামী বিপ্লবের আহবান;
আলীমুল গায়িব, বিশ্বস্রষ্টাও তাই চান।
অথচ লজ্জায় মরি, মসজিদে নামায পড়ি-
ঘুষ, দূর্নীতি নিত্য দিনের কাজ!
জিহাদের বাণী শুনে কানাকানি
মস্তকে পড়ে বাজ!
হঠাও মোল্লা, মৌলবাদী! বজ্র কন্ঠে হুঙ্কার ছাড়ি-
মিছিলে মিছিলে একাকার হয় দেশ,
যখন তখন চলে অভিযান কাটিবার তরে দাড়ি!
কে বলে মন্দ-মাদকানন্দ, আমরাতো আছি বেশ!
খোদার বিধান, কোরে অপমান
জাহেলী রাজকে বলিছে মহান!
সংসদে বসে ইয়াজীদ হানে হোসেনের বুকে বাণ!
হায়রে না-ফরমান! শহীদ মরে না; চির জীবন্ত,
যায় না ওদের প্রাণ।
ওদের এক ফোঁটা খুন, জ্বালায় আগুন-
বিশ্বে ছড়ায় বিপ্লবী সুঘ্রাণ!
হায়রে মুসলমান! হায়রে হায় ঈমান!
আল্লাহ’র জমিনে তবে চলবে কার শাসন?
গোলামের প্রতি গোলামের শোষণ-
স্রষ্টা কি তাই চান?
স্রষ্টা কি তবে করেননি খরিদ
তাঁর মোমিনের প্রাণ?
বিণিময়ে তিনি করেননি কি প্রতিশ্রুতি দান?
অনন্ত জীবন-যৌবনসহ করবেন প্রদান!
তাই যদি হয়, কেন তবে ভয়!
হুঙ্কার ছাড়ি হযরত আলীর!
এসো মনে করি আব্বাস আমি,
আমিই ওমর, খালিদও আমিই।
প্রতিজ্ঞা করি- করবো মুক্ত এই জমিন;
অসত্য করবো দূর, এসো হে মোমিন।
অশ্রু নয-শক্তি চাই, সাহস চাই;
হে মহা মহিম, শুধুই তোমার মদদ চাই।
মানুষের গড়া তন্ত্র-মন্ত্র-
নিত্য নতুন গড়িছে যন্ত্র,
জননীর জাতকে করেছে পতিতা এ কেমন মতবাদ!
মাসুম জনতার কন্ঠে ঢালিয়া দিয়াছে সুরার স্বাদ!
জুয়ারী বেচিছে স্ত্রীর সম্মান,
সইতে হবে কি তবু নারী জাতির অপমান?
হায়রে জাহান্নামের কীট!
তোদের জুলুমে দেয়ালে ঠেকেছে
বিশ্ব মানবতার পিঠ!
রুখো দাজ্জাল মানবরূপী,
ইসলাম জ্বেলেছে সত্যের কুপি।
এসো হে বিপ্লবী বীর,
উঠাও শঙ্কিত শির;
ঝান্ডা উড়াও ইসলামের।
জগৎ ব্যাপীয়া জয়ধ্বনি উচ্চারিত হোক
একমাত্র আল্লাহ্ নামের!
বিঃ দ্রঃ-(স্রষ্টা কি তবে করেননি খরিদ
তাঁর মোমিনের প্রাণ?
বিণিময়ে তিনি করেননি কি প্রতিশ্রুতি দান?
অনন্ত জীবন-যৌবনসহ করবেন প্রদান!)
*আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের
থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে,
তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত।
(সূরা তাওবাঃ ১১১ এর অংশ বিশেষ)
বিঃ দ্রঃ ২০/০১/২০১৭ উপলক্ষে রচিত। দিবসটি বিশেষ তাৎপর্য বহণ করে বলেই ।
(১০)
- মোঃ সানাউল্লাহ্
হে আমার স্বাধীনতা!
কিইবা দেবার ছিল তোমাকে আমার!
