হযরত লোকমান (আ.)। তিনি ছিলেন প্রাচীন যুগের একজন পণ্ডিত ও  জ্ঞানী ব্যক্তি। তিনি সারা জীবন মানুষকে মূল্যবান উপদেশ দিয়েছেন। তার সময়ে জ্ঞানগরিমা, বুদ্ধিশুদ্ধি, ভালো কথা ও সৎ কাজে তিনি ছিলেন সবার সেরা। আর এ কারণেই নবী না হবার পরও তার নাম পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহতালা পবিত্র কুরআনে লোকমান হাকিমের কথা উল্লেখ করে বলেন যে , ‘ আমি লোকমানকে হেকমত তথা বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা দিয়েছিলাম।’ হযরত লোকমান ছিলেন হাবশি সম্প্রদায়ের লোক। প্রথম জীবনে তিনি তৎকালীন শাম দেশের অধিবাসী এক ধনী ব্যক্তির অধীনে গোলামির জীবন শুরু করেন। তারপর তিনি গোলামির জীবন থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহতালার অপার অনুগ্রহে অফুরন্ত শিক্ষা-দীক্ষা এবং হেকমত শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর জ্ঞান লাভের পেছনে তিনটি গুণ বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। এ সম্পর্কে একটি গল্প প্রচলিত আছে। গল্পটি এরকম- হযরত লোকমান যখন বকরি চরাতেন তখন একটি সমবয়সি বালকের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। পরবর্তী জীবনে সেই বাল্যবন্ধুটি ঘটনাক্রমে লোকমানের একটি শিক্ষা মজলিসে উপস্থিত হয়ে দেখল যে, বহু মানুষ লোকমানকে ঘিরে বসে তাঁর কাছ থেকে এলেম ও হেকমত শিক্ষা করছে। অবাক হয়ে সেই বাল্যবন্ধু লোকমানকে লক্ষ্য করে বলল, ‘তোমাকে দেখে বাল্যজীবনের কথা মনে পড়ছে। তুমি কি সেই লোক যার সাথে আমি মাঠে বকরি চরাতাম ?’ হযরত লোকমান লোকটির দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ বন্ধু তুমি ঠিকই ধরেছ আমি সেই লোক’। বাল্যবন্ধু জিজ্ঞেস করল ‘বন্ধু , তুমি এই মর্যাদা কিভাবে অর্জন করলে!’ লোকমান জবাব দিলেন- তিনটি স্বভাবের মাধ্যমে। স্বভাব তিনটি হলো- ১. কোনদিনই কারও সঙ্গে মিথ্যা বলি নি ২. আমি কখনও কারো আমানতে খেয়ানত করি নি এবং ৩. কারও সাথে আমি কখনও বেহুদা কথায় সময় নষ্ট করি নি   হযরত লোকমান তার পুত্রকে উদ্দেশ্য করে বহু মূল্যবান উপদেশ দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের সূরা লোকমানে তা বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত লোকমান হাকীম তাঁর পুত্র উদ্দেশ্য করে বলেছেন,  “হে আমার পুত্র!  আল্লাহর সাথে তুমি কাউকে শরীক করো না; নিঃসন্দেহে আল্লাহর সাথে শরীক করা গুরুতর অপরাধ।” তিনি আরও বলতেন, “হে আমার পুত্র! সালাত কায়েম করো, আর সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং অসৎকাজে নিষেধ কর। বিপদে-আপদে সবর করো। নিশ্চয়ই এটা সাহসিকতার কাজ।” হযরত লোকমান হাকীম মানুষকে গর্ব-অহংকার করা, উচ্চস্বরে কথা বলা, পিতামাতাকে কষ্ট দেয়া, কুফরী করা, ভোগ-বিলাসে গা ভাসিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকার জন্যও উপদেশ দিয়েছেন। দেখতে কালো এ মানুষটি কৃতদাস থাকাকালে তাঁর মনিবকে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। এ সময় তাঁর জীবনে ঘটে যায় অনেক ঘটনা।  তাঁর ক্রীতদাস জীবনের একটি ঘটনা,   হযরত লোকমান হাকিম তখন যুবক। একটি ঘটনায় তাকে বন্দী হিসেবে আটক করা হলো। পরে তাকে এক ধনী লোকের ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করা হলো। সৌভাগ্যক্রমে লোকমানের মনিব ছিলেন একজন বুদ্ধিমান ও রুচিশীল মানুষ। অল্পদিনের মধ্যেই তিনি লোকমানের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বুদ্ধি, বিবেক, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও ঈমান দেখে মুগ্ধ হলেন। দেখতে দেখতে মালিক, লোকমান হাকীমকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতে লাগলেন। মনিব সবসময় চেষ্টা করতেন, লোকমানের মান-সম্মান যেকোনো অবস্থায় বজায় রাখতে। তিনি তখন খেতে বসতেন তখন লোকমানকে সাথে নিয়েই খেতেন।  হযরত লোকমান নিজে আগে খাবার খেতেন তারপর খাবারের বাকি অংশ খেতো তার মনিব এবং তারপর অন্যান্যরা। লোকমান যদি কোনো কারণে কোনো একটা খাবার না খেতেন তার মনিবও সেই খাবারে মুখ দিত না। একান্তই যদি নিরুপায় হয়ে খেতেই হতো তাহলে এমনভাবে খেতো যেন ইচ্ছে নেই কিংবা ক্ষুধা নেই।  ওই ধনী লোকটির জন্য একদিন কে যেন একটা তরমুজ পাঠিয়েছিল উপহার হিসেবে। লোকটি সঙ্গে সঙ্গে তার এক গোলামকে ডেকে বলল- “এক্ষুণি গিয়ে লোকমানকে ডেকে আনো। লোকমান এসে আগে তরমুজ খাবে তারপর আমি খাব।” লোকমান আসার পর তার মনিব একটা ছুরি দিয়ে তরমুজটি কাটল। প্রথম টুকরোটি দিল লোকমানকে। লোকমান তরমুজের ওই টুকরোটি এমনভাবে খেতে শুরু করল যেন মধুর চেয়েও মিষ্টি ওই তরমুজ। বেশ মজা করে খেল। লোকমান খুব মজা করে খাচ্ছে দেখে লোকটা পরের টুকরোটিও তাকে খেতে দিল। কারণ সে সত্যিই লোকমানকে ভীষণ ভালোবাসে। লোকমান আবারও বেশ মজা করে তরমুজের টুকরোটি খেল। এভাবে পরপর সতের টুকরো তরমুজ লেখেন লোকমান। অবশেষে একটি মাত্র টুকরো বাকি ছিল, ওই টুকরোটি মনিব নিজে খাবে বলে সিদ্ধান্ত নিল। সে বলল: এই টুকরোটি আমি নিজে খাব, দেখব এবং জানব তরমুজ কী করে এতো মিষ্টি আর সুস্বাদু হয়। লোকমান কী মজা করেই না সতেরটি টুকরো খেয়েছে! কিন্তু যখনই মনিব তরমুজের শেষ টুকরোটি মুখে দিল এবং খেল, তিতা স্বাদ আর অন্যরকম একটা উটকো ঝাঁঝে তার চেহারা বিকৃত হয়ে গেল। এতো বেশি ঝাঁঝ আর তিতা ছিল ওই তরমুজ যে মনিবের জিহ্বার পাশাপাশি গলাও তিতা হয়ে গেল। অতিরিক্ত তিতার কারণে লোকটি অজ্ঞান হয়ে পড়ার উপক্রম হলো। বেশ কিছু সময় পর কিছুটা স্বস্তি বোধ করল মনিব। এরপর লোকমানকে লক্ষ্য করে বললেন, হে ব

