আমার দাদু একেবারে বৃদ্ধ। রোজা রাখতে পারেনা। নামাজ ও পড়তে পারেনা।

উনার রোজার ও নামাযের কাফফারা হিসেবে কত টাকা কাফফারা দিতে হবে? 

বিভিন্ন জনকে জিঙ্গেস করে আমি জেনেছি যে কাফফারা হিসেবে একজন গরিবকে ১বেলা খাওয়াতে হবে প্রতি রোজার জন্য,কিন্তু আমি টাকার হিসেব জানতে চাই। 

নামাযের জন্যও নাকি কাফফারা দিতে হয়।

নামায ও রোযার কাফফারা হিসেবে কত টাকা দিতে হবে।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
খুবই বৃদ্ধ লোক। রোজা পালন তার জন্য খুবই কষ্টকর। তার উপর রোজা পালন জরুরি নয়। তবে এ ব্যক্তি অন্য কাউকে দিয়ে কাযা আদায় করাবে অথবা ফিদইয়া দিবে।

অক্ষম ব্যক্তির ফিদইয়া আদায়ের নিয়ম

ইসলামি শরিয়তে ফিদইয়া হলো- একটি করে ‘সদকাতুল ফিতর’ বা তার সমপরিমাণ অর্থ একজন মিসকিনকে দান করা। অর্থাৎ ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম আটা/গম বা তার সমপরিমাণ মূল্য গরিবদের দান করাই হলো রোজার ‘ফিদইয়া’। অথবা একজন ফকির বা মিসকিনকে দুই বেলা পেট পুরে খাওয়ানো।

এমন চিররোগী যার আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা নেই। যেমন- ক্যান্সার বা এ ধরনের কোনো রোগ। এ ধরনের চির রোগীদের উপর রোজা ফরয নয়। তবে তাদেরকে পূর্বের নিয়মে ফিদইয়া দিতে হবে। আর রোজার ফিদইয়া হলো মিসকিনকে খাবার খাওয়ানো। আল্লাহ তাআলা কুরআনে উল্লেখ করেন, ‘ (যারা রোজা রাখতে অক্ষম) তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্য দান করবে। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৮৪) , এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্  বলেন: ‘তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় করে চলো।’ (তাগাবুন, আয়াত : ১৬) অন্য এক আয়াতে মহান আল্লাহ্ বলেন :‘সাধ্যের বাইরে কোনোকিছু আল্লাহ কারোর উপর চাপিয়ে দেন না।’ (বাকারাহ, আয়াত : ২৮৬) এমন বৃদ্ধ লোক যে ভাল-মন্দ পার্থক্য করতে পারে না। বিবেক-বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। এমন বৃদ্ধ লোকের উপর রোজা ফরয নয়। তাদের কাযা ও কাফফারা কিছুই নেই।




পীড়িত ব্যক্তির নামাজ


মাসআলা ১

কেয়াম অর্থাৎ দাড়িয়ে নামাজ পড়া ফরজ। কিন্তু পীড়িত বা রোগগ্রস্থ হলে নীচের যে কোন কারণে দাড়িয়ে নামাজ পড়ার বদলে বসে নামাজ পড়া জায়েজ আছে ।

ক) দাড়িয়ে নামাজ পড়লে রোগ বেশী হওয়ার ধারণা হলে,
খ) দাড়িয়ে নামাজ পড়লে রোগ সারতে দেরী হওয়ার ভয় থাকলে,
গ) দাড়ালে মাথা ঘুরে পড়ে যাবার ভয় থাকলে,
ঘ) দাড়ালে শরীরের কোন জায়গা ব্যথা করলে,
ঙ) দাড়ালে পেশাব বের হলে,
চ) দাড়ালে ক্ষত স্থান থেকে রক্ত বা পূজ বের হলে।
মাসআলা ২

সামান্য কষ্টের ভয়ে বসে নামাজ পড়লে ফরজ রোকন বা কেয়াম আদায় না হওয়ার কারণে নামাজ হবেনা। (আলমগীরী)

