সহিহ বুখারি: আল্লাহদ্রোহি ও ধর্মত্যাগকারীদেরকে তাওবার প্রতি আহবান ও তাদের সাথে যুদ্ধ অধ্যায় ( ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত) ৬৪৫৪। আবূ নু’মান মুহাম্মদ ইবনু ফাযল (রহঃ) … ইকরামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী (রাঃ) এর নিকট একদল যিন্দীককে (নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহী) আনা হল। তিনি তাদেরকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন। এ ঘটনা ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন, আমি হলে কিন্তু তাদেরকে পুড়িয়ে ফেলতাম না। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর শাস্তি দ্বারা শাস্তি দিও না। বরং আমি তাদেরকে হত্যা করতাম। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ রয়েছে, যে কেউ তার দ্বীন বদলে ফেলে তাকে তোমরা হত্যা কর। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

ধর্মত্যাগী পুরুষ ও নারীর হুকুম প্রসঙ্গে ইবনে উমর (রাঃ) যুহরী ও ইবরাহীম (রহঃ) বলেন, ধর্মত্যাগী নারীকে হত্যা করা হবে এবং তার থেকে তওবা আহ্বান করা হবে। আল্লাহ তাআলা মানুষের সৃষ্টিকর্তা। ইসলাম তার মনোনীত একমাত্র দ্বীন। মানুষের জন্য তিনি এই দ্বীন নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এছাড়া অন্য কোনো দ্বীন বা ধর্ম মানুষের কাছ থেকে তিনি গ্রহণ করবেন না। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীনের অনুসরণ করবে, তার পক্ষ থেকে তা কখনোই গ্রহণ করা হবে না। আর পরকালে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। (আলে ইমরানঃ ৮৫) জনাব! একজন মুমিন তো শরীয়তের সকল বিধানের উপর ঈমান রাখে। হদ-কিসাস ও দন্ডবিধি শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এগুলিকে হুবহু মেনে নেওয়াই ঈমান। এগুলির একটি হলোঃ মুরতাদের দুনিয়াবী শাস্তি মৃত্যুদন্ড। বিচারকের জন্য নিয়ম হল, মুরতাদকে প্রথমে তওবা করার সুযোগ দিবে। তওবা করলে তো ভালো। অন্যথায় নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করবে। মুরতাদের তওবা কবুল করা এবং এ উসিলায় তার শাস্তি মওকুফ করা শরীয়তে মুহাম্মদীর বিধান। নতুবা তাওরাতের শরীয়তে তওবা করলেও এ শাস্তি মাফ হত না। বরং তওবার মাধ্যমে পরকালীন শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য দুনিয়াবী শাস্তি গ্রহণ করা অপরিহার্য ছিল। বনী ইসরাইলের একটি দল যখন গোবৎসের পুজা করে শিরকে লিপ্ত হলো, যে কারণে তারা মুরতাদ হয়ে গেল, তখন তাদের ব্যাপারে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেওয়া হলো এবং এটা তাদের তওবারই একটা অংশ ছিলো। ইরশাদ হয়েছেঃ তরজমাঃ যারা বাছুরকে উপাস্য বানিয়েছে, শীঘ্রই তাদের রবের গজব তাদেরকে পাকড়াও করবে আর দুনিয়ার জীবনেই লাঞ্ছনা আপতিত হবে। যারা মিথ্যা রচনা করে, আমি এভাবেই তাদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকি। (আরাফঃ ১৫২) মুরতাদের উপর আপতিত সেই গজব ও লাঞ্ছনা কী ছিল? কোরআনেই ইরশাদ হয়েছেঃ তোমরা বাছুরকে (উপাস্য হিসাবে) গ্রহণ করে প্রকৃতপক্ষে নিজেরাই নিজেদের উপর জুলুম করেছ। সুতরাং তোমরা তোমাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট তওবা কর এবং নিজেরা নিজেদের মাঝে মৃত্যুদন্ড কার্যকর কর। তোমাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট এ ব্যবস্থা তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক। তাহলে তিনি তোমাদের তওবা কবুল করবেন। তিনি তো তওবা কবুলকারী, পরম করুণাময়। (বাকারাঃ ৫৪) দুনিয়াতে এই ক্রোধ ও গজব এবং লাঞ্ছনা ও গঞ্জনা যারা শিরক করে মুরতাদ হয়ে গেছে শুধু তাদের জন্যই নয়, বরং সব ধরনের মুরতাদের জন্য। ইরশাদ হয়েছেঃ তরজমাঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার পর তার কুফরীতে লিপ্ত হয় - অবশ্য সে নয়, যাকে কুফুরীর জন্য বাধ্য করা হয়েছে, কিন্তু তার অন্তর ঈমানের উপর প্রশান্ত রয়েছে, বরং সেই ব্যক্তি, যে সহৃদয়ে কুফুরী মেনে নিয়েছে, এরূপ ব্যক্তির উপর আল্লাহর গজব এবং তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। (নাহলঃ ১০৬) সূরা বাকারার ৫৪ নম্বর আয়াত থেকে বোঝা যায়, মুরতাদের উপর আপতিত খোদায়ী গজব হল মৃত্যুদন্ড। ইসলামের প্রতি দুশমনি করা অথবা যে কোনো ধরনের শিরকী-কুফরী কর্ম ও বিশ্বাসের মাধ্যমে মুরতাদ হয়ে যাওয়া ব্যক্তি - যদিও সে আচরণে-উচ্চারণে নিজেকে মুসলমান প্রমাণের চেষ্টা করে -তবু সে মুরতাদ। কোরআনের পরিভাষায় এমন ব্যক্তিকে ‘মুনাফিক’ বলা হয়। এদের শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেনঃ মুনাফিকরা, যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তারা এবং মদীনাতে ভয়ংকর সংবাদ রটনাকারীরা যদি নিবৃত্ত না হয়, তাহলে অবশ্যই আমি আপনাকে তাদের বিরুদ্ধে প্রবল করে দিব। আর তখন তারা আপনার প্রতিবেশী হিসাবে সেখানে বেশি দিন টিকতে পারবে না। তাও থাকবে অভিশপ্ত অবস্থায়, যেখানেই এমন লোককে পাওয়া যাবে, ধরে ধরে একে একে হত্যা করে ফেলা হবে। আল্লাহ তাআলার এ নিয়ম পূর্ববর্তী লোকদের জন্যও বলবৎ ছিল। আল্লাহর নিয়মে কোনো দিন আপনি কোনো ব্যত্যয় খুজে পাবেন না। (আহযাবঃ ৬০-৬২) উল্লেখিত আয়াতে মুরতাদ-মুনাফিকের দুটি অপতৎপরতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং তা থেকে বিরত না হলে শাস্তি লাঞ্ছনা এবং মৃত্যুদন্ড বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আয়াতের শেষ অংশ থেকে এ-কথাও স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, পূর্ববর্তী নবীগণের শরীয়তেও মুরতাদের শাস্তি ছিল মৃত্যুদন্ড। (মাআরিফুল কুরআন) আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায় তাদের শাস্তি কেবল এটাই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে বা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে বা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত ও পা কেটে ফেলা হবে বা তাদেরকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে । দুনিয়ায় এটাই তাদের লাঞ্ছনা ও আখেরাতে তাদের জন্য মহাশাস্তি রয়েছে। (মায়েদাঃ ৩৩) অতএব যারা এসবের কোন একটি অপরাধের সাথে জড়িত হবে তাদের উক্ত নিয়মে হত্যা করতে হবে। তাদেরকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে হত্যা করা যাবেনা। কিন্ত আলী (রাঃ) এর নিকট একদল যিন্দীককে (নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহী) আনা হলে তিনি তাদেরকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন। এ ঘটনা ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন, আমি হলে কিন্তু তাদেরকে পুড়িয়ে ফেলতাম না। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর শাস্তি দ্বারা শাস্তি দিও না। বরং আমি তাদেরকে হত্যা করতাম। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ রয়েছে, যে কেউ তার দ্বীন বদলে ফেলে তাকে তোমরা হত্যা কর। [উল্লেখিত উপরিউক্ত হাদীসের ঘটনার প্রেক্ষাপট এবং ব্যাখ্যা সহিহ বুখারির ৬৪৫৪ নাম্বার হাদিসের আলোকে দেওয়া হয়নি শুধুই বোঝানোর জন্য]

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