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Ayesha

Call

লোকমান হাকীম (রাহঃ) এর নাম আমরা শুনেছি। তিনি কে ছিলেন? তিনি কোন নবী ছিলেন না। (এটাই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য কথা)। তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত ভাল মানুষ। ছিলেন খুব সৎ ও জ্ঞানী। তিনি আল্লাহর নবী দাউদ (আঃ) এর সমসাময়িক ছিলেন। মানুষের মাঝে তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞার কারণে তিনি হাকীম বা প্রজ্ঞাবান হিসেবে পরিচতি ছিলেন। কিন্তু একজন সাধরণ মানুষ হয়েও তার মধ্যে এমন কী বৈশিষ্ট ছিল যার কারণে আল্লাহ তায়ালা তার নাম কুরআনে উল্লেখ করেছেন। শুধু তাই নয় তার নামে কুরআনে ১১৪টি সূরার মধ্যে ১টি সতন্ত্র সূরার নামে নাম দিয়েছেন। যা হোক, তিনি তাঁর সন্তানকে কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন। যেগুলো এতই সুন্দর ও গ্রহণ যোগ্য যে, মহান আল্লাহ তা‘আলা তা কুরআনে করীমে উল্লেখ করে কিয়ামত পর্যন্ত অনাগত উম্মতের জন্য তিলাওয়াতের উপযোগী করে দিয়েছেন এবং কিয়ামত পর্যন্তের জন্য তা আদর্শ করে রেখেছেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