আমাদের রাসূল (সঃ) কত রাকাত তারাবির সালাত আদায় করতেন?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

১১ বা ১৩ রাক‘আত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রামাযান মাসে বিতর সহ ১১ রাক‘আতের বেশী রাতের ছালাত (তারাবীহ) আদায় করেননি (বুখারী ১/১৫৪ পৃঃ; মুসলিম ১/২৫৪ পৃঃ; আবুদাঊদ ১/১৮৯পৃঃ; নাসাঈ ১/১৯১ পঃ:; তিরমিযী ১-৯৯ পৃঃ; ইবনু মাজাহ ১/৯৬-৯৭ পৃঃ; মুওয়াত্ত্বা মালেক ১/৭৪ পৃঃ)। ওমর (রাঃ) উবাই বিন কা’ব ও তামীম দারী (রাঃ)-কে রামাযান মাসে লোকদের নিয়ে ১১ রাকা‘আত (তারাবীহ্র) ছালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন (মুওয়াত্ত্বা ১/৭১ পৃঃ; মিশকাত হা/১৩০২, হাদীছ ছহীহ; ঐ বঙ্গানুবাদ হা/১২২৮ রামাযান মাসে রাত্রি জাগরণ অনুচ্ছেদ)।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
shahidrand1

Call

সালাম নিবেন। বহু সংখ্যক মানুষ তারাবী সালাত নিয়ে চিন্তিত আছেন। কিন্তু তারাবি ছাড়াও আরও অনেক সমস্যা যেমন আজানের জবাব দেয়া, অজু করা, সালাত শুরু করা,হাত বাধা, রাফউল ইয়াদেন করা,সুরা ফাতেহা পড়া/না পড়া, আমীন জোরে বলা/না বলা, সম্মিলিত মুনাজাত করা, বিতির সালাত, মাসবুকের সালাত ইত্যাদি । তবে এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হচ্ছে ইমাম সাহেব যখন সশব্দে কেরাত পড়বেন আবার য়খন চুপে কেরাত পড়বেন, তখন সুরা ফাতেহা পড়া না পড়ার বিষয়টা। কারন এটার কারনে হয়তো, বাংলাদেশে(হানাফি মাজহাব), জনপ্রতি ১১ রাকাত সালাত হচ্ছে না। তারাবী তো এতোটা জটিল না্ আর আমাদের সমস্যা হচ্ছে, আমরা নিজেরা না পড়ে, রেডিমেড সমাধান চাই। কিন্তু এটা সম্বব না। এখন যদি কেউ ভুল বা সঠিক বলে ,আপনি সেটা যাচাই করতে পারছেন না। কিন্তু বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির যুগে,কারো যদি(কোন বন্ধুর) ইন্টারনেটের লাইন থাকে,তাহলে একটা বইও না কিনে সমস্ত সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। রমজানের আর ২০ দিন বাকী।এই সময়ের মধ্যেই এটা করা যায়। হাদীস দেখার জন্য আপনি hadithbd.com ব্যবহার করুন। টিভির ইমামদের মধ্যে আপনি peace tv, ntV-এর জনাব সাইফুল্লাহ, atn -এর তারেক মনোয়ার ও কামালুদ্দিন জাফরী, কাজী ইব্রাহিম/ডক্টর মনজুর এলাহীকে(চ্যানেল জানা নাই তবে গতকালও দেখেছি) উনাদের কথা শুনুন । islamhouse.com এ এমন কোন বই নাই যে নাই। download করে পড়ুন। এখন কেউ বলতে পারেন, উনারা যে ঠিক এটার প্রমান কি ? দেখুন বাজারে ইসলামি ফাউন্ডেশন, তাওহীদ প্রকাশনী আর আধুনিক প্রকাশনীর হাদীসসহ সমস্ত বই আছে। অনেক মসজিদে হাদীস বই আছে। আপনাকে তো web site এর নাম দেয়া হোল । উনাদের হাদীসের উদ্ধৃতিগুলো বই/ ওয়েব সাইটের সাথে মিলান। ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের জন্য আমাদের কিছু বিষয় ভাল ভাবে বুঝতে হবে। আমাদের সমাজের ভাল ছাত্রগুলো চলে যায় ডাক্তার,ইন্জিনীয়ারসহ বিভিন্ন সাবজেক্টে। ২/১ টা ব্যাতিক্রম ছাড়া অনেক মেধাবীরা পরবর্তীতে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়।