নিম্নলিখিত শারীরিক অসুখগুলি অত্যধিক টেনশনের জন্য হতে পারে। ১)পেটে,মানে পাকস্থলিতে আলসার বা ঘা—মনের উপর অত্যধিক চাপ সৃষ্টি হওয়া এবং উদ্বেগ বৃদ্ধি পাওয়ায় পাকস্থলিতে আসিড ও পেপিসন নামক হরমোনের অধিক ক্ষরনের ফলে পাকস্থলিতে আলসারের বৃদ্ধি পায়।সেই জন্য টেনশন কমানোর জন্য নানা ঔষধ দিয়ে এই রোগের প্রকোপ কমানো হয়। ২)উদ্বেগজনিত মাথাব্যথা (Tension headache)—এই ব্যথা সাধারনতঃ দিনের শেষে শুরু হয়, কারো কারো সারাদিনই থাকতে পারে।এটা হয় মাথা ও ঘাড়ের মাংস পেশীর টেনশনের কারনে সংকোচনের জন্য।অনেক সময় এর সংগে মানসিক অবসাদও দেখা যায়। ৩)যৌন সমস্যা—উদ্বেগের কারণে যৌনকাঙ্খা কমে যেতে পারে।পুরুষদের ক্ষেত্রে লিঙ্গের দৃড়ভাব কমে যেতে পারে এবং নারীদের ক্ষেত্রে যৌনজীবন সম্পর্কে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। ৪)উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের বা হৃদযন্ত্রের অন্যান্য অসুখ—যারা অনেক মানসিক চাপের মধ্যে দীর্ঘিদন কাজ করেন, বা যাদের পরিবারে কারো ঊচ্চরক্তচাপ আছে,বা হার্টের অসুখ আছে, তাদের, অত্যিধিক টেনশনে থাকলে, ঐ রোগ গুলি হতে পারে।দেখা গেছে যে উদ্বেগের কারনে রক্ত চাপ অনেক বেশী বেড়ে গেলে ব্রেনে বা হার্টে ষ্ট্রোক হতে পারে। ৫)হাঁপানি রোগ—উদ্বেগের কারণে Asthma বা হাঁপানির টান বেশী হতে পারে।যাদের সবসময় উদ্বেগ থাকে তাদের হাঁপানির টান প্রায়সই হতে থাকে,এবং যতক্ষন না তাদের টেনশন কমে টান কিছুতেই কমতে চায় না। ৬)দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগের জন্য আমাদের দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়, এবং এর জন্য নানা মাংস পেশীর রোগ, জয়েন্ট বা গাঁটের রোগও (Arthritis)হতে পারে। যাদের এই রোগ গুলি আছে সেই গুলির অবনতি হতে পারে টেনশনের জন্য। ৭)চর্ম রোগ—এছাড়া বিভিন্ন ধরনের চুলকানি এবং অত্যধিক ঘাম হওয়াও অনেক্ সময় উদ্বেগের কারণে হতে পারে। মনস্তত্ববিদ বা সাইকোলজিস্ট (Psychologist)রা এই টেনশন ভোগা রোগীদের মনটা বিশ্লেষন করে দেখেছেন যে তাদের নিম্নলিখিত ধারনাগুলি আছেঃ ১)তারা দু’একটা ছোটখাট ঘটনার ভিত্তিতেই গোটা পরিস্থিতি সম্বন্ধে মত স্থির করে ফেলেন। ২)পুরো ঘটনাটিকে না দেখে বিশেষ কতকগুলি অংশ(প্রায়ই নেতিবাচক)নিয়ে ভাবেন, অথচ আরো বড় ইতিবাচক অংশগুলি ভাবেন না। ৩)নিজেদের ধারনা অনুযায়ি ভিত্তিহীন কোনো মানে করে নেন। ৪)ঘটনার কোনো বিশেষ বিশেষ অংশকে বাড়িয়ে ফেলেন। ৫)আবার বিশেষ অংশকে কোনো গুরুত্ব দিতেই চান না। ৬)সব অভিজ্ঞতাকেই খুব ভাল বা খুব খারাপ ধরে নেন, এর মাঝামাঝি কিছু ভাবতে পারেন না। ৭)বাইরের যেকোনো খারাপ ঘটনা নিজেরও ঘটবেই বলেই সাথে সাথে ভেবে ফেলেন।
কোন কাজে স্বাভাবিক মাত্রায় টেনশন না থাকলে কাজের গতি বাড়বে না, নিজের ভেতর তাগিদ সৃষ্টি হবে না। তাই তাগিদ সৃষ্টির জন্য বা কাজের গতি বাড়ানোর জন্য টেনশনের প্রয়োজন আছে। সেজন্য কোন টেনশনই যদি না থাকে তাহলেও কাজটি শেষ করার ড্রাইভ বা তাগিদ থাকবে না। তবে তা থাকতে হবে সহনীয় পর্যায়ে। অর্থাৎসহনীয় পর্যায়ে টেনশন হবে পজিটিভ। অন্যদিকে কিন্তু মনের অতি আলোড়িত অবস্থা কিংবা অতি টেনশনের কারণে কাজের দক্ষতা কমে যায়, চিন্তার ক্ষমতা হ্রাস পায়, এক্ষেত্রে টেনশন নেগেটিভ। অতিরিক্ত টেনশন সমস্ত উন্নতি বা অগ্রগতির প্রধান বাধাবিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে দীর্ঘক্ষণব্যাপী টেনশন চলতে থাকলে তাতে মানসিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। একই সঙ্গে শারীরিক অনেক উপসর্গও শুরু হতে পারে। মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছেআবেগীয় কগনিশনের সমস্যা। আবেগীয় সম্যাগুলো হলো টেনশন থেকে অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন, রাগ, ক্ষোভ, বিরক্তি, এগ্রেশন ইত্যাদি। কগনিশনে জট থেকে মনোযোগের অভাব দেখা দেয়, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বোড়ে যায়, চিন্তার দ্রুততা হ্রাসপায়, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা কমে আসে, জটিল সমস্যা সমনে এলে, মোকাবেলা করার সামর্থ হারিয়ে যায়। সর্বোপরি কর্মদক্ষতা কমে যায়, কর্মীর উৎপাদন ক্ষমতা ব্যাহত হয়।