শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
shohanrand1

Call

প্রথমত: পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেন: وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ يَمْسَسْكَ بِخَيْرٍ فَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ﴿الأنعام১৭﴾ অর্থাৎ ((আর যদি আল্লাহ তোমাকে কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা অপসারণকারী আর কেউ নেই, পক্ষান্তরে যদি তোমার কল্যাণ করেন, তবে তিনিই তো সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান))। (সুরা আন'আম ১৭ আয়াত)। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আরও বলেন: وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهِ يُصِيبُ بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ (يونس) ﴿১০৭﴾ অর্থাৎ (( এবং আল্লাহ তোমাকে ক্লেশ দিলে, তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই, এবং আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তার অনুগ্রহ রদ করারও কেউ নেই। তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তিনি মঙ্গল দান করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু))। (সুরা ইউনুস ১০৭ আয়াত) অন্যত্র আল্লাহ বারী তাআলা বলেন: وَمَا بِكُمْ مِنْ نِعْمَةٍ فَمِنَ اللَّهِ ثُمَّ إِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَإِلَيْهِ تَجْأَرُونَ ﴿৫৩﴾ ثُمَّ إِذَا كَشَفَ الضُّرَّ عَنْكُمْ إِذَا فَرِيقٌ مِنْكُمْ بِرَبِّهِمْ يُشْرِكُونَ ﴿النحل৫৪﴾ অর্থাৎ (( তোমরা যে সমস্ত অনুগ্রহ ভোগ কর, তা তো আল্লাহরই নিকট হতে; আবার যখন দুঃখ-দৈন্য তোমাদেরকে স্পর্শ করে, তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুল ভাবে আহ্বান কর। আর যখন আল্লাহ তোমাদের দুঃখ- দৈন্য দূরীভূত করেন, তখন তোমাদের এক দল তাদের প্রতিপালকের সাথে শরিক করে))। (সুরা নাহ্‌ল ৫৩ ও ৫৪ আয়াত)। উপরোল্লিখিত আয়াত সমূহ স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, দুঃখ-কষ্ট দুর করার মালিক একমাত্র আল্লাহ। আর বান্দা একমাত্র তাঁর কাছেই ভাল-মন্দের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করবে। আর তিনিই একমাত্র শক্তিধর, যিনি কোন মাধ্যমে বা বিনা মাধ্যমে মঙ্গল, অমঙ্গল সাধনে সক্ষম। মাধ্যম আবার দুই প্রকার। শরীয়তী মাধ্যম ও প্রকৃতিগত মাধ্যম। শরীয়তী মাধ্যম শরীয়তী মাধ্যম হলো, যা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সরাসরি কুরআনের আয়াতে বর্ণনা করেছেন এবং হাদীছ শরীফে তার বর্ণনা রয়েছে। যেমন: দুআ এবং শরীয়ত সম্মত ঝাড় ফুক। শরীয়তী মাধ্যম সমূহ আল্লাহর অনুগ্রহে এবং তার ইচ্ছায় বান্দার মঙ্গল সাধন করে বা অমঙ্গল দূরীভূত করে। সুতরাং, এ সমস্ত মাধ্যম ব্যবহারকারী প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর কাছেই আশ্রয় গ্রহণ করে। কারণ, তিনিই এগুলি ব্যবহার করার উপদেশ দিয়েছেন এবং বান্দাদেরকে বলে দিয়েছেন যে, এগুলিই হচ্ছে মাধ্যম। তাই ভরসা রাখতে হবে শুধু আল্লাহর উপর, মাধ্যমের উপর নয়। কেননা, তিনিই এ সমস্ত মাধ্যম সমূহ তৈরি করেছেন। এগুলি দ্বারা মঙ্গল-অমঙ্গল দান করার ক্ষমতা তাঁরই হাতে। অতএব, শুরু, শেষ তথা সর্বাবস্থায় তাওয়াক্কুল থাকতে