বাবা মায়ের কথা মতে বউকে তালাক প্রদান করা যাবে। তবে কি কারনে তা কিন্তু বলেননি। স্ত্রীকে পিতার নির্দেশে তালাক দেওয়া প্রসঙ্গেঃ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমার বিবাহিত এক স্ত্রী ছিল যাকে আমি ভালোবাসতাম, কিন্তু তাকে আমার পিতা পছন্দ করতেন না। তিনি আমাকে নির্দেশ দেন তাকে তালাক প্রদানের জন্য। কিন্তু আমি তা অস্বীকার করি। বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে আমি উল্লেখ করলে তিনি বললেনঃ হে উমারের পুত্র আবদুল্লাহ! তুমি তোমার স্ত্রীকে তালাক দাও। (সূনান আত তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১১৮৯ ইবনু মাজাহঃ ২০৮৮ এ হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন)।
‘পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে।” (সূরা লুকমান : আয়াত ১৫)
কিন্তু তারা যদি অন্যায় আদেশ করে, তাহলে তা পালন করা হারাম। কেননা, ইসলামের শিক্ষা হল, لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি অবাধ্যতা যেখানে আসবে, সেখানে সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না। সৃষ্টির আনুগত্যের সীমারেখা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ অর্থাৎ অসৎকাজে আনুগত্য নয় ;আনুগত্য কেবলমাত্র সৎকাজের ক্ষেত্রেই হতে হবে’’। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১৪৫)
সুতরাং বাবা-মা বউকে তালাক দিতে বললে কারণ জানতে হবে। কারণ যদি সঠিক ও যুক্তিসঙ্গত হয় এবং সে কারণে তালাক ছাড়া আর কোনো পথ বাকি না থাকে, পাশাপাশি যদি তালাক প্রদান করার দ্বারা আপনার জিনায় জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে পিতা মাতার সন্তুষ্টির জন্য স্ত্রীকে তালাক দিতে হবে।
عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: كَانَتْ لِي امْرَأَةٌ كُنْتُ أُحِبُّهَا، وَكَانَ أَبِي يَكْرَهُهَا، فَقَالَ لِي: طَلِّقْهَا، فَأَبَيْتُ، فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ، فَقَالَ: «طَلِّقْهَا» فَطَلَّقْتُهَا
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার একজন স্ত্রী ছিল। যাকে আমি ভালবাসতাম। কিন্তু আমার পিতা [হযরত উমর বিন খাত্তাব রাযি. যৌক্তিক কারণে] তাকে পসন্দ করতো না। তিনি আমাকে বললেন, তাকে তালাক দিতে। কিন্তু আমি তালাক প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানালাম। তখন আমার পিতা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাকে তালাক দিয়ে দিতে। ফলে আমি আমার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করি। (মুসনাদে আবু দাউদ তায়ালিসী, হাদীস নং-১৯৩১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৪৭১২, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫১৩৮)
পক্ষান্তরে কারণ যদি সঠিক না হয়, কেবল বউয়ের প্রতি ঈর্ষাবশতঃ হয়, তাহলে তালাক দেওয়া আপনার জন্য জায়েয নয়।
সম্মানিত ভাই, আসলে পুরুষকে সংসারের এই মা-বউয়ের দ্বন্দ্বে পরীক্ষা দিতে হয় । এক্ষেত্রে শরীয়তই হচ্ছে সঠিক ফয়সালাদাতা। সুতরাং আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে যে, কোন আবেগ বা প্রেম, কোন ঈর্ষা বা হিংসা অথবা কোন পার্থিব লোভ লালসা যেন আপনাকে কারো প্রতি অন্যায়াচরণে বাধ্য না করে। এজন্য আপনার প্রতি আমার পরামর্শ হল, ধৈর্য ধারণ করুন, কম বলুন,বেশি শুনুন। বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দুআ করুন,যেন আপনার পিতামাতার মন-মানসিকতার পরিবর্তন হয়। আপনার স্ত্রীকে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করার উপদেশ দিন। আপনার বাবা-মাকে বোঝান যে, তারা যেন বউয়ের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেন এবং তার সাথে স্নেহ-মমতার আচরণ করেন।
ইসলামি আইন একজন মুসলিম ছেলেকে তার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করেছে। স্বামী চাইলে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারবে। তবে তালাকের জন্য অবশ্যই তালাকের কারন সমাজে গ্রহনযোগ্য হতে হবে। তালাক সম্পর্কে মহানবী সাঃ বলেছেন , অনুমোদিত সকল কাজের মধ্যে তালাক হচ্ছে জঘন্য কাজ। এখন আপনি আপনার আবেগ সরিয়ে সবকিছু ভেবে যা ভালো মনে করবেন সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।