ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পরে বাবার আলস্য এবং বেহিসাবির খেসারত হিসেবে ৩ লাখ টাকার দেনা শোধ করার দায়িত্ব একমাত্র ছেলে হিসেবে আমার কাধে পড়ে। অনার্সে ভালো একটা সরকারি ভার্সিটিতে চান্স ও পেয়েছিলাম বিবিএ তে। পরিবারের খরচ চালাতে শেষ পর্যন্ত একটা সরকারী চাকরীতে ঢুকে গেলাম। বন্ধ হয়ে গেল পড়াশোনা। এর মধ্যে খুব কাছের এক আত্নীয় ধরলেন তার বোনের মেয়েকে বিয়ে করলে বাবার দেনার একটা অংশ শোধ করে দেবেন। আমি মোটেও রাজি ছিলাম না। পরিবারের প্রতিদিনের হেনস্থার কথা বিবেচনা করে একসময় রাজিও হয়ে যায়। বিয়ে হয়ে যায় আমাদের। সেই ২০০৮ সালে।
তখন আমার বয়স ২০ তার ১৭। ভালোই কাটছিলো। খুব অল্প সময়েই ওকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিলাম। বিয়ের আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তাদের দেওয়া এক লাখ টাকা আমার জোগাড় করে ফেরত দিব। কিন্তু কিছুদিন যেতেই কিছু সমস্যা দারুণ পীড়া দেওয়া শুরু করে। প্রথমত আমার বউয়ের ব্যাবহার। আমার মা বাবা ভাগ্নীদের সাথে সবসময়ই উগ্র ব্যাবহার করতো। ও পড়াশোনা বেশি করেনি তাই ভাবলাম ওকে একটু কলেজে ভর্তি করিয়ে দিলে হয়তো মানুষের সাথে মিশে ব্যবহার টা শিখবে। সেটা নিয়ে পরেই বলছি।
২ য় আমি আমার বাবা মাকে কোন টাকা দিলে তার খুবই রাগ হয়। তার কথা হচ্ছে তারা নিজেরা কেন কামাই করে না। উল্লেখ্য আমার বাবার বয়স ৭০+ এবং মা ৬০+। দুজনেই বিভিন্ন কারনে প্রায় অসুস্থ থাকে তাতেও আমার স্ত্রীর সমস্যা, তারা কেন এত অসুস্থ হবে।
বিয়ের পরে বেশিরভাগ সময়ই সে তার মায়ের কাছে থেকেছে। আমি বাসা নিয়ে থাকলেও নিজেদের বাসায় থাকা হত কম, বেশিরভাগ সময়ই সে তার মায়ের কাছে থাকতো।
এরই মধ্যে আমাদের একটা বাচ্চা হয়। মেয়ে বাবু। ওর জন্মের পরে আমি যেন ওর মাকে আরো ভালোবাসতে শুরু করি।
কিন্তু আমার বাবা মা আর সজনদের প্রতি তার এই নিরস ব্যবহার একসময় তার প্রতি আমার বিতৃষ্ণা এনে দেয়।
এর মধ্যে সে একটা ছেলের সাথে ফোনে কথা বলত। পরিচয় জানতে চাইলে বলত,বন্ধু। আমার খুব রাগ হত। একসময় তাকে নিষেধ করার পরেও সে শোনে না। ওর মাকে বলে দিলাম। তাতে তার জিদ আরো বাড়লো। কিছুদিন কথা বলা বন্ধ করে দিল। কিন্ত পরে যোগাযোগ করত।
জীবনে একসময় ভালো ছাত্র ছিলাম বলে স্বপ্ন দেখতাম এই ক্ল্যার্কের চাকরি করবো না, সুযোগ পেলে আবার পড়াশোনা করব। সেই ইচ্ছা থেকে ফার্স্ট টাইম আপ্লাই করতেই ফুল স্কলারশিপ নিয়ে একটা দেশে পড়াশোনার সুযোগ হয়। কিছু হ্যান্ডক্যাশ এর দরকার ছিল যেটা ওরাই ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। বরাবরের মতই মেয়েকে নিয়ে সে তার মায়ের কাছে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। আমি তাকে বার বার বাড়িতে গিয়ে আমার বাবা মার কাছে থাকতে বল্লেও সে অগ্রাহ্য করে।
আমার স্কলারশিপ এর টাকা দিয়ে বউকে এনে একসাথে থাকা সম্ভব না দেখে নিজেই কয়েকমাস পরপর দেশে চলে যেতাম। সবই ভালো কাটতো শুধু আমার বাবা মার ওইখানে গেলেই বা তাদের টাকা পয়শা দিতে চাইলেই সময় আর ভালো যেতনা। আমার বাবা মা কে সে বলতো আমি বিদেশে থাকতে ফোন করে যেন আমার কাছে কেউ কিছু না চায়।
বিয়ের ১০ বছর পরে যখন তার এই আচরণের কোন পরিবর্তন পেলাম না, তখন তাকে বলেই দিলাম আচরণটা পাল্টাও প্লিজ। তাতেই সমস্যা। এতদিন কেন বলিনি, এখন আমার পড়াশোনা শেষ, ভালো চাকরির অফার পাচ্চি এইজন্য তাকে আর ভালো লাগছে না, তারা সাহাজ্য না করলে আমার বিদেশে আসা পড়াশোনা কিছুই হত না, তাকে নাকি আমি খরচ বাচানোর জন্য তার মায়ের বাসায় রেখেছি(যেটা সে নিজেই থেকেছে) এইসব। আমি জানি টাকা নিয়ে তাকে বিয়ে করে অন্যায় করেছিলাম। সেটা তাকে শুরুতেই বলেছিলাম এবং সে টাকাটা ফেরত ও দিতে চেয়েছিলাম। ফেরত দিতে চাইলে ওরা রেগে বলে তাহলে তালাকটাও দিয়ে দাও।
একটা মানুষের মাথায় এত প্যচ কিভাবে আসে আমার জানা নেই। একদিকে নিজের যৌগ্যতায় পড়াশোনা, চাকরি বা বিদেশগমন তারা দুপায়ে টেলে দিয়ে শুধু তাদের সাহাজ্যটাই ফোকাস করছে অন্যদিকে আমার বাবা মার সাথে দূর্ব্যাবহারের কারণে কিছু বললে তারা বলছে যেটা করছে সেটা পুরো ঠিক আছে। আবার কান্নাকাটি করে হাজার মিথ্যকে জায়েজ করার চেষ্টা করছে। এত কিছু চিন্তা করলে মাথাটা ধরে আসে। কিন্তু আমি তাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছি বিয়ে যেহেতু তোমাকে করেছি আজিবন তোমার সাথেই থাকতে চাই। আমার বাবা মার সাথে একটু ভালো ব্যাবহার কর। সে বলে তার ব্যবহার পুরোপুরি ঠিক আছে। এমনকি তার কিছু আত্নীয় সজনও তার আচরনে অসন্তোষ। তবে তার মা তাকে খুব সাপোর্ট দিচ্ছে।
এমতাবস্থায় আমার কি করা উচিত প্লিজ একটু সাজেস্ট করবেন।