হবে তাঁরই উপর। আর প্রাকৃতিক মাধ্যম হচ্ছে বস্তু এবং তার প্রভাবের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক, যা খুবই স্পষ্ট, এমনকি মানুষ সেটা বাস্তবে অনুভাব বা উপলব্ধি করতে পারে। যেমন: পানি পিপাসা দূর করার মাধ্যম। শীতবস্ত্র শীত নিবারণের মাধ্যম। তদ্রুপ বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি করা ঔষধ রোগ জীবাণু ধ্বংস করে দেয়। এ সবই হচ্ছে প্রাকৃতিক মাধ্যম। ইসলামী শরীয়ত এগুলি ব্যবহার করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছে। কারণ, এগুলি ব্যবহার করার অর্থই হচ্ছে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা, যিনি এ সমস্ত জিনিসে নির্দিষ্ট গুণাবলি দান করেছেন, এবং তিনি ইচ্ছা করলে যে কোন সময় এসব গুণ বাতিল করে দিতে পারেন, যেমন বাতিল করেছিলেন ইব্রাহিমের আ. জন্য প্রজ্বলিত আগুনের দাহন শক্তি। কিন্তু তাবীজাবলীর মধ্যে আদৌ কোন ফলদায়ক প্রভাব নেই এবং তা কোন অমঙ্গল দূর করতে পারে না। এতে জড় বস্তুর কোন প্রভাব নেই। তাছাড়া, মহান আল্লাহ এগুলিকে কোন শরয়ী' মাধ্যম হিসাবে নির্ধারণ করেনি। এবং মানুষ স্বাভাবিক ভাবে এগুলির কোন প্রভাব প্রতিক্রিয়াও অনুভব করে না, দেখতেও পায় না। এতেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এগুলির উপর ভরসা করা, মুশরিকদের মৃত ব্যক্তি এবং মূর্তির উপর ভরসা করার সমতুল্য, যারা না শুনে, না দেখে, না পারে কোন উপকার করতে, আর না পারে কোন ক্ষতি সাধন করতে। কিন্তু তারা মনে করে, এগুলি আল্লাহর কাছ থেকে তাদের জন্য উপকার বয়ে নিয়ে আসবে, অথবা অমঙ্গল প্রতিহত করবে। তারা আরো ধারণা পোষণ করে যে, এগুলির মধ্যে নির্ধারিত বরকত রয়েছে, পূজারিদের মধ্যে ঐ বরকত স্থানান্তরিত হয়ে তাদের ধন সম্পদ ও রিয্‌কের উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং সেগুলিকে বরকতময় করে তোলে। তাবীজসমূহ হারাম হওয়ার দলীলের মধ্যে নিম্ন বর্ণিত আয়াত সমূহ অন্যতম। আল্লাহ রাব্বুল ইযযত বলেন: وَعَلَى اللَّهِ فَتَوَكَّلُوا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ﴿২৩المائدة﴾ অর্থাৎ ((আর যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক, তাহলে আল্লাহর উপরই ভরসা কর))। (সূরা মায়িদা ২৩ আয়াত)। শায়খ সুলাইমান বিন আব্দুল্লাহ্‌ বিন মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহ্‌হাব বলেন- ইবনুল কায়্যিম রহ: বলেছেন, উক্ত আয়াতে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করাকে ঈমানের শর্ত হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। অতএব, বুঝা যাচ্ছে যে, তাঁর উপর তাওয়াক্কুল না থাকলে ঈমানই থাকবে না। অন্য আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মূসার আ. জবানীতে বলেন: يَا قَوْمِ إِنْ كُنْتُمْ آَمَنْتُمْ بِاللَّهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوا إِنْ كُنْتُمْ مُسْلِمِينَ ﴿يونس৮৪﴾ অর্থাৎ ((হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা আল্লাহ্‌কে বিশ্বাস করে থাক, যদি তোমরা আত্ম সমর্পণকারী হও, তাহলে তোমরা তাঁরই উপর নির্ভর কর।)) (সুরা য়ূনুস ৮৪ আয়াত) এখানে বলা হয়েছে, তাওয়াক্কুল হলো ইসলামে শুদ্ধ হওয়ার দলীল কিংবা প্রমাণ। অন্যত্র আল্লাহ ওয়া জাল্লা শানুহু