আপনার সমস্যার সংক্ষিপ্ত বিবরণ শুনে মনে হচ্ছে আপনি সোশ্যাল ফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ।
সোশ্যাল ফোবিয়াতে আক্রান্ত হলে আপনার সাথে যেসব ঘটনা ঘটতে পারে:
এই অবস্থায় মানুষটি যখনই বাইরে বা লোক সমাগমের যায়গায় যাবে তার মধ্যে একটা অস্বস্তি পয়দা হবে, সে নিজেকে অযোগ্য মনে করবে, সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে ,তার দুর্বলতা গুলো সবাই দেখছে এবং সেগুলো নিয়ে হাসাহাসি করছে। নতুন মানুষের সামনে কথা বলতে ভয় পাবে, বুক ধুক ধুক করবে, ঘেমে যা্বে,গলা শুকিয়ে যাবে তোতলাতে থাকবে, গুছিয়ে নিজের প্রয়োজনটা বলতে পারবেনা। সব গুলিয়ে ফেলবে, ভুল করে ফেলবে ফলে মানুষ তাকে নিয়ে হাসবে বা কটু কথা বলবে অথচ এই অবস্থায় না পড়ার জন্যই নিজেকে সব কিছু থেকে দূরে রেখেছিল।
আর এতেই সে আরও ঘাবড়ে যাবে পরবর্তিতে ফোবিয়া আরো বেড়ে যাবে, হয়ত সে নিজেকে ঘরবন্দিও করে ফেলতে পারে। আর এভাবেই একটা মানুষ তার সম্ভাবনাময় জীবন থেকে বঞ্চিতও হয়ে যায়। প্রত্যেকটা মানুষই বিশেষ কিছু প্রতিভা নিয়ে জন্ম গ্রহন করে, কিন্তু সে তার প্রতিভাকে বিভিন্ন কারনে প্রকাশ করতে পারেনা, তার মধ্যে একটি হল এই ভয়। এই মিথ্যে অনুভুতিটি সব সময় মানুষকে তার নিজের যোগ্যতা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসেবে সামনে এসে দাড়ায়।
যদি দেখেন যে অনেকটাই আপনার সাথে মিলে যাচ্ছে তাহলে এ থেকে বের হয়ে আসার জন্য নিম্নের উপদেশ গুলো গ্রহণ করুন ।
সোশ্যাল ফোবিয়া থেকে বের হয়ে আসার উপায়:
ভয় একটি মিথ্যে অনুভুতি, সচেতনতা আর মোকাবেলার মাধ্যমে একে প্রতিহত করা যায়। আমি কি নিয়ে ভয় পাচ্ছি সেটা জেনে নিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে গেলে ভয়ের কোন অস্তিত্বই থাকেনা। তাই এটা মিথ্যে, ভয় নিজেও ভয় পায়, কেউ সাহস নিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে গেলে তাকে আর খুজে পাওয়া যায়না।
কেউ কেউ বলতে পারে আমার মধ্যে যে কারনে ভয় ঢুকেছে সেই কারন গুলো ছিল। আমি দেখতে সুন্দরনা, আমার শরিরীক সমস্যা আছে, আমার অর্থনৈতিক সমস্যা আছে, আমি ঠিক মত গুছিয়ে কথা বলতে পারিনা, আর মানুষ সাধারনত এগুলো দেখে আর তা নিয়ে কথাও বলে। হ্যা এটা সত্য মানুষ এমনই।আমি বলিনা আপনাকে বড় বড় যায়গায় যেতে হবে, বড় বড় পার্টিতে যেতে হবে বা বড়লোক, নামী-দামি মানুষের সাথে মিশতে হবে। আমি বলছি যে কৈশোরের অজ্ঞানতা আর অহেতুক অভিমান আর অতিলজ্জার কারনে আপনার পরিনত বয়সে এসেও যে প্রতিবন্ধকতা্র সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে বেড়িয়ে আসতে। আপনার নিজের উপযুক্ত পরিবেশেই নিজেকে নিয়ে যান। নিজের আশপাশের মানুষের সাথে মিশুন, তাদের সাথে কথা বলুন, গল্প করুন, তাদের সুখ দুঃখের কথা শুনুন, নিজের কথা বলেন, ঘরের বাজার-সদাই নিজেই করুন।
