‘পড়া মনে থাকে না’ কিংবা ‘যা পড়ি তা-ই ভুলে যাই’, এই অভিযোগটি প্রায় সবার। পড়া মনে না থাকা নিয়ে কম-বেশি হতাশায় ভুগে নাই এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া বেশ মুশকিল ব্যাপার। তবে বিষয়টি নিয়ে হতাশ হলে চলবে না। কয়েকটি সহজ কৌশল মেনে চললেই এ জাতীয় উৎকট ঝামেলা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সেরকমই ১০টি সহজ কৌশল নিয়ে আজ লিখব। চলুন, পড়া মনে রাখার কৌশলগুলো জেনে নেয়া যাক- ১০. পড়তে বসার আগে ১০ মিনিট হাঁটা: পড়ার টেবিলে বসার পূর্বে ১০ মিনিট হাঁটলে বা হালকা ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে পড়া মনে রাখতে বেশ সুবিধা হয়। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, পড়ার পূর্বে ১০ মিনিট হাঁটলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা প্রায় ১০ শতাংশ পরিমাণ বেড়ে যায়। তাহলে একটু হাঁটার পরেই শুরু হোক পড়ালেখা। ৯. পড়ার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করা: যে বিষয়টি পড়ব তার প্রতি আকর্ষণ জাগাতে হবে। কিংবা আকর্ষণীয় উপায়ে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। এতে পড়া সহজে মনে থাকবে। “ চিকিৎসাবিজ্ঞা মতে, মানুষ কোন কিছুর প্রতি আকর্ষণ অনুভব করলে তা সহজেই মস্তিষ্কে মেমরি বা স্মৃতিতে রূপান্তরিত হয়ে যায় এবং তা স্মৃতিতে দীর্ঘস্থায়ী হয়। ৮. কালারিং বা মার্কার পেন ব্যবহার করে দাগিয়ে পড়া: আমাদের মধ্যে অনেকেই মার্ক করে বা দাগিয়ে পড়ে। এটাও পড়া মনে রাখতে বেশ কার্যকর। মার্ক করার ফলে কোন শব্দ বা বাক্যের প্রতি আকর্ষণ ও আগ্রহ বেড়ে যায়। পাশাপাশি এর উপর ব্রেইনের ভিজ্যুয়ালিটি ইফেক্টও বেড়ে যায় যা পড়াকে মনে রাখতে সহায়তা করে। নানা রঙের হাইলাইটার ব্যবহার করা পড়াশোনায় মন আনতে অনেক সাহায্য করতে পারে ৭. বেশি বেশি পড়া ও অনুশীলন করা: আমাদের ব্রেইন ক্ষণস্থায়ী স্মৃতি গুলোকে তখনই দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে পরিণত করে যখন তা বারবার ইনপুট দেয়া হয়। বারবার ইনপুট দেয়ার ফলে ব্রেইনের স্মৃতি গঠনের স্থানে গাঠনিক পরিবর্তন হয় যা দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি তৈরীতে সাহায্য করে। তাই বেশি বেশি পড়া ও অনুশীলন করা পড়া মনে রাখার অন্যতম উপায়।
মানুষ অস্বাভাবিক জিনিস গুলোকে বেশি মনে রাখতে পারে যেমন আপনি অমুককে খুব মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন,এটা কিন্তু আপনার আজীবন মনে থাকবে। সুতরাং সবকিছু অস্বাভাবিক করে করার চেষ্টা করুন এতে স্মৃতি বাড়বে। যেমন *ব্রাশ ডান হাতের বদলে বাম হাত দিয়ে করতে পারেন *কাজে প্রতিদিন একপথ ব্যবহার না করে ভিন্ন পথে যান। *যেগুলো থেকে বিরত থাকবেন.. নেশাকরা,হস্তমৈথুন ত্যাগ করবেন *মনোযোগ দিয়ে কাজ করুন একসাথে দুটি কাজ করবেন না।
