হজরত লোকমান হাকিম (আঃ) ও হজরত খিজির (আঃ) কি ওলী ছিলেন নাকি নবী ছিলেন? খিজির (আঃ) কি এখনো (দুনিয়াতে) বেঁচে আছে? কুরআন হাদীসের আলোকে উত্তর দিবেন।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
HMMOBAROKBD

Call

★হযরত লোকমান (আ.)। তিনি ছিলেন প্রাচীন যুগের একজন পণ্ডিত ও  জ্ঞানী ব্যক্তি(আল্লাহর অলী)। তিনি সারা জীবন মানুষকে মূল্যবান উপদেশ দিয়েছেন। তার সময়ে জ্ঞানগরিমা, বুদ্ধিশুদ্ধি, ভালো কথা ও সৎ কাজে তিনি ছিলেন সবার সেরা। আর এ কারণেই নবী না হবার পরও তার নাম পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহতালা পবিত্র কুরআনে লোকমান হাকিমের কথা উল্লেখ করে বলেন যে , ‘ আমি লোকমানকে হেকমত তথা বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা দিয়েছিলাম।’ হযরত লোকমান ছিলেন হাবশি সম্প্রদায়ের লোক। প্রথম জীবনে তিনি তৎকালীন শাম দেশের অধিবাসী এক ধনী ব্যক্তির অধীনে গোলামির জীবন শুরু করেন। তারপর তিনি গোলামির জীবন থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহতালার অপার অনুগ্রহে অফুরন্ত শিক্ষা-দীক্ষা এবং হেকমত শিক্ষা লাভ করেন।  ★হযরত খিজির (আঃ)-কোন কোন ওলামা বলেন তিনি মানুষ ছিলেন এবং আল্লাহর অলি ছিলেন। আর জমহুর এর অধিকাংশের মতে তিনি আল্লাহর নবী ছিলেন। এবং তিনি এখনও জীবিত আছেন তিনি মৃত্যু বরণ করেন নি, যদিও অন্যান্য নবীগনের উপর কিছুক্ষনের জন্য হলেও মৃত্যু এসেছে। তবে ইসা (আঃ) খিযির (আঃ)এ নবীদের উপর মৃত্যু সংগঠিত হয়নি। সুতরাং হযরত খিযির (আঃ) আল্লাহর নবী ছিলেন এবং এর পক্ষে কোরআন ও হাদীস শরীফের দলীলও রয়েছে। বুখারী শরীফের সহিহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে হযরত খিজির (আঃ) জীবিত এবং তিনি মানুষের সাথে মিলিতও হন, নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেছেন খিজির (আঃ) আল্লাহর হকুমে আবে হায়াত পান করেছেন, সুতরাং তিনি কেয়ামত পযন্ত জীবিত থাকবেন। তিনি মানুষের সাথে মানুষের সুরতে উপস্থিত হয়ে মুলাকাত করে থাকেন। কোন কোন সময় নিজের পরিচয় দিয়ে থাকেন বলেন আমি হলাম খিজির। আর কোন কোন সময় অনেকে উনার সাথে মিলিত হয়ে যান, সাক্ষাৎপ্রাপ্ত হন, কিন্তু তারা বুঝতেও পারে না যে উনি খিজির (আঃ)।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

