শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

যকৃৎ (ইংরেজি: Liver) মেরুদণ্ডী ও অন্যান্য কিছু প্রাণীদেহে অবস্থিত একটি আভ্যন্তরিক অঙ্গ। এটি বক্ষপিঞ্জরে মধ্যচ্ছদার নিচের অংশে অবস্থিত। একে চলতি বাংলায় কলিজা বলে সচরাচর উল্লেখ করা হয়। যকৃৎ দেহের বৃহত্তম গ্রন্থি। এর ওজন দেহের মোট ওজনের (৩-৫%)। এটি ২টি খণ্ডে বিভক্ত: ডান এবং বাম। প্রাণীদেহে বিপাকে ও অন্যান্য কিছু শারীরবৃত্তীয় কাজে যকৃত প্রধান ভূমিকা পালন করে। গ্লাইকোজেনের সঞ্চয়, প্লাজমা প্রোটিন সংশ্লেষণ, ঔষুধ বা অন্যান্য রাসায়নিক নির্বিষকরণে এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।


বিস্তারিত জানতে এখারে ক্লিক করুন

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Jamiar

Call

আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ।

লিভার শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্ববৃহত অঙ্গ। শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রয়োজন সুস্থ লিভার। লিভারকে বলা হয় শরীরের পাওয়ার হাউজ যা জীবন ধারনের জন্য অপরিহার্য। তাই লিভারের অসুস্থতার ফলাফল ক্ষেত্র বিশেষে হতে পারে ব্যাপক ও ভয়াবহ।


লিভার কোথায় আছে এবং কী কাজ করে

লিভার মানব শরীরের সবচেয়ে বড় সলিড অর্গান। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে লিভারের ওজন ১ থেকে ১.৫০ কেজি। লিভারকে আল্লাহপাক পাওয়ার স্টেশন হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। যেমন ধরুন বিদ্যুৎ এর বাতি জ্বলতে হলে পাওয়ার সাপ্লাই লাগে, তেমনি আমাদের সব ক’টি যন্ত্রপাতি চলাচলের জন্য শক্তির উত্স হলো লিভার।


আমাদের মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনি ইত্যাদি সব ক’টি যন্ত্রের সুষ্ঠু কাজের ক্ষমতা নির্ভর করে লিভার থেকে নির্গত শক্তির ওপর। আমরা যা খাই, যেমন:শর্করা, আমিষ, চর্বিজাতীয় পদার্থ, খনিজদ্রব্য ইত্যাদি সব ভেঙ্গে একমাত্র লিভারই প্রক্রিয়াজাত করে। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উপাদানগুলোকে শরীরের জন্য ব্যবহার উপযোগী করে, নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে লিভার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে সরবরাহ করে। সেজন্য আল্লাহপাক লিভারকে একটি বিরাট মহাবিস্ময়কর কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি হিসেবে সৃষ্টি করে পেটের মধ্যে স্থাপন করেছেন।


মানুষের রক্তের মধ্যে Coagulation Factors নামে প্রবাহিত অসংখ্য কেমিক্যালস রয়েছে, যা রক্তকে সঞ্চালিত রাখে। সব ক’টি Coagulation Factors শুধু লিভার থেকে তৈরি হয়। রক্তের সঞ্চালন এবং জমাট বাঁধার ক্ষমতা একমাত্র লিভারের কার্যক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল। আমরা যা কিছু খাই, সেই খাবারগুলো পরিপাকতন্ত্রে প্রাথমিক হজমের জন্য পিত্তরস অপরিহার্য। পিত্তরস ছাড়া খাদ্যবস্তু হজম সম্ভব নয়। এই পিত্তরস শুধু লিভার কোষ তৈরি করে।


আপদকালীন ব্যবহারের জন্য ভিটামিন এ, ডি, ই-কে লিভারে জমা থাকে। তাছাড়া প্রয়োজনীয় আয়রন, কপার, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি লিভারে জমা থাকে। মোট কথা, লিভার এতসব কাজ করে থাকে যা বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যায় না এবং এমন সব কাজ করে যা আমরা জানি না।