প্রাথমিক পর্যায়ে পড়ার সময় মন দিয়ে পড়তেন তাই মনে থাকত। আর এখন পড়ায় মন থাকে না,পড়ার সময় থাকে অন্যমস্ক। আত্মবিশ্বাস যেকোনো কাজে সফল হওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত।পড়ার সময় মনকে বোঝাতে হবে পড়াশোনা অনেক সহজ বিষয় আমি পারব,আমাকে পারতেই হবে।হজ মনে হবে। কোনো বিষয়ে ভয় ঢুকে গেলে সেটা মনে রাখা বেশ কঠিন। আর পড়ালেখা করার উত্তম সময হচ্ছে ভোর। সকালে মস্তিষ্ক ফ্রেশ থাকে।
ভুলে যাওয়ার রোগ থেকে মুক্তি পেতে নিচের পরামর্শগুলো কাজে লাগান যেতে পারে-
শব্দ নিয়ে খেলা
শব্দ নিয়ে খেলতে থাকলে ভুলে যাওয়ার সম্ভবনা কমে। ধরুন ই-মেইলের পাসওয়ার্ডের ক্ষেত্রে এমন একটা পাসওয়ার্ড দিলেন, যার এক একটা অক্ষর এক একটি শব্দের আদ্যাক্ষর। আর সবগুলো মিলিয়ে একটা বাক্য, যা হয়ত আপনার জীবনের খুব প্রিয় কোন ঘটনাকে বর্ণনা করছে। এরকম পাসওয়ার্ড থাকলে ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা খবুই কম। এটিএম পিনের ক্ষেত্রেও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কোন সংখ্যা ব্যবহার করা যেতে পারে।
লিখে ফেলা
কোন দরকারি জিনিস চট করে কোথাও লিখে রাখুন। পরে যদি হাতের কাছে লেখা কাগজটি নাও পান, তবু কী লিখেছেন মনে করতে গিয়ে অনেক সময় আসল জিনিসটা মনে পড়ে যায়। পড়ার পর ছাত্রদের ঠিক যে কারণে লিখতে বলা হয় এখানেও সেই একই যুক্তি কাজ করে। লেখার এই অভ্যাস ভুলে যাওয়ার হাত থেকে আপনাকে বাঁচাবে।
স্মৃতিকে চ্যালেঞ্জ করুন
আসলে চ্যালেঞ্জ জানান মস্তিষ্ককে। ক্রসওয়ার্ড পাজল খেললে এরকম মস্তিষ্কের ব্যায়াম হয়। এতে অনেক ভুলে যাওয়া জিনিসও মনে পড়ে যায়।
বারবার এক জিনিস বলা
ধরা যাক নতুন কোন নাম বা ঠিকানা আপনাকে মনে রাখতে হবে। সেই শব্দটি বারবার করে বলতে থাকুন। এক কথা বারবার বললে তা মনে থাকতে বাধ্য।
লাইফস্টাইল
স্মৃতিভ্রংশের জন্য অনেকাংশেই দায়ী লাইফস্টাইল। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে কোলেস্টেরল, ব্লাড প্রেসার ও ব্লাড সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা হয় এবং স্মৃতিশক্তিও কমে যায়। চর্বি ও স্নেহপদার্থ জাতীয় খাবার যারা বেশি খান তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যেতে পারে। সুতরাং জীবযাপনের ধরণ বদলালে এ থেকে মুক্তি মিলতে পারে।
ধূমপান ও মদ্যপান
ধূমপানে নিকোটিন জমা হওয়ার ফলে রক্ত সঞ্চালন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে প্রভাব পড়ে স্মৃতিশক্তিতে। অন্যদিকে যারা মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান করেন তাদের ক্ষেত্রেও স্মৃতিভ্রংশ রোগ দেখা দেয়। ফলে এ দুটো বিষয় যত এড়ানো যায় ততই মঙ্গল। এছাড়া পর্যাপ্ত ঘুম না হলেও ভুলে যাওয়ার রোগ দেখা যায়।