অপমৃত্যু আল্লাহ সেই ব্যক্তির ভাগ্যে আগেই লিখে রাখেন। কেননা, তিনি সকল মানুষের মনের খবর রাখেন। অর্থাৎ মানুষের প্রকাশ্য সহ অন্তরে যা উদ্রেক হয় তাও তিনি জানেন। তিনি অন্তরের সমস্ত খবর জানেন ও দেখেন। তিনি বলেন, তোমরা তোমাদের কথা গোপনে বল অথবা প্রকাশ্যে বল, তিনি তো অন্তরের বিষয়াদি সম্পর্কে সম্যক অবগত। যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি করে জানবেন না? তিনি সূক্ষজ্ঞানী, সম্যক জ্ঞাত। (সূরা মূলকঃ ১৩, ১৪) জনাব! একজন মানুষ কিভাবে মারা যাবে, সে কি আত্মহত্যা করে মারা যাবে না অন্য ভাবে তা আল্লাহ আগেই যানেন। আর তিনি অন্তরের সমস্ত খবর জানেন বলেই বান্দার তাকদীর আগেই লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। তাকদীর হলো নির্ধারিত ভাগ্য। এ মহাবিশ্বে যা কিছু ঘটবে আল্লাহ তার পূর্বজ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী সেসব কিছু নির্ধারণ করেছেন এই বিশ্বাসকে ইসলামে তাকদীর বলা হয়। যেমনটি তিনি বলেছেন, যমীনে বা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর যে বিপর্যয়ই আসে তা সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই আমি তা কিতাবে লিপিবদ্ধ রেখেছি। নিশ্চয় আল্লাহর পক্ষে এটা খুব সহজ। (সূরা হাদীদ, আয়াতঃ ২২) এখানে আল্লাহ তাআলা মানুষ সৃষ্টির পূর্ব নির্ধারিত তাকদীরের বর্ণনা দিচ্ছেন। পৃথিবীতে যত বিপর্যয় ও বালা-মসিবত এবং মানুষের ব্যক্তিগত যে রোগ-ব্যাধি, কষ্ট- ক্লেশ ও অভাব-অনটনসহ ভাল-মন্দ যা কিছু আসে সব কিছুই সমস্ত সৃষ্টিকে সৃষ্টি করার পূর্বেই লিপিবদ্ধ আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আকাশ-জমিন সৃষ্টি করার এক হাজার বছর পূর্বেই আল্লাহ তাআলা তাকদীর নির্ধারণ করে রেখেছেন। (সহীহ মুসলিমঃ ২৬৫৩, তিরমিযীঃ ২১৫৬) যমীনের বুকে সংঘটিত বিপদাপদ বলে দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প, ফসলহানি, বাণিজ্যে ঘাটতি, ধন-সম্পদ বিনষ্ট হওয়া, বন্ধু-বান্ধবের মৃত্যু ইত্যাদি এবং ব্যক্তিগত বিপদাপদ বলে সর্বপ্রকার রোগ-ব্যাধি, ক্ষত, আঘাত ইত্যাদি বোঝানো হয়েছে। মানুষ যেসব মুসিবতের শিকার হয় সেটা তার জন্য মঙ্গলজনক সে তা জানতে পারুক বা না পারুক। কেননা আল্লাহ যা তাকদীর বা নির্ধারণ করেছেন সেটা মঙ্গল ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহ বলেন, আপনি বলুন! আমাদেরকে কোন কিছুই আক্রান্ত করবে না, কিন্তু আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন সেটা ছাড়া; তিনি আমাদের কার্যনির্বাহক। অতএব, মুমিনদের আল্লাহর উপরই ভরসা করা উচিত। (সূরা তওবা, আয়াতঃ ৫১) আবারো বলা হচ্ছেঃ মানবজীবনে সুখ-দুঃখ, সফলতা ও ব্যর্থতা সবই তাকদীরের অন্তর্ভুক্ত। তবে তাকদীরে লিপিবদ্ধ আছে বলেই মানুষ ভালো অথবা মন্দ করে, বিষয়টি এমনও নয়। বরং মানুষ ভবিষ্যতে কী করবে আল্লাহ তায়ালা যেহেতু আগেই জানেন, তাই তিনি তা অনেক আগেই লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। আল্লাহ তায়ালা মানুষের অবস্থা জানেন বলে সব আগেই লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। এ জন্য তার লিপিবদ্ধকরণ নীতি দায়ী নয়, বরং ভালো-মন্দ কাজের জন্য মানুষ নিজেই দায়ী হবে। এজন্য-ই আত্মহত্যা মহাপাপ হবে।
ধরুন, আপনি আপনার কোন বন্ধুকে আপনার খুব প্রিয় স্মৃতি বিজড়িত একটি কাচের জগ ধার দিলেন। এবং বললেন যে, আপনি এটি যত্ন করে রাখবেন এবং ৭ দিন পর ফেরত দেবেন। এখন আপনার বন্ধু যদি ৩ দিন পর এসে বলে যে, তিনি তার বউয়ের সাথে ঝগড়া করায় বউ রাগে তার দিকে জগ ছুড়ে মেরে জগ ভেঙে ফেলেছেন, তাহলে তখন আপনার কেমন লাগবে? বন্ধুকে তো ধমকাধমকি করবেনই এমনকি বন্ধুত্ব ত্যাগও করতে পারেন। তাহলে এত মোহাব্বত করে আমাদেরকে বানিয়েছেন আর আমরা যদি নিজেদের জেদের কারণে নিজেদের ধ্বংস করি তবে আল্লাহ কেন আমাদের উপর রাগান্বিত হবেন না? আর কেনই বা তা মহাপাপ হবে না?