আবহাওয়ার উপাদান হল সেসকল উপাদানয, যাদের পরিবর্তনের ভিত্তিতে কোনো স্থানের বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থার পরিবর্তন সূচিত হয়। আবহাওয়ার এমন উপাদানগুলো হলো:
বায়ুপ্রবাহ
তাপ,
চাপ
বৃষ্টিপাত,
এবং
আর্দ্রতা
এদের বিস্তারিত ---
বায়ুপ্রবাহঃ-বায়ুপ্রবাহ বা বায়ুমণ্ডলীয় সঞ্চালন বলতে বিরাট ক্ষেত্র জুড়ে বায়ুর স্থান পরিবর্তনকে বোঝায়। বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমেই পৃথিবীপৃষ্ঠে উত্তাপের বিতরণ ঘটে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বিবেচনায় সূর্যের তাপ
পৃথিবীতে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে পড়ে, যার ফলে কোনো স্থান যখন সরাসরি উত্তপ্ত হয়, তখন তুলনামূলক শীতল স্থানের দিকে উত্তপ্ত বায়ু প্রবাহিত হয়। বায়ুর ধর্মই হলো বায়ু, অধিক উষ্ণ স্থান থেকে
শীতল স্থানের দিকে প্রবাহিত হয়, আর একারণেই পৃথিবীতে বায়ুপ্রবাহের ঘটনা ঘটে। এই বায়ুপ্রবাহ যখন সীমাবদ্ধ মাত্রায় হয়, তখন দখিনা হাওয়ার মতো সুখকর অনুভূতি বয়ে আনে, আবার যখন তা মাত্রাতিরিক্ত হয়,
তখন তা স্থলভাগে ঘূর্ণিঝড় এবং জলভাগে তৈরি করে জলোচ্ছাস। মূলত উচ্চচাপীয় অঞ্চল থেকে নিমঞ্চাপীয় অঞ্চলে বায়ু প্রবাহিত হয়।
তাপঃ-তাপ একপ্রকার শক্তি যা আমাদের শরীরে ঠান্ডা বা গরমের অনুভূতি তৈরি করে। তাপগতিবিদ্যা অনুসারে, যখন দুটি বস্তুর মধ্যে প্রথমটি থেকে দ্বিতীয়টিতে আরেকটিতে শক্তি স্থানান্তরিত হয়,
তখন প্রথমটি দ্বিতীয়টি অপেক্ষা গরম হয় । আর অন্যভাবে বলা যায়, তাপ হলো পদার্থের অণুগুলোর গতির সাথে সম্পর্কযুক্ত এমন এক প্রকার শক্তি, যা কোনো বস্তু ঠান্ডা না গরম তার অনুভূতি জন্মায়। তাপগতিবিদ্যার তিনটি সূত্র রয়েছে ।
চাপঃ-পদার্থবিজ্ঞানের পরিভাষায় একক ক্ষেত্রফলের উপর প্রযুক্ত বলকে চাপ বলে। একে P দ্বারা প্রকাশ করা হয়।[১]
স্থির-তরল (হাইড্রোস্টাটিক) ব্যবস্থায় কোনো তলের উপর চাপ কেবল তলের সঙ্গে লম্ব ভাবে হয় এবং তলটিকে একই উচ্চতায় রেখে দিক
পরিবর্তন করলে চাপের কোনো পরিবর্তন হয় না (প্যাস্কালের সূত্র)। তাই হাইড্রোস্টাটিক চাপকে স্কেলার বলে ধরা যায়। কিন্তু সচল-তরল (হাইড্রোডাইনামিক) ব্যবস্থায় চাপ
তলের দিকের উপর নির্ভর করতে পারে এবং তরলের মধ্যস্থিত কোনও বিন্দুতে চাপের মান ও দিক
পুরোপুরি নির্দিষ্ট করতে হলে, সাধারণ ভেক্টরের ন্যায় ৩টি নয়, ৯টি বিশ্লেষিত মান নির্দেশ করতে হয়। তাই সচল-তরল (হাইড্রোডাইনামিক) চাপ স্কেলার (শূণ্য র্যাঙ্ক) বা ভেক্টর (প্রথম র্যাঙ্ক) নয়, বরং দ্বিতীয় র্যাঙ্কের টেন্সার।
বৃষ্টিপাতঃ-বৃষ্টি একধরনের তরল, যা আকাশ থেকে মাধ্যাকর্ষণের টানে ভূপৃষ্ঠের দিকে পড়ে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে জলীয়
বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘের সৃষ্টি করে। এই ফোঁটাগুলি যথেষ্ট পরিমাণে ভারি হলে তা পৃথিবীর বুকে ঝরে পড়ে - একেই বলে বৃষ্টি। বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলে বৃষ্টি সুপেয় জলের বড় উৎস
। বিচিত্র জৈবব্যবস্থাকে বাঁচিয়ে রাখতে, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি সচল রাখতে ও কৃষি সেচব্যবস্থা সচল রাখতে বৃষ্টির প্রয়োজন হয়।
যদিও সকল প্রকার বৃষ্টি ভূপৃষ্ঠ অবধি পৌঁছায় না। শুকনো বাতাসের মধ্য দিয়ে পড়ার সময় কিছু বৃষ্টির বিন্দু শুকিয়ে যায়। ভারগা নামে পরিচিত এই বৈশিষ্ট্যটি শুষ্ক মরুভূমি অঞ্চলে দেখা যায়।
আর্দ্রতাঃ--বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণকে বাতাসের আর্দ্রতা দ্বারা পরিমাপ করা হয়। দৈনন্দিন জীবনে আর্দ্রতা বলতে আমরা আপেক্ষিক
আর্দ্রতাকে বোঝাই। আপেক্ষিক আর্দ্রতা হল কোন নির্দিষ্ট জায়গার বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্পের আংশিক চাপ ও ঐ তাপমাত্রায় জলীয় বাষ্পের সম্পৃক্ত বাষ্পচাপ।
নির্দিষ্ট তাপে ও চাপে বাতাসে সর্বোচ্চ কি পরিমাণ জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে তা সুনির্দিষ্ট। আর্দ্রতাকে পরম আর্দ্রতা ও নির্দিষ্ট আর্দ্রতাও বলা হয়। আপেক্ষিক আর্দ্রতা আবহাওয়ার পূর্বাভাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
আর্দ্রতা বেশি হলে গ্রীষ্মকালে বাইরে গেলে আমরা বেশি গরম অনুভব করি, কারণ তা ঘামের মাধ্যমে শরীরের তাপ বের করে দেবার প্রক্রিয়াটির কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। তাপ সূচক ছকে এই প্রভাব হিসাব করা হয়।