বলেন: وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ ﴿إبراهيم১১﴾ অর্থাৎ ((আর মুমিনদের উচিত আল্লাহর উপরই নির্ভর করা)) (সুরা ইব্‌রাহীম, ১১ আয়াত)। এখানে মুমিনদের অন্যান্য গুণ বাচক নাম উল্লেখ না করে এজন্যই মুমিন উল্লেখ করা হয়েছে। ঈমানের দাবিদার হওয়ার জন্য তাওয়াক্কুল থাকা শর্ত এবং তাওয়াক্কুলের শক্তি ও দুর্বলতা, ঈমানের শক্তি ও দুর্বলতার উপর নির্ভর করে। বান্দার ঈমান যতই মজবুত হবে, তার তাওয়াক্কুলও ততই শক্তিশালী হবে। আর যখন ঈমান দুর্বল হয়ে যাবে, তাওয়াক্কুলও তখন দুর্বল হয়ে যাবে। উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহর পবিত্র ক্কুর'আনের কোন কোন স্থানে তাওয়াক্কুল ও ইবাদতকে একত্রে উল্লেখ করেছেন, আবার কোথাও তাওয়াক্কুল ও ঈমানকে একত্রে অথবা তাওয়াক্কুল ও তাক্কওয়াকে একত্রে উল্লেখ করেছেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তাওয়াক্কুল ও ইসলাম একই সাথে কিংবা তাওয়াক্কুল ও হেদায়েত একত্রে বর্ণনা করেছেন। অতএব স্পষ্ট হয়ে গেল যে, ঈমান ও ইহ্‌সানের সর্ব স্তরে এবং ইসলামী সকল কার্যাবলীর মূল হচ্ছে তাওয়াক্কুল। শরীরের সাথে যেমন মাথার সম্পর্ক, সকল ইবাদতের সাথেও তদ্রুপ তাওক্কুলের সম্পর্ক। শরীর যেমন মাথা ছাড়া দাঁড়াতে পারে না, তেমনি ঈমানী কার্যাবলীও তাওয়াক্কুল ছাড়া গ্রহণযোগ্য হতে পরে না। শায়খ সুলায়মান বিন আব্দুল্লাহ্‌ বিন মোহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহ্‌হাব বলেন- উল্লেখিত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা ইবাদত এবং ইহা ফরয। এ জন্যই আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারে উপর তাওয়াক্কুল করা শিরক। শাইখুল ইসলাম বলেন, মানুষের উপর ভরসা ও তাওয়াক্কুল করা শিরক। আল্লাহ ওয়া জাল্লা শানুহু বলেন: وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَاءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ أَوْ تَهْوِي بِهِ الرِّيحُ فِي مَكَانٍ سَحِيقٍ﴿৩১الحج﴾ অর্থাৎ ((এবং যে কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে যেন আকাশ থেকে পড়ল, অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল, কিংবা বায়ু তাকে উড়িয়ে নিয়ে এ দুরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল))। (সুরা হাজ্জ, ৩১ আয়াত)। শায়খ সুলায়মান আরো বলেছেন- গাইরুল্লাহ্‌র উপর তাওয়াক্কুল দুই প্রকার। এক: এমন সব বিষয়ে গাইরুল্লাহ্‌র উপর তাওয়াক্কুল করা, যা বাস্তবায়ন করতে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সক্ষম নয়। উদাহরণ স্বরূপ, ঐ সমস্ত লোকদের কথা বলা যেতে পারে, যারা মৃত্যু ব্যক্তি ও শয়তানের (মূর্তি) উপর তাওয়াক্কুল করে এবং তাদের কাছে হিফাযত, রিয্‌ক ও শাফায়াতের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করে। এটা বড় শিরক। কারণ, ঐ সমস্ত জিনিসের উপর আল্লাহ ছাড়া আর কারো ক্ষমতা নেই। দুই: স্বভাবগত স্পষ্ট জিনিসের উপর তাওক্কুল। যেমন, কেউ রাজা-বাদশাহ্‌ বা আমীরের উপর এমন বিষয়ে তাওয়াক্কুল করল যা আল্লাহপাক তাদের ক্ষমতার আওতাধীন করে রেখেছেন। যথা: খাদ্য প্রদান বা কারো ক্ষতি থেকে বাঁচানো ইত্যাদি ইহা শিরকে খফী (অপ্রকাশ্য শিরক) বা ছোট শিরক। তবে অন্যের উপর কোন ব্যাপারে নির্ভর করা জায়েয, যদি ঐ ব্যক্তি ঐ কাজ করার যোগ্যতা বা ক্ষমতা রাখে। কিন্তু তার উপর তাওয়াক্কুল করা জায়েয হবে না, যদিও তাকে ঐ কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বরং তাওয়াক্কুল করবে একমাত্র আল্লাহর উপর, যাতে তিনি কাজটি সহজ করে দেন। শাইখুল ইসলামও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, সম্পূর্ণরূপে তাবীজাবলীর উপর ভরসা করা নিঃসন্দেহে প্রথম প্রকারের শিরকের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, মৃত্যু ব্যক্তি বা মূর্তি ইত্যাদির উপর ভরসা করার মতো, যেগুলির কোন ক্ষমতা নেই এবং প্রকাশ্য স্বভাবগত কোন মাধ্যমও তাতে নেই। এ বিষয়ে শেষের দিকে আরো স্পষ্ট আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ্‌। দ্বিতীয়ত: হাদীসের আলোকে তাবীজাবলী হারাম হওয়ার স্বপক্ষে বহু সহীহ হাদীস আছে, তন্মধ্যে: أن النبي صلي الله عليه وسلم رأي رجلا في يده حلقة من صفر فقال ما هذه قال من الواهنة قال انزعها فانها لا تزيدك الا وهنا فانك لو مت وهي عليك ما أفلحت أبدا (أحمد ابن ماجة و حاكم) ১। অর্থাৎ ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, একদা নবী করীম সা. এক ব্যক্তির হাতে তামার চুড়ি দেখতে পেয়ে বললেন, এটা কি? সে বলল: এটা ওয়াহেনার অংশ। তিনি বললেন: এটা খুলে ফেল, কারণ এটা তোমার দুর্বলতা বাড়ানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারবে না। যদি এ তাবীজ বাঁধা অবস্থায় তোমার মৃত্যু হয়, তাহলে কখনও সফলকাম হতে পারবে না। (সহীহ, মুসনাদে আহমদ, হাকেম, ইবনে মাজাহ্‌)। من تعلق تميمة فلا أتم الله له ومن تعلق ودعة فلا ودع الله له. (أحمد وحاكم) ২। উকবা বিন আমের রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌কে সা. বলতে শুনেছি: যে ব্যক্তি তাবীজ ব্যবহার করবে, আল্লাহ তাকে পূর্ণতা দেবেন না, আর যে কড়ি ব্যবহার করবে, আল্লাহ তাকে মঙ্গল দান করবেন না। (আহমদ, হাকেম)। أن رسول الله صلي الله عليه وسلم أقبل إليه رهط فبايع تسعة وأمسك عن واحد فقالوا يا رسول الله بايعت تسعة وتركت هذا قال: إن عليه تميمة فادخل يده فقطعها فبايعه وقال من علق تميمة فقد أشرك. (أحمد وحاكم) ৩। উকবা বিন আমের আল-জোহানী রা. থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ্‌র সা. খেদমতে একদল লোক উপস্থিত হল। অতঃপর দলটির নয়জনকে বায়াত করালেন এবং একজনকে করালেন না। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল সা.! নয়জন কে বায়াত করালেন, আর একজনকে বাদ রাখলেন? রাসূলুল্লাহ্‌ সা. বললেন: তার সাথে একটি তাবীজ রয়েছে। তখন তার হাত ভিতরে ঢুকালেন এবং সেটা ছিড়ে ফেললেন। অতঃপর তাকেও বায়াত করালেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি তাবীজ ব্যবহার করল সে শিরক করল। (সহীহ মুসনাদে আহমদ, হাকেম)। ৪। একদা হুজায়ফা রা: এক রোগীকে দেখতে এসে তার বাহুতে একটি তাগা দেখতে পেলেন, অতঃপর তিনি তা কেটে ফেললেন বা ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন- যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে, তাদের অনেকেই শিরক করছে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)। এ থেকে প্রমাণিত হয়, হুজায়ফার রা. মতে তাবীজ ব্যবহার করা শিরক এবং সর্বজন বিদিত এই যে, এটা তাঁর মনগড়া কথা নয় (অর্থাৎ নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে রাসূলের সা. নির্দেশনা পেয়েই তিনি এ কথা উল্লেখ করেছেন)। ৫। 