মূল কবিতাটি নিম্নরূপ :
মানুষ সামাজিক জীব। কবি সম্প্রদায় সমাজের-ই একটা অংশ। তাঁরাও সমাজ নিয়ে ভাবেন, ভাবেন জীবনের নানা দিক নিয়ে। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই শান্তিপ্রিয়। কবিগণও তার ব্যতিক্রম নয়। পৃথিবীর জন্ম থেকে আজ অবধি নানান চড়াই-উৎরাই করে মানব সভ্যতা আজ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, সেখানে শান্তির পূর্বশর্ত স্বরূপ বিশ্বাসের তারতম্যের সৃষ্টি হয়েছে, যার মাঝে রয়েছে স্রষ্টার অস্তিত্ব এবং তাঁর নির্দেশাবলী, মানুষের সৃষ্টি দর্শন ও তাতে আস্থা স্থাপণ। সেই সাথে যোগ হয়েছে পৃথিবীতে কর্তৃত্ব ও প্রভূত্ব স্থাপণে অতি উৎসাহী রাজনৈতিক উচ্চাভিলাসীদের মনগড়া স্বর্থান্বেষী চিন্তার প্রয়োগ! ফলে পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়েছে মানুষে মানুষে আচরণ ও বিশ্বাসগত তারতম্য তথা ভেদাভেদ! সৃষ্টি হয়েছে উচ্চ-নীচ, সৃষ্টি হয়েছে ভূখন্ডগত সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু, যার প্রভাব কখনও কখনও সমাজকে বসবাসের অনুপযোগী করে তুলেছে! যার প্রভাবে পৃথিবীতে বেঁধেছে কত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ!
ভারতবর্ষ আগাগোড়াই বহুমতাদর্শে বিশ্বাসীদের আবাসভূমি। বিশেষতঃ মাঝে-মধ্যে রাজনৈতিক কারণেই সাম্প্রদায়িক সংঘাতের সুত্রপাত হয়ে বহু নিরাপরাধ মানুষের জীবনহানী ঘটেছে! সেই অপরিণামদর্শী পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধকল্পেই আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এ কবিতাটি রচনা করতে উদ্বুদ্ধ হযেছিলেন। তিনি ছিলেন সমাজ সচেতন দূরদর্শী জ্ঞানসম্পন্ন কবি। তাই তাঁর পক্ষে দার্শনিকের স্তর স্পর্শ করা অসম্ভব ছিল না। আর সে দৃষ্টিকোন থেকেই তিনি চেয়েছিলেন, যার যার বিশ্বাসকে অক্ষুণ্ণ রেখেই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সবাই এগিয়ে আসুক, পালন করুক অগ্রনী ভূমিকা। ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে কখনও কখনও বাড়াবাড়ি মনে হলেও শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই তিনি এমনতর নানান উপমায় সজ্জিত কবিতাটি রচনা করেছিলেন। এর অর্থ এই নয় যে, তিনি সবাইকে ধর্ম ত্যাগে উদ্বুদ্ধ করেছেন। কেননা, এই কবি-ই এক সময় লিখেছেনে, “মসজিদেরই পার্শ্বে আমার কবর দিও ভাই”।