প্রথম প্রথম একটু সমস্যা হবে ভুল হবে ঘাবড়ে যাবেননা, নিজেকে বুঝান ,মনকে শক্ত করুন ,মনে রাখবেন নিজের লাইফ নিজেরই, লাভও নিজের আর ক্ষতিও নিজের। তাহলে অন্যে কি ভাবল বা কি বলল তা গুরুত্ব দিয়ে নিজেকে কেন বঞ্চিত করবেন। ভাল করে খেয়াল করে দেখেন, লোক লজ্জার ভয়ে আমরা যে সব বিষয় থেকে নিজেকে দূরে রাখি আসলে মানুষ সেগুলো দেখেও না খেয়ালও করেনা, এগুলো সব আমাদের মনের কল্পনা ছাড়া আর কিছুনা। তাছাড়া বললেইবা কি, আমি কেন আরেক জনের কথায় নিজেকে বঞ্চিত করব, আমি কিছু অর্জন না করতে পারলে তো আমারই ক্ষতি, যাদের কথা শোনার ভয়ে নিজেকে আড়াল করে রেখেছি তারা কি আমাকে কিছু দিয়ে যাবে? অবশ্যই দিবেনা।
তাই দ্বিধা-দ্বন্ধ, ভয়-ভীতি লোক লজ্জাকে পাশ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে, লজ্জা রেখে ভয় পেয়ে যদি আমি ঘরে লুকিয়ে থাকি তাহলে কি আমার উন্নতি হয়ে যাবে? বরং যারা আজ এই সমস্ত তুচ্ছ জিনিসকে পাশ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে গেছে তারাই নিজেদের সবার সামনে তুলে ধরতে পেরেছে ।
আমাদের চারপাশে তুলনামূলক সাহসী মানুষেরা তুলনামূলক ভীতু মানুষ থেকে অনেক দিক থেকেই এগিয়ে থাকে। সাহসীরা সব পরিবেশে নিজেকে সহজভাবে খাপ খাইয়ে সহজেই অনেক কিছু করে ফেলতে পারে, হয়ত ভীতু মানুষটা সাহসী মানুষ থেকে জ্ঞানে গুনে এগিয়েও থাকে তবুও সে অনেক কিছুই অর্জন করতে পারেনা। কারন তার ভিতরে লুকিয়ে থাকা ভয়টা তাকে করতে দেয়না। একবার যদি সাহস সঞ্চয় করে নেমে যেতে পারে তাহলে আর তাকে পিছনে তাকাতে হয়না, খুব অল্প সময়ে অনেক কিছু করে ফেলতে পারে, তার যোগ্যতা ছিল কিন্তু ভয় নামক মিথ্যে অনুভূতিটা তার যোগ্যতাকে প্রস্ফুটিত হতে দেয়নি। তাই বলি ভয়ই মানুষের প্রধান শত্রু। তাকে আকড়ে ধরে মোকাবেলা করলে পালিয়ে যায়।
সোশ্যাল ফোবিয়া থেকে বের হয়ে আসার উপরিউক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করার পাশাপাশি যতদ্রুত সম্ভব আপনি একজন মনরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন । এভাবে চলতে থাকলে আপনার ভবিষ্যৎ পরিণতি খুব খারাপ হবে।
আর হ্যাঁ ইচ্ছে না হলেও মসজিদে গিয়ে 5 ওয়াক্ত সালাত আদায় করুন ।
আশা করি এসব থেকে দ্রুতই বের হয়ে আসতে পারবেন ইনশাআল্লাহ ।