ছিল দুরন্ত কৈশর, উদ্দীপ্ত তারুণ্য
অথবা প্রেমের আগুনে পোড়া ফাগুনের যৌবন,
আর একটা জীবন ছিল গভীর ভালবাসার!
আমি ধন্য, আমি অনন্য
দিয়েছি সে প্রাণ তোমারই জন্য।
হে আমার স্বাধীনতা!
তখনও আসোনি তুমি বাঙালীর আঙিনায়,
বিমর্ষ বর্ণমালা তখন মুমূর্ষ ছিল -
সে ছিল বন্দী,
বিপন্ন ছিল অবজ্ঞা, অবহেলা আর উপেক্ষায়!
অথচ তারও স্বপ্ন ছিল -
ছিল মুক্তির আকুতি আর
বিশ্ব জয়ের চুড়ান্ত আশাবাদ!
তার প্রত্যাশার পরিধি ছিল বিস্তৃত সীমানায়!
তবে মৃত্যু করেনি তারে গ্রাস।
আমাদেরই অগ্রজ,
ওরা প্রেমিক ছিল বর্ণমালার;
বুকের রক্ত দিয়ে ভালবেসে অকাতরে
ফাগুনে লিখে গেল অমর প্রেমের কথা
এই বাংলার আঙিনায়!
স্মৃতির মিনারে চেয়ে দেখ ওই
রক্তাক্ষরে লেখা আছে সেথা,
'একুশ আমার গৌরবের, একুশ আমার অহংকার!'
হে আমার স্বাধীনতা!
হে আমার প্রেম, অনুজের ভালবাসা,
তোমার ঐশ্বর্যে সুখী হবো বলে
তোমার ভালবাসার প্রেমী হবো বলে
তোমার ছায়া ঘেরা প্রশান্ত বুকে
নিরাপদে নির্ভাবনায় ঘুমিয়ে রইবো বলে;
আমি তো জেগেছিলাম প্রত্যুসে সূর্যোদয়ের আগে,
আমি তো লিখেছিলাম নতুন কাব্য হৃদয়ের টানে!
তুমি তখনও নিমজ্জিত ছিলে কুয়াশার অন্ধকারে
অতলান্ত সাগরের গভীর তলদেশে!
তুমি হাঁপিয়ে উঠেছিলে জগদ্দল পাথরের ভারে
তুমি অঝোরে কেঁদেছিলে রক্ত বন্যা দেখে,
তুমি আহত পাখির মত নুইয়েছিলে শির!
ঝড়ের তান্ডবে তুমি খুইয়েছিলে নীড়!
হে আমার স্বাধীনতা!
তখনও আমার পাঁজরে লাগেনি গুলি!
আমি হেঁটেছিলাম দুর্গম পথে নির্ভয়ে
তখনও ছিলাম আমি পাল ছেঁড়া নায়ে!
আমি এক হাতে ধরেছিলাম গুলি ভরা বন্দুক
অন্য হাতে ধরেছিলাম ভাঙ্গা হাল শক্ত করে!
আমি কী করিনি তোমাকে আনবো বলে?
আমি খড়ের গাদাতে নির্ঘুম কাটিয়েছি রাত
ইটের উপাধানে ঘুমিয়েছি মাথা রেখে
আবার সুযোগ পেলেই করেছি প্রত্যাঘাত
জীবনটা বাজি রেখে!
হে আমার স্বাধীনতা!
তোমাকে আনবো বলেই তো
মাথা উঁচু করে পড়েছিলাম মৃত্যু সাজ!
শুধু শহীদের তালিকায নয়
হৃদয়ে দিও গো ঠাঁই, এইটুকু চাই আজ।
(১১)
- মোঃ সানাউল্লাহ্
বেলা শেষে কেউ এসে চুপি চুপি বলে গেল,
স্মৃতির জানালাটা খুলে রেখে দাও,
তুমি তো একা বড় গোধূলি বেলায় !
ভাবনার অলিন্দে বসে শীতের বিকেল,
উদাস দৃষ্টিটা পিছনে ফিরে ফিরে চায় !
তখন আমি বিন্দু থেকে বৃত্ত গড়ছি
জননীর দেহের ভেতর,
একদিন নির্লজ্জের মত অবনী তলায়
আব্রুহীন উদ্বাস্তু হবার যন্ত্রণায়
চীৎকার দিয়ে দুঃখটা জানিয়ে দিলাম !
অপয়া ধরণীতে ক্ষণে ক্ষণে রজনীতে,
দিবসে সূর্য এসে দেহকে বাড়ায়,
দিনে দিনে মাসে মাসে বছর গড়িয়ে শেষে
মনটা হৃদয়ে এসে জেঁকে বসে হায় !
বোধহীন শৈশবের সীমানা মাড়িয়ে
দুরন্ত কৈশর কে ছুঁয়ে দিলাম,
বসুধা বড় হ’লো চোখের তারায়
কৈশরের গন্ডি থেকে সহসা সেদিন
তারুণ্য ধরে নিয়ে যায়,
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলে মরণ খেলায়
স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিলাম !
সেই তো ছিল আমার প্রথম বিজয় !
সোনালী সবুজ লালে রণবীর সেজে সেজে,
নতুন একটা ইতিহাস গড়ে
জননীকে স্বাধীন স্বদেশ খানী উপহার দিলাম !
তবু আমি দুখী, দুঃখটা কারে বলি
অজস্র স্বপ্নগুলো একে একে ঝরে গেল
অভিশপ্ত প্রজন্ম নয় বিনয়াবনত !
মুখোশের আড়ালে হাসে দানব শত শত !
লোভের আগুনে ভোগের ফাগুনে
সব করে ভস্ম ওরা অর্জিত সাফল্য সকল,
আল্পনা এঁকে এঁকে ঢেঁকে দিতে চায়
কদর্য চেহারার আরণ্য স্বভাব,
অঙ্কুরে বিণাশীতে চায়, সত্যকে করে ভয়,
কলমের ডগায় তোলে কবিতার ছন্দ !
বৈশাখী ঝড়ে এলো মেলো চুলে
সর্বগ্রাসী চৈতালী হয়ে আসে মোহিনীর বেশে !
মাদকানন্দে বিভোর হিংস্র পশুর মত
তছনছ করে দিয়ে সব কিছু করে জয়
অথচ মূল্যবোধে অবিরাম চলে ক্ষয় !
শান্তি-শক্তিতে অসম যুদ্ধ চলে,
ধরণী-তরণী খানী দুই কূলে টানাটানি
মরিবার ফুরসৎ নাই !
নিরবে নিভৃতে ইথারে কামিনী ডাকে
চরাচরে নিয়মের পরিসীমা নাই,
জ্ঞানী-গুনী দলে দলে বিভক্ত মিছিলে ভাসে,
সমৃদ্ধ সমীরণে ভেসে যায় সুখের আশায় !
নগরে অরণ্য ছেয়ে যায় !
কালজয়ী বিহণে নিঃসঙ্গ জনতা কাঁদে
ত্যাগের মাধুর্য কারো হয় না আপন,
স্ববশ হয়েও করে আজও কারাবাস,
যেন ওরা অচ্ছুৎ, পিচাশের দাস !
অসুস্থ রীতি এসে হানা দেয় হেসে হেসে
বন্ধ কর সব খিড়কীর খোলা পথ,
ছলনা মোহিনী বেশে, যবনিকা রেখেছে ঘিরে
আমার সোনালী মায়ের সুখের আবাস !
তার চেয়ে সেই ভাল
শূন্যতে ফিরে যাবার ইচ্ছে প্রকাশ,
রজনী পিছনে ফেলে ফিরে যেতে চাই নীড়ে,
ভয়ানক পৃথিবীটা মানুষের মনের আশা
করিয়াছে গ্রাস !
আমার তো আর কিছু নেই !
বিবর্ণ উঠোন জুড়ে চেয়ে দেখ পড়ে আছে
স্বপ্ন জড়ানো সেই পরাজিত কবিতার
বিভৎস লাশ !