সালাত আদায় করবেন, জিকির করবেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, শবে কদরে হজরত জিবরাঈল (আ.) ফেরেশতাদের বিরাট একদল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামাজরত অথবা জিকিরে মশগুল থাকে তাঁদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। (মাযহারি) লাইলাতুল কদরে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিজিক, সবকিছুর পরিমাণ নির্দিষ্ট ফেরেশতাদেরকে লিখে দেওয়া হয়, এমনকি কে হজ্জ করবে, তা-ও লিখে দেওয়া হয়।
লাইলাতুল কদর বা ভাগ্য রজনীতে ইবাদত করার মহান ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। মহান প্রতিপালক উল্লেখ করেছেন যে, এই রজনী হাজার মাসের চেয়ে উত্তম এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উল্লেখ করেছেন যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে ও প্রতিদানের আশায় লাইলাতুল কদরে নামায পড়বে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। এজন্য শবে কদরের রাতে যত বেশি পারেন নফল নামাজ পড়ুন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে এবং প্রতিদানের আশায় লাইলাতুল ক্দরে নামায পড়বে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারীঃ ১৯০১ ও মুসলিমঃ ৭৬০) হাদিসে “ঈমান সহকারে” কথাটির অর্থ হচ্ছে এই রাতের মর্যাদা ও বিশেষ আমল শরিয়তসম্মত হওয়ার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। আর “প্রতিদানের আশায়” কথাটির অর্থ হচ্ছে নিয়্যতকে আল্লাহ তাআলার জন্য একনিষ্ঠ করা। এছাড়া, আল কোরআন তেলাওয়াত, জিকির ও দোয়া করুন। যেন আল্লাহ তায়ালা আপনার আগের গুনাহ মাফ করে দেন এবং রহমত ও বরকত দান করেন। এ রাত নামাজ সহ বিভিন্ন ইবাদতের মধ্যদিয়ে কাঁটিয়ে দিন। দুই রাকআত করে সালাম ফিরিয়ে ন্যূনতম আট রাকআত থেকে যত সম্ভব পড়ুন।
আল্লাহ রাববুল আলামীনের পক্ষ হতে মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি বিশেষ দান হল এক হাজার রাত অপেক্ষা উত্তম লাইলাতুল কদর। এই রাত এত মর্যাদাশীল ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ যে, এক হাজার রাত ইবাদত করলে যে সওয়াব হতে পারে, এই এক রাতের ইবাদতে তার চেয়েও বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা এ রাত সম্পর্কে কুরআন শরিফের সূরা কদরে ইরশাদ করেছেন- ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔِ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭ ﻭَﻣَﺎ ﺃَﺩْﺭَﺍﻙَ ﻣَﺎ ﻟَﻴْﻠَﺔُ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﻟَﻴْﻠَﺔُ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻣِّﻦْ ﺃَﻟْﻒِ ﺷَﻬْﺮ ﺗَﻨَﺰَّﻝُ ﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔُ ﻭَﺍﻟﺮُّﻭﺡُ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺑِﺈِﺫْﻥِ ﺭَﺑِّﻬِﻢ ﻣِّﻦ ﻛُﻞِّ ﺃَﻣْﺮٍ ﺳَﻠَﺎﻡٌ ﻫِﻲَ ﺣَﺘَّﻰ ﻣَﻄْﻠَﻊِ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮ অর্থঃ ১। আমি একে (কুরআন) নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে ২। লাইলাতুল কদর সমন্ধে আপনি কি জানেন? ৩। লাইলাতুল কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। ৪। এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিব্রাঈল আঃ ) অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রম । ৫। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এই রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হওয়া চরম দুর্ভাগ্যের বিষয়। হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. বর্ণনা করেন- ﺩﺧﻞ ﺭﻣﻀﺎﻥ، ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺇﻥ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺸﻬﺮ ﻗﺪ ﺣﻀﺮﻛﻢ، ﻭﻓﻴﻪ ﻟﻴﻠﺔ ﺧﻴﺮ ﻣﻦ ﺃﻟﻒ ﺷﻬﺮ، ﻣﻦ ﺣﺮﻣﻬﺎ ﻓﻘﺪ ﺣﺮﻡ ﺍﻟﺨﻴﺮ ﻛﻠﻪ، ﻭﻻ ﻳﺤﺮﻡ ﺧﻴﺮﻫﺎ ﺇﻻ ﻣﺤﺮﻭﻡ . ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻤﻨﺬﺭﻱ : ﺇﺳﻨﺎﺩﻩ ﺣﺴﻦ، ﺇﻥ ﺷﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﻛﺬﺍ ﻗﺎﻟﻪ ﺍﻟﺒﻮﺻﻴﺮﻱ . রমযান মাসের আগমন ঘটলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের উদ্দেশে বললেন, তোমাদের নিকট এই মাস সমাগত হয়েছে, তাতে এমন একটি রাত রয়েছে, যা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যান থেকে বঞ্চিত হল, সে প্রকৃতপক্ষে সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত। একমাত্র (সর্বহারা) দুর্ভাগাই এ রাতের কল্যান থেকে বঞ্চিত হয়।-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস-১৬৪৪ তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত, ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-আযকার, তাসবীহ-তাহলীল ও অন্যান্য নেক আমলের মাধ্যমে এ রাতের খায়ের-বরকত লাভে সচেষ্ট থাকা।
লাইলাতুল কদর,যদিও বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ কর ‘
২৬ রমজান দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৭ রমজানের রাতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ রাতে আগে কিংবা পরে শবে কদর হলেও বিশ্বব্যাপী এ রাতকে শবে কদর মনে করে ইবাদতে মশগুল হয় মুমিন মুসলমান। আর তাদের জন্যই এই ইবাদত , এই রাতে অনেক ইবাদত করতে পারবে ,কুরআন তেলাওয়াত করা নফল নামাজ আদায় করা জিকির তাসবিহ ও ইত্যাদি।
এর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হলো।
সালাতুত তাসবিহ আদায় করাসালাতুত তাসবিহ আদায় করা। এ নামাজের অনেক সাওয়াব। হাদিসে পাকে এসেছে-হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আমার পিতা) হজরত আব্বাসকে বললেন, হে আব্বাস! হে চাচাজান! আমি কি আপনাকে দেব না? আমি কি আপনাকে দান করব না? আমি কি আপনাকে সংবাদ দেব না? আমি কি আপনার সঙ্গে ১০টি সৎকাজ করব না? (অর্থাৎ ১০টি উত্তম তাসবিহ শিক্ষা দেব না) যখন আপনি তা (আমল) করবেন-তখন আল্লাহ আপনার আগের, পরের, পুরাতন, নতুন, সবধরনের গোনাহ মাফ করে দেবেন।ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত গোনাহ মাফ করে দেবেন।সগিরা ও কবিরা গোনাহ মাফ করে দেবেন। গোপন ও প্রকাশ্য গোনাহ মাফ করে দেবেন।(অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে চাচা!) এভাবে যদি প্রতিদিন একবার এ নামাজ পড়তে সক্ষম হন; তবে তা পড়বেন। আর যদি সক্ষম না হন, তবে প্রত্যেক জুমআর দিনে একবার পড়বনে।তাও যদি না পারেন, তবে প্রত্যেক মাসে একবার পড়বেন। তাও যদি না পারেন তবে প্রত্যেক বছর একবার পড়বেন, আর যদি তাও না পারেন তবে আপনার জীবনে অন্তত একবার পড়বেন। (তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)সুতরাং কোনো বান্দা যদি শবে কদর পায়, আর সে রাতে সালাতুত তাসবিহ আদায় করে তবে তার জন্য হাজার মাস ইবাদতের সাওয়াব লাভে ধন্য হবে।
বেশি বেশি গোনাহ মাফ চাওয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে এ রাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার নসিহত করেছেন। শবে কদরের রাতে এ দোয়া বেশি বেশি পড়ার কথা বলেছেন-اَللَّهُمَّ اِنَّكَ عَفُوُّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُوْ عَنَّاউচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ`ফুওয়ুন; তুহিব্বুল আ`ফওয়া; ফা`ফু আন্না।’অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল ,ক্ষমা করতে ভালো বাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত