আমার মতে, শিক্ষাব্যবস্থাই বেশিরভাগ দায়ী। কেননা, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা হয়ে পড়েছে চাকরিনির্ভর। সবাই শিক্ষা গ্রহন করে চাকরির জন্য। ফলে প্রকৃত শিক্ষাব্যবস্থা উহ্যই রয়ে গেছে। শিক্ষার মুল কাজ হচ্ছে মানুষকে সত্যিকারের মানুষে পরিনত করা। কিন্তু তা হচ্ছে না।শিক্ষার মাধ্যমে যেখানে মানুষ নৈতিকতা নিজের চরিত্রে ধারন করবে, সেখানে তারা তা করছে বিভিন্ন নীতি বহির্ভুত কাজ। শিক্ষাব্যবস্থা যদি নৈতিকতামুলক হতো, তাহলে এমনটি কখনো হতো না। তাই বলা যায়, শিক্ষাব্যবস্থাই এজন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দায়ী। তবে, সমাজও এ দায় হতে সম্পুর্ন মুক্ত নয়।
ভাই শিক্ষাটা সার্টিফিকেট এর ব্যাপার না, পুরটাই মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। বাইরের দেশের মানুষ (আমেরিকা বা ইংল্যান্ড) তো ১৮বছর বয়স হবার আগেই বাবা মা থেকে আলাদা হয়ে যান। তারা কি সবাই অশিক্ষিত?
রবি ঠাকুর তো শিক্ষার জন্য স্কুলে যান নাই। তো তিনি কি একান্নবর্তী পরিবারে থাকেন নাই? ২০০ বছর আগের কথা বাদ দেন, আমাদের সমাজে যাদের আমরা রোল মডেল হিসেবে (শিক্ষিত) চিন্তা করি, যাদের লিখা আমরা পড়ে আজকের ভূরি ভূরি ডিগ্রি অর্জন করছি বা ২১শে বই মেলায় যাদের বই পড়ার জন্য আমরা লাইন ধরে বই কিনি , কই তারা তো একান্নবর্তী পরিবারে থেকেছেন বা থাকছেন? হয়তোবা কাজের জন্য একেক জন একেক যায়গায় থাকেন, কিন্তু ঈদ বা পুঁজর ছুটিতে ফিরে যান বাবা মার কাছে। উনাদের কথা বাদ দেন মিয়া! প্রতি বছর ঈদ এর সময় লঞ্ছ-বাস- ট্রেন দুর্ঘটনায় কত মানুষ মারা যায়। কই তারপর ও তো ওই সময় লঞ্চে ওভারলোড হয়, বাসে সিট পাওয়া যায় না, ট্রেনএর ছাদে বসে মানুষ তাদের বাবা মা এর কাছে ছুটে যান?
তারা কি সবাই অশিক্ষিত?
তারা জানেন, প্রতি বছর এই সময় দুর্ঘটনা হয়। প্রাণটা হাতে নীয়ে তারা বাবা-মা এর সাথে ২-৪ টা দিন সুখে কাটাতে ছুটে যান।।
আপনি এমন একটা দেশ দেখান যেই দেশে এইরকম হয়?
আমার আপনার মত ২-৪ জন চাকরী লোভী মানুষ, ২-৪ টা সার্টিফিকেট যোগার করে শিক্ষিত মানুষ গুলোর বদনাম করি। শিক্ষাটা যদি মনের শান্তির জন্য আমরা গ্রহন করতাম তাহলে আমাদের এই দশা হত না।।
টপিকে যাওয়ার আগে কয়েকটি কথা বলা প্রয়োজন। শিক্ষা বলতে আমরা বরাবরই পাঠ্যপুস্তকের শিক্ষাকে বুঝি। আমার মতে শুধু তা নয়। শিক্ষা মানে জ্ঞান, আদর্শ, নৈতিকতা, সুন্দর আচরন, বিবেকসহ একজন পরিপূর্ণ মানুষের মধ্যে যা যা গুনাবলী থাকা প্রয়োজন তা সম্পর্কে সঠিক ও পরিপূর্ণ ধারনা নেওয়া এবং যার মধ্যে এই সকল গুনাবলী বিদ্যমান, তিনিই প্রকৃত শিক্ষিত ব্যাক্তি।
একজন মানুষ চারটি উৎস থেকে শিক্ষালাভ করে:
১. পরিবার
২. পরিবেশ, তথা সমাজ
৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এবং
৪. ধর্ম
কারো মধ্যে কোন একটি উৎসের শিক্ষার অভাব হলেই তার মধ্যে আচরণগত পার্থক্য দেখা দেয়।
এবার মূল বিষয়ে আসি। আমার মতে, বর্তমান সময়ে একটি শিক্ষিত ছেলে বউকে নিয়ে আলাদা (বাবা-মাকে ছেড়ে) থাকার পিছনে উপরোক্ত চারটি ব্যাপারই দায়ী। কারন:
১. পরিবার: পরিবার একজন মানুষের সুশিক্ষার প্রধান উৎস। আদর্শ, নৈতিকতা, সুন্দর আচরন, বিবেকসহ আরো কিছু ব্যাপার মানুষ অর্জন করে প্রধানত পরিবার থেকে। একজন মানুষের জীবনে পরিবারের গুরুত্ব, অবদান প্রয়োজনীয়তার মতো ব্যাপারগুলি পরিবার থেকেই শিক্ষা দিতে হয়। একটি পরিবারের সকল সদস্যের মধ্যে যদি সুসম্পর্ক এবং সুদৃঢ় একটি বন্ধন থাকে, তবে সেই পরিবারের ছেলে-মেয়েরা কখনও ভুল কোন পথে পা বাড়ায় না।
২. পরিবেশ: পরিবেশ বলতে প্রতিবেশি, পাড়ার বন্ধু, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহপাঠী, অফিসের কলিগসহ তার আশে-পাশে যারা থাকেন, সকলকেই বোঝায়। পরিবারের পরেই এটি শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উৎস। একজন মানুষের ভাল-খারাপ বা সঠিক-ভুল পথে যাওয়ার প্রধান কারন এই পরিবেশের শিক্ষা। বন্ধু-বান্ধব ঘেঁষা ছেলেদের মাঝে পরিবার (বিশেষ করে বাবা-মা) নিয়ে কমই চিন্তা করতে দেখা যায়। যার ফলাফল হয় পরবর্তীতে বাবা-মাকে ছেড়ে যাওয়া মতো ঘটনা।
৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা আজ পাঠ্যপুস্তকের মাঝে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। সুশিক্ষা বলতে যা বোঝায়, তা আমরা এখন আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাই না। যে শিক্ষা পাই তা হলো জীবিকা নির্বাহের উপায়। যার কারনে একজন মানুষের কাছে জীবিকা নির্বাহটাই প্রধান উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় এবং এর জন্য সে বাবা-মাকে ছেড়ে আলাদা থাকলেও অপরাধবোধ অনুভব করে না।
৪. ধর্মীয় শিক্ষা: ধর্মীয় শিক্ষাই একজন মানুষের চারিত্রিক গুনাবলী তৈরির প্রধান উৎস। ধর্মীয় শিক্ষার মাঝে বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের কর্তব্য সম্পর্কে যদি কেউ সঠিক ধারণা রাখে এবং মেনে চলে, তবে বাবা-মাকে ছেড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটানো তার পক্ষে সম্ভব নয়।
তাই আমার মতে উপরোক্ত চারটি ব্যাপারই একজন শিক্ষিত ছেলের বাবা-মাকে ছেড়ে আলাদা থাকার পেছনে দায়ী।