একটি হাদিসে হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত মুহাম্মদ বিন ইসহাকের রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে যে, হযরত লোকমান হাকিম নবী ছিলেন। কিন্তু কোরআনের বর্ণনাশৈলীতে তেমন কিছু বোঝা যায় না। কোরআনে সূরা লোকমানে তার কতগুলো জ্ঞানগর্ভ উপদেশ হিসাবে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে; কিন্তু একটি বাক্যের মাঝেও এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায় না যা তার নবুয়াত প্রাপ্তিকে প্রমাণিত করে। জমহুর উলামায়ে কেরামের অভিমত এই যে, লোকমান হাকিম নবী ছিলেন না। স্বয়ং হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত অন্য একটি রেওয়ায়েতে তার বিপরীত কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও আল্লামা ইমাদুদ্দিন বিন কাসির তার ইতিহাসগ্রন্থে নবী না হওয়ারই মত বর্ণনা করেছেন। জমহুর উলামায়ে কেরামের প্রসিদ্ধ অভিমত এই যে, লোকমান হাকিম ছিলেন প্রজ্ঞাবান ও আল্লাহর ওলী। তিনি নবী ছিলেন না। আল্লাহ তাআলা কোরআনে তার কথা উল্লেখ করেছেন এবং তার প্রশংসা করেছেন। লোকমানের কাছে তার পুত্রই সবচেয়ে প্রিয় মানুষ ছিলেন। তাই তার পুত্রই প্রথম ব্যক্তি যাকে লোকমান উপদেশ দিয়ে ছিলেন এই বলে, হে বৎস! আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শিরক করো না। নিশ্চয় শিরক ভয়াবহ জুলুম। (সূরা লুকমানঃ আয়াত ১৩) কোরআনে বলা হয়েছে, আর আমি লোকমানকে জ্ঞান দান করেছিলাম। কাতাদা (রাঃ) বলেন, অর্থাৎ, ফিকহ ও ইসলাম (এর জ্ঞান) দান করেছিলেন। তিনি নবী ছিলেন না; তার প্রতি ওহি প্রেরণ করা হয় নি। একই রকম অভিমত প্রমাণিত হয়েছে প্রাচীনকালের একাধিক আলেম থেকে, তাদের মধ্যে রয়েছেন মুজাহিদ (রহঃ) সাঈদ বিন মুসাইয়িব (রাঃ) ও আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ। খিযির কে কুরআনে ‘আমাদের বান্দাদের একজন বলা হয়েছে। (কাহফঃ ১৮/৬৫) বুখারী শরীফে তা নাম খিযির বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে তাকে নবী বলা হয়নি। জনশ্রুতি মতে তিনি একজন ওলী ছিলেন এবং মৃত্যু হয়ে গেলেও এখনও মানুষের বেশ ধরে যেকোন সময় যেকোন মানুষের উপকার করেন। ফলে জঙ্গলে ও সাগর বক্ষে বিপদাপদ থেকে বাঁচার জন্য আজও অনেকে খিযিরের অসীলা পাবার জন্য তার উদ্দেশ্যে মানত করে থাকে। এসব ধারণার প্রসার ঘটেছে মূলতঃ বড় বড় প্রাচীন মনীষীদের নামে বিভিন্ন তাফসীরের কেতাবে উল্লেখিত কিছু কিছু ভিত্তিহীন কল্পকথার উপরে ভিত্তি করে। যারা তাকে নবী বলেন, তাদের দাবীর ভিত্তি হল, খিযিরের বক্তব্য ‘আমি এসব নিজের মতে করিনি। (কাহফঃ ১৮/৮২)। অর্থাৎ সবকিছু আল্লাহর নির্দেশে করেছি। অলীগণের কাশ্ফ-ইলহাম শরীআতের দলীল নয়। কিন্তু নবীগণের স্বপ্নও আল্লাহর অহী হয়ে থাকে। যেজন্য ইবরাহীম (আঃ) স্বীয় পুত্রকে যবেহ করতে উদ্যত হয়েছিলেন। অতএব বালক হত্যার মত ঘটনা কেবলমাত্র নবীর পক্ষেই সম্ভব, কোন অলীর পক্ষে আদৌ নয়। কিন্তু সেখানেও প্রশ্ন থেকে যায় যে, নবী কখনো শরীআত বিরোধী কাজ করতে পারেন না। ঐ সময় শরীআতধারী নবী ও রাসূল ছিলেন হযরত মূসা (আঃ)। আর সে কারণেই খিযিরের শরীআত বিরোধী কাজ দেখে তিনি বারবার প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেছিলেন। এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, খিযির কোন কেতাবধারী রাসূল ছিলেন না, বা তার কোন উম্মত ছিল না। এখানে আমরা যদি বিষয়টিকে কুরআনের প্রকাশ্য অর্থের উপরে ছেড়ে দিই এবং তাকে ‘আল্লাহর একজন বান্দা’ হিসাবে গণ্য করি, যাকে আল্লাহর ভাষায় ‘আমরা আমাদের পক্ষ হতে বিশেষ রহমত দান করেছিলাম এবং আমাদের পক্ষ হতে দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান। (কাহফঃ ১৮/৬৫)। তাহলে তিনি নবী ছিলেন কি অলী ছিলেন, তিনি এখনো বেঁচে আছেন, না মারা গেছেন, এসব বিতর্কের আর কোন অবকাশ থাকে না। যেভাবে মূসার মায়ের নিকটে আল্লাহ অহী (অর্থাৎ ইলহাম) করেছিলেন এবং যার ফলে তিনি তার সদ্য প্রসূত সন্তান মূসাকে বাক্সে ভরে সাগরে নিক্ষেপ করতে সাহসী হয়েছিলেনঃ (ত্বোয়াহাঃ ২০/৩৮-৩৯) এবং যেভাবে জিবরাঈল (আঃ) মানুষের রূপ ধরে এসে রাসূল (সাঃ)-এর সাথে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে সাহাবীগণকে দ্বীনের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন একই ধরনের ঘটনা মূসা ও খিযিরের ক্ষেত্রে হওয়াটাও বিস্ময়কর কিছু নয়। মনে রাখা আবশ্যক যে, লোকমান অত্যন্ত উঁচুদরের একজন জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। তার জ্ঞানপূর্ণ উপদেশসমূহ কুরআনে বর্ণিত হয়েছে এবং তার নামে একটি সূরা নাযিল হয়েছে। কিন্তু তিনি নবী ছিলেন না। লোকমানকে আল্লাহ যেমন বিশেষ ‘হিকমত’ দান করেছিলেন (লোকমানঃ ৩১/১২)। খিযিরকেও তেমনি বিশেষ ‘ইলম’ দান করেছিলেন। (কাহফঃ ১৮/৬৫)। এটা বিচিত্র কিছু নয়। এব্যাপারে আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