অনেক সময় দেখা যায় মসজিদে গেলে সুন্নত পড়তে পারবো না, তবে জামাত পাবো আর বাড়িতে পড়লে সুন্নত ফরজ উভয়ই পড়তে পারবো। যেমন,ফজরের ফরজ নামাজের আগে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ রয়েছে। হাদিস উল্লেখ করলে ভালো হয় ।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

বাড়িতে নামাজ আদায় করার চেয়ে মসজিদে গিয়ে ফরজ নামাজ জামাআতের সহিত আদায় করা ভালো। কেননা একাকী নামাজ পড়া অপেক্ষা জামাআতের সহিত আদায় করলে বিশ পঁচিশ বা সাতাশ গুণ বেশি মর্যাদাপূর্ণ। উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তির জামাআতের সালাত তার একাকী পড়া সালাত অপেক্ষা সাতাশ গুণ বেশি মর্যাদাপূর্ণ। অন্য বর্ন নায় এসেছে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জামাআতের ফযীলাত তোমাদের কারো একাকী সালাত পড়ার তুলনায় পঁচিশ গুণ বেশি। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস নম্বরঃ ৭৮৭, ৭৮৯) জামাআত পরিত্যাগের কঠোর পরিণতি সম্পর্কে ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মুআজ্জিনের আজান শুনে বিনা কারণে মসজিদে উপস্হিত হয়ে জামাআতে নামাজ আদায় করবে না তার অনত্র আদায়কৃত নামাজ আল্লাহর নিকটে কবুল হবে না। অর্থাৎ তার নামাযকে পরিপূর্ণ নামায হিসেবে গণ্য করা হবে না। সাহাবীরা ওজর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যদি কেউ ভয়ভীতি ও অসুস্থতার কারণে জামাআতে হাজির হতে অক্ষম হয় তবে তার জন্য বাড়ীতে নামাজ পড়া দুষণীয় নয়। (সূনান আবু দাউদ হাদিস নম্বরঃ ৫৫১ হাদিসের মানঃ সহিহ) জনাব! নফল সুন্নাত নামাজ বাড়িতে পড়ার হুকুম রয়েছে। নামাজের জামাআতের ব্যাপারে রয়েছে জোর তাগিদ। আবার নফল ও সুন্নাত নামাজ নিজ ঘরে আদায়েরও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত। দুনিয়ার কল্যাণ এবং পরকালের মুক্তিতে নফল নামাজ আদায়ের বিকল্প নেই। হাদিসে এসেছেঃ হজরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন মসজিদে 'ফরজ' নামাজ সম্পন্ন করে তখন তার উচিত সে যেন তার নামাজের কিছু অংশ 'সুন্নাত নামাজ' নিজের বাড়ির জন্য রাখে। কারণ বাড়িতে আদায় করা কিছু নামাজের মধ্যে আল্লাহ তাআলা কল্যাণ নিহিত রেখেছেন। (মুসলিম) যায়েদ বিন সাবেত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হে মানবমণ্ডলী! তোমরা নিজ ঘরে নামাজ আদায় কর। যেহেতু ফরজ নামাজ ছাড়া মানুষের শ্রেষ্ঠতম নামাজ হলো নিজ ঘরে আদায় করা নামাজ। (নাসাঈ, ইবনে খুজাইমা, তারগীব) অনেক সময় দেখা যায় মসজিদে গেলে সুন্নত পড়তে পারবেন তবে জামাত পাবেন না এজন্য নামাজের জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া কর্তব্য। যাতে ধীরস্থিরতার সাথে সুন্নত পড়া যায় এবং তাকবীরে উলার সাথে প্রথম কাতারে জামাআতে নামাজ আদায় করা যায়। কিন্তু কখনো যদি এমন হয় যে, ইকামত শুরু হয়ে গেছে বা নামাজ শুরু হয়ে গেছে, তাহলে ফজরের সুন্নত ছাড়া অন্য সুন্নত হলে আর সুন্নতের নিয়ত বাঁধবেনন না; বরং