উচু পরিবার থেকে না যাবার ফলে,আর এদের তেমন কোন ভবিষ্যৎ না থাকার ফলে এদের মন থাকে সংকীর্ন। এদের কথা-বার্তা ব্যাক্তিত্ব ঠিক উচু পরিবারের মত হয় না। এই লাইনের একটা ব্যাপক অংশ তাবিজ,মিলাদ,কুরআন খতম, চল্লিশা এই সমস্ত কাজে জড়িত থাকে। ফলে এরা এদের ধান্দার কারনে সমাজের মানুষকে সঠিক কথা বলে না। মনে করুন, কাজী ইব্রাহিম সঠিক কথা বলার পরও আপনাকে ভুল তথ্য দিয়ে ভুল বুঝাবে।আপনার জ্ঞান না থাকার জন্য আপনি মহা সমস্যায় পড়ে যাবেন। মানুষের ভিতরে বর্তমানে সবচেয়ে বেশী বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে আপনার এলাকার ইমামরা। কারন এরা এদের উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত। ডাঃ জাকির নায়েকের “বক্তৃতা সমগ্র- ৫ খন্ড- ২৪৭ পৃষ্ঠা দেখুন। এখানে তিনি বলছেন, আয়েশা(রাঃ) উদ্ধৃতি দিয়ে বলছেন, রাসুল(সঃ) তারাবী পড়েছেন ৮ রাকাত। তারপর আরেকটা হাদীসের কথা বলছেন যেই হাদীসে তারাবী পড়ার নিয়ম বলা আছে (২+২+২+) । কিন্তু এই হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলছেন,তারাবী যত রাকাত খুশী তত রাকাত পড়া যাবে। পিস টিভিতেই মুজাফফর বিন মহসিন বলছেন, এই হাদীস দিয়ে নিয়ম বুঝাচ্ছে, সংখ্যা নয়। পিস টিভিতেই দুই মত। একই ভাবে জনাব মুজাফফর বিন মহসিন উনার “ভ্রান্তির বেড়াজালে একামতে দ্বীন” এর ১৬২ পৃস্ঠায় লিখেছেন, “মওদুদী ৮ রাকাতকে সহীহ আবার ২০ রাকাতকেও ঠিক বলেছেন”। এই কারনে মুজাফফর বিন মহসিন মওদুদীর উপর বেশ অসন্তুষ্ট। একই কাজ কিন্তু জাকির নায়েকও করেছেন । কিন্তু মুজাফফর বিন মহসিন সেই জায়গায় জাকির নায়েককে আনেনি। ATN বাংলায় ১৮ রোজায় এক জন দর্শক প্রশ্ন করে জনাব তারেক মনোয়ারকে যে, হাত কোথায় বাধবো ? তিনি উত্তর দেন, যারা হানাফী মাযহাব তারা বাধবেন নাভীর নীচে আর অন্য মাযহাব হলে বাধবেন নাভীর উপরে । কিন্তু উত্তর হবে হাত বাধার ১৮ টি সহীহ হাদীসের মধ্যে সবগুলোই নাভীর উপরে। এখানে হাদীসের কথা না বল্লে মানুষ মাযহাবে পিছনে ছুটবে আর তাদের আমলও ভুল হবে। দিগন্তু টিভি বন্ধ হবার আগের রমজানের কথা। কাজী ইব্রাহিম বলেন, ৮ রাকাত তারাবী আপনি পড়তে পারেন, তবে সারারাত ইমামের সাথে থাকার সওয়াব আপনি পাবেন না। গত মংগলবার(চ্যানেল খেয়াল নেই) জনাব ডক্টর মনজুর এলাহী বলেন, সাহরীর সময় মেষ হবার সাথে সাথেই আপনি খাওয়া বন্ধ করে দিবেন। কিন্তু আপনি হয়তো দেরীতে উঠেছেন, কাজেই আপনার হয়তো খেতে খেতে সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় আপনাকে যতটা সম্ভব দ্রুত গতিতে সম্পূর্ন খাওয়া শেষ করতে হবে। কারন ১৫ ঘন্টার রোজার কাছে খাওয়ার ৫ মিনিট কিছু না। আর মহান আল্লাহ এটা চান না, আপনি সাহরী না খেয়ে রোজা রাখুন। অনেক দেরী হয়ে গেলে সেটা আলাদা। এখন প্রশ্ন হোল ডাঃ জাকির নায়েকসহ অন্যরা কি এটা জানেন না সঠিক কি ? তিনি সহ কিছু বিশেষজ্ঞ আছেন, যারা জেনেও সঠিক কথা বলেন না। কারন উনারা চান না, এটা নিয়ে মুসলিমরা ভাগ হয়ে যাক। ইসলাম একটা বিরাট ব্যাপার, এর বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা। সমস্ত মানুষের ব্যস্ততা আছে । কাজের সবার পক্ষে সব জানা সম্ভব হয় না। আবার অনেক সময় বলার সময় সব খেয়ালও থাকে না। আসলে এই পার্থক্য থাকবে। আপনি যদি প্রচুর পড়েন,তাহলে এগুলো বুঝা কোন ব্যাপার না। গালিবের "সালাতের রাসুল" ও পিন টিভির মুজাফফর বিন মহসিনের "জাল হাদীসের কবলে রাসুলের সালাত" hadithbd.com এ পাবেন। এরপরও "মাজহাব কি মানতে হবে" এই জাতীয় বইগুলো বাজারে আছে, এই লেখকদের লেখা। দাম হচ্ছে ৫০ টাকা ।তারাবীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বই হচ্ছে মুজাফফর বিন মহসিনের "তারাবীর রাকাত সংখ্যা"। এত ভাল তথ্য নির্ভর বই আর লেখা সম্ভব না। সালাতের জন্য পড়ুন "সালাতে মনোযোগী হবার ৩৩ উপায়"। আমরা বিভিন্নধরনের আমল মানে সালাত,রোজা ইত্যাদি করে থাকি। কিন্তু কখন /কেন কোন আমল আল্লাহর কাছে বেশী গ্রহনযোগ্য, এটা জানার জন্য পড়ুন "আল্লাহর কাছে অধিক গ্রহনযোগ্য আমল"। আসলে আমল অর্থ হচ্ছে কাজ। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ বা আমল না করলে, আপনি আল্লাহর কাছে কম গ্রহনযোগ্য হবেন,কিন্তু আপনার শ্রম/সময় বেশী নষ্ট হবে।রাসুলের(সঃ) জীবনী জানার জন্য পড়ুণ "আর রাহীকুল মাখতুম" বা সীরাতে ইবনে হিশাম"। তওবা করা নিয়ম জানার জন্য পড়ুন "আমি তওবা করতে চাই-কিন্তু"।জান্নাত-জাহান্নাম সম্পর্কে জানতে পড়ুন বজলুর রহমানের "জান্নাত-জাহান্নাম"।আমাদের রাসুল(সঃ) অন্য সমস্ত নবী-রাসুলের ঘটনা জানার জন্য পড়ুন গালিবের "নবীদের কাহিনী"। কথা হচ্ছে, বাজারে প্রচুর বই আছে কিন্তু এগুলোর বেশীর ভাগই ভুল তথ্যে ভরা। কাজেই আপনাকে সতর্ক ভাবে পড়তে/বিশ্বাস করতে হবে। আর কোন বই/ইমাম/ইসলামী চিন্তাবিদ কোথায় কি বলছে,সেটার তুলনামূলক আলোচনা করে যেতে হবে। এভাবেই আপনি এক সময় দক্ষ হয়ে উঠবেন। এতটুকু না করলে কিভাবে জান্নাতে যাবার চিন্তা করতে পারেন ? অবশ্যই আমাদের আগাতে হবে। ধন্যবাদ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
makahjad

Call

তারাবীর নামাযের রাকাত সংখ্যা প্রশ্ন : তারাবীর (তারাবি) নামায কি ১১ রাকাত, নাকি ২০ রাকাত? সুন্নাহ অনুযায়ী তো তারাবীর নামায ১১ রাকাত । শাইখ আলবানী রহিমাহুল্লাহ “আলক্বিয়াম ওয়াত তারাউয়ীহ” বইতে বলেছেন তারাবী নামায ১১ রাকাত। এখন কিছু মানুষ সেসব মসজিদে নামায পড়েন যেখানে ১১ রাকাত তারাবী পড়া হয়। আবার কিছু মানুষ সেসব মসজিদে নামায পড়েন যেখানে ২০ রাকাত তারাবী পড়া হয়। এখানে যুক্তরাষ্ট্রে এটি একটি সংবেদনশীল মাসয়ালা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যিনি ১১ রাকাত তারাবী পড়েন তিনি ২০ রাকাত সালাত আদায়কারীকে ভৎর্সনা করেন। আবার যিনি ২০ রাকাত তারাবী পড়েন তিনি ১১ রাকাত সালাত আদায়কারীকে ভৎর্সনা করেন। এটা নিয়ে একটা ফিতনা (গোলযোগ) সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি মসজিদে হারামেও ২০ রাকাত তারাবী পড়া হয়। তাহলে মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীতে সুন্নাহর বিপরীত আমল হচ্ছে কেন? কেন তাঁরা মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীতে ২০ রাকাত তারাবী নামায আদায় করেন? . উত্তর: আলেমদের ইজতিহাদনির্ভর মাসয়ালাগুলো নিয়ে কোন মুসলিমের সংবেদনশীল আচরণ করাকে আমরা সমীচীন মনে করি না। যে আচরণের কারণে মুসলমানদের মাঝে বিভেদ ও ফিতনা সৃষ্টি হয়। শাইখ ইবনে উছাইমীন