জিনা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছেঃ তোমরা জিনার ধারে কাছেও যেয়ো না কারণ এটি একটি লজ্জাজনক ও নিকৃষ্ট কর্ম, যা অন্যান্য নিকৃষ্ট কর্মের পথ খুলে দেয়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে কোন নারী ব্যভিচারে লিপ্ত হলে এবং তা ন্যায়সঙ্গত প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত হলে তাকে বাড়িতে আমরণ বন্ধ করে রাখা হত। এখন ব্যভিচারী ব্যাক্তি দুনিয়াতে সমস্যার সম্মুখীন হয়না তবে শাস্তির সম্মুখীন হবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের পথ খুলে দেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ যখন সূরা নিসা নাযিল হল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ব্যভিচারী মহিলাদের আর ঘরে আবদ্ধ থাকতে হবে না। বরং শাস্তি প্রয়োগ করে ছেড়ে দেয়া হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমার কাছ থেকে গ্রহণ কর, আল্লাহ তাআলা ব্যভিচারীদের পথ বের করে দিয়েছেন। তা হল, ব্যভিচারী বিবাহিত হলে একশত বেত্রাঘাত ও রজম আর অবিবাহিত হলে একশত বেত্রাঘাত এবং এক বছর দেশান্তর। (তিরমিযীঃ ১১৪৩৪, সহীহ) আর তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচার করে তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চারজন সাক্ষী তলব করবে। যদি তারা সাক্ষ্য দেয় তবে তাদেরকে ঘরে অবরুদ্ধ করবে, যে পর্যন্ত না তাদের মৃত্যু হয় বা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোন ব্যবস্থা করেন। (সূরা নিসা আয়াতঃ ১৫) এখানে এমন পুরুষ ও নারীদের শাস্তি বর্ণিত হয়েছে, যারা নির্লজ্জ কাজ অর্থাৎ ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। বলা হয়েছে, যেসব নারী দ্বারা এমন কুকর্ম সংঘটিত হয়, তাদের এ কাজ প্রমাণ করার জন্য চার জন পুরুষ সাক্ষী তলব করতে হবে। অর্থাৎ যেসব বিচারকের কাছে এই মামলা পেশ করা হয়, তারা প্রমাণের জন্য চার জন যোগ্য সাক্ষী তলব করবেন এবং এই সাক্ষীদের পুরুষ শ্রেণী থেকে হওয়াও জরুরী। এ ব্যাপারে নারীদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। ব্যভিচারের সাক্ষীদের ব্যাপারে শরীআত দু’রকম কঠোরতা করেছে যেহেতু ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এতে ইজ্জত ও আবরু আহত হয় এবং পারিবারিক মানসম্ভ্রমের প্রশ্ন দেখা দেয়, তাই প্রথমে শর্ত আরোপ করা হয়েছে যে, এমন ক্ষেত্রে শুধু পুরুষই সাক্ষী হতে হবে - নারীদের সাক্ষ্য ধর্তব্য নয়। দ্বিতীয়তঃ চার জন পুরুষ হওয়া জরুরী সাব্যস্ত করা হয়েছে। বলাবাহুল্য, এ শর্তটি খুবই কঠোর। দৈবাৎ ও কদাচিৎ তা পাওয়া যেতে পারে। এ শর্ত আরোপের কারণ, যাতে স্ত্রীর স্বামী, তার জননী অথবা অন্য স্ত্রী অথবা ভাই-বোন ব্যক্তিগত জিঘাংসার বশবর্তী হয়ে অহেতুক অপবাদ আরোপ করার সুযোগ না পায় অথবা অন্য অমঙ্গলকামী লোকেরা শক্রতাবশতঃ অপবাদ আরোপ করতে সাহসী না হয়। কেননা, চার জনের কম পুরুষ ব্যভিচারের সাক্ষ্য দিলে তাদের সাক্ষী গ্রহণীয় নয়। এমতাবস্থায় বাদী ও সাক্ষীরা সবাই মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হবে এবং একজন মুসলিমের চরিত্রে কলংক আরোপ করার দায়ে তাদেরকে ‘হন্দে-কযফ’ বা অপবাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, তখনকার দিনে কোন মহিলা ব্যভিচার করলে, সে আমৃত্যু ঘরে বন্দী জীবন যাপন করত। (তাবারী) তিনি আরও বলেন, এখানে যে ব্যবস্থার ওয়াদা করেছেন সূরা আন-নূরে আল্লাহ তাআলা সে ব্যবস্থা করেছেন। তিনি অবিবাহিতদের জন্য বেত্ৰাঘাত এবং বিবাহিতদের জন্য পাথরের আঘাতে নিহত করা দ্বারা এ আয়াতকে রহিত করেছেন। অনুরূপভাবে বিভিন্ন হাদীসে সুস্পষ্টভাবে তার নির্দেশ এসেছে। (মুসলিমঃ ১৬৯০, আবু দাউদঃ ৪৪১৫, তিরমিয়ীঃ ১৪৩৪) আর তোমাদের মধ্যে যে দুজন এতে লিপ্ত হবে তাদেরকে শাস্তি দেবে। যদি তারা তাওবাহ করে এবং নিজেদেরকে সংশোধণ করে নেয় তবে তাদের থেকে বিরত থাকবে। নিশ্চয় আল্লাহ পরম তাওবাহ কবুলকারী, পরম দয়ালু। (সূরা নিসা আয়াতঃ ১৬)