জামাআতে শরীক হয়ে যাওয়া জরুরি। আর যদি ফজরের সুন্নত হয় এবং এ কথা মনে হয় যে, তা পড়ে জামাআতের অন্তত এক রাকাআত পাওয়া যাবে, তাহলে মসজিদের বাইরে তা নিঃসন্দেহে পড়ে নিবেন বরং পড়ে নেওয়াই উত্তম। এমনভিাবে মসজিদের ভেতরে জামাআতের কাতার থেকে দূরে বারান্দায় বা মসজিদের এক কোণায় অথবা খুঁটির আড়ালে পড়ে নিতে পারেন। কিন্তু জামাআতের কাতারে বা তার নিকটে পড়া মাকরূহে তাহরিমী। জনাব! সুন্নত নামাজের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত। হাদীসে এর প্রভূত ফযীলত বর্ণিত হয়েছে এবং এর প্রতি বিশেষ তাগিদ দেওয়া হয়েছে। যা অন্যান্য সুন্নতের ক্ষেত্রে হয়নি। এখানে ফজরের সুন্নত সম্বন্ধে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ হলোঃ আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ফজরের দুই রাকাআত (সুন্নত) দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম। (সহীহ মুসলিমঃ ৭২৫) আরো বর্ণিত হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দুই রাকাআত (সুন্নত) নামাজে এত গুরুত্ব দিতেন যা অন্য কোনো নফল (বা সুন্নত) নামাজে দিতেন না। (সহীহ বুখারীঃ ১১৬৩, সহীহ মুসলিমঃ ৭২৪) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমরা (ফজরের সুন্নত) এই দুই রাকাআত কখনো ত্যাগ করো না, শত্রুবাহিনী তোমাদের তাড়া করলেও। (সুনানে আবু দাউদঃ ১২৫৮) উত্তরে আগেই বলা হয়েছেঃ যে ব্যক্তি মুআজ্জিনের আজান শুনে বিনা কারণে মসজিদে উপস্হিত হয়ে জামাআতে নামাজ আদায় করবে না তার অনত্র আদায়কৃত নামাজ আল্লাহর নিকটে কবুল হবে না। আর আপনি মসজিদে গেলে ফজরের সুন্নত পড়তে পারবেন না তবে জামাআত পাবেন। এক্ষেত্রে যদি ফজরের সুন্নত ছুটে যায় তা সূর্যোদয়ের পর পড়ে নেবেন। তবুও মসজিদেই ফরজ নামাজ পড়তে হবে। আর বাড়িতে পড়লে সুন্নত ফরজ উভয়ই পড়তে পারলেও এক্ষেত্রে বাড়িতে ফরজ আদায় করা যাবেনা। হাদীসগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছেঃ কখনো ফজরের সুন্নত ছুটে গেলে তা সুর্যোদয়ের পর থেকে সুর্য ঢলে যাওয়ার পুর্বে তা আদায় করে নিতে হবে। যদি ফজরের ছুটে যাওয়া সুন্নত সুর্যোদয়ের পুর্বে আদায় না করতে পারেন তা পরেও আদায় করা সম্পর্কে আরো সুস্পষ্ট অনেক হাদীস রয়েছে। যেমন হাদীসে এসেছেঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের সুন্নত আদায় করতে পারেনি, সে যেন তা সূর্যোদয়ের পর আদায় করে নেয়। (জামে তিরমিযীঃ ৪২৩) স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ফজরের সুন্নত ছুটে গেলে তিনি সূর্যোদয়ের পর তা আদায় করে নিতেন। যেমন, বিশুদ্ধ সূত্রে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ঘুমের কারণে পড়তে পারেননি, তিনি তা সূর্যোদয়ের পর আদায় করে নিয়েছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহঃ ১১৫৫) শেষ কথাঃ আর বাড়িতে পড়লে সুন্নত ফরজ উভয়ই পড়তে পারলেও বাড়িতে ফরজ নামাজ পড়া যাবেনা।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