১। অকারণে দরজা খোলা থেকে বিরত থাকুন : ফ্রিজের দরজা যত কম খুলবেন, ততই ফ্রিজের ভেতরকার পারিপার্শ্বিক অবস্থা ভালো থাকবে। কিছু রাখার জন্য বার বার ফ্রিজ না খুলে একসাথে গুছিয়ে সব একসাথে রাখুন বা বের করুন। ২। পিছনের দেওয়ালে জিনিসপত্র ঠেসে দিবেন না : রেফ্রিজেরেটরের পেছনের দেওয়ালে কোন কিছু ঠেসে রাখা থেকে বিরত থাকুন। এটি ফ্রিজের শীতল চক্রের ক্ষতি করে ফলে ফ্রিজকে বেশী শক্তি খরচ করতে হয়। তাছাড়া আপনার রাখা সবজী বা মাছ মাংসের জন্যই এটি ভালো নয়। ৩। সরাসরি গরম খাবার ফ্রিজে রাখবেন না : সরাসরি গরম খাবার ফ্রিজে রাখা মোটেও উচিত নয়। কারন, সে খাবার ঠান্ডা করতে ফ্রিজকে খুব বেশি শক্তি অপচয় হয়। এছাড়াও সরাসরি গরম খাবার থেকে আপনার ফ্রিজে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হতে পারে। ৪। খাবার ঠান্ডা হতে পরিমিত সময় দিন : খুব তাড়াতাড়ি খাবার বা মাছ, মাংস ঠান্ডা করার জন্য যদি আপনি ফ্রিজের ঠান্ডা হবার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে থাকেন, তবে বোকামী করবেন। এতে ফ্রিজের খুব বেশি শক্তি খরচ করতে হয় যা থেকে আপনার ফ্রিজ নষ্টও হয়ে যেতে পারে। এর চেয়ে বরং জিনিস ঠান্ডা করার জন্য ফ্রিজকে পরিমিত সময় দিন। ৫। কুলিং কয়েল পরিষ্কার রাখুন : ফ্রিজের পেছন দিকে যে কুলিং কয়েল থাকে সেখান থেকেই ফ্রিজে শক্তি পৌছায়। সেই কুলিং কয়েলে প্রচুর ধুলো জমলে শক্তির প্রবাহ কমে যায় আর তখন ফ্রিজের শক্তি বেশি ব্যয় হয়। তাই এই কুলিং কয়েল পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন। তবে একটু সাবধানে করবেন যেন কুলিং কয়েলের বক্ররেখাগুলোর কোন ক্ষতি না হয়। তাহলে সেগুলো কর্মদক্ষতা কমে যাবে। ৬। জমে থাকা অতিরিক্ত বরফ অপসারণ করুন : অনেকে ভাবেন, ফ্রিজে যত বরফ থাকবে ততই ভালো। এই ধারনা কিন্তু একদম ভুল। অতিরিক্ত বরফ জমা হলে রেফ্রিজেরেটরের ঠান্ডা করার কর্মদক্ষতা কমে যায়। তাই ফ্রিজে অতিরিক্ত বরফ জমা হলে যত দ্রুত সম্ভব সেগুলো অপসারণ করুন। ৭। এনার্জি বাল্ব সংযুক্ত করুন : ফ্রিজে একটি এনার্জি বাল্ব সংযুক্ত করুন। এটি ফ্রিজে থাকা বাল্ব থেকে বেশি তাপ উৎপন্ন করবে যার ফলে আপনার রেফ্রিজেরেটরের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রে লেড লাইট বেশ ভালো কাজ করে। ৮। দেওয়াল থেকে দূরে রেফ্রিজেরেটর রাখুন : দেওয়ালের সাথে ফ্রিজকে ঠেসে না রেখে দেওয়াল থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করুন। অন্তত কিছুটা দূরে। এতে ফ্রিজ কম শক্তিতে বেশি ঠান্ডা করতে পারে। ৯। চুলা বা ওয়াটার হিটার থেকে ফ্রিজ দূরে রাখুন : ফ্রিজকে অবশ্যই এমন কিছু থেকে দূরে রাখুন যা তাপ উৎপন্ন করে। বিশেষ করে চুলা, স্টোভ, ওয়াটার হিটার এসব থেকে দূরে রাখুন। ১০। ফ্রিজকে বাতাসের সংস্পর্শে রাখুন : বন্ধ ঘরে ফ্রিজ না রেখে যেখানে বাতাসের ঠিকমত প্রবাহ হয় তেমন জায়গায় ফ্রিজ রাখুন। ফ্রিজের পেছন দিক দিয়ে যে গরম বাতাস বের হয় তা সাধারণ বাতাসের সাথে মিশে বাতাস অদল বদল করে। আপনি যদি, এমন জায়গায় ফ্রিজ রাখেন যেখানে ফ্রিজের আশেপাশে ঠিকমত বাতাস পৌঁছোও না, তবে ফ্রিজকে খুব বেশি শক্তি অপচয় করতে হবে আর খুব দ্রুতই আপনার রেফ্রিজেরেটর নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