স্নায়ুতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে অটোনোমিক নার্ভাস সিস্টেম। স্বয়ংক্রিয়ভাবে এটি শরীরের ভেতরগত বিভিন্নঅঙ্গের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। মানসিক পীড়ন থেকে এটির সিমপ্যাথেটিক অংশউদ্দীপ্ত হয়, নরএড্রিনালিন ও এড্রিনালিন হরমোন নিৎসরণ ঘটায় নরএড্রিনালিন নেগেটিভ ইমোশনের সঙ্গে জড়িত। এড্রিনালিনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে, অ্যাংজাটি, টেনশন, পালায়নপর মনোবৃত্তি।মানসিক চাপ বেড়ে গেলে রক্তে নিৎসৃত হয় স্ট্রেস হরমোন, কর্টিসল। স্বাভাবিক মাত্রার করটিসল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। অস্বাভাবিক বেশি নিঃসৃত হলে এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ কাঠামো-ইম্মিউপন সিস্টেমের জন্য ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন স্ট্রেসে ভুগলে কাটিসলের উৎস, এড্রিনাল গ্ল্যান্ড আকারে বড় হয়ে যেতে পারে। তাই টেনশনমুক্ত থাকা আমাদের জন্য খুবই জরুরী
মানসিক চাপ আপনার স্বাস্থ্যের ওপর যে বহুমাত্রিক কুফলগুলো বয়ে আনতে পারে, তার মধ্যে তিনটি বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো। ঘুমের সমস্যা: পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি গবেষণা যে বিষয়গুলোর ওপর পরিচালিত হয়েছে, তার মধ্যে ঘুম অন্যতম। বয়সভেদে ঘুমের সময়ের তারতম্য হয়। তবে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম হওয়া বাঞ্ছণীয়। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া ও ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলুন। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই। কিন্তু, এই ঘুমটাই আর আসে না যখন আমরা পার্থিব জগতের নানা হিসাব-নিকাশ নিয়ে নিজেদের মগজটাকে ব্যস্ত রাখি। তাই বিছানায় শুয়েই আপনার শরীরটাকে একদম শিথিল করে দিন। কোন উদ্বেগ, হতাশা বা দুশিন্তা নয়। মনে রাখবেন, মানসিক চাপ থেকে সৃষ্ট অবসাদ, হতাশা আর তিক্ততা আপনার নিদ্রাহীনতার অন্যতম কারণ। রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস: মানসিক চাপ আমাদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। অথচ, এ ক্ষমতাটাই আমাদের নানা সংক্রমণ ও অসুখ-বিসুখ থেকে দূরে রাখে। এর ফলে প্রদাহজনিত নানা রোগ ও এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। তাছাড়া, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে, অসুস্থ হলেও আপনার সুস্থ হতে লাগবে অনেক বেশি সময়। তাই মানসিক চাপকে ‘না’ বলুন। আর হাসিখুশি জীবনকে বলুন ‘হ্যাঁ’। বন্ধ্যাত্ব: নারীদের জন্য মানসিক চাপটা কোন কোন সময় তার পুরো জীবনযাত্রায় শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভয়াবহ প্রভাব ফেলে। মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপ বন্ধ্যাত্বের মতো ভয়াবহ শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। গবেষকরা বলছেন, অতিমাত্রায় মানসিক চাপ থেকে সৃষ্ট হরমোন নারীর শরীরে ডিম্বাণু উৎপাদন থামিয়ে দেয়। ফলে, তারা জীবনে আর কখনও সন্তান ধারণ করতে পারেন না। বিশেষ করে যারা ঘরে ও বাইরের দায়িত্ব সামলান ও সব সময় এক ধরনের মানসিক চাপে ভোগেন, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা অনেক বেশি। তাই হাজারো সমস্যার ভিড়েও নিজেকে সবসময় স্বাভাবিক, হাসিখুশি ও প্রাণবন্ত রাখার চেষ্টা করুন।