যে ধরণের ব্যয়াম করলে স্বাস্থ বাড়বে জানা থাকলে বলুন
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

ওজন বাড়ানোর কোর ব্যায়ামগুলো

ওনেক খেয়েও যাদের ওজন বাড়ে না, জিমের ভাষায় তাদের বলে হার্ড গেইনার। হার্ড গেইনাররা কিভাবে ওজন বাড়াতে পারেন, তার একটা সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় সহ ওজন বাড়ানোর সাথে সম্পর্ক কিছু বিষয় নিয়ে “ওজন বাড়ানোর উপায় (হার্ডগেইনারদের জন্য)” পোস্টে আলোচনা করা হয়েছিল।

সেই পোস্টে ওজন বাড়ানোর জন্য জিমে গিয়ে বিশেষ ধরনের কিছু ব্যায়ামের কথা বলা হয়েছিল। এই ব্যায়ামগুলো হলো ওজন বাড়ানোর জন্য সবচেয়ে উপরের দিকের কিছু ব্যায়াম, যাদেরকে কোর বা কম্পাউণ্ড এক্সারসাইজ বলে। ব্যায়ামগুলো হলো-

১. Bench Presses (বেঞ্চ প্রেস) – বুক, কাঁধ, বাহু (ট্রাইসেপ)
২. Overhead Presses (ওভারহেড প্রেস) – কাঁধ, বাহু (ট্রাইসেপ)
৩. Pull-ups/Chin-ups (পুল-আপ / চিন-আপ) – পিঠ, বাহু (বাইসেপ)
৪. Squats (স্কোয়াট) – পা, পিঠের নিম্নভাগ
৫. Deadlifts (ডেডলিফট) – পা, পিঠ, কাঁধ
৬. Bar Dips (বার ডিপ) – কাঁধ, বুক, বাহু (ট্রাইসেপ)

ব্যায়ামগুলো নিয়ে এবার সংক্ষেপে কিছু আলোচনা করা যাচ্ছে-
(প্রতিটা ব্যায়াম করার আগে সেই অংশের স্ট্রেচিং করে নেবেন।)

১. Bench Presses (বেঞ্চ প্রেস)

এতা বুকের ব্যায়াম। সেই সাথে বাহুর পিছনের দিকের অংশের (ট্রাইসেফ) জন্যও প্রযোজ্য।

টেকনিক: দুদিকে পা ছড়িয়ে সমান বেঞ্চে শুয়ে কাধের বা তার চেয়ে একটু বেশি দুরত্বে গ্রিপ নিয়ে বারবেল মুঠো পাকিয়ে ধরবেন। (মুঠো পাকিয়ে এই জন্যই ধরবেন যাতে এটা পিছলিয়ে না পড়ে যায়।) র‍্যাক থেকে বারবেল তুলে ধরুন। এবার নিঃশ্বাস নিতে নিতে বারবেল বুকের মাঝখানে নামিয়ে আনুন। (এই সময়টাতে সবচেয়ে বেশি শক্তি লাগে।) বুকের সাথে প্রায় স্পর্শ লাগা অবস্থা থেকে নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বারবেল সোজা উপরে তুলে ধরুন। এটা শেষ পজিশন।

টিপস: বারবেল বুকের উপর ফেলবেন না। পিঠ একটু বাঁকা হলে সমস্যা নাই, তবে নিতম্ব যেন বেঞ্চ থেকে কখনো উঠে না যায়। বেশি ওজন নেয়ার সময় মাথার কাছে একজনকে দাঁড় করিয়ে সাহায্য নিতে পারেন। শেষ পজিশনে কনুই একেবারে সোজা না করে হালকা একটু বাঁকিয়ে রাখবেন।

*জিমে যেতে না পারলে বাড়িতে বসে এই ব্যায়ামের বিকল্প হিসাবে বুকডন দিতে পারেন।

২. Overhead Presses (ওভারহেড প্রেস)

এটা কাঁধের ব্যায়াম। এটাও বাহু (ট্রাইসেপ)-এর উপর হালকা চাপ ফেলে।

টেকনিক: এটা চেয়ারে/বেঞ্চে বসে বা দাঁড়িয়ে করা যায়। এটাও কাঁধের দূরত্বের চেয়ে একটু বেশি ওয়াইডে মুঠো পাকিয়ে ধরবেন। র‍্যাক থেকে উঠিয়ে নিঃশ্বাস নিতে নিতে ধীরে ধীরে চিবুকের নিচে নামিয়ে আনুন। এ সময় পিঠটা একটু বাঁকা এবং মাথাটা পিছনের দিকে একটু ঝুকে যেতে পারে। এবার নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বারবেল আবার মাথায় উপরে তুলে ধরুন।