প্রতি মাসে অন্ততপক্ষে দু'বার ফ্রিজ পরিষ্কার করুন। পরিষ্কার করার দেড় থেকে ২ ঘণ্টা আগে প্রথমে বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফ্রিজটি বন্ধ করে নিন। যেন ভেতরের বরফ পুরোপুরি গলে যায়। বরফ গলার পর ডিপফ্রিজটি শ্যাম্পু ও ডিটারজেন্ট পাউডার মেশানো পানিতে একটি পরিষ্কার সুতি কাপড় ভিজিয়ে বারবার মুছে পরিষ্কার করুন। তবে ডিটারজেন্ট পাউডারের বদলে লেবুর রস দিয়ে ফ্রিজ পরিষ্কার করতে পারেন। এতে খাবারে ডিটারজেন্টের গন্ধ লাগার আশঙ্কা থাকে না। তারপর সাধারণ তাপমাত্রার ফ্রিজের বাক্সগুলো বাইরে বের করে একইভাবে সাবান অথবা লেবুর রস দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ফ্রিজের বাইরের অংশটুকু ডিটারজেন্ট পাউডার, নয়তো শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে-মুছে নিন। তারপর শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন। এক-দেড় ঘণ্টা পর শুকিয়ে গেলে ফ্রিজ চালু করুন। ফ্রিজ পরিষ্কারের পাশাপাশি খাবার রাখার ব্যাপারেও কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। ফ্রিজে রাখা দুটি পাত্রের মধ্যে অন্তত তিন থেকে চার সেমি জায়গা ফাঁকা রাখুন, যাতে ঠাণ্ডা হাওয়া সহজেই চলাচল করে সব খাবারকে সমান ঠাণ্ডা করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের তরকারি আলাদা প্যাকেটে রেখে সবজি ট্রেতে গুছিয়ে রাখুন। খাবার গরম অবস্থায় কখনই ফ্রিজে রাখবেন না। গরম খাবারটিকে আগে বাইরে রেখে সাধারণ তাপমাত্রায় এনে তারপর ফ্রিজে রাখুন। ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য হালকা গরম পানিতে বেকিং সোডা বা ভিনেগার মিশিয়ে ফ্রিজ পরিষ্কার করুন। ফ্রিজের এক কোণে বেকিং সোডার বক্স রাখতে পারেন। ফলে গন্ধ কম অনুভূত হবে। অনেকক্ষণ লোডশেডিং থাকলে ফ্রিজের বরফ গলতে থাকে। ফলে বিদ্যুৎ আসার পর আগে ফ্রিজ খালি করে সব পানি বের করে নিয়ে তারপর ফ্রিজটি চালু করুন। বিদ্যুতের ভোল্ট ওঠানামা করলে কিছুক্ষণের জন্য ফ্রিজ বন্ধ রাখবেন। বাসা পাল্টানোর সময় ফ্রিজ অবশ্যই প্যাকিং করে নেবেন। প্যাকিং করার সময় ভেতরে পঞ্চ দিয়ে ভালোভাবে টাইট করে বেঁধে নেবেন, যাতে নড়াচড়া না করে। ফ্রিজ রান্নাঘরে না রেখে ডাইনিংরুমে রাখার চেষ্টা করুন আর এমনভাবে রাখুন যাতে যখন-তখন মেশিনের পেছনের অংশের কাজ সহজে করা যায়। ফ্রিজের কনডেন্সার কয়েল পরিষ্কার রাখুন। মডেল অনুযায়ী কোনো ফ্রিজের কয়েল পেছন দিকে, কোনোটার আবার পাশে থাকে। কয়েলে বাড়ির ধুলোময়লা আটকে গেলে ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। বিদ্যুতের খরচও বেশি হয়। তাই ম্যানুয়াল দেখে নিয়ে কনডেন্সার কয়েল পরিষ্কার রাখুন। কনডেন্সার কয়েল পরিষ্কার করার আগে অবশ্যই ফ্রিজের সুইচ অফ করে নেবেন। যতবার ফ্রিজ খোলা হয় ততবারই কিছু ঠাণ্ডা হাওয়া বাইরে বেরিয়ে যায় আর গরম হাওয়া ঢোকে। তাই চেষ্টা করতে হবে বারবার খোলা-বন্ধ না করার। ফ্রিজের শেলভ্স বা ড্রয়ার যা খুলে বাইরে আনা যায়, মাঝে-মধ্যে তা বের করুন। মেটাল বা প্লাস্টিক হলে হালকা গরম পানি এবং ডিশ সোপ দিয়ে ধুয়ে নিন। তবে গ্লাস বা সিরামিকের তৈরি হলে এভাবে ধোবেন না। ডিপ ফ্রিজের যত্ন : ডিপ ফ্রিজের নিচে শক্ত কোনো প্যাকেট/কার্টন বা কাঠ দিয়ে তার ওপর ডিপ ফ্রিজ রাখতে পারেন। এতে ডিপ ফ্রিজ ভালো থাকবে। ডিপ ফ্রিজের ওপর প্লাস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। এতে ওপরে ময়লা সহজে পরিষ্কার করতে পারবেন। শুকনো-পাতলা কাপড় বা গ্গ্নাস ক্লিনার দিয়ে ডিপ ফ্রিজের ওপর অংশ পরিষ্কার করুন। প্রতি ৩-৪ মাস পরপর ডিপের ভেতর পরিষ্কার করুন। ডিপের ভেতর বরফ গলার জন্য লবণ ব্যবহার করতে পারেন। এতে বরফ তাড়াতাড়ি গলে যাবে। ভেতরে বরফ গলার পর পানি থাকলে তা শুকিয়ে নিতে হবে। আপনি চাইলে ২ মাসে ডিপ পরিষ্কার রাখতে পারেন। এতে ডিপ ফ্রিজ অনেক দিন টেকসই থাকবে।