রহিমাহুল্লাহকে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যিনি ইমামের সাথে ১০ রাকাত তারাবী নামায পড়ে বিতিরের নামাযের অপেক্ষায় বসে থাকেন, ইমামের সাথে অবশিষ্ট তারাবী নামায পড়েন না, তখন তিনি বলেন: “এটি খুবই দুঃখজনক যে, আমরা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে এমন একটি দল দেখি যারা ভিন্ন মতের সুযোগ আছে এমন বিষয় নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করেন। এই ভিন্ন মতকে তারা অন্তরগুলোর বিচ্ছেদের কারণ বানিয়ে ফেলেন। সাহাবীদের সময়েও এই উম্মতের মাঝে মতভেদ ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁদের অন্তরগুলো ছিল ঐক্যবদ্ধ। তাই দ্বীনদারদের কর্তব্য, বিশেষভাবে যুব-সমাজের কর্তব্য হচ্ছে- ঐক্যবদ্ধ থাকা। কারণ শত্রুরা তাদেরকে নানারকম ফাঁদে ফেলানোর জন্য ওঁত পেতে বসে আছে।”[আশ-শারহুল মুমতি‘ (৪২২৫)] এই মাসয়ালার ব্যাপারে দুই পক্ষই অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে। প্রথম পক্ষের লোকেরা যারা ১১ রাকাতের বেশি তারাবী পড়েন তাদের আমলকে একেবারে অস্বীকার করে এ আমলকে বিদআত আখ্যায়িত করেন। আর দ্বিতীয় পক্ষের লোকেরা যারা শুধু ১১ রাকাতে সীমাবদ্ধ থাকেন তাদের আমলকে অস্বীকার করে বলেন: তারা ইজমা‘ এর খেলাফ করছে। চলুন আমরা এ ব্যাপারে শাইখ ইবনে উছাইমীন রহিমাহুল্লাহ এর উপদেশ শুনি, বলেন: “এক্ষেত্রে আমরা বলব: বাড়াবাড়ি বা শিথিলতা কোনটাই উচিত নয়। কেউ কেউ আছেন সুন্নাহ্ তে বর্ণিত সংখ্যা মানার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করেন এবং বলেন: সুন্নাহ্ তে যে সংখ্যার বর্ণনা এসেছে তা থেকে বাড়ানো নাজায়েয। যে ব্যক্তি সে সংখ্যার বেশী তারাবী পড়ে তার কঠোর বিরোধিতা করেন এবং বলেন যে, সে গুনাহগার ও সীমালঙ্ঘণকারী। এই দৃষ্টিভঙ্গি যে ভুল এতে কোন সন্দেহ নেই। কিভাবে সে ব্যক্তি গুনাহগার বা সীমালঙ্ঘণকারী হবে যেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাতের সালাত (কিয়ামুল লাইল) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন:“দুই রাকাত দুই রাকাত।” তিনি তো কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেননি। এ কথা সবারই জানা আছে যে,যেই সাহাবী রাতের সালাত সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি রাতের নামাযের সংখ্যা জানতেন না। কারণ যিনি সালাতের পদ্ধতিই জানেন না,রাকাত সংখ্যা সম্পর্কে তার না-জানবারই কথা। আর তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সেবকও ছিলেন না যে আমরা এ কথা বলব- তিনি রাসূলের বাসার ভিতরের আমল কি সেটা জানতেন। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই সাহাবীকে কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেননি, শুধু সালাতের পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন,এতে জানা গেল যে, এ বিষয়টি উন্মুক্ত। সুতরাং যে কেউ ইচ্ছা করলে ১০০ রাকাত তারাবীর নামায ও ১ রাকাত বিতির নামায আদায় করতে পারেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বাণী : ( ﺻﻠﻮﺍ ﻛﻤﺎ ﺭﺃﻳﺘﻤﻮﻧﻲ ﺃﺻﻠﻲ ) “তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখলে সেভাবে সালাত আদায় কর।” (বুখারী -১ম খণ্ড হা:-৬৩১, আল-মাদানী প্রকাশনী) এই হাদিসটির বিধান সাধারণ নয়; এমনকি এ মতাবলম্বীদের নিকটও নয়। তাই তো তারা কোন ব্যক্তির উপর একবার ৫ রাকাত,একবার ৭ রাকাত, অন্যবার ৯ রাকাত বিতির আদায় করা ওয়াজিব বলেন না। আমরা যদি এ হাদিসকে সাধারণভাবে গ্রহণ করি তাহলে আমাদেরকে বলতে হবে যে বিতিরের নামায কোনবার ৫ রাকাত,কোনবার ৭ রাকাত এবং কোনবার ৯ রাকাত আদায় করা ওয়াজিব। বরং “তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখলে সেভাবে সালাত আদায় কর”-এ হাদিস দ্বারা সালাত আদায়ের পদ্ধতি বুঝানো উদ্দেশ্য; সালাতের রাকাত সংখ্যা নয়। তবে রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট করে এমন অন্য কোন দলীল পাওয়া গেলে সেটা ভিন্ন কথা। যাই হোক,যে বিষয়ে শরিয়তে প্রশস্ততা আছে সে বিষয়ে কারো উপর চাপ প্রয়োগ করা উচিত নয়। ব্যাপারটি এ পর্যন্ত গড়িয়েছে যে,আমরা দেখেছি কিছু ভাই এ বিষয়টি নিয়ে এত বেশি বাড়াবাড়ি করেন যে,যেসব ইমাম ১১ রাকাতের বেশি তারাবী নামায পড়েন এরা তাদের উপর বিদআতের অপবাদ দেন এবং (১১ রাকাতের পর) মসজিদ ত্যাগ করেন। এতে করে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বর্ণিত সওয়াব থেকে বঞ্চিত হন। তিনি বলেছেন:“ইমাম নামায শেষ করা পর্যন্ত যে ব্যক্তি ইমামের সাথে কিয়ামুল লাইল (রাতের নামায) পড়বে তার জন্য সম্পূর্ণ রাতে নামায পড়ার সওয়াব লেখা হবে।” [হাদিসটি বর্ণনা করেছেন তিরমিযি (৮০৬)এবং ‘সহীহুত তিরমিযি গ্রন্থে (৬৪৬) আলবানী হাদিসটিকে সহীহ্ আখ্যায়িত করেছেন] এ শ্রেণীর লোকদের মধ্যে অনেকে ১০ রাকাত বিতির আদায় করে বসে থাকে; ফলে কাতার ভঙ্গ হয়। আবার কখনও তারা কথাবার্তা বলে; যার ফলে মুসল্লিদের সালাতে বিঘ্ন হয়। আমরা এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণ করছি না যে তাঁরা ভাল চাচ্ছেন এবং এক্ষেত্রে তাঁরা মুজতাহিদ; কিন্তু সব মুজতাহিদ সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছেন না। আর দ্বিতীয় পক্ষটি প্রথম পক্ষের সম্পূর্ণ বিপরীত। যারা ১১ রাকাতের মধ্যে তারাবীকে সীমাবদ্ধ রাখতে চান এরা তাদের কঠোর বিরোধিতা করেন এবং বলেন যে, তুমি ইজমা‘ থেকে বের হয়ে গেছ। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:“আর যে তার কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মু’মিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে আমি তাকে সেদিকে পরিচালিত করব যেদিকে সে অভিমুখী হয় এবং আমি তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর তা কতই না খারাপ প্রত্যাবর্তন।” [আন-নিসা, ৪:১১৫] তারা বলেন যে, আপনার আগে যারা অতিবাহিত হয়েছেন তাঁরা শুধু ২৩ রাকাত তারাবীই জানতেন। এরপর তারা বিপক্ষবাদীদের তীব্র বিরোধিতা শুরু করেন। এটাও ভুল।[আশশারহুল মুমতি (৩/৭৩-৭৫)] যারা ৮ রাকাতের বেশি তারাবীর নামায পড়া নাজায়েয মনে করেন তারা যে দলীল দেন সেটা হলো আবু সালামাহ্ ইবনে আব্দুর রহমান এর হাদিস যাতে তিনি আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) কে প্রশ্ন করেছিলেন :“রমজানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সালাত কেমন ছিল?” তিনি বললেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানে বা রমজানের বাইরে ১১ রাকাতের বেশি আদায় করতেন না। তিনি ৪ রাকাত সালাত আদায় করতেন- এর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন না (অর্থাৎ তা এতই সুন্দর ও দীর্ঘ হত)। এরপর তিনি আরো ৪ রাকাত সালাত আদায় করতেন-এর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন না (অর্থাৎ তা এতই সুন্দর ও দীর্ঘ হত)। এরপর তিনি ৩ রাকাত সালাত আদায় করতেন। আমি বলতাম:“ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কি বিতির পড়ার আগে ঘুমিয়ে যাবেন?” তিনি বলতেন: “হে আয়েশা! আমার চোখ দুটি ঘুমালেও অন্তর ঘুমায় না।” তারা বলেন: এই হাদিসটি নির্দেশ করছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানে ও রমজানের বাইরে রাতের বেলা নিয়মিত এভাবেই সালাত আদায় করতেন। আলেমগণ এ হাদিস দিয়ে দলীলের বিপক্ষে বলেন যে, এই হাদিসটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল সাব্যস্ত করছে। কিন্তু কোন আমল দ্বারা তো ওয়াজিব সাব্যস্ত করা যায় না। আর রাতের সালাত (এর মধ্যে তারাবীর নামাযও শামিল) যে কোন সংখ্যার মধ্যে সুনির্দিষ্ট নয় এ ব্যাপারে বর্ণিত স্পষ্ট দলীলগুলোর মধ্যে একটি হলো ইবনে উমর (রাঃ) এর হাদিস- “এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাতের সালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন:“রাতের সালাত দুই রাকাত, দুই রাকাত। আপনাদের মধ্যে কেউ যদি ফজরের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা করেন তবে তিনি যেন আরো এক রাকাত নামায পড়ে নেন। যাতে করে এ রাকাতটি পূর্বে আদায়কৃত সংখ্যাকে বিতির (বেজোড়) করে দেয়।”[হাদিসটি বর্ণনা করেছেন,ইমাম বুখারী (৯৪৬)ও ইমাম মুসলিম (৭৪৯)] বিভিন্ন গ্রহণযোগ্য ফিক্বহী মাজহাবের আলেমগণের মতামতের দিকে দৃষ্টি দিলে পরিষ্কার হয় যে, এ বিষয়ে প্রশস্ততা আছে। ১১ রাকাতের অধিক রাকাত তারাবী পড়তে দোষের কিছু নেই। হানাফী মাজহাবের আলেম ইমাম আস্সারখাসী বলেন: “আমাদের মতে বিতির ছাড়া তারাবী ২০ রাকাত ।”[আল্মাবসুত (২/১৪৫)] ইবনে ক্বুদামাহ বলেন: “আবু-আবদুল্লাহ অর্থাৎ ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) এর কাছে পছন্দনীয় মত হলো তারাবী ২০ রাকাত। এই মতে আরো রয়েছেন ইমাম ছাওরী, ইমাম আবু-হানীফা ও ইমাম শাফেয়ী। আর ইমাম মালেক বলেছেন: “তারবীহ ৩৬ রাকাত।”[আলমুগনী (১/৪৫৭)] ইমাম নববী বলেছেন: “আলেমগণের ইজমা অনুযায়ী তারাবীর সালাত পড়া সুন্নত। আর আমাদের মাজহাব হচ্ছে- তারাবীর নামায ১০ সালামে ২০ রাকাত। একাকী পড়াও জায়েয, জামাতের সাথে পড়াও জায়েয।”[আলমাজমূ (৪/৩১)] এই হচ্ছে তারাবী নামাযের রাকাতের সংখ্যার ব্যাপারে চার মাজহাবের অভিমত। তাঁদের সবাই ১১ রাকাতের বেশী পড়ার ব্যাপারে বলেছেন। সম্ভবত যে কারণে তাঁরা ১১ রাকাতের বেশি পড়ার কথা বলেছেন সেটা হলো: ১.তাঁরা দেখেছেন যে,আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)এর হাদিস নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নির্ধারণ করে না। ২.পূর্ববর্তী সাহাবী ও তাবেয়ীগণের অনেকের কাছ থেকে ১১ রাকাতের বেশি তারাবী পড়ার বর্ণনা পাওয়া যায়। [আল-মুগনী (২/৬০৪)ও আল-মাজমূ (৪/৩২)] ৩.নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ১১ রাকাত সালাত আদায় করতেন তা এত দীর্ঘ করতেন যে এতে পুরো রাতই লেগে যেত। এমনও ঘটেছে এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে তারাবীর সালাত আদায় করতে করতে ফজর হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ আগে শেষ করেছিলেন। এমনকি সাহাবীগণ সেহেরী খেতে না-পারার আশঙ্কা করেছিলেন। সাহাবীগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে সালাত আদায় করতে পছন্দ করতেন এবং এটা তাঁদের কাছে দীর্ঘ মনে হত না। কিন্তু আলেমগণ খেয়াল করলেন ইমাম যদি এভাবে দীর্ঘক্ষণ ধরে সালাত আদায় করেন তবে মুসল্লিদের জন্য তা কষ্টকর হবে। যা তাদেরকে তারাবীর নামায থেকে বিমুখ করতে পারে। তাই তাঁরা তেলাওয়াত সংক্ষিপ্ত করে রাকাত সংখ্যা বাড়ানোর পক্ষে মত দিলেন। সার কথা হলো- যিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত পদ্ধতিতে ১১ রাকাত সালাত পড়েন সেটা ভাল এবং এতে সুন্নাহ পালন হয়। আর যিনি তেলাওয়াত সংক্ষিপ্ত করে রাকাতের সংখ্যা বাড়িয়ে পড়েন সেটাও ভাল। যিনি এই দুইটির কোন একটি করেন তাঁকে নিন্দা করার কিছু নেই। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেছেন: “যিনি ইমাম আবু হানীফা,শাফেয়ী ও আহমাদের মাজহাব অনুসারে ২০ রাকাত তারাবী সালাত আদায় করল অথবা ইমাম মালেকের মাজহাব অনুসারে ৩৬ রাকাত তারাবী আদায় করল অথবা ১৩ বা ১১ রাকাত তারাবী আদায় করল প্রত্যেকেই ভাল আমল করল। এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকার কারণে ইমাম আহমাদ এ মতই পোষণ করতেন। তাই তেলাওয়াত দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত করার অনুপাত অনুযায়ী রাকাত সংখ্যা বেশি বা কম হবে।”[আল-ইখতিয়ারাত, পৃষ্ঠা- ৬৪] আস-সুয়ুতী বলেছেন: “রমজানে ক্বিয়াম তথা রাতের নামায আদায় করার আদেশ দিয়ে ও এ ব্যাপারে উৎসাহিত করে অনেক সহীহ ও হাসান হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এক্ষেত্রে কোন সংখ্যাকে সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ২০ রাকাত তারাবী পড়েছেন বলে সাব্যস্ত হয়নি। বরং তিনি রাতে সালাত আদায় করেছেন। কিন্তু কত রাকাত আদায় করেছেন এই সংখ্যা উল্লেখিত হয়নি। এরপর ৪র্থ রাতে দেরি করলেন এই আশঙ্কায় যে তারাবীর সালাত তাঁদের উপর ফরয করে দেয়া হতে পারে, পরে তাঁর উম্মত তা পালন করতে অসমর্থ হবেন।” ইবনে হাজার হাইসামী বলেছেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে তারাবীর সালাত ২০ রাকাত হওয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায়নি। আর এই ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে- “তিনি ২০ রাকাত সালাত আদায় করতেন; তা অত্যন্ত জয়ীফ (দুর্বল)।”[আল্মাওসূ‘আহ আল-ফিক্বহিয়্যাহ (২৭/১৪২-১৪৫)] অতএব প্রশ্নকারী ভাই, আপনি তারাবীর সালাত ২০ রাকাত হওয়ার ব্যাপারে অবাক হবেন না। কারণ এর আগে ইমামগণ প্রজন্মের পর প্রজন্ম তা পালন করেছেন। আর তাঁদের সবার মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