যেসব নক্ষত্রের ভর সূর্যের ভরের চেয়ে ৮ থেকে ২০ গুণ, সেসব নক্ষত্র তাদের জীবনের শেষ পর্যায়ে মহাবিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভর ঝরিয়ে ফেলবে। এই ভর ঝরিয়ে ফেলার জন্য যে মহাবিস্ফোরণ হবে তাই সুপারনোভা। সুপারনোভার মাধ্যমে ভর ঝরিয়ে ফেলেও যেসব নক্ষত্রের ভর সূর্যের ভরের ৩ গুণের বেশি থাকবে সেগুলো ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হবে। কৃষ্ণগহ্বর মহাবিশ্বের এমন একটি বস্তু যা এত ঘন সন্নিবিষ্ট বা অতি ক্ষুদ্র আয়তনে এর ভর এত বেশি যে এর মহাকর্ষীয় শক্তি কোন কিছুকেই তার ভিতর থেকে বের হতে দেয় না, এমনকি তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণকেও নয়। প্রকৃতপক্ষে এই স্থানে সাধারণ মহাকর্ষীয় বলের মান এত বেশি হয়ে যায় যে এটি মহাবিশ্বের অন্য সকল বলকে অতিক্রম করে। ফলে এ থেকে কোন কিছুই পালাতে পারে না। সময়ও সেখানে অসীম হয়ে যায়।
অতিনবতারা (ইংরেজিতে যাকে বলে সুপারনোভা) হল এক ধরনের নাক্ষত্রিক বিস্ফোরণ যার ফলশ্রুতিতে নক্ষত্র ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং অবশেষরূপে থাকে নিউট্রন তারা কিংবা কৃষ্ণবিবর (ব্ল্যাকহোল)। এককথায় কোনো মৃত নক্ষত্রের দ্বারা সৃষ্ট বৃহৎ অন্তস্ফোটনকেই সুপারনোভা বা অতিনবতারা বলে। (চিত্রঃ ডাইং স্টার/ মৃত নক্ষত্র)
বিস্তারিত ব্যাখ্যাঃ সূর্যের চেয়ে তিন গুণ বেশি ভরের নক্ষত্রসমূহের অভ্যন্তরে হাইড্রোজেনের সংযোজন বিক্রিয়ায় তৈরি হয় হিলিয়াম, হিলিয়ামের সংযোজনে তৈরি হয় কার্বন এবং সেই কার্বনের সংযোজনে তৈরি হয় লোহা। লোহা তৈরির মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীণ বিক্রিয়াসমূহের পরম্পরার পরিসমাপ্তি ঘটে, কারণ এর পরের বিক্রিয়াটি তাপশোষী। এমনই এক সময়ে নক্ষত্রের অভ্যন্তরস্থ বহির্মুখী চাপ যথেষ্ট পরিমাণ কমে যাওয়ায় এটি আর মহাকর্ষীয় আকর্ষণ বলকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না, ফলে নক্ষত্রে ঘটে এক প্রচণ্ড অন্তস্ফোটন (Implosion)। নক্ষত্রটির বেশিরভাগ ভরই এর কেন্দ্রে সংকুচিত হয়ে পড়ে, আর গ্যাসীয় বাতাবরণটি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রবলবেগে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনাই অতিনবতারা বিস্ফোরণ হিসেবে পরিচিত। এই ধরনের বিস্ফোরণে বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত হয় এবং সংশ্লিষ্ট নক্ষত্রটি সাময়িকভাবে পুরো ছায়াপথের চেয়েও বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
গড়ে প্রতি ১০০ বছর পর পর আমাদের গ্যালাক্সিতে একটি নক্ষত্র/তারা একটি সুপারনোভাতে পরিণত হয়।
কৃষ্ণবিবর (ইংরেজিতে যাকে বলে ব্ল্যাকহোল):
ব্লাকহোল শব্দের অর্থ কালো গহবর। একে এই নামকরণ করার পেছনে কারণ হল এটি এর নিজের দিকে আসা সকল আলোক রশ্মিকে শুষে নেয়। কৃষ্ণগহ্বর থেকে কোন আলোক বিন্দুই ফিরে আসতে পারে না ঠিক থার্মোডায়নামিক্সের কৃষ্ণ বস্তুর মতো।
মহাবিশ্বের অস্তিত্ব ও প্রকৃতি বিষয়ক একটি বহুল প্রচলিত ধারণা। এই ধারণা অনুযায়ী কৃষ্ণগহ্বর মহাবিশ্বের এমন একটি বস্তু যা এত ঘন সন্নিবিষ্ট বা অতি ক্ষুদ্র আয়তনে এর ভর এত বেশি যে এর মহাকর্ষীয় শক্তি কোন কিছুকেই তার ভিতর থেকে বের হতে দেয় না, এমনকি তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণকেও (যেমন: আলো) নয়।
প্রকৃতপক্ষে এই স্থানে সাধারণ মহাকর্ষীয় বলের মান এত বেশি হয়ে যায় যে এটি মহাবিশ্বের অন্য সকল বলকে অতিক্রম করে। ফলে এ থেকে কোন কিছুই পালাতে পারে না। অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রথম তৎকালীন মহাকর্ষের ধারণার ভিত্তিতে কৃষ্ণ বিবরের অস্তিত্বের বিষয়টি উত্থাপিত হয়।
এখন পর্যন্ত ব্লাকহোলের কোন প্রত্যক্ষ দর্শন পাওয়া যায়নি কারণ এ থেকে আলো বিচ্ছুরিত হতে পারে না যেকারণে একে দেখা সম্ভব নয়, কিন্ত এর উপস্থিতির প্রমাণ আমরা পরোক্ষভাবে পাই। ব্লাকহোলের অস্তিতের প্রমাণ কোন স্থানের তারা নক্ষত্রের গতি এবং দিক দেখে পাওয়া যায়। (আলোচনা প্রমানের জন্য সাধারণ গানিতিক সুত্র)
বিঃদ্রঃ এইদুটি বিষয় পদার্থবিজ্ঞান এবং মহাকাশবিজ্ঞানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি আরও আলোচনা করা সম্ভব কিন্তু সাধারণ মানুষের বোঝার স্বার্থে আমি উত্তরটি সংক্ষেপে চিত্রভিত্তিকভাবে প্রকাশ করেছি।
সম্পাদনাঃ ২০১৮ সালে কিশোর আলো এর বিজ্ঞান কলাম হতে জানা গিয়েছে যে, যে ব্লাক হোলের চার পাশদেখা গিয়েছে। যেটা ঘূর্ণিয়মান । যার কাল্পনিক চিত্র নিম্নরুপ।