মাযহাব শব্দটি মাযাহিবু শব্দের একবচন।এর অর্থ চলার পথ,ধর্মমত,বিশ্বাস। এবং এর আরবি অর্থ প্রতিশব্দ হল তরিক বা রাস্তা। অনেকে একে তরিকাও বলে থাকেন। ইসলামি শরিয়তের বিভিন্ন আইন-কানুন বা ইবাদত সম্পর্কিত মৌলিক আকিদাগত বিষয় অভিন্ন রেখে এগুলোর ব্যবহারিক দিক ও শাখা প্রশাখাতে যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন মুজতাহিদদের বিভিন্ন মতামত প্রকাশের প্রক্ষিতে যে সকল ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ গড়ে উঠেছে তাকে মাজহাব বলে। আপনি মাযহাব মানবেন কারণ ইসলামে পরোক্ষ ভাবে এর নির্দেশ আছে।ইসলামি শরিয়তের ভিত্তিকে আরো মজবুদ,শক্তিশালী করতে এবং এর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই মাযহাবের উৎপত্তি।আল্লাহ বলেন,"তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর দীনকে ধারণ কর এবং বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আল্লাহর রাসুল কোন মাযহাবের ছিলেন না কারণ তার সময়ে মাযহাব ছিল না।এমনকি খুলাফায়ে রাশিদার স্বর্ণযুগেও মাযহাবের উৎপত্তি হয়নি। বরং পরবর্তীতে তাদের দেখানো পথকেই অনুসরণ করে মুজতাহিদগণের সহমতের ভিত্তিতে মাযহাবের উৎপত্তি হয়েছে।
মাজহাব হল ইসলামী তথাকথিত আলেমদের তৈরী করা ফেতনা গুলির অন্যতম, যেখানে ইহুদি, নাসারা ও খ্রীস্টানের চক্রান্তে আমাদের কিছু আলেম ইসলামী শরিয়তকে নিজের মত করে ব্যাখা করে মুসলিম উম্মাহের মধ্যে শ্রেনিবিভাগ করে তার প্রতিটি ভাগকে বলা হয় মাজহাব। আল্লাহের রসুল(সাল্লাহু অলাইহি অসাল্লাম) কোন মজহাবের কথা উল্লেখ করেনি না বা বলেন নি, এমনি তার সাহাবা(রাঃ) গন, বা তাবেয়-তাবেয়ী গনও এইরকম করেছেন বলে কোনো হাদিস বা প্রমান পাওয়া যায়নি।
ইসলামী ফেকাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় কোরআন ও সুন্নায় যে সকল আহকাম ও বিধান প্রচ্ছন্ন রয়েছে সেগুলো চিন্তা- গবেষণার মাধ্যেমে আহরণ করাকে ইজতিহাদ বলা হয়। যিনি ইজতিহাদ করেন তাকে মুজতাহিদ বলা হয়। একজন মুজতাহিদ কুরআন ও সুন্নাহ থেকে যে সকল আহকাম ও বিধান আহরণ করে এবং যে সকল মতামত পেশ করেছেন তাকে মাযহাব বলে। চার ইমামদের কেউ নিজ মাযহাবের অনুসরণ করার জন্য মানুষদের আহ্বান করেন নি অথবা তা অনুসরণের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব করেন নি অথবা তা অনুসারে কিংবা নির্দিষ্ট কোন মাযহাব অনুসারে আমল করার জন্য অন্য কাউকে বাধ্য করেন নি। বরং তারা মানুষদের কুরআন ও সুন্নাহ এর অনুসরণ করার আহ্বান করতেন এবং তারা ইসলামি দলিলের উপর মন্তব্য করতেন, তার মূলনীতি ব্যাখ্যা করতেন, সাধারণ নির্দেশনা অনুযায়ী ক্ষুদ্র বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতেন এবং মানুষ যা জিজ্ঞেস করতো সে বিষয়ে ফতোয়া প্রদান করতেন। জনাব! সারা বিশ্বে চারটি মাযহাব খুব প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এই মাযহাব গুলোর ইমাম যারা ছিলেন তারা কোরআন হাদিসের নির্যাস বের করে সাধারণ মানুষের জন্য অনেক সহজ করে দিয়েছেন। যারা একান্তই কোরআন হাদিসের বিধি বিধানগুলো জানেন না অথবা অন্য কোনোভাবে যার জানার সুযোগ নেই, তিনি যদি কোনো মাযহাবের অনুসরন করেন, তাহলে তার এসব বিধিবিধান জানতে অনেক সহজ হবে। তবে মূল উদ্দেশ্য একটিই হতে হবে সেটি হল কোরআন ও সুন্নাহর অনুসরন করা। আপনি যদি নিজেই কোরআন ও সুন্নাহর অনুসরন করে মতবিরোধ বা বিতর্কিত বিষয়গুলি আল্লাহ এবং রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দিতে পারেন তাহলে আপনাকে মাযহাব না মানলেও হবে। তবে নিজে নিজেই কখনোই মতবিরোধ বা বিতর্কিত বিষয়গুলির সমস্যা সমাধান করতে পারবেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা যদি কোন বিষয়ে মতবিরোধ করে থাক, তাহলে বিতর্কিত বিষয়টি আল্লাহ এবং রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি এবং পরকালের প্রতি ঈমান এনে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম। (সূরা নিসাঃ ৫৯) একজন সাধারণ মুসলিমের পক্ষে শুধু কুরআন ও হাদীসের অনুবাদ পড়েই মতবিরোধ বা বিতর্কিত বিষয়গুলোর সমস্যা সমাধান সম্ভাপর নয় এবং সঠিক পদ্ধদিতে ইবাদত করাও সম্ভব নয়। তাই এমন সাধারণ মুসলিম কিভাবে দ্বীন পালন করবে? তাদের জন্য সহজ পথ হলো, কুরআন ও হাদীস বিশেষজ্ঞ চার মাযহাবের ইমামগণ কুরআন ও হাদীস ঘেটে মতবিরোধ বা বিতর্কিত বিষয়গুলোর সমাধান বের করে দিয়েছেন, তাদের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা অনুপাতে ইসলামী শরীয়ত অনুসরণ করা। এর নামই হলো মাযহাব অনুসরণ। আর এমন দ্বীন বিশেষজ্ঞকে অনুসরণের কথা কুরআন ও হাদীসে নির্দেশ এসেছে। আল্লাহ অভিমুখী তথা কুরআন ও হাদীস বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের মাযহাব অনুসরণ করার পরিস্কার নির্দেশ দিয়েছেনঃ অতএব তোমরা যদি না জান তবে যারা জানে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর। (সুরা আম্বিয়াঃ ৭) এ আয়াতেও না জানলে, না বুঝলে, বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছে জিজ্ঞাসা করে মানতে বলা হয়েছে। আর বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের নির্দেশনা অনুপাতে ইসলামী শরীয়ত মানার নাম-ই তো মাযহাব। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) চার মাযহাবের কোন মাযহাব মানেন নাই।