লিভারের যেসব অসুখ হয়

আমাদের দেশে লিভারের যে রোগগুলো হয়ে থাকে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো ১. ভাইরাল হেপাটাইটিস (যা জন্ডিস নামে পরিচিত) ২. লিভার সিরোসিস ৩. লিভার ক্যান্সার ৪. লিভারের ফোঁড়া ৫. পিত্তথলির বা পিত্তনালীর রোগ ৬. লিভারের জন্মগত ও মেটাবলিক রোগ ইত্যাদি।


লিভারে অসুখের লক্ষণগুলো

উল্লেখযোগ্য, লিভারের অসুখের লক্ষণাদি সহসাই প্রকাশ পায় না, কারণ লিভারের ১১ ভাগের একভাগ অংশ যদি কারও ভালো থাকে, তবে লিভারের অসুখ প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। আল্লাহতায়ালা এত বিশাল পরিমাণ Capacity দিয়ে লিভার তৈরি করেছেন যে, খুব ক্ষতিগ্রস্ত না হলে লিভারের রোগ বোঝা যায় না। লিভারের অসুখ-বিসুখের মধ্যে প্রধানতম রোগ হলো ভাইরাল হেপাটাইটিস যা সাধারণের মাঝে জন্ডিস নামে অধিক পরিচিত। আমাদের দেশে ঘরে ঘরে যে জন্ডিস দেখা যায় বা মহামারি আকারে যে জন্ডিস হয় তা একটি ভাইরাস পরিবার দ্বারা সংঘটিত হয়ে থাকে।


এই ভাইরাস পরিবারকে নামকরণ করা হয়েছে হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই। এই ভাইরাসগুলোকে মূলত দু’ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন: (ক) পানি ও খাদ্যবাহিত ভাইরাস, যথাক্রমে হেপাটাইটিস ‘এ’ ও হেপাটাইটিস ‘ই’ এবং (খ) রক্ত কিংবা দূষিত সিরিঞ্জ সুচের মাধ্যমে বাহিত ভাইরাস, যথা:হেপাটাইটিস বি, সি ও ডি।


দূষিত পানি কিংবা খাদ্যবস্তু গ্রহণের ২ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে হেপাটাইটিস এ এবং ই দ্বারা আক্রান্ত হলে লক্ষণ দেখা যায়। অপরদিকে হেপাটাইটিস বি এবং সি রোগের লক্ষণ দূষিত রক্ত কিংবা সিরিঞ্জের মাধ্যমে রোগ সংক্রমিত হওয়ার ৪ থেকে ৬ মাসের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। রোগের লক্ষণ দিয়ে বোঝার উপায় নেই কোনো ভাইরাস দ্বারা জন্ডিস হয়েছে। জন্ডিসের অন্যতম লক্ষণ হলো:হঠাৎ করে বমিভাব, কিংবা তীব্র বমি হওয়া। খাদ্য গ্রহণে অরুচি, অনীহা কিংবা তীব্র দুর্বলতা, কখনও কখনও জ্বর জ্বর ভাব বা জ্বরের মাধ্যমেও রোগের সূত্রপাত হতে পারে।



লিভার রোগ প্রতিরোধে আপনার করণীয়:

হেপাটাইটিস বি এর টীকা নিন;

ঝুঁকিপূর্ণ আচারণ যেমন-অনিরাপদ যৌনতা, একই সুঁই বা সিরিন্‌জ বহুজনের ব্যবহার পরিহার করুন;

নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন ও ডিজপজেবল সুঁই ব্যবহার করুন। ব্লেড, রেজার, ব্রাশ; খুর বহু জনে ব্যবহার বন্ধ করুন;

শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রন করুন;

শাক সবজি ও ফলমূল বেশি করে খান আর চর্বি যুক্ত খাবার কম খান;

মদ্যপান ও অন্যান্য নেশা জাতীয় দ্রব্য পরিহার করুন;

বিশুদ্ধ পানি ও খাবার গ্রহন করুণ;

ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রনে রাখুন;

পরিস্কার পরিছন্ন থাকুন।আশা করি আপনাকে সাহায্য করতে পেরেছি।

ধন্যবাদ। 

সংগৃহীত।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