মাসআলা ৩

দাড়াতে পারেন কিন্তু রুকু ছেজদা করতে পারেন না, এ অবস্থায় বসে ইশারায় নামাজ পড়বেন।

মাসআলা ৪

বসে ইশারায় নামাজ পড়ার সময় রুকুর ইশারার চেয়ে ছেজদার ইশারা বেশী করবেন।

মাসআলা ৫

দূর পাল্লার বাসে বা ট্রেনে সিটে বসে নামাজ পড়ার সময় রুকু ছেজদা করতে গেলে ধাক্কা লাগার ভয় থাকলে ইশারায় নামাজ পড়তে পারেন।

মাসআলা ৬

ছেজদা দিলে যদি বায়ু নির্গত হয় তবে বসে ইশারায় নামাজ পড়বেন।

মাসআলা ৭

জামাতে দাড়িয়ে নামাজ পড়তে অক্ষম কিন্তু একা একা পড়তে সক্ষম হলে জামাত বাদ দিয়ে একা একা দাড়িয়ে নামাজ পড়বেন।

মাসআলা ৮

দাড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বাধতে পারেন বা কিছু কেরাত পড়তে পারেন এ অবস্থায় দাড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বেধে যতদূর সম্ভব দাড়িয়ে পড়বেন। অসুবিধা হলেই বসে যাবেন।

মাসআলা ৯

অক্ষম মনে করে বসে কিছু নামাজ আদায় করার পর সুস্থ হলে বাকী নামাজ দাড়িয়ে পড়বেন।

মাসআলা ১০

অক্ষমতার কারণে ইশারায় রুকু ছেজদা দিয়ে কিছু নামাজ পড়ার পর সক্ষম হলে নামাজ ছেড়ে দিয়ে পুনরায় পুরো নামাজ দাড়িয়ে পড়বেন। ছেড়ে দিয়ে পুনরায় দাড়িয়ে নামাজ না পড়লে নামাজ হবে না।

মাসআলা ১১

অতিরিক্ত অসুস্থ হলে চার জানু এক জায়গায় করে বা যেভাবে আরাম পান সেভাবে বসবেন।

মাসআলা ১২

কোন জিনিষের উপর টেক বা ভর দিয়ে বসতে পারলে শুয়ে নামাজ পড়া জায়েজ নেই। শুয়ে পড়লে আদায় হবে না।

মাসআলা ১৩

বসে নামাজ আদায় করতে অক্ষম হলে শুয়ে ইশারায় নামাজ পড়বেন। শুয়ে তিনভাবে নামাজ পড়া যায়ঃ

ক) চিৎ হয়ে শুয়ে পা কেবলার দিকে দিয়ে পিঠ ও মাথার নীচে বালিশ বা অন্য কিছু দিয়ে ইশারায় নামাজ পড়বেন।
খ) পা দুখানা গুটিয়ে রেখেও ইশারায় পড়তে পারেন।
গ) ডানে বা বামে কাত হয়ে মুখ কেবলামুখী করেও পড়তে পারেন। ডানে কাত হওয়া উত্তম।
মাসআলা ১৪

কোন ব্যক্তি নামাজ পড়তে অক্ষম হওয়ার পরে নামাজ আদায়ে সক্ষম না হয়েই মারা গেলে সে নামাজের ফিদিয়া দেয়া লাগবে না।

মাসআলা ১৫

রোগী জুমার দিনে মছজিদে জুমার নামাজ হয়ে যাওয়ার পর জোহর পড়বেন। জুমা ফরজে আইন। এ জন্য জুমার আগে নামাজ পড়লে সে নামাজ আদায় হবে না।


যতই অসুস্থ হোক যদি জ্ঞান ঠিক থাকে তাহলে ইশারায় নামাজ পড়তে হবে । ওযুর ক্ষেত্রে তায়ম্মুম ব্যবহার করবে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