শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
  • কাফির (আরবি: ‎كافر - kāfir‎‎) একটি আরবি শব্দ, যা আরবি কুফর ‎(আরবি: ‎‏كفّار - kuffār‎‎) ধাতু থেকে আগত, যার শাব্দিক অর্থ হলো ঢেকে রাখা, লুকিয়ে রাখা এবং এর ব্যবহারিক অর্থ হলো অবাধ্যতা, অস্বীকার করা, অকৃতজ্ঞতা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় কুফর ঈমানের বিপরীত। আর তা হলো আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান না রাখা, চাই তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হোক কিংবা না হোক, বরং তা যদি সন্দেহ ও সংশয় প্রসূতও হয়ে থাকে, কিংবা ঈর্ষা ও অহংকারবশতঃ বা রিসালাতের অনুসরণ থেকে ফিরিয়ে রাখে এমন কোনো প্রবৃত্তির অনুকরণবশতঃ ঈমান থেকে দূরে সরে থাকার কারণেও হয়ে থাকে।
  • কুফরের প্রকারভেদঃ কুফর ২ প্রকার। যথাঃ বড় কুফর ও ছোট কুফর। ইসলামে বড় কুফর হলো যা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থানকে অপরিহার্য করে। আর ছোট কুফর হলো যা শাস্তি পাওয়াকে অপরিহার্য করে, চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থানকে নয়।
  • বড় কুফর আবার ৫ প্রকার। যথাঃ
  1. মিথ্যা প্রতিপন্ন করার সাথে সম্পৃক্ত কুফর : আর তা হলো রাসূলগণের মিথ্যাবাদী হওয়ার বিশ্বাস পোষণ করা, অতএব তারা যা কিছু নিয়ে এসেছেন তাতে যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে মিথ্যা সাব্যস্ত করল, সে কুফরী করলো। কুরআনে বলা হয়েছে, "আর সে ব্যক্তির চেয়ে যালিম আর কে, যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে অথবা তার নিকট সত্য আসার পর তা অস্বীকার করে? জাহান্নামের মধ্যেই কি কাফিরদের আবাস নয়?" (কুরআন 29:68)
  2. অস্বীকার ও অহংকারের মাধ্যমে কুফর : এটা এভাবে হয় যে, রাসূলের সত্যতা এবং তিনি যে আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য নিয়ে এসেছেন সে সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা, কিন্তু অহংকার ও হিংসাবশতঃ তাঁর হুকুম না মানা এবং তাঁর নির্দেশ না শোনা। কুরআনে বলা হয়েছে, "আর যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, ‘তোমরা আদমকে সিজদা কর’। তখন তারা সিজদা করল, ইবলীস ছাড়া। সে অস্বীকার করল এবং অহঙ্কার করল। আর সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হল।" (কুরআন 2:34)
  3. সংশয়-সন্দেহের কুফর : আর তা হলো রাসূলগণের সত্যতা সম্পর্কে ইতস্তত করা এবং দৃঢ় বিশ্বাস না রাখা। একে ধারণা সম্পর্কিত কুফরও বলা হয়। আর ধারণা হলো একীন ও দৃঢ় বিশ্বাসের বিপরীত। কুরআনে বলা হয়েছে, "আর সে তার বাগানে প্রবেশ করল, নিজের প্রতি যুলমরত অবস্থায়। সে বলল, ‘আমি মনে করি না যে, এটি কখনো ধ্বংস হবে’। আর আমি মনে করি না যে, কিয়ামত সংঘটিত হবে। আর আমাকে যদি ফিরিয়ে নেয়া হয় আমার রবের কাছে, তবে নিশ্চয় আমি এর চেয়ে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল পাব’। তদুত্তরে তার সঙ্গী বলল, ‘তুমি কি তাকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর ‘বীর্য’ থেকে, তারপর তোমাকে অবয়ব দিয়েছেন পুরুষের’? ‘কিন্তু তিনিই আল্লাহ, আমার রব। আর আমি আমার রবের সাথে কাউকে শরীক করি না’।" (কুরআন 18:35–38)
  4. বিমুখ থাকার মাধ্যমে কুফর : এদ্বারা উদ্দেশ্য হলো দ্বীন থেকে পরিপূর্ণভাবে বিমুখ থাকা এমনভাবে যে স্বীয় কর্ণ, হৃদয় ও জ্ঞান দ্বারা ঐ আদর্শ থেকে দূরে থাকা যা রাসূল (সাঃ) নিয়ে এসেছেন। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, "আমি আসমানসমূহ, যমীন ও এতদোভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে, তা যথাযথভাবে ও একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সৃষ্টি করেছি। আর যারা কুফরী করে, তাদেরকে যে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে তা থেকে তারা বিমুখ।" (কুরআন 46:3)
  5. নিফাকের মাধ্যমে কুফর : এদ্বারা বিশ্বাসগত নিফাক বুঝানো উদ্দেশ্য, যেমন ঈমানকে প্রকাশ করে গোপনে কুফর লালন করা। কুরআনে বলা হয়েছে, "তা এ জন্য যে, তারা ঈমান এনেছিল তারপর কুফরী করেছিল। ফলে তাদের অন্তরসমূহে মোহর লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই তারা বুঝতে পারছে না।" (কুরআন 63:3)
  • ছোট কুফরঃ কুরআন ও সুন্নার মধ্যে বড় কুফর পর্যন্ত পৌছে না এ রকম যত কুফরের উল্লেখ এসেছে, তার সবই এ প্রকারের অন্তর্গত। এর উদাহরণের মধ্যে রয়েছে :
  • আল্লাহ তাআলার বাণীতে যা এসেছে : "আর আল্লাহ উপমা পেশ করছেন, একটি জনপদ, যা ছিল নিরাপদ ও শান্ত। সবদিক থেকে তার রিয্ক তাতে বিপুলভাবে আসত। অতঃপর সে (জনপদ) আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকার করলো। তখন তারা যা করতো, তার কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষুধা ও ভয়ের পোশাক পরালেন।" (কুরআন 16:112)
  • এবং রাসূলের (সা.) বাণীতে যা এসেছে : "দু’টো স্বভাব মানুষের মাঝে রয়েছে, যা কু্ফর বলে গণ্য : বংশের প্রতি কটাক্ষ করা এবং মৃত ব্যক্তির জন্য উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করা।"
  • রাসূলের (সা.) বাণীতে আরো এসেছে : "আমার পরে তোমরা পরস্পর হত্যাকান্ডে লিপ্ত হয়ে কাফিরে পরিণত হয়ো না।"
  • এটা এবং এর মত আমলগুলো হলো ছোট কুফর। এ ধরনের কুফরে লিপ্ত ব্যক্তি মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয়ে যাবে না। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে, "আর যদি মুমিনদের দু’দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর বাড়াবাড়ি করে, তাহলে যে দলটি বাড়াবাড়ি করবে, তার বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না সে দলটি আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। তারপর যদি দলটি ফিরে আসে তাহলে তাদের মধ্যে ইনসাফের সাথে মীমাংসা কর এবং ন্যায়বিচার কর। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের ভালবাসেন। নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ- মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে।" (কুরআন 49:9–10)
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