একেবারে সুস্পষ্ট ও সুসংগঠিতভাবে প্রাণের সংজ্ঞা দেয়া না গেলেও জীববিজ্ঞানীগণ জীবের কিছু আবশ্যিক বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করেছেন। বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে – জীব বাহ্যিক পরিবেশ থেকে শক্তি সংগ্রহ করবে, সেগুলো দেহাভ্যন্তরে প্রক্রিয়াজাত করে দেহের বৃদ্ধি ঘটাবে, এবং নিজের অনুরূপ প্রতিলিপি তৈরি করে বংশবৃদ্ধি করবে। এসব বৈশিষ্ট্য থেকে জীবের সংজ্ঞা এমনভাবে দেয়া যায় – “জীব হচ্ছে জৈব-রাসায়নিক পদার্থের সুবিন্যস্ত এমন একটি কাঠামো যা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় বাহ্যিক পরিবেশের অন্য জীব বা জড় পদার্থ থেকে শক্তি সংগ্রহ করে, দৈহিক বৃদ্ধি ঘটায় এবং যৌন/অযৌন প্রক্রিয়ায় বংশ বৃদ্ধি করে সমগুণ সম্পন্ন অনুরূপ নতুন জীবের উৎপত্তি ঘটায়।” প্রতিটি জীব, সে প্রাণী হোক আর উদ্ভিদ হোক, একাধিক সরল থেকে জটিল বহুরকম জৈব- রাসায়নিক পদার্থের একটি সুবিন্যস্ত ব্যবস্থা সম্পন্ন কাঠামো যাতে প্রতিনিয়ত নানা রকম রাসায়নিক বিক্রিয়া ও ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটে চলছে। জীবদেহের হাজারো রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে ক্রমাগত ঘটতে থাকা বিক্রিয়া ও ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার সমন্বয়ই হচ্ছে প্রাণ। দেহের নানারকম রাসায়নিক ব্যবস্থা আবার একটি অপরটির সাথে সম্পর্কযুক্ত। এদের একটি প্রক্রিয়ার ভারসাম্যহীনতা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যবস্থার স্থিতাবস্থার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। যতক্ষণ জীবদেহের সুনির্দিষ্ট রাসায়নিক প্রক্রিয়া যথাযথভাবে চলতে থাকে, ততক্ষণ আমরা প্রচলিত ভাষায় বলি ‘দেহে প্রাণ আছে’। আর যখন রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতায় জীবের জৈব-রাসায়নিক ক্রিয়াকলাপ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়, তখন আমরা বলি ‘মৃত্যু ঘটেছে’। তখন মৃত জীব বা প্রচলিত ভাষায় লাশের সাথে জড়বস্তুর গুণগত আর কোনো পার্থক্য থাকে না। জীবের এসব বৈশিষ্ট্য থেকে দেখা যায় জীবন বা প্রাণ আলাদা কোন বস্তু বা সত্ত্বা নয়। কোন অতিপ্রাকৃতিক শক্তিও নয়। প্রাণ হচ্ছে একটি চলমান রাসায়নিক ব্যবস্থা মাত্র যেখানে পারস্পারিক সম্পর্কযুক্ত হাজারো রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া চলছে প্রতিনিয়ত।