নবী রসুলগণের মধ্যে একজনও মাদ্রাসায় শিক্ষা গ্রহণ করেননি । নবী মোহাম্মদ (স.) সহ কোনো নবী পয়গাম্বরগণ মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার প্রয়োজন মনে করলেন না। রাসুলের পর যারা ইসলামী শাসন ক্ষমতায় ছিলেন, সেই সকল বড় বড় খলিফাদের আমলেও আমরা মাদ্রাসার প্রচলন দেখলাম না। যখন মাদ্রাসা ছিল না তখন কি মানুষ কুরআন শিক্ষা করেননি? নামাজ পড়েননি? ধর্মের পথে থাকেনি? যখন মাদ্রাসার অস্তিত্ব ছিল না তখন কি জগতে মুমিন ব্যক্তি তৈরি হননি? জগতে সৎ মানুষের দেখা মেলেনি? তাহলে এখন মাদ্রাসা লাগবে কেন? যখন মাদ্রাসা ছিল না তখন কি মানুষের জানাজা, বিয়ে থেমে ছিল? আলেম-ওলামারা তো কুরআন হাদিসের বরাত দিয়ে বলে থাকেন যে, যাহা নবীজির আমলে ছিল না এমন কিছু চালু করা বিদা'য়াত। তাহলে মাদরাসা শিক্ষা বিদ'য়াত নয় কি?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call
মাদরাসা শিক্ষা বিদআত নয়। কেননা তা সাহাবায়ে কেরামগনের যুগ থেকেই প্রতিষ্ঠিত। আর প্রশ্নে উল্লেখিত কথা সঠিক নয়।

ইসলামে প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম হলো দারুল আরকাম। এখানে ইসলাম গ্রহণকারী মুসলমানদের মধ্যে কোরআন, নামাজ ও নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়া হত বলেই ইসলামের প্রথম মাদ্রাসাও বলা যায়।

বিস্তারিতঃ বিশ্বমানবতার উদ্দেশ্যে উচ্চারিত ইসলামের প্রথম বাণীঃ

পড় তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপিণ্ড থেকে।

পড় তোমার প্রতিপালক মহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে জ্ঞান দান করেছেন। মানুষকে শিখিয়েছেন, যা সে জানত না। (সুরাঃ আলাক, আয়াতঃ ১-৫)

পড়ার নির্দেশনা নিয়ে প্রথম ওহি অবতীর্ণ হয়। এরপর সুরা মুদ্দাসসির ও সুরা আদ-দোহা অবতীর্ণ হলে মহানবী (সাঃ) পুরোদমে তাওহীদ ও রিসালতের প্রচার শুরু করেন।

সর্বপ্রথম রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সহধর্মিনী হজরত খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ (রাঃ) ইসলামের পতাকাতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন। (ইবনে ইসহাক, সীরাতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বাতায়ন প্রকাশন, পৃষ্ঠাঃ ১৩৭)

এরপর নিকটাত্মীয়দের দাওয়াত দেওয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়। ইরশাদ হয়েছেঃ তুমি তোমার নিকটতম আত্মীয়দের সতর্ক করে দাও। (সুরা শুআরা, আয়াতঃ ২১৪)

এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর মহানবী (সাঃ) তাঁর নিকটতম ও বিশ্বাসযোগ্য লোকদের কাছে নবুয়তের কথা প্রকাশ করতে শুরু করেন। তাঁর দাওয়াতে সাড়া দিয়ে প্রথমবারেই ‘লাব্বাইক’ বলেছেন কয়েকজন আপনজন। হজরত আলী (রাঃ), হজরত আবু বকর (রাঃ) জায়েদ ইবনে হারেসা (রাঃ), উসমান ইবনে আফফান (রাঃ), জুবাইর ইবনে আওয়াম (রাঃ), আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ), সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) ও তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রাঃ) সহ মোট আট জন।

পরে আবু উবায়দা ইবনে জাররাহ (রাঃ), আবু সালামা ইবনে আবদুল আসাদ ও আরকাম ইবনে আবুল আরকাম (রাঃ) সহ প্রথম তিন মাসে মোট ৪০ জন মতান্তরে ৪১ জন ইসলাম গ্রহণ করেন। (ইবনে হিশাম, সীরাতে ইবনে হিশাম, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, পৃষ্ঠাঃ ৫৯)।

এর পর মাত্র তিন বছর সময়ে একশ মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। নবুয়তের পঞ্চম বছর রজব মাসে এগার জন পুরুষ ও পাঁচজন নারী আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। তাঁদের মধ্যে হজরত উসমান (রাঃ) ও ছিলেন। এটাই ইসলামের প্রথম হিজরত। তাঁদের অনেকে মক্কায় পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার খবর শুনে ফেরত এসেছিলেন। পরে যখন দেখা গেল খবরটি অসত্য, তখন নবুয়তের সপ্তম বছর জাফর (রাঃ)-এর নেতৃত্বে প্রায় ৮৬ জন পুরুষ ও ১৭ জন নারী সাহাবা দ্বিতীয়বার আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। এটি ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় হিজরত।