টিপস: যেহেতু এই ব্যায়ামে শরীর বিশেষ করে পিঠ একটু বাঁকা হয়ে যায় তাই শুরুর দিকে খুব কম ওজন নিয়ে শুরু করবেন। ওজন মাথার উপর তোলা অবস্থায় কনুই হালকা বাঁকা রাখবেন।

নোট: শুরুর আগে অবশ্যই কাঁধের ওয়ার্ম-আপ করে নেবেন।

* জিমে যেতে না পারলেও এই ব্যায়ামটি বাড়িতে নানা প্রকারের বস্তু, যেমন লম্বা কাঠ, গাছের ডাল ইত্যাদি দিয়ে করতে পারেন।

৩. Pull-ups/Chin-ups (পুল-আপ / চিন-আপ)

এটা শরীরের পিছন ভাগ বা পিঠের জন্য অন্যতম প্রধান ব্যায়াম। সেই সাথে বাহুর (বাইসেপ) জন্যও কাজে দেয়।

টেকনিক: হাত দুটো কাঁধের চেয়ে একটু বেশি প্রসারিত করে পুলআপ বারে ঝুলে পড়ুন। হাতের তালু শরীরের বিপরীত দিকে থাকবে। (ক্লোজ গ্রিপ চিন-আপ অর্থাৎ হাত কাঁধের সময় প্রসারিত করে এই ব্যায়াম করার সময় হাতের তালু মুখের দিকে ঘুরানো থাকবে।) এবার নিঃশ্বাস নিতে নিতে শরীরকে টেনে উপরে তুলুন। বুকটা বারের সাথে প্রায় ঘেঁষে যাবে। এবার ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে করতে শরীর নামিয়ে আনুন।

টিপস: উপরে ওঠার সময় কনুই পাঁজরের খাঁচার দিকে রাখার চেষ্টা করবেন। নিচে নেমে যাওয়ার সময় কনুই একেবারে সোজা করে ফেলবেন।
ব্যায়ামটা প্রথম দিকে খুব কঠিন মনে হয়। তবুও একটা বা দুইটা পুলআপ পারলেও দেয়ার চেষ্টা করবেন। দরকার হলে কাউকে নিচে থেকে ধরে উপরে ঠেলে দিতে সাহায্য করতে বলবেন।

নোট: মাথা এবং পিঠ হালকা বাঁকা হবে যাতে মাথা বারের সাথে লেগে না যায়।

* ছবিতেই দেখতে পাচ্ছেন এই ব্যায়ামটা করার জন্য জিমে যেতেই হবে, এমন কোন মানে নেই। ঘরের দরজার আঁড়া, বাঁশ দিয়ে গোল পোস্টের মত বানিয়ে বা নিচু কোন গাছের মাটির সমান্তরাল চিকন ডাল ইত্যাদি দিয়েও এটার ব্যবস্থা করে ফেলা যায়।

৪. Squats (স্কোয়াট)

ব্যায়ামের জগতে এটাকে নাম্বার ওয়ান বলা যায়। পায়ের সমস্ত প্রধান পেশিগুলো থেকে শুরু করে পিঠের নিম্নভাগ, কাঁধ, তলপেট, ফুসফুস, হৃদপিণ্ডের জন্য এই ব্যায়াম খুব উপকারী। অনেকেই এটাকে এড়িয়ে যান, কারণ এই ব্যায়ামটা অনেক কষ্টসাধ্য, টেকনিক্যালি অনেক জটিল এবং খুব সতর্কতার সহিত করা লাগে।

টেকনিক: প্রথমে খুব হালকা ওজন নিয়ে বা র‍্যাকের মধ্যে করে ব্যায়ামের গঠনটা আয়ত্বে আনা উচিত। বারবেল কাঁধের থেকে একটু নিচুতে সেট করা উচিত। এবার বারবেল কাঁধের উপর ফেলে দুহাত দিয়ে সুবিধামত ধরে র‍্যাক থেকে সরিয়ে দুই পা পিছনে চলে আসুন। বুক ফুলিয়ে পিঠ হালকা বাঁকা করে (কুঁজো নয় কিন্তু) নিঃশ্বাস নিতে নিতে নিচু হতে থাকুন। উরু মেঝের সাথে সমান্তরাল হওয়া অবধি নিচু হবে। তারপর নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে শুধু পায়ের উপর ভর দিয়ে আবার সোজা হয়ে দাঁড়ান।

টিপস: ব্যায়ামের আগে ভালো করে পা, উরু, কোমর, নিতম্বের স্ট্রেচিং করে নেবেন। ঢিলেঢালা পোষাক হতে হবে।

নোট: আগে মনোযোগ দেবেন ব্যায়ামের ফর্ম বা গঠনটা ঠিক মতো হচ্চে কিনা। ওজন কম নিয়ে বেশি রেপস দেবেন। কোমর শক্ত না হওয়া পর্যন্ত বেশি ওজন নেবেন না।

* স্কুল পড়ুয়া ছেলেরা আপনাকে সাহায্য করতে পারে। বিভিন্ন বয়সের ছেলেদের কাঁধের উপর নিয়ে এটা করতে পারেন। তারা সানন্দে রাজি হবে। প্রথম অল্প ওজন, এমন কাউকে নিয়ে করবেন। ধীরে ধীরে বেশি ওজনের ছেলেদের। আশে-পাশে নরম জায়গা বা ঘাস হলে পড়ে গেলে ব্যথা পাবেন না। এছাড়া বিভিন্ন ওজনের বস্তু গ্রামের দিকে পেয়ে যাবেন। অনেক জায়গাতে ৪০ সের ওজনের বাটখারাও পাওয়া যায়।

৫. Deadlifts (ডেডলিফট)

মূলত উরুর পিছনের দিকের ব্যায়াম। তবে পিঠ এবং কাঁধের উপরও অনেক চাপ পড়ে। কোমরে ব্যথা থাকলে এই ব্যায়াম করবেন না।

টেকনিক: বারবেল মেঝেতে থাকবে। ঝুঁকে পড়ে দুইহাত দিয়ে বারবেল ধরে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। হাত বা কাঁধের উপর জোর দেবেন না। হাত দিয়ে শুধু টান করে ধরে রাখতে হবে। পুরো ভর পড়বে পায়ের উপর। মাথা সোজা এবং চোখের দৃষ্টি মেঝের সমান্তরাল থাকবে। অবশ্যই কুঁজো হওয়া যাবে না, তাহলে কোমরে ব্যথা পাবেন। বুক ফুলানো থাকবে, পিঠ হালকা বাঁকা থাকবে।
আবার যখন করবেন, তখন ওজন পুরো মেঝেতে স্পর্শ করবে না। ওজন মেঝের কাছাকাছি পৌছতেই আবার সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে।

টিপস: ব্যায়ামের আগে ভালো করে পা, উরু, কোমর, নিতম্বের স্ট্রেটিং করে নেবেন। ঢিলেঢালা পোষাক হতে হবে। পিঠে বা কোমরে ব্যথা থাকলে এই ব্যায়াম করবেন না।

নোট: এই ব্যায়ামেও ব্যথা পাওয়ার ঝুঁকি বেশি বলে আগেই বেশি ওজন নিয়ে করতে যাবেন না। হালকা ওজন নিয়ে আগে ফর্ম ঠিক করবেন।

*যদি কোন গাছের ডাল বা গুড়ি পান, তাতে দুইদিকে দড়ি বেঁধে ধরার ব্যবস্থা করে এটা করতে পারেন।

৬. Bar Dips (বার ডিপ)

বুক এবং বাহুর (ট্রাইসেপ) পেশি বৃদ্ধি করতে এই ব্যায়াম বেঞ্চ প্রেসের চেয়েও বেশি কার্যকরী।

টেকনিক: কোমরের উচ্চতায় পাশাপাশি রাখা দুইটা বারে দুহাতের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে পা হালকা ভাজ করে শরীর শুণ্যে তুলে দিন। নিঃশ্বাস নিতে নিতে শরীরটাকে যতটা পারেন নিচে নামিয়ে দিন। মনে রাখবেন, পা কিন্তু মাটি ছোঁবে না। এবার নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে হাতের উপর ভর দিয়ে আবার সোজা হয় যান। কনুই সবসময় ভিতরের দিকে রাখবেন।

টিপস: বুকের জন্য এই ব্যায়াম করলে একটু সামনে ঝুঁকে যাবেন। হাতের (ট্রাইসেপ)-এর জন্য জন্য করলে শরীর সোজা রাখতে হবে।

নোট: শরীরের নিম্নভাগ যাতে বেশি না দোলে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। কাঁধে ব্যথা বা অন্য কোন ইনজুরি থাকলে এই ব্যায়াম করবেন না।

* দুইদিকে দুইটা চেয়ার বা উঁচু বেঞ্চ রেখে এটা করা যেতে পারে। বা সমান্তরাল ভাবে বা কোনা করে বাঁশের আঁড়া বানিয়ে নিতে পারেন। কোনা করে বানালে বুকের মাপ অনুসারে বিভিন্ন ভাবে গ্রিপ করতে পারবেন। চেয়ার যাতে এক হয়ে না যায়, সেজন্য চেয়ারের উপর কাউকে বসিয়ে নিতে পারেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