আল্লাহ তাআলা আবরাহাকে মূর্তি ভাঙ্গা থেকে বিরত নয় বরং কাবা গৃহকে ধ্বংস করার হাত থেকে রক্ষা করেছে। সূরা ফীলে হস্তীবাহিনীর ঘটনা সংক্ষেপে বৰ্ণিত হয়েছে। তারা কাবা গৃহকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে হস্তীবাহিনী নিয়ে মক্কায় অভিযান পরিচালনা করেছিল। আল্লাহ তাআলা নগণ্য পক্ষীকুলের মাধ্যমে তাদের বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করে তাদের কুমতলবকে ধূলায় মিশিয়ে দেন। মক্কা মুকাররমায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের বছর হস্তীবাহিনীর ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। সংক্ষিপ্ত আকারে আবরাহার হস্তী বাহিনীর ঘটনাঃ ৫৭০ খ্রীষ্টাব্দে হাবশার বাদশার তরফ থেকে ইয়ামান দেশে আবরাহা গভর্নর ছিল। সে সানআতে একটি খুব বড় গির্জা নির্মাণ করল। আর চেষ্টা করল, যাতে লোকেরা কাবা গৃহ ত্যাগ করে ইবাদত ও হজ্জ উমরাহর জন্য এখানে আসে। এ কাজ মক্কাবাসী তথা অন্যান্য আরব গোত্রের জন্য অপছন্দনীয় ছিল। অতএব তাদের মধ্যে একজন আবরাহার নির্মাণকৃত উপাসনালয়ে পায়খানা করে নোংরা করে দিল। আবরাহার নিকট খবর পৌঁছিল যে, গির্জাকে কেউ নোংরা ও অপবিত্র করে দিয়েছে। যার প্রতিক্রিয়ায় সে কাবা ঘরকে ধ্বংস করার দৃঢ় সংকল্প করল। সে বহু সংখ্যক সৈন্যসহ মক্কার ওপর হামলা করার উদ্দেশ্যে রওনা হল। কিছু হাতীও তাদের সাথে ছিল। মক্কার নিকট পৌঁছে সৈন্যরা নাবী (সাঃ)-এর দাদা আব্দুল মুত্তালিবের উটগুলো দখল করে নিল। এ ব্যাপারে আব্দুল মুত্তালিব আবরাহাকে বললেনঃ উটগুলো ফিরিয়ে দাও? আবরাহা বললঃ এখন আমরা তোমাদের কাবা ধ্বংস করতে এসেছি, আর তুমি কেবল উট ছেড়ে দেওয়ার দাবী কর? তিনি বললেনঃ উটগুলো আমার, তাই আমি সেগুলোর হেফাযত চাই যিনি কাবা ঘরের মালিক তিনিই তাঁর ঘর রক্ষা করবেন। অতঃপর যখন এ সৈন্যদল “মুহাসসার” নামক উপত্যকার নিকট পৌঁছিল, তখন আল্লাহ তাআলা ছোলা অথবা মসুরীর দানা সমপরিমাণ কাঁকর দিয়ে পাখি প্রেরণ করলেন, যারা ওপর থেকে সেই কাঁকর বর্ষণ করতে লাগল। যে সৈন্যের গায়ে এ কাঁকর লাগছিল তার গা থেকে মাংস খসে পড়ে গিয়েছিল এবং পরিশেষে মারা গিয়েছিল। সানআ পৌঁছতে পৌঁছতে খোদ আবরাহারও একই পরিণাম হয়েছিল। এভাবে আল্লাহ তাআলা তাঁর ঘর হেফাযত করলেন। (আয়সারুত তাফাসীর) সুরা ফীলে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তুমি কি দেখনি 'কাবা ঘর ধ্বংসের জন্য আগত' হাতীওয়ালাদের সঙ্গে তোমার প্রতিপালক কীরূপ ব্যবহার করেছিলেন? জনাব! মুর্তি নয় তারা কাবা ধ্বংস করার যে চক্রান্ত করেছিল আল্লাহ তাআলা তা ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য হাসিল হয়নি। কুরআন মাজীদে মূর্তি ও ভাস্কর্যকে পথভ্রষ্টতার কারণ হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়েছে। এজন্যঃ আলী ইবনে আবী তালেব (রাঃ) বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি জানাযায় উপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আছে, যে মদীনায় যাবে এবং যেখানেই কোনো প্রাণীর মূর্তি পাবে তা ভেঙ্গে ফেলবে, যেখানেই কোনো সমাধি-সৌধ পাবে তা ভূমিসাৎ করে দিবে এবং যেখানেই কোনো চিত্র পাবে তা মুছে দিবে? আলী (রাঃ) এই দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্ত্তত হলেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে কেউ পুনরায় উপরোক্ত কোনো কিছু তৈরী করতে প্রবৃত্ত হবে সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি নাযিলকৃত দ্বীনকে অস্বীকারকারী। (মুসনাদে আহমাদঃ ৬৫৭) এই হাদীসগুলো থেকে স্পষ্ট জানা যাচ্ছে যে, যে কোনো প্রাণী মূর্তিই ইসলামে পরিত্যাজ্য এবং তা বিলুপ্ত করাই হলো ইসলামের বিধান।