পরে তাঁরা সপ্তম হিজরিতে সেখান থেকে মদিনায় হাজির হয়েছিলেন। ইবনে ইসহাকের বর্ণনা মতে, আবিসিনিয়ায় ইসলামের প্রথম হিজরত কারীদের সংখ্যা ছিল ৮৩ জন। আর মহানবী (সাঃ) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতকালে আনুমানিক পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ ইসলাম গ্রহণ করেন। এই নওমুসলিমরা ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাঁদের জন্য ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে জানার ও শেখার ব্যবস্থা করা। সেই লক্ষ্যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী দলকে নিয়ে ‘দারুল আরকামে’ সর্বপ্রথম ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন করেন। এটি ছিল নওমুসলিম আরকাম ইবনে আবুল আরকামের বাড়ি। এ বাড়িতে মহানবী (সাঃ) দাওয়াতের কাজ করতেন। পাশাপাশি সদ্য ইসলাম গ্রহণকারী মুসলমানদের মধ্যে কোরআন, নামাজ ও নৈতিকতা শিক্ষা দিতেন। এটাই ছিল ইসলামের ইতিহাসে প্রথম আনুষ্ঠানিক ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র। তবে আরো একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর গৃহে ‘দারুল আরকামের’ আগে ইসলামের প্রথম উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা চালু করেছিলেন। সেখানে নামাজের প্রশিক্ষণ হতো, কোরআনের তেলাওয়াত হতো।

দেখুন ইসলামে সাহাবাদের সময় মাদ্রাসা নামের কিছু ছিল কিনা!

باب فِي رَجْمِ الْيَهُودِيَّيْنِ حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ سَعِيدٍ الْهَمْدَانِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، حَدَّثَنِي هِشَامُ بْنُ سَعْدٍ، أَنَّ زَيْدَ بْنَ أَسْلَمَ، حَدَّثَهُ عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ أَتَى نَفَرٌ مِنْ يَهُودَ فَدَعَوْا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى الْقُفِّ فَأَتَاهُمْ فِي بَيْتِ الْمِدْرَاسِ فَقَالُوا يَا أَبَا الْقَاسِمِ إِنَّ رَجُلاً مِنَّا زَنَى بِامْرَأَةٍ فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ فَوَضَعُوا لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وِسَادَةً فَجَلَسَ عَلَيْهَا ثُمَّ قَالَ ‏"‏ ائْتُونِي بِالتَّوْرَاةِ ‏"‏ ‏.‏ فَأُتِيَ بِهَا فَنَزَعَ الْوِسَادَةَ مِنْ تَحْتِهِ فَوَضَعَ التَّوْرَاةَ عَلَيْهَا ثُمَّ قَالَ ‏"‏ آمَنْتُ بِكِ وَبِمَنْ أَنْزَلَكِ ‏"‏ ‏.‏ ثُمَّ قَالَ ‏"‏ ائْتُونِي بِأَعْلَمِكُمْ ‏"‏ ‏.‏ فَأُتِيَ بِفَتًى شَابٍّ ثُمَّ ذَكَرَ قِصَّةَ الرَّجْمِ نَحْوَ حَدِيثِ مَالِكٍ عَنْ نَافِعٍ ‏.‏

ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ একদা ইয়াহূদীদের একটি দল এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে 'কুফ' নামক স্থানে ডেকে নিয়ে যায়। তিনি তাদের সাথে সেখানকার এক মাদ্রাসায় গেলে তারা বলেঃ হে আবুল কাসিম ! আমাদের এক ব্যক্তি একজন মহিলার সাথে যিনা করেছে, আপনি সে সম্পর্কে তাদের মাঝে ফায়সাল দেন। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য একটি বালিশ রেখে দেয়, তিনি তাঁর উপর বসে বলেনঃ তোমরা আমার কাছে তাওরাত নিয়ে এসো । তাঁর কাছে তাওরাত আনা হলে, তিনি বালিশ নিয়ে তার উপর তাওরাত রাখেন। এরপর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি তোমার উপর এবং তোমার নাযিলকারীর উপর ঈমান রাখি । তারপর তিনি বলেনঃ তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তি সব চাইতে জ্ঞানী, তাকে ডাক । তখন একজন যুবক 'আলিম আবদুল্লাহ ইবন সুরিয়া'কে ডাকা হয়। পরে রজম সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছেঃ যেরুপ রাবী মলিক-নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।

(সূনান আবু দাউদ হাদিস নম্বরঃ ৪৩৯২)
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