'উব্বাদ বিন তামীম রা. থেকে বর্ণিত, আবু বশীর আনছারী রা. বলেন যে, তিনি এক সফরে রাসূলুল্লাহ্‌র সা. সঙ্গী ছিলেন। আব্দুল্লাহ বিন আবি বকর বলেন, আমার বিশ্বাস, তিনি (আবু বশীর) বলেছেন যে, মানুষ তাদের বাসস্থানে অবস্থান করছিল। এমতাবস্থায়, রাসূল সা. এক লোককে এই বলে পাঠালেন যে, একটি উটের গলায়ও ধনুকের ছিলা অথবা (তাবীজ জাতীয়) বেল্ট রাখবে না, সব কেটে ফেলবে। ইবনে হাজার রা. ইবনে জাওযীর রা. উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন: ধনুকের ছিলা দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে, এ ব্যাপারে তিনটি রায় রয়েছে। তার মধ্যে একটি হল- তাদের ধারণা অনুযায়ী উটের গলায় ধনুকের ছিলা ঝুলিয়ে দিত, যাতে বদ নজর না লাগে। সুতরাং, উহা কেটে ফেলার উদ্দেশ্যেই এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যাতে তারা বুঝতে পারে যে, ধনুকের ছিলা আল্লাহর নির্দেশের বিপরীতে কিছুই করতে পারে না। আর এটা ইমাম মালেকের রা. বর্ণনা। ইবনে হাজর রা. বলেন, মোয়াত্তা মালেকের মধ্যে উক্ত হাদীসের বর্ণনার পরেই ইমাম মালেকের রা. কথাটি এসেছে। মুসলিম রা. ও আবু দাউদ রা. ইমাম দ্বয়ের কিতাব সমূহে উক্ত হাদীসের পর উল্লেখ করা হয়েছে: মালেক রা. বলেছেন: أري أن ذلك من أجل العين অর্থাৎ (আমার মতে, বদ নজর বলতে কোন কিছু নেই বলেই এ আদেশ দেয়া হয়েছে)। ৬। আবু ওয়াহাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন- রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: وارتبطوا الخيل وامسحوا بنواصيها وأكفالها وقلدوها ولا تقلدوها الأوتار. (النسائ ) অর্থাৎ ঘোড়াকে বেঁধে রাখ, তার মাথায় ও ঘাড়ে হাত বুলিয়ে দাও এবং লাগাম পরিয়ে দাও। তবে ধনুকের ছিলা ঝুলিয়ে দিয়ো না। (সুনানে নাসাঈ)। ৭। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের রা. স্ত্রী জায়নব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আব্দুল্লাহ্‌ বাহির থেকে এসে দরজার পার্শ্বে দাঁড়িয়ে কাশি দিতেন এবং থুতু ফেলতেন, যাতে তিনি এসে আমাদেরকে তার অপছন্দ অবস্থায় না দেখেন। তিনি বললেন, একদিন আব্দুল্লাহ আসলেন এবং কাশি দিলেন। তখন আমার কাছে এক বৃদ্ধা ছিল। সে আমাকে চর্ম রোগের জন্য ঝাড়-ফুক দিচ্ছিল। এ অবস্থায় তাকে আমি খাটের নীচে লুকিয়ে রাখলাম। অতঃপর তিনি ঘরে প্রবেশ করে আমার কাছে এসে বসলেন এবং আমার গলায় তাগা দেখে জিজ্ঞেস করলেন- এই তাগাটা কি? আমি বললাম, এই সুতার মধ্যে আমার জন্য ঝাড়-ফুঁক দেয়া হয়েছে। আমি একথা বলার পর আব্দুল্লাহ তাগাটা কেটে ফেললেন এবং বললেন- আব্দুল্লাহ্‌র পরিবার বর্গ শিরক থেকে মুক্ত। আমি রাসূলুল্লাহ সা. বলতে শূনেছি: إن الرقي والتمائم والتولة شرك (أحمد ابن ماجة وحاكم) অর্থাৎ ঝাড়-ফুঁক, তাবীজাবলী এবং ভালোবাসা সৃষ্টির তাবীজ ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে শিরক। (আহমদ, হাকেম, ইবনে মাজাহ)। ৮। ঈসা বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- আব্দুল্লাহ্‌ বিন 'ওকাইম রা. অসুস্থ ছিলেন, আমরা তাঁকে দেখতে গেলাম। তাঁকে বলা হল, আপনি কোন তাবীজ কবজ নিলেই তো ভাল হতেন। তিনি বললেন: আমি তাবীজ ব্যবহার করব অথচ এ সম্পর্কে রাসূল সা. বলেছেন: أتعلق شيئا وقد قال رسول الله صلي الله عليه وسلم من تعلق شيئا وكل إليه (أحمد ابن ماجة وحاكم) অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন কিছু রক্ষাকবচ ধারণ করবে, তাকে ঐ জিনিসের কাছে সোপর্দ করা হবে। (আহমদ, হাকেম, ইবনে মাজাহ) ৯। রোআইফা বিন ছাবেত রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: عن روفع بن ثابت أن رسول الله صل الله عليه وسلم قال يا رويفع لعل الحياة ستطول بك بعدي فأخبر الناس أنه من عقد لحيته أوتقلد وترا أو استنجي برجيع دابة أوعظم فأن محمدا برئ منه (أحمد نسائي) অর্থাৎ হে রোআইফা! হয়তো তুমি আমার পরেও অনেক দিন বেঁচে থাকবে। অতএব, লোকদেরকে এ কথা বলে দেবে যে, যে ব্যক্তি দাড়িতে গিঁট দিল অথবা খেজুরের ডাল লটকাল কিংবা চতুষ্পদ জন্তুর মল বা হাড় দিয়ে ইস্‌তিঞ্জা করল, তার সাথে মুহাম্মদের সা. কোন সম্পর্ক নেই। (আহমাদ, নাসায়ী) এ সমস্ত হাদীছ স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, তাবীজ ব্যবহার করা হারাম এবং শিরক। কারণ, রাসূলের সা. হাদীছ ও ছাহাবায়ে কিরামদের 'আমল দ্বারা তাই সাব্যস্ত হয়। আর তাঁরা রাসূলের সা. হেদায়েত, তাওহীদ পরিপন্থী বিষয়সমূহ এবং যে সমস্ত কাজ তাওহীদকে ত্রুটিপূর্ণ করে দেয়, সেগুলি সম্পর্কে সর্বাধিক অবগত ছিলেন। আয়েশা রা. বর্ণনা করেছেন: তিনি বলেছেন, বালা মুসিবত আসার পূর্বে যা লটকানো হয় তাই তাবীজ। আর বালা-মুছিবতের পরে যা লটকানো হয় তা তাবীযের অন্তর্ভুক্ত নয়। উল্লেখ্য, এখানে তাবীজ ব্যবহার দ্বারা আয়েশা রা. কুরআনের আয়াত থেকে ব্যবহৃত তাবীজ বুঝাতে চেয়েছেন (ক্কুরআ'নের আয়াত দ্বারা তাবিজ) কতিপয় ইমাম আল্লাহর কালামের তাবীজ ব্যবহার করা জায়েয বলেছেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সামনে আসছ্‌ে আয়েশা রা. মুসিবত আসার পর কুরআনের আয়াতের তাবীজ ব্যবহার করা জায়েয বলেছেন, কিন্তু মুছিবতের পূর্বেই ইহাও নাজায়েয। কোন কোন আলেমের মতে, অসুস্থ হওয়ার পূর্বে ঝাড়-ফুঁক এবং লোহার ছেঁকা দেয়ার মত চিকিৎসা গ্রহণ করা সম্পূর্ণরূপে তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী। এ অর্থে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, ৭০ হাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে, তারা হলো ঐ সমস্ত লোক যারা কোন কুসংস্কারে বিশ্বাস করে না, লোহা পুড়ে ছেক দেয় না, ঝাড়-ফুঁক গ্রহণ করে না, বরং তাদের ররে উপরই তাওয়াক্কুল করে। ইবনে হাজার র. দাউদী এবং অন্য একটি সম্প্রদায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন: হাদীসের অর্থ এই যে, যারা সুস্থ অবস্থায় রোগ হওয়ার ভয় থাকা সত্ত্বেও এসব জিনিস পরিহার করে, আর একথা উপস্থাপন করলাম ইবনে কুতায়বার প্রদত্ত বর্ণনা থেকে। ইবনে আব্দুল বারও এ মত পোষণ করেন। আয়েশা রা. التمائم দ্বারা ব্যাপকভাবে সকল তাবীজ বুঝাননি (বরং শুধু কুরআনের আয়াতের তাবীজ বুঝানোই তাঁর উদ্দেশ্য) কারণ, অন্যান্য তাবীজাবলী যে রোগাক্রান্ত হওয়ার পূর্বে ও পরে সর্বাবস্থায় শিরকের অন্তর্ভুক্ত, তা আয়েশার রা. কাছে অজানা ছিল না। (ফাতহুল বারী